চেতনার কৃষ্ণচূড়া

ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারী ২০১৬)

রিয়াজ নূর
  • 0
  • ২১১
শান্ত নদীর ধারাটি বয়ে চলেছে বহু দূর অবধি।কীর্তনখোলা নদীর শাখা এই নদীটিকে গ্রামের মানুষ খাল বলেই চেনে।কার্তিকনগর গ্রামের বুক চিড়ে বয়ে চলেছে খালটি।খালের পাশেই অজয় কৃষ্ণ বর্মনের বাড়ি।সদ্য মেট্রিক পাশ করেছে সে।ঢাকা যাবে কলেজে পড়ার জন্য।অজয় শহরে পাড়ি জমাতে উম্মুখ। শহরের নতুন মানুষ এবং নতুন শিক্ষা যেন তার জন্য অপেক্ষা করছে।

পনের দিন পর........

অজয় আজ ঢাকা এসেছে।সদরঘাটের নোংরা পরিবেশ দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও নতুন জায়গায় আসার আনন্দে উদ্বেলিত অজয় নিজেকে ঠিক সামলে নেয়।মতিঝিলের একটি বিখ্যাত কলেজে ভর্তি হয়েছে অজয়।অল্প কয়েকদিনের মাথায় বেশ কিছু বন্ধু জুটে যায় তার।তাদের মধ্যে অনিকই বেশ ঘনিষ্ঠ।

বেশ কিছুদিন পর ফেব্রুয়ারীর ২১ তারিখ.......

আজ ২১শে ফেব্রুয়ারী।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।সেই সাথে বাংলাদেশের শহীদ দিবস।অজয়ের কলেজ আজ ছুটি।অজয় জানে এই দিনে সবাই শহীদ মিনারে ফুল দেয়।শ্রদ্ধা জানায় ভাষা শহীদদের প্রতি।"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী"গানে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে অঠে এই দিন।কাদের দীর্ঘশ্বাস যেন শোনা যায় কৃষ্ণচূড়া গাছের ডালপালা থেকে।কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলিকে কেন যেন অন্যরকম লাগে আজ।মনে হয় গাঢ় লাল ফুলগুলি এখনই গলে গিয়ে রাজপথে গড়াবে।ঠিক যেমনটি ঘটেছিল ৫২'র এই দিনে।রক্তস্নাত হয়েছিল এই রাজপথ।

অজয় গ্রামের ছেলে।শহরের মাঝে এখনো নিজের ভোল পাল্টাতে পারেনি।অজয় জানে আজকে শোকের দিন।বইয়ে পড়েছে এদিন কী হয়েছিল।কিন্তু অজয় জানে না এখানে শোক ঠিক কী জিনিস।শোক প্রকাশের পদ্ধতি এখানে আলাদা।

সকাল সকাল অনিককে সাথে নিয়ে শহীদ মিনারে চলে যায় অজয়।অনেক মানুষের ভীড় সেখানে।উদলা পায়ে ভীড়েছে সবাই একই সারিতে।ভীরের মাঝে অনেক কষ্ট করে বেদিতে ফুল দিয়ে অজয় স্বস্তি পায়।বাসার ফেরার পথে রমনা হয়ে আসে।সেখানে অনেক যুগলবন্দী তরুন-তরুনীর আড্ডা বসেছে।তাদের আনন্দ মুখ দেখে মনে হয়,আজ শহীদ দিবস না;ঈদের দিন।

বাসার গলির মুখে ঢুকতেই দেখে পাড়ার তরুনরা মিলে একটি প্রতীকি শহীদ মিনার নির্মান করেছে।পাশে দু'টি বড় বড় সাউন্ডবক্স বাজছে।সেখানে বাজছে বিদেশী গান।কর্কশ হিন্দি গানের ধ্বনিতে প্রকম্পিত হচ্ছে পুরো পাড়া।প্রতীকি শহীদ মিনারকে ঘিরে তাদের কি প্রলয় নৃত্য।তাল হারিয়ে একটি ছেলে ঠিক মিনারটির উপরে গিয়ে পড়ল।নৃত্যের তালে তালে তাদের খেয়াল থাকে না আজ শহীদ দিবস।আজ শোকের দিন।

ভাষা দিবসে বিদেশী গান দিয়ে এ উদযাপন দেখা শেষে হতবুদ্ধি অজয় বাসায় ফেরে।শহীদ মিনার থেকে যে চেতনা নিয়ে অজয় ফিরেছে,তাকেই যেন হাতড়ে বেড়ায় সে।নিজের মনে প্রশ্ন করে,"২১শে ফেব্রুয়ারী নিয়ে এত গল-কবিতা;তা কি সবই বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ?""চেতনা জাগ্রত করার জন্য তা কি যথেষ্ট নয়?""নাকি পাঠ্যবইয়ের সেই গল্প-কবিতা ক্লাশ ডিঙানোর হাতিয়ার মাত্র?"
অজয় জানে, বিদেশী সংস্কৃতির মোহে আজ যারা আচ্ছন্ন,তারা একদিন ঠিক খুঁজে বেড়াবে আপন ঠিকানা।কারণ আপনার সুখ তো আপনাতেই নিহিত।

পরের দিন ক্লাশ শেষে আবার শহীদ মিনারে যায় অজয়।যেই শহীদ মিনারে গতকাল সকলে খালি পায়ে সমবেত হয়েছিল।সেই বেদিতেই জুতো সমেত একদল "সেলফি" নামক রোগে আক্রান্ত তরুন-তরুনীর দল নিজেদের ছবি তুলছে।অজয় ভাবে যে, এতদিনে শহীদ মিনারের যে ছবি সে অন্তরে গেঁথেছে,তা এদের কাছে একদিনের ব্যাবধানেই অচল।কাল্পনিক চেতনাধারী মানুষ চেতনায় বিশ্বাসী নয়,প্রদর্শনে বিশ্বাসী।

প্রাঙ্গনের কৃষ্ণচূড়া গাছটির নিচে এসে দাঁড়ায় অজয়।কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো ঠিক গতকালের মতই লাল।হৃদয়ের কালোমেঘ সরে যায় অজয়ের।অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কে যেন ডেকে বলে,"আমিই তোমার চেতনা।আমিই তোমার বিশ্বাস।একদিনেই আমাকে ছুড়ে ফেলো না।আমায় লালন কোরো আজীবন।"

বাতাসের দমকে কৃষ্ণচূড়ারা নড়ে ওঠে।হৃদয়ের কুঠিরের সেই চেতনা নামক পাখিটি বলে ওঠে,"বাংলা আমার ভাষা,বাংলা আমার দেশ"।

এ শুধু কৃষ্ণচূড়া নয়।

এ বাংলার কৃষ্ণচূড়া,চেতনার কৃষ্ণচূড়া।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়েজ উল্লাহ রবি বেশ ভাল লিখেছেন, শুভেচ্ছা জানবেন। ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

১২ জানুয়ারী - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী