নীরব নিঝুম নিস্তঃব্দ রাত।শুন শান নীরবতা ।নিচের রাস্তায় হটাৎ হটাৎ কিছুক্ষণ পর পর একটি গাড়ী দ্রুত চলে যাবার শব্দ ভেসে আসে ছয়তলা পর্যন্ত। ইলেকট্রিক সুইসে ডিম লাইটটি জ্বলছে ঢিমা তালে ।তার থেকে ভেসে আসছে অসেনের অতি হালকা প্রান উন্মাদ করা সুপ্রিয় সুগন্ধ।(পারফিউম যুক্ত একধরনের বাতি)যে কাউকেই কিছুক্ষণের জন্য হলেও মাতাল করে দিতে পারে অনায়াসেই। রাত তিনটে বেজে বিশ মিনিট ।টিভির সাথে ডিশের ডেকোডারে ডিজিটাল ঘড়িটি তার অস্তিত্ব উপস্থাপন করছে অকৃপণ প্রাণে। হঠাৎ কুট করে রাহলের মোবাইলে বেজে উঠলো ম্যাসেঞ্জারে আসা এক শব্দবানীর আগমনি বার্তা।রাহুল পাশে শুয়ে থাকা শেলীর দিকে মাথা ঘুরিয়ে এক ফাঁক দেখে নিলো । শেলী ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। নিশ্চিত ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে রাহুল মোবাইলটা অতি সাবধানে হাতে নিয়ে ম্যাসেঞ্জার অপসনে গিয়ে র্টাচ করতেই চলে এলো কাংক্ষিত ম্যাসেজ......আই লাভ ইউ রাহুল।আই মিস ইউ রাহুল, আই অয়ান্ট ইউ রাহুল, কেন নট স্লীপ উইথআউট ইউ রাহুল, কেন নট , কেন নট এনি মোর রাহুল মোবাই টা বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। শেলী ঘুমের ভানে সবই টের পাচ্ছিলো।কিন্তু কিছুই বলার বা করার নেই শেলীর ।নীরবে হজম করা ছাড়া শেলী যে বড় বেশী অসহায়,স্বামী নামের রাহুল মানুষটির কাছে, চোখের জলে বুক ভাশাঁনো আর বালিশ ভিজানো ছাড়া শেলীর আর কিছুই করার নেই। সকালে রাহুল উঠে গোসলে গেলে প্রতিদিনের মত শেলী রাহুলের ম্যাসেজটা পড়ে নিয়ে পুনরায় রেখে দেয়।প্রতিদিন শেলী এ কাজটি করতে থাকে। কেবল জীবনের হিসেব কষে নিজের সাথে।আর কত দিন এ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারবে শেলী,কত দিন এভাবে নিজেকে সামাল দিতে পারবে!!! প্রতিদিনের মত খুব স্বাভাবিক ভাবেই শেলী কফি করে দেয় রাহুলকে । রাহুল চুপচাপ পান করে চলে যায় কর্মস্থলে।সংসারের খুব প্রয়োজনীয়তা ছাড়া রাহুল গত ছয় মাস যাবত শেলীর সাথে কোন কথা বলেনা বললেই চলে।চলছে এই ভাবেই। সকালে এই যাওয়া আর ফেরা সেই রাতে ।রাত বারটা কখনো তার ও পরে। শেলীর কোন প্রশ্ন করা বা কোন কথা জিজ্ঞেস করার আধিকার অনেক আগেই রাহুল গ্রাস করে গিলে খেয়েছে।তাই শেলীর কথা বলা বন্ধ।চেয়ে দেখা চোখের জলে ভাসা , নিদ্রাহীন রাত কাটানো ছাড়া শেলীর আর কিছুই করার নেই। সারা দিন একাই বাসায় কাটে শেলীর। যেন অঘোষিত এক বিদেশী জেল খানা ।এক সুখের পৃথিবী সাজিয়ে শেলীগত চার বছর আগে ,বাংলাদেশ থেকে ইটালী এসেছিলো জীবন সঙ্গী স্বামী রাহুলের হাত ধরে । সে স্বপ্ন ছিলো চির রংঙ্গীন চির সবুজ। প্রথম দুই বছর শেলী ছিলো খুবই সুখী। খুব ভালো ছিলো রাহুলকে নিয়ে । তৃতীয় বছরের মাথায় রাহুল ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে ।কোন এক ভিন্ন দেশী মেয়ের সাথে জড়িয়ে যায় পরকীয়ার সর্ম্পকে । শেলী বেপারটা বুঝতে পেরেছিলো আগে থেকেই কিন্তু গত ছয় মাস থেকে শেলী শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে ।রাহুলের মোবাইলে ছবি আর ম্যাসেজ দেখে ।ইংলিশ ম্যাসেজ থাকাতে বুজতে সুবিধা হয়েছে। এ নিয়ে বহুবার রাহুলের সাথে শালীর বাক –বিতণ্ডা হয়েছে ।বাড়া-বাড়ি ঝগড়া-ঝাটি হ্যেছে।রাহুল স্পষ্ট বলে দিয়েছে।হুমকি দিয়েছে ,শেলী যদি বাড়া-বাড়ি করে তাহলে শেলী কে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবে চিরত্রে।এমন কি ডিভোর্স দিতেও কার্পন্য করবে না । তাই শেলী মুখে তালা লাগিয়ে কেবল বোবা দৃশ্য গুলো দেখে যাচ্ছে।আর নিজেকে জালিয়ে জালিয়ে শেষ করছে। বাংলাদেশে শেলী মা-বাবাকে ভূলেও এসব কথা বলে না।ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবে এসব যঘন্য নিকৃষ্ট পরকিয়ার ঘটনা একমাত্র আমার সাথেই শেয়ার করে থাকতো। সব সময়ই বলতাম,চুপ থাকিস। যেভাবেই পারিস সংসারটা টিকিয়ে রাখিস।কোন ভাবে কোন অবস্থাতেই যেন দেশে চলে যেতে না হয়।নইলে সংসারটা ভেঙ্গে যাবে একবারেই।কখনো কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টার ফোনে কথা বলে ওকে বুঝিয়েছি,ওর কান্নার হা হা কার থামানোর চেষ্টা করেছি। শেলী থাকতো রোমের বাইরে অচেনা অজানা এক জায়গায়।ইটালিয়ান ভাষাটাও রাহুল শিখতে স্কুলে পাঠায়নি।শেলী চাইলেও রাহুলের অকাট্য যুক্তি ছিলো ভাষা শিখা কি দরকার ।তোমাকে তো চাকুরী করতরে দেব না।বাইরে যাবারও দরকার নেই। প্রথম দিকে রাহুল সময় মত ঘরে ফিরতো।অবসরে শেলীকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেত।মার্কেটে যেত,বাইরে খেতে যেত।ঘরে সময় কাটতো আনন্দে উল্লাসে। টিভি দেখা,রান্না-খাওয়া।রাহুল মজার মজার রেসেপি বের করে দিতে ইন্টারনেট থেকে।শেলী রান্না করে টেবিলে নিয়ে দুজনে মজা করে খেতো।শেলী কে রান্নায় সাহায্য করতো রাহুল।কত হাসি তামাশায় সময় কেটে যাত দ্রুত। কখনো কখনো পড়ন্ত বিকেলে শেলীর মন খুব উদাস হয়ে যেত রাহুলের সান্নিধ্য পাবার আশায় ঘরে ঘোমট গন্ধে যেন অক্সিজেনের বড় অভাব অনূভুত হতো।দম যেন বন্ধ হয়ে যেত।শেলী তখন নিচে নেমে বাসার আশে পাশে ঘুরে বেড়াতো। রাহুল ভঁয়ে বাংঙ্গালী মহিলাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হতোনা। হাই হেলো পর্যন্ত কিন্তু এতো পতি ভক্তি করে কি লাভ হলো? কি লাভ হলো নিজেকে ক্ষয়ে ক্ষয়ে তিলে তিলে এভাবে শেষ করে দিয়ে। তবুও শেলীর একটাই শান্তনা , শেলী স্বামীর ঘরে ।স্বামীর সংসারে বেঁচে আছে।সংসারের প্রদ্বীপটুকু নিভু নিভু হয়েও জ্বলে আছে ।বাংলাদেশে গিয়ে এ ব্যার্থ মুখ সবাইকে দেখানোর চেয়ে এই তো বেশ ভালো আছি।এভাবে থাকি তবুও রাহুলের সাথেই যেন আল্লাহ আমাকে রাখেন এই শেলীর কায়মনে প্রার্থনা ছিলো। এক রাতে আনুমানিক দশটার দিকে রাহুল সাদা চামড়ার সুন্দরী মেয়ে নিয়ে বাসায় হাজির হলো।খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে হাত ধরাধরি করে।শেলীর ভিতরের পৃথিবীতে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হলো।ঝড়ের তান্ডবে সাজানো বাগানের সব ফসল আশা ভরসা শেষ হয়ে গেল।প্রদ্বীপের ক্ষীন আলোটুকু পর্যন্ত নিভে গেল।শেলীর সারা শরীর থর থর করে কাপতে শুরু করলো। অনেক কষ্টে সাহস সঞ্চয় করে শেলী রাহুল কে বললো...এই মেয়ে কে? কেন তাকে বাসায় এনেছো? বের করে দাও এখনী......... না ও যাবেনা আমার বন্ধু , আজ রাতে থাকবে ।ছিঃ ছিঃ ছিঃ রাহুল তুমি এতো নিচে নেমে গেছো?এত সম্মান করেছি তোমায় ছিঃ ভাবতেও ঘৃনা লাগে । এখনি যদি এই মেয়ে কে বিদায় না করো তবে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো আমি বলে দিচ্ছি। তুমি ডাকবে পুলিশ ...হাঃ হাঃ হাঃ।তুমি ইতালিয়ান বলতে পারো না পুলিশ ডাকবে কি করে? হ্যাঁ জানি না, তবে পুলিশ ডাকতে ভাষা জানতে হবেনা। কল দেখেই পুলিশ চলে আসবে। রাহুল লাগেজে সব কাপড় চোপড় গুছিয়ে বলে ওকে তুমি থাক।আমি চিরতরে চলে যাছি। শেলী শত চেষ্টা করেও হাতে পায়ে ধরে কেদে কেটে ও রাহুলকে ফেরাতে পারেনি।রাহুল শেলীকে ত্যাগ করে চলে গেছে।রহুর গ্রাসে সব ধবংস হয়ে গেছে। শেলী সে দিন হয়ে উঠলো দূর্দান্ত এক দুঃসাহসী সৈনিক।কিভাবে,কেমন,করে কার সাহায্যে শেলী একেবারে সরাসরি চলে এলো রোমে আমার বাসায়, আমাকে আগাম কোন খবর না দিয়েই।আমার ঠিকানা টা ওর কাছে আগেই দেয়া ছিল।শেলী চিরতরে সংসার ত্যাগ করে চলে এলো পথে বেরিয়ে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।