একটি মেয়ের গল্প

ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারী ২০১৬)

রইসউদ্দিন গায়েন
  • ৪২
মেয়েটির নাম পূজা মন্ডল। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। এই ক্লাসে সাধারণত আমার যাওয়া হয় না। কোনও শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে তখন হয়তো যেতে হয়,প্রধান অধ্যাপক/অধ্যাপিকার নির্দেশে। এই ক্লাসের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে ভীষন দুষ্ট প্রকৃতির। কিন্তু লক্ষ্য করেছিলাম পূজা নামের এই মেয়েটি ছিল খুবই শান্ত স্বভাবের এবং বিনয়ী। একদিন অন্য একটি মেয়ে একটি খাতায় নানা রঙের ছবি এঁকে আমার সহযোগী শিক্ষক শ্রী কঙ্কন মন্ডলকে দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছে। আমার চোখে পড়তেই মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করলাম। মেয়েটি বললো-‘আমার নাম অষ্টমী’। সহযোগী শিক্ষক-মশাই বললেন, ‘এরা দুই-বোন, পূজা ও অষ্টমী একই ক্লাসে পড়ে’। কথা শেষ না হতেই পূজা এসে দাঁড়ালো আমাদের সামনে। ওর বাবা-মার পরিচয় জানতে চাইলাম। বাবা-মার কথা বলতেই ওদের চোখ-মুখ এক নিমেষেই বিবর্ণ হয়ে গেল। আমি সস্নেহ জানতে চাওয়ায়, আমাকে অনেক কথা শোনালো। টিফিনের শেষ ঘন্টা বাজতেই আমি বললাম:- ‘তোমরা তোমাদের সব ঘটনার কথা লিখে জানাও,আমি তোমাদের কথা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবো’। পরদিন সবিস্ময় দেখলাম পূজা সাত পৃষ্ঠায় ভরা নিজের জীবনের কথা লিখে নিয়ে এসেছে। অবাক হলাম এজন্যেই যে ছোট একটি মেয়ে তার জীবনের কথা এত সহজ-সুন্দর ভাষায় লিখলো কিভাবে!? পাঠক-কবি-লেখকবন্ধুরা দেখুন পূজা নামে সেই মেয়েটির জীবনকথা তারই ভাষায়:-

“ একটি মেয়ে,তার নাম পূজা। আমি বলতে চাই তার জীবনের কথা। তারা খুব গরীব। তার পরিবারে মা,বাবা আর তিন বোন আছে। পূজার বাবা,মা বাইরে কাজ করে। তার বাবা খুব মদ,তাড়ী খেতো আর ঘরে গিয়ে মারপিট করতো। পূজার মা তাই রোজ রোজ আর মারপিট সহ্য করতে না পেরে, তিন মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। একটি ভাড়ার বাড়িতে আশ্রয় নিল। পরের বাড়িতে কাজ ক’রে মা যা’ টাকা-পয়সা রোজগার করতো,তাতে অনেক কষ্টে খাওয়া-পরা চলত। মা আশা করেছিল পূজার বাবা দূরে থাকলে হয়তো একদিন ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু হ’ল তার বিপরীত। সেদিন থেকে বাবা আরও খারাপ হয়ে গেল। বাইরে কোথাও দেখতে পেলে মাকে ধ’রে মারতো। এত অশান্তির মাঝেও মা তার বড় দুটি মেয়েকে স্কুলে ভর্তি ক’রে দিল। পূজা যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত,ওই স্কুলের একজন শিক্ষিকা পূজাকে খুব ভালবাসতেন। একদিন তিনি পূজার কাছে তার পরিবারের কথা জেনে,পূজার মাকে স্কুলে এসে দেখা করতে বললেন। পূজার মা সেদিন কাজে না গিয়ে স্কুলে এসে ম্যাডামকে নমস্কার জানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন: ‘ম্যাডাম,পূজা কি কিছু ভুল বা অন্যায় করেছে? নাকি লেখাপড়া করে না?’ ম্যাডাম হেসে বললেন: না,না, ওসব কিছু নয়। পূজা খুব ভাল মেয়ে। আমি অন্য কারণে ডেকেছিলাম। আপনি যদি চান,আমি পূজাকে নিজের মেয়ের মতো আমার বাড়িতে রাখতে চাই। পূজা যতদূর লেখাপড়া করতে চায়,আমি দায়িত্ব নেব। দরকার হলে ওর বিয়ে দেওয়ার ভার আমি নিতে পারব।‌’ এসব কথা শুনে পূজার মা কিছু না ব’লে ঘরে ফিরে এল। বিকেলে কাজেও গেল না, খুব চিন্তায় প’ড়ে গেল। পূজা তার মায়ের মন খারাপ দেখে মাকে বুঝিয়ে বলল: ‘ম্যাডাম আমাকে খুব ভালবাসে,ওখানে থাকলে আমার ভালই হবে,তুমি মন খারাপ করো না। লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে ডাক্তার হব,তখন তোমার আর কোনও কষ্ট থাকবে না। মায়ের মন কিছুতেই পূজাকে ছাড়তে চায় না। কিন্তু দুঃখ কষ্টের কথা ভেবে অবশেষে রাজি হয়। পূজা, মাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার একমাস পরে, স্কুলের ওই ম্যাডাম তাঁর একজন ভাল বান্ধবীর বাড়িতে পূজার বোন অষ্টমীকে রাখার জন্য পরামর্শ দিলেন,পূজার মাকে। পূজার মা অষ্টমীকে বাধা দিল না। অষ্টমী চলে গেল। শুধু ছোট মেয়ে তৃপ্তিকে মায়ের কাছে রেখে দিল। এভাবে পূজার পরিবার থেকে এক একজন ক’রে, চলে গেল।‌”...(সংক্ষিপ্ত)

পূজার নিজের হাতে লেখা এ ঘটনা প’ড়ে ভাবছি,এতদিন আমি কেন চুপ ক’রে বসেছিলাম। এর আগে দু’চারটে কবিতা আর কয়েকটা প্রবন্ধ ছাড়া তো আর কিছু লিখতে পারি নি। মাঝে মাঝে কবি পল্লব আমেরিকা থেকে আমাকে কবিতা.কম বা ব-কলম.কম-এ নিয়মিত লেখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন, কিন্তু কাজের কাজ তো তেমন কিছু করতে পারি নি। পূজার জীবন-কথা শুনে, আমার চেতনা ফিরলো। এখন ভাবি, স্কুলে আরও অনেক শিশুদের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ নিয়ে তো অনেক কিছুই লেখা যায়। সেসব লিখতে পারলে তো একটা ইতিহাস,সত্য-ইতিহাস তৈরি হতে পারে,যা’ হয়তো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুসরণযোগ্য নীতিকথা বা স্মৃতিকথা হয়ে থাকবে।

পূজার জীবনে এখন স্বপ্ন অনেক। বড় হয়ে ডাক্তার হবে। বোন অষ্টমী হতে চায় পুলিশ অফিসার। পূজা ও অষ্টমী চায় তার বিপথগামী বাবাকে ফিরিয়ে আনতে,মায়ের কাছে। মাকে আর পরের বাড়ি কাজ করতে হবে না। তিন বোন আর বাবা-মা নিয়ে গড়ে উঠবে একটি নতুন সুখের সংসার!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জয় শর্মা (আকিঞ্চন) খানিক লেগেছে ভাল। দিলাম ভোট ;
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
ধন্যবাদ,প্রিয় জয়শর্মা ভাললাগার ভোট প্রদানের জন্য!
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
পছন্দের মনে হল। ভোট কর্তব্য মনে হল। ভালো লিখেছেন, আগামিতে আরো ভালো গল্প আশা করছি। সুস্বাগতম।।
ফয়েজ উল্লাহ রবি অভিনন্দন! শুভেচ্ছা শুভ কামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
ধন্যবাদ,প্রিয় পাঠক-বন্ধু অভিনন্দনসহ শুভেচ্ছা জানানোর জন্য!
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
শামীম খান পুজার জন্য অনেক শুভেচ্ছা । অনেক পূজা রাস্তায় পড়ে আছে । জত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে বিবেকবান সচ্চল মানুষকে । লেখককে ধন্যবাদ তুলে ধরার জন্য ।
ভালো লাগেনি ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
প্রিয় পাঠক-বন্ধু শামীম খান,পূজার জন্য আপনার শুভেচ্ছা পূজাকে অবশ্যই জানাবো। সেই সঙ্গে লেখকের প্রতি আপনার প্রেরণাদায়ক মন্তব্য প্রকাশের জন্য অশেষ ধন্যবাদ!
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
জুন একটি মেয়ের গল্প... সত্যিই বাস্তবিক। খুব ভালো লেগেছে।অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো....
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
প্রিয় পাঠকবন্ধু জোনাইদ আহমেদ, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার ভাললাগার শুভেচ্ছাসহ সুন্দর মন্তব্য প্রকাশের জন্য!
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

১৩ জানুয়ারী - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী