মসজিদ সংস্কার ও নূরে মোহাম্মদী।

পার্থিব (জুন ২০১৭)

সালমা সেঁতারা
  • ১৮
“কোরআনে বর্ণিত পঁচিশজন নবী ও রাসুল, জীবনাদর্শ ও অলৌকিক ঘটনাবলী গ্রন্থ থেকে “নূরে মোহাম্মদী” সৃষ্টি রহস্য ও সমগ্র সৃষ্টির অর্থাত (কুলমাখলুকাত) সৃষ্টির বর্ণনা যেভাবে পাওয়া যায়, সেই আলোকেই “মসজিদ” এর গুরুত্ব কতটা গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়টাই তুলে ধরার চেষ্ট করছি।
-মসজিদের ঐ পাশে আমার কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মেয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই। আমাদের জাতীয় কবির রচিত গানখানিতে তাঁর এইটাই শেষ ইচ্ছা ছিলো। তাঁর মৃত্যুর পর তাকে যেন মসজিদের পাশে কবর দেয়া হয়। জাতির জনক “বঙ্গবন্ধু” জাতীয় কবির শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করেছিলেন, তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে কবর দিয়ে।

মৃত্যুর আগে এই রকম শেষ ইচ্ছা বোধ করি আর কোথাও শোনা যায় না। এই রকম ইচ্ছে হওয়াটাও বোধ করি আল্লাহ পাকের “খাস রহমত” বলা যেতে পারে। কবি নিজেও ত্রিশালে অবস্থানকালে সেখানকার মসজিদের “মোয়াজ্জিন” ছিলেন। মীনার ছিলনা। তাই আম গাছের উচু ডালে চড়ে আযান দিতেন। সত্যিই! ইসলামের অন্যতম প্রধান রোকন নামাজের জন্য এমন অভিনব পদ্ধতিতে আহ্বান পৃথিবীতে হয়তোবা আর কোথাও ঘটেনি।

আমরা মোটামুটিভাবে যারা পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে লিখিত বিভিন্ন পুস্তকাদি পড়বার চেষ্টা করি, তারা নূরে মোহাম্মদী সম্পর্কেও কম বেশি জানি বা জানবার চেষ্টা করি। আল্লাহপাক নূরে মোহাম্মদী সৃষ্টি না করলে আর কোন বস্তু বা প্রান সৃষ্টিই করতেন না। হযরত আলী (রাঃ) থেকে এ হাদীস খানা প্রকাশ পায়। হযরত আলী (রাঃ) বলছেন যে একদিন আমি রাসুলে করিম (সঃ) এর কাছে উপস্থিত থাকাকালীন সময়ে “হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী” (রাঃ) উপস্থিত হয়ে রাসুলে পাক(সঃ) কে প্রশ্ন করলেন যে, হে রাসুলুল্লাহ (সঃ) আপনার দরবারে একটি বিষয় জানতে চাই। বিষয়টি আমাকে জানিয়ে বাধিত করুন। - আল্লাহপাক সৃষ্টির মধ্যে কোন বস্তুটি আগে সৃষ্টি করলেন? উত্তরে রাসুলেপাক (সঃ) বললেন, হে জাবের? আল্লাহপাক পরওয়ারদিগার সবকিছু সৃষ্টির আগে তাঁর কুদরতি অপূর্ব নূর হতে, তোমার নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর (আঃ) নূরকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর, নূরে মোহাম্মদীর (সঃ) ময়ূর রুপ থেকে যা সৃষ্টি হলো সে বর্ণনায় আসা যাক।

কোন কোন হাদীসে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহপাক “শাজারাতুল ইয়াকীন” নামক একটি গাছ সৃষ্টি করলেন। এরপর নূরে মোহাম্মদীকে একটি ময়ূরের আকৃতি দান করে সচ্ছ ও শুভ্র মতির পর্দার ভিতর রেখে, শাজারাতুল ইয়াকীন গাছে স্থাপন করলেন। উক্ত ময়ূররুপী নূর সেখানে বসে একাধারে সত্তর হাজার বছর পরম করুনাময়ের তাসবীহ্ পাঠ করতে থাকলো।

এরপর আল্লাহতালা লজ্জার আয়না তৈরি করলেন। তাতে ময়ূর তার অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে লজ্জাবনত হয়ে পাঁচটি সেজ্দা আল্লাহপাকের উদ্দেশ্যে করে। তারপর আল্লাহপাক ময়ূরাকৃতি বিশিষ্ট নূরে মোহাম্মদীর উপর দৃষ্টিপাত করেন। নূরে মোহাম্মদী লজ্জায় ঘামতে লাগলো। এই নূরে মোহাম্মদীর মুখমন্ডলের ঘাম দ্বারা আরশ, কুরসী, ফেরেশতা, লওহ, কলম, চন্দ্র, সূর্য্য, গ্রহ নক্ষত্র, আসমান, জমিন, রাসুল, আম্বিয়া, আউলিয়া, সালেহীন, সিদ্দিকীন, নেককার, খানায়ে কাবা ও দুনিয়ার সকল মসজিদের মাটি সৃষ্টি করেন। তাহলেই আমরা বুঝতে পারি “মসজিদ” এর গুরুত্ব ঠিক কতখানি দায়িত্বপূর্ণ ও বরকতময় মুসলিম উম্মাহ্র জন্য!


আল্লাহপাকের সৃষ্টি রহস্য ও করুণার অসীম অলৌকিক মাহাত্য মানুষের সবটুকু লিখে প্রকাশ করতে পারার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ সেটুকু পারঙ্গমতা স্পষ্টতই সৃষ্টির ক্ষমতার বাইরে। অতএব তা থেকে বিরতি নিলাম।

আমি মস্জিদের কথায় আসি। বাংলাদেশকে “দ্বিতীয় আরব” বলা হয়। ঢাকা, অর্থাত বাংলাদেশের রাজধানীকে বলা হয় মসজিদের শহর। নিশ্চই এই সুখ্যাতি বাংলাদেশের জন্য ইসলামের অশেষ রহমতপূর্ণ, এবং সয়ং আল্লাহপাকের নেকদৃষ্টির অঘোষিত সীকৃতি। তাই এই মসজিদগুলির নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মুসল্লিদের নামাজের জন্য তথা সকল ব্যবস্থাদি নেয়া সর্বোতভাবেই সমস্ত মুসলিমদের উপর অবশ্য কর্তব্য বলেই অর্পিত হওয়া উচিৎ, কারণ স্রষ্টার দেয়া পার্থীব জীবনের বিধি নিষেধের জ্ঞান ও বন্দনাগার রুপী এই পাঠশালা “নূরে মোহাম্মদী” থেকে তৈরী মাটি দ্বারা নির্মিত। দুঃখজনক ভাবেই বলতে হয়;

১। আজকাল মসজিদের ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের কোন বেতনাদি সরকারীভাবে নেই। এই জনগণের দানের টাকায় কোনরকম মানবেতর জীবন যাপন করে থাকেন।
২। বাংলাদেশের মুসলিমরা বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক ৯০ ভাগ মানুষ-ই নামাজী, নিয়মিত বা অনিয়মিত। আল্লাহর প্রতি এটুকু আনুগত্য অবশ্যই আল্লাহতালার করুণার দাবী রাখে।

সেটুকুকে সর্বসাধারণ থেকে শুরু করে মহামান্য রাষ্ট্রেরও সার্বিক সহযোগিতা করা উচিৎ। অর্থাত আমি বলতে চাই ইমাম, মুয়াজ্জিনদের, সরকারী বেতন ভাতা নিশ্চিত করা উচিৎ। কিছু কিছু বিভাগীয় পর্যায়ে একেবারেই নগরকেন্দ্রীক গুরুত্বপূর্ণ মসজীদগুলি “সরকারি করণ” ব্যবস্থা করা উচিৎ। নির্মাণ প্রশ্নে সমাজের উচ্চবিত্তগণ ও সরকারী বেসরকারী সংস্থাগুলো এগিয়ে আসা উচিৎ। দুঃখের বিষয় এই রমজানের প্রাক্কালে কিছু কিছু বিখ্যাত মস্জিদ নির্মাণাধীন রয়েছে। মুসল্লিগণ অত্যন্ত ব্যস্ত রাস্তায় সামিয়ানা টানিয়ে জামাত করছেন। রমজান মাসের খতমে তারাবী ও ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় করতে মুসল্লীদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।


প্রতিদিন গ্রামের কওমি মাদ্রাসা থেকে দাখিল শ্রেণীর ছাত্র কিংবা শিক্ষকদের ধরে এনে চাঁদা আদায়ে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। তারা দৈনিক ১০০ টাকা বা ১৫০ টাকায় নিজেদের ঘর সসারের কাজ ফেলে এই “অশোভন” কাজ করে চলেছে।


অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আমাদের সমাজে “বিত্তবান” বলতে কেউ নেই!! যারা মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে নির্মাণ ত্বরান্বিত করে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি ও নূরে মোহাম্মদীর প্রতি শ্রদ্ধা ও দরুদ প্রদর্শন করতে চান, আর শেষ ভরষা হলো “সরকার”, ইচ্ছা করলে সরকার এই দৈন্যতা অবশ্যই ঘুচাতে পারেন, এই মসজিদ নির্মাণে। দিনের পর দিন বছরের পর বছর “ইসলামকে ভিক্ষুকরুপে” দেখা একটা মুসলিম দেশের প্রতি অমুসলিমদের কতটা ঘৃণা জন্মাতে পারে? তা ভেবেও বিবেক শিউরে উঠে। আমরা কী সত্যিই ধর্ম ভিত্তিক ভিক্ষুক?? “তবে একটা কথা খেয়াল রাখতে হবে, তাহোলো ফেতরা, যাকাতের টাকা মস্জিদ নির্মাণে দেয়া যাবেনা।” ও টাকা “দুস্থের হক।” নিজের খাবার রুটি থেকে আধখানা রুটি দানের মতো সতপ্রণোদিত দান করতে হবে।



এখন রমজান মাস। মুসল্লীদের এই ভোগান্তি সত্যিই খুব দুঃখজনক। বাংলাদেশ বাংকের মোড়ে বসে চাঁদা চাইছে, নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার বহুতল জামে মসজিদের জন্য। আর ধাপ জেল রোডে চারতলা মসজিদ ভেঙ্গে ৮ তলা করা হচ্ছে। আজ প্রায় দু-একবছর পার হতে চল্লো, কিন্তু এপর্যন্ত কাজ শেষ হলো না। কবে হবে, তাও অনিশ্চিত। তাহলে কি নামাজীরা বান্দা কর্তৃক সৃষ্ট এই অসহনীয় কষ্ট সয়ে যাবে? কত প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় ভবন তো টাকার জোরে রাতারাতি নির্মিতি পেয়ে যাচ্ছে। অথচ; স্রষ্টার বন্দনাগার হবেনা? যদি না হয় তা হয়তো এই দ্বিতীয় আরবখ্যাত মুসলিম দেশের জন্য, পরওয়ারদেগারের আনুগত্যের প্রতি স্পষ্ট অনিহার দুর্ভাগ্য বয়ে নেবে শেষ বিচারের দিনে। আমরা এ কলংক আর দেখতে চাইনা সরকারী বেসরকারী সংস্থা ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য মসজিদরুপী ইসলামের ছায়াতল নির্মাণে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুহুল আমীন রাজু ধর্মীয় অতি মূল্যবান কথা জানা গেল ... আনেক ভাল লাগলো । অনেক শুভ কামনা । ( আমার পাতাই আমন্ত্রণ রইল )
ইমরানুল হক বেলাল অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন কবি । পাঠে মুগ্ধতা রইল ।

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪