একজন মুক্তি যোদ্ধা ও তার মা

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১১)

জাজাফী
  • ১২
  • 0
  • ৭৩
পারভাট পাড়া গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি খড়ের ঘরের মধ্যে গভীর রাতেও টিম টিম করে কুপি জ্বলছে। শোলার বেড়ার ফাঁক গলে সেই ক্ষীণ আলোটুকু বহুদূর পর্যন্তু ছড়িয়ে পড়ছে। সেই ঘরের মধ্যে পচিঁশ বছরের এক যুবক পায়চারি করছে। কিছুতেই তার চোখে ঘুম আসছেনা। থেকে থেকে উত্তেজনায় তার শরীর কেঁেপ উঠছে। কখন এসে ইকবাল তাকে ডাক দেবে সেই অপেক্ষায় তার চোখের ঘুম টুকু উধাও হয়ে গেছে। সবাই ঘুমিয়ে পড়ার সাথে সাথেই সে তার জামা কাপড় গুছিয়ে নিয়েছে। তাকে অনেক দূরে যেতে হবে। হয়তো ফিরে আসবে হয়তোবা আর কোন দিন এই বাড়িতে ফিরে আসা হবেনা। এ কথা ভাবতেই তার চোখে জল এসে যায়। সে এই বাড়ির বড় ছেলে, বাড়ির অন্যরা জানতে পারলে তাকে কিছুতেই যেতে দেবেনা। তাই সে গভীর রাতে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। যেতে যে তাকে হবেই। বিপদের এই মুর্হুতে তার মত আরও অনেকের সাহায্য দরকার। হঠাৎ বাড়ির বাইরে ইকবালের কন্ঠ শোনা যায়- আলীম অহনই বাইরে আয় যাবার সময় অইছে। বড় ফুয়োমের কাছে মাসুদরা খাড়ায় আছে। ইকবালের ডাকের সাথে সাথে আলীম বেরিয়ে আসে। ওর পিছু পিছু হাটতে শুরু করে। কিছু দুর এসেই আলীম থমকে দাড়ায়। ইকবাল জিজ্ঞেস করে কি অইলো খাড়াইলি ক্যান? মায়রে এক নজর দেইখা যাই, যদি আর ফিরবার না পারি, আলীমের সহজ সরল উত্তর। ইকবাল আর না করেনা। আলীমের সাথে আবার ওদের বাড়িতে ফিরে আসে। ও মনে করেছে ওর মা ঘুমিয়ে আছে আসলে তিনি জেগে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে কারো চোখে ঘুম আসতেই পারেনা। নিঃশব্দে দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে আলীম। মায়ের পায়ে সালাম করে উঠে দাড়ায়। আলীমের মা তখন ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন বাজান আলীম আমারে না জানাইয়া চইলা যাইতে চাইছিলি! তুই ভাবছিলি আমি জানতি পারলি তরে যাইতে দিমুনা? কিন্তু বাজান তুই ভুল চিন্তা করছোস। আমি নিজেই তরে যাইতে কইতাম। দ্যাশটা অহন
পাকিস্তানীগো দহলে। বাংলার মানুষ শান্তিতে থাকতি পারতিছিনে। অহন তোরাইতো যুদ্ধ কইরা দ্যাশটারে বাঁচাবি। যা বাজান তোগেরে দোয়া কইরা দিলাম দ্যাশটা থেইকা সগল পাকিস্তানীগো তাড়ায়া দে। মরনের ভয় করিসনে বাজান। মায়ের কথা শুনে আলীমের বুকে সাহস হাজার গুন বেড়ে যায়। সেই সাথে ইকবালেরও। মাকে ওরা দুজনেই আবার সালাম করে। মা তখন নিজের ছেড়া শাড়ির আচঁল ছিড়ে দুজনের কপালে বেঁধে দেয়। বলে শত্রু যেই হউক তারে ছাড়বিনে। হেইডা তর মা বাপ ভাই যেই হউক লাশ ফালায় দিবি। মনে রাখবি তরা হইলি মুক্তি যোদ্ধা। তগো জীবনের চাইতে দ্যাশটা অনেক বড়। যা বাজান আমগো মত লক্ষ লক্ষ মা বোন তগো জন্যি দোয়া করতিছে। কথা গুলি বলার পরও আলীমের মায়ের চোখে কোন জল ছিলোনা। বরং অন্য রকম বীজয়ের আনন্দ খেলা করছিলো। মায়ের দোয়া নিয়ে বেরিয়ে গেল দুই নওজোয়ান। সাতরে সাতরে নবগঙ্গা নদী পার হয়ে পৌছে গেল শত্রুজিৎপুর আম বাগানে। মুক্তি যোদ্ধাদের একটা দল ওখানে অবস্থান করছিলো। সেই দলে যোগ দিয়ে আলীম,ইকবাল,জিহাদ,কবিরুল যুদ্ধ শুরু করলো। একের পর এক পাকিস্তানী সৈন্যদের ঘাটি ধ্বংস করতে লাগলো। আলীমের বাবা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতো। বাবাকে অনেক বার চাকরী ছেড়ে চলে আসতে বলেছে কিন্তু তিনি শোনেননি। তাই আলীমেরা তাকে প্রায় এক প্রকার ত্যাগ করেছে। ২২ আগষ্ট ১৯৭১ সাল সকাল ১০ টার দিকে আলীমেরা ধলহরা পাকিস্তানী ক্যাম্প আক্রমন করলো। এক পর্যায়ে আলীমের বাম হাতে গুলি লাগলো। কিন্তু তবুও সে দমলোনা। ডান হাতে একে ৪৭ রাইফেলের ট্রিগার টেনে ধরলো। মূর্হুতের মধ্যে সব পাকিস্তানী সৈন্য মারা পড়লো। মুক্তি বাহিনীর মধ্যে মাসুদ আর ইলিয়াস নামক দুই জন শহীদ হলো। দু'একজন পাকিস্তানী সৈন্য যারা বেঁচে ছিলো তারা জীবন নিয়ে টেনে হেচড়ে পালিয়ে গেল। ক্লান্ত দেহে গুলি লাগা হাত নিয়ে আলীমেরা যখন ফিরে আসছিলো। চারিদিকে তখন কেবল পাকিস্তানী সৈন্যদের লাশ আর লাশ। হঠাৎ একটা লাশের দিকে চোখ পড়তেই আলীমের পা অবশ হয়ে আসলো। বীর সৈনিক আলীমের দেহ নিস্তেজ হতে থাকলো। ঐ পাকিস্তানী সৈন্যটা আর কেউ নয় আলীমের জন্ম দাতা পিতা । চোখের অশ্রুটুকু মুছে ফেলে পিতার লাশ কাঁধে করে ফিরে এলো আলীম নামের এক মুক্তি যোদ্ধা। তার সাথে ইকবাল আর তার বন্ধুরা। উঠোনে বাবার লাশ নামিয়ে রেখে মাকে ডাকলো। ঘর থেকে মা বেরিয়ে আসলেন। চোখের সামনে তার স্বামীর লাশ। তার নিজের ছেলে তার বাবাকে মেরে মায়ের পরনে বিধবার শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তবুও আলীমের মায়ের মুখ দিয়ে একটুও কান্নার শব্দ বেরিয়ে আসলোনা। শুধু চোখের কোনা বেয়ে বেদনার দু'ফোটা অশ্রু ঝরে পড়লো। তিনি ছেলেকে শান্তনা দিয়ে বললেন 'কান্দিসনা বাজান ,এইডা কোন কান্দনের বিষয় না। দ্যাশের জন্যি এইডাই আসল করনীয় কাম। মাকে এবার সত্যিই স্যালুট দিলো আলীম এবং ইকবাল সহ মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের কাছে দেশ বড়। দেশের শত্রু যেই হোক তাকে তারা ছেড়ে দেবেনা। আবার ওদের যুদ্ধ শুরু হলো। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরলো আলীম । সেদিনও তার মাথায় মায়ের বেঁধে দেওয়া শাড়ির আচঁল ছিলো। অনেক দুরে থেকেও মা ছিলো সব সময় তার সাথে সাথে। আলীম এখন বৃদ্ধ। তার কাছে মনে হয় দেশটা স্বাধীন হয়নি। সেদিন যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো তাদের কেউ কেউ এখনো দম্ভ ভরে ঘুরে বেড়ায়। আলীমের মা মারা গেছেন এগার বছর আগে। এখনো মায়ের কবরের কাছে গিয়ে বৃদ্ধ আলীম কাঁদে আর বলে মা আবার তুমি জাইগা ওঠো। আমার কপালে তুমার শাড়ির আচঁল বাইন্দা দাও। আবার যুদ্ধে যাইতে অইবো। মা যুদ্ধ যে অহনও শ্যাষ অয়নাই। কিন্তু আলীমের মা আর উঠে আসেনা। বলেনা- যা বাজান দ্যাশটা থেইকা সগল শত্রু তাড়ায় দে। আলীম আর প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারেনা। সে তার এগারো বছরের ছেলেকে শিক্ষা দেয় বাজান আমরা দ্যাশটারে পুরোপুরি স্বাধীন করবার পারিনাই। তগো রাইখা গেলাম দ্যাশটারে সত্যিকারে শত্রু মুক্ত করিস। আলীমের এগারো বছরের ছেলেটা বাবার সেই উপদেশ আর স্বপ্ন বুকে নিয়ে বড় হতে থাকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বাবুল হোসেইন সুন্দর গল্প. আমারটা পড়ার আমন্ত্রন রইল
সূর্য {আমার কপালে তুমার শাড়ির আচঁল বাইন্দা দাও। আবার যুদ্ধে যাইতে অইবো।} .........অনেক ভালো লাগলো, আর সব সত্য দিয়ে গল্প হয়না ইতিহাস হতে পারে ...........
মেহেদী আল মাহমুদ এমন অনেক ঘটনার কারনেই আজ আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন
নাজমুল হাসান নিরো মাঝখানটা অতটা ভাল না হলেও শুরু আর শেষটা অসম্ভব ভাল হয়েছে। আমার "মুক্তিযুদ্ধ এবং নতুন প্রজন্ম" পড়ার আমন্ত্রণ রইল। http://www.golpokobita.com/golpokobita/article/410/537
বিন আরফান. asole apnar lekha ami যত পরি toto-i ovivoot হই, opurb lokhen apni. shoov kamona roilo. আমার লেখা বঙ্গলিপি পড়ার আমন্ত্রণ রইল. http://www.golpokobita.com/golpokobita/article/736/372
ইকবাল ভাল না লেগে উপায় কী। আমার নাম আছে এই গল্পে।
ফারাবী ভাল লাগলো।
বিষণ্ন সুমন বড় বেশি কল্পনা প্রসূত লিখা হয়ে গেল

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪