মানুষ কাহারে বলি

প্রেম (ফেব্রুয়ারী ২০১৭)

জসিম উদ্দিন আহমেদ
  • ৩২
ঘুষখোর হিসেবে ফজলু দারোগার কুখ্যাতি আছে। পার্টি ধনী-গরীব, সহায়-অসহায়, কৃপণ-খরুচে- যেমনই হোক না কেন, দারোগা ফজলু ঠিকই তার ঘুষের টাকা আদায় করে নেয়। “টাকা না দিতে পারলে পিঠ চুলকাইয়া দাও” ধরণের প্রবাদ হয়ত ফজলুদের মত অফিসারদের কারণে এসেছে। এহেন দারোগা ফজলুর মুখে ভাল ভাল কথা শুনে ওসি সাহেবের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। হঠাৎ করে ফজলুর এমন পরিবর্তনের কারণ কী? তিনি দারোগ ফজলুকে বুঝান-
‘আমার কাছে খবর আছে। যে মেয়েটা খুন হয়েছে, সে প্রসটিটিউট ছিল। একেবারে রাস্তার বেশ্যা। কে বা কারা তাকে মেরেছে তা কেউ জানে না।’
স্যার! মেয়েটি পতিতা ছিল না, দারোগা ফজলু প্রতিবাদ করে। সে লোকের বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাত। ঘরে তার স্বামী আছে। স্বামী খুবই অসুস্থ। প্যারালাইজড্। স্ত্রীর সাহায্য ছাড়া নড়তে চড়তে পারে না। মেয়েটি সারাদিন লোকের বাসায় কাজ করে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে স্বামীর সেবা যতœ করত। স্বামী অচল হলেও সে তাকে ত্যাগ করেনি।
এ-সব ফালতু কিচ্ছা কাহিনী আমারে শুনায়েন না। কামের কাম কি করছেন সেইটা বলেন!
স্যার! আমি ইতোমধ্যে ঘটনার মোটিভ এবং খুনের রহস্য বের করে ফেলেছি। ঘটনার দিন মেয়েটির কাজ ছেড়ে বাসায় ফিরতে একটু রাত হয়। পথিমধ্যে নির্জন জায়গায় একদল দুর্বৃত্ত তাকে হাত পা বেঁধে রেপ করে। একেবারে গণধর্ষণ। আমি ধারণা করছি সংখ্যায় তারা ৮/১০ জন ছিল। বেশিও হতে পারে। ধর্ষণের পর মেয়েটিকে তারা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
ওসি সাহেব দারোগা ফজলুর কথা শুনে রেগে গিয়ে বললেন, শোনেন ফজলু সাহেব! নাঙ্গ বোঝেন, নাঙ্গ! পুলিশের চাকুরি হলো সাত নাঙ্গের ঘর করার মত! এখানে নানান লোকের মন যুগিয়ে চলতে হয় আমাদের। আপনি কী দেখেছেন বা জেনেছেন সেইটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো আপনি কী লিখছেন। আমি এ-ব্যাপারে আপনাকে ডিটেকশান দিচ্ছি। আপনি সেইভাবে রিপোর্টটি লিখে ফেলেন।
এমন একটা মর্মান্তিক ঘটনা স্যার! আপনি একটু সদয় হউন। মেয়েটি তো মরে খালাস! ওর স্বামীটার দুর্দশার শেষ নেই। অন্যের সাহায্য ছাড়া এক গ্লাস পানিও ঢেলে খেতে পারে না। মেয়েটি মারা যাওয়ার পর তাকে দেখার মত কেউ নেই। আমি অবসর পেলে টুকটাক খোঁজ খবর রাখি। একটু খাবার দাবার দিই।
খুনিদের সাজা হলে ঐ ব্যাটার অসুখ সেরে যাবে! ওসি সাহেব তাচ্ছিল্যের সুরে জিজ্ঞেস করেন।
এ-প্রশ্নের জবাব দারোগা ফজলুর জানা নেই। সে অসহায়ভাবে ওসি সাহেবকে বোঝানোর চেষ্টা করে।
ওসি সাহেব বলেন, শোনেন ফজলু সাহেব! আপনার মুখে এমন কথা মানায় না। থানার দারোগাদের মধ্যে আপনাকে সবচেয়ে ফিট মনে করেই এ-মামলার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আপনি এখন উল্টা পাল্টা বকছেন, তাই না? আপনার দ্বারা দারোগাগিরি হবে না। যান মিয়া! বাড়ী গিয়ে মসজিদের ইমামতি শুরু করেন!
দারোগা ফজলু ওসি সাহেবকে কেসের ব্যাপারে আরো কিছু বুঝাতে যাচ্ছিল। কিন্তু সেই মূহুর্তে থানায় কয়েকজন লোক এসে পড়ে। ওসি সাহেব নিজের চেয়ার ছেড়ে গেট পর্যন্ত এগিয়ে তাদের কে নিজের কামরায় নিয়ে বসালেন। দারোগা ফজলুকে নির্দেশ দিলেন মামলার ফাইল নিয়ে তার রুমে আসতে। ফজলু ফাইল নিয়ে আসলে তিনি তাকে একে একে আগতদের জবানবন্দি লিখতে বলেন। প্রথমে যিনি জবানবন্দি দিলেন তিনি একজন স্থানীয় নেতা। ফজলু তাকে যথেষ্ঠ সমীহ করে। কিন্তু আজকে এই লোকটিকে তার মোটেও সম্মান করতে ইচ্ছা করছে না। তার মনে হচ্ছে নেতা ভয়ানক কোন বদমতলব নিয়ে থানায় এসেছেন।
নেতা বক্তব্য দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ওসি সাহেবের সাথে গল্প করছেন। কোন এক মন্ত্রী একবার কী কান্ড করেছিলেন, কোন একজন এমপি নেতার কাছে কী অদ্ভুত আব্দার করেছিলেন-সবই এই জাতীয় গল্প। নেতার সব গল্পই মন্ত্রী এমপিদের নিয়ে। প্রতিটি কথার শেষে নেতা উচ্চস্বরে হাসছেন, যদিও তাঁর কথার ভিতর হাসির উপাদান নেই বললেই চলে। আর নেতার গল্পের শতকরা নব্বই ভাগই মিথ্যা বলে ফজলুর ধারনা। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জবানবন্দি দিচ্ছেন। ফজলু দু এক কলম লিখে মহা বিরক্তি নিয়ে বসে থাকছে। কিন্তু বিরক্তি প্রকাশ করতে পারছে না। ওসি সাহেব যেখানে নেতার প্রতিটি কথা আগ্রহ নিয়ে শুনছেন। শুধু শুনছেনই না, যেখানে যতটুকু রেসপনস্ করা দরকার ততটুকু করছেন মেপে মেপে। কাজেই দারোগা ফজলুর গল্প না শুনে কোন উপায় নেই। পুলিশের চাকুরির সবচেয়ে বড় অসুবিধা বোধ হয় এটা। পুলিশ নিজের ইচ্ছায় যতটুকু কাজ করে তার চেয়ে ঢের কাজ করতে হয় ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
নেতা আরেকটি গল্প শেষ করেছেন। তার গল্প শেষ হলেও হাসির রেশ এখনো কাটেনি। তিনি দারোগা ফজলুর দিকে চেয়ে বললেন, কোথায় ছিলাম ফজলু সাব?
ফজলু নেতাকে পূর্বের লাইনের খেই ধরিয়ে দিল। নেতা আবার জবানবন্দি শুরু করলেন, ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। মেয়েটির নাম ফরিদা। ফরিদার স্বামী প্যারালাইজড্। দীর্ঘদিন থেকে সে বিছানায় শয্যাশায়ী। স্বামীর অক্ষমতার কারণে জৈবিক চাহিদার তাড়নায় ফরিদা পরপরুষের সাথে মেলামেশা শুরু করে। এতে তার লাভ হয় দুই তরফা। নিজের খায়েশও মেটে আবার রুটি রুজির চিন্তাও দূর হয়। মেয়েটি পুরো এলাকার যুব সমাজকে শেষ করে দিচ্ছিল। দু একজন আমার কাছে এ ব্যাপারে নালিশও করেছিল। কিন্তু মন্ত্রী এমপিদের নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি যে এ-বিষয়টি নিয়ে আর বসার সময় হয়নি! নেতা এই পর্যন্ত বলে আবার ওসি সাহেবের সাথে গল্পে ভিড়ে গেলেন। তার এবারের গল্পের বিষয়বস্তু হলো কোন এক ডাকসাইটে নেতার স্ত্রী তার স্বামীর অক্ষমতার সুযোগে কিভাবে বাইরের লোকের সাথে অবাধে মেলামেশা করত সেই কাহিনী।

দারোগা ফজলু নেতার জবানবন্দি লেখা প্রায় শেষ করে ফেলেছে। প্রথমে তার মনে হয়েছিল নেতার নব্বই শতাংশ বয়ানই মিথ্যা। কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে মিথ্যার হার অনেক বেশি, সত্য এতে যৎসামান্য।
লোকজন চলে গেছে। ওসি সাহেব তার চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছেন। দারোগা ফজলু সামনে বসে আছে। দীর্ঘক্ষণ যাবৎ কেউ কোন কথা বলছে না। অবশেষে ওসি সাহেবই নিরবতা ভাঙ্গলেন।
ফজলু সাহেব! পাহাড়ে ঢিল মারলে কেবল নিজের হাতই ব্যাথা হয়, পাহাড়ের কোন ক্ষতি হয় না। তাই বলছি, সিস্টেম যা চায় সেইভাবে চলার চেষ্টা করুন। এই কান্ডটি যারা ঘটিয়েছে তারা কেউ সলিমুদ্দি-কলিমুদ্দি নয়। এরা একেবারে রাঘব বোয়াল। এদের বিরুদ্ধে গিয়ে আপনি কিচ্ছু করতে পারবেন না। তাই বলছি, এখানে কিছু টাকা আছে। সাথে নিয়ে যান। পরে আরও ম্যানেজ করে দেব। ওসি সাহেব তার ড্রয়ার খুলে কয়েক বান্ডিল টাকা বের করে দারোগা ফজলুর দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
ওসি সাহেবকে অবাক করে দিয়ে দারোগা ফজলু টাকা গুলো হাতের ঝাপটায় সরিয়ে দিল। এতে কিছু টাকা টেবিল হতে ছিটকে পড়ে গেল। ওসি সাহেব শান্ত দৃষ্টিতে একবার ফজলুর দিকে তাকালেন। তারপর টাকা গুলো কুড়িয়ে পুনরায় ড্রয়ারে রেখে দিলেন।
এই মামলাটি নিয়ে কয়েকদিন ধরে ওসি সাহেব খুব প্রেসারে আছেন। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উপর লেভেল থেকে বার বার চাপ দিচ্ছে। তাছাড়া তিনি আসামী পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। দারোগা ফজলু তার একান্ত আজ্ঞাবহ। টাকা পেলে ফজলু সবই করতে পারে বলে ওসি সাহেবের ধারনা ছিল। সেই দারোগা ফজলু এমন করে বেঁকে গেল কেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না। মানুষের সেন্টিমেন্ট বুঝা খুবই জটিল কাজ। তাঁর দীর্ঘ চাকুরির অভিজ্ঞতা থেকে তিনি দেখেছেন অনেক পিশাচ শ্রেনীর লোক মাঝে মাঝে এমন কাজ করে যা কেবল ফেরেস্তা-টাইপ লোকের দ্বারা করা সম্ভব। ফজলুর ক্ষেত্রেও এমন কিছু ঘটে থাকবে। কারণ যাই হোক না কেন, ওসি হিসেবে তিনি তো আর ফজলুর এই ঔদ্ধাত্য মেনে নিতে পারেন না। তিনি ফজলুর দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে বললেন, আপনার মত চুনোপুটির ক্ষমতা আমার জানা আছে। আপনার এই লম্ফঝম্প আমি এক্ষুণি বন্ধ করছি। এই মামলার তদন্তভার আমি আপনার কাছ থেকে নিয়ে নিলাম। আমি নিজেই এর তদন্ত করব এবং আপনার সামনেই এই ঘটনাকে মিথ্যা প্রমান করব। দেখি আপনি কার *** ছিড়েন!
ওসি সাহেবের রাগ দেখে দারোগা ফজলু কিছুটা ভড়কে গেছে। তারপরেও সে সাহসে ভর করে বলল, ওসি হিসেবে আপনার মামলার তদন্তভার প্রত্যাহারের ক্ষমতা আছে স্যার। তবে আমার অনুরোধ, সত্য ঘটনাটা আপনি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না স্যার! এতোবড় অন্যায় করলে খোদার আরশ কেঁপে যাবে স্যার!
ওসি সাহেব ফজলুর কথায় কান দিলেন না। তিনি ফজলুর কাছ থেকে মামলার ফাইল নিয়ে আলমারিতে রাখলেন। ফিরে এসে দেখেন ফজলু তখনও সেখানে বসে আছে। ফিরে এসে তিনি ফজলুকে অপমান করে তার রুম থেকে বের করে দিলেন।
গত দু তিন দিন যাবৎ বেশ কিছু চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে গেল। দারোগা ফজলু এই কয়েকদিন একদন্ড বসারও ফুসরত পায়নি। ওসি সাহেব তার কাছ থেকে মামলা ছিনিয়ে নেওয়ার পর নিজেই তদন্ত শুরু করেছিলেন। ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য তিনি সব রকম চেষ্টাই করেছিলেন। মামলার পক্ষে যেসব রেকর্ডপত্র ছিল তা নষ্ট করে নতুন করে সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়েছেন, ডাক্তারী সনদ পরিবর্তন করেছেন।
ফরিদা নামের মেয়েটি খুন হওয়ার পর থেকে দারোগা ফজলু তার অসুস্থ স্বামীকে সাধ্যমত দেখা শুনা করে। নিজে সব সময় আসতে পারে না বলে প্রতিবেশী একজনকে দায়িত্ব দিয়েছে অসহায় লোকটিকে আপাতত দেখে শুনে রাখার জন্য। ওসি সাহেব মামলার তদন্তভার নিয়ে প্রথমে যে নিষ্ঠুর কাজটি করলেন তা হলো ফরিদার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক নির্যাতন শুরু করলেন । দারোগা ফজলুর যে লোক তাকে দেখাশুনা করত সেই লোককে ওসি সাহেব তাড়িয়ে দেন। পাড়া প্রতিবেশীদের ডেকে বলে দেন, তারা যেন ফরিদার স্বামীর আশপাশে না আসে। মরে গেলেও না। তাহলে সবকটাকে তিনি মামলায় ফাঁসিয়ে দেবেন!
পাড়া-প্রতিবেশীরা ওসি সাহেবের আজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। কাজের ব্যস্ততায় ফজলু দুদিন খোঁজ খবর রাখতে পারেনি। ফলে অযত্ন, অবহেলা আর অনাহারে ফরিদার স্বামী বিছানায় মরে পড়েছিল। দারোগা ফজলু মারা যাওয়ার একদিনপর খবর পেয়ে লাশ ঘর থেকে বের করে কবর দেয়।
২.
দারোগা ফজলু ওসি সাহেবের চেয়ারে বসে আছে। সে চেয়ারটিকে ভাল করে দেখছে। হয়ত এই চেয়ারের অসীম শক্তির উৎস খোঁজার চেষ্টা করছে! যে শক্তি এত সহজে মানুষকে অমানুষ বানিয়ে ফেলে। কিন্তু সে যে থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পাবে এমনটা কখনো ভাবেনি। সেদিন ফরিদার স্বামীকে কবর দিয়ে ফজলু বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে। এমন সময় থানার একজন কনস্টেবল তাকে মোবাইল করে জানায় ওসি সাহেব হঠাৎ করে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দারোগা ফজলু দ্রুত থানায় গিয়ে দেখে ওসি সাহেব তার চেয়ারে বসে প্রচন্ড ঘামছেন। তিনি চিৎকার করে বলছেন, হায় আল্লাহ! আমার একি হলো! এ কোন পাপের সাজা তুমি দিলে গো এমন করে? আমার ডান হাত-পা যে একটু নাড়াতে পারছি না! হে খোদা! একি হলো আমার!
সকলে ধরাধরি করে ওসি সাহেবকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। আকস্মিক পক্ষাঘাতে ওসি সাহেবের ডান পাশটা একদম অকেঁজো হয়ে গেছে। ঠিক ফরিদার স্বামীর মত। ওসি সাহেবের অবর্তমানে থানার সিনিয়র দারোগা হিসেবে ফজলু ওসির দায়িত্ব পেয়েছে।
দীর্ঘ একমাস কেটে গেছে। ওসি সাহেব এখনো হাসপাতালে। দারোগা ফজলু ওসি হিসেবে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে। ওসি সাহেব অসুস্থ হওয়ার পর ফজলু পুনরায় ফরিদা হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে। হত্যা মামলায় জড়িত প্রতিটি আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে আজ। এই কাজটি করতে পেরে তার খুব আনন্দ হচ্ছে। সে বুঝতে পারে, তার মনে দীর্ঘদিন যাবৎ জমে থাকা একরাশ ঘৃনার কালো মেঘ আজ সরে গিয়েছে। মেঘ সরে গিয়ে সেখানে সূর্যের মত উঁকি দিচ্ছে একটি সহজ, সরল নিষ্পাপ কিশোরীর মুখ। সে চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে কিশোরীর মুখটিকে চেনার চেষ্টা করে। প্রথমে তার মনে হয় এটা নিহত ফরিদার মুখ। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হয় শুধু ফরিদা নয়, তার পাশে আরো একটি উজ্জ্বল কিশোরী-মুখ মিট মিট করে হাসছে। ফজলু ভালো করে দেখে মুখটিকে চিনতে পারে। আরে! এটাতো তার হারিয়ে যাওয়া বোন শারমিনের মুখ! যে দশ বছর আগেই মারা গেছে। শারমিনকে সে প্রায় স্বপ্নে দেখে। স্বপ্নে সে মুখ কালো করে, চোখে একরাশ ঘৃনা নিয়ে ফজলুর সামনে প্রায়ই হাজির হয়। কিন্তু আজ তার চোখে কোন ঘৃনা নেই। ঘৃনার বদলে আছে ভাইয়ের জন্য সহানুভূতি। ফজলু বুঝতে পারে ভাল কাজ করার অদ্ভুত রকম আনন্দ আছে। সে এখন থেকে নিয়মিত ভাল কাজ করবে। সে হয়ত ভাল কাজের প্রেমে পড়ে গেছে। যারা ভাল কাজের প্রেমে পড়ে তারা শুধু ভাল কাজ করতেই থাকে।
পুনশ্চ : দারোগা ফজলুর আদরের একমাত্র ছোট বোন শারমিন ছিল অসামান্য রূপসী একটি মেয়ে। কিন্তু সে ছিল বাক-প্রতিবন্ধী। একদিন রাতে সুযোগ পেয়ে মানুষরূপী একদল হায়েনা ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর। ফজলুর রহমান ওরফে দারোগ ফজলুর সেবার নতুন চাকুরি হলো। পিতার সহায় সম্বল যা ছিল বলতে গেলে সবকিছু বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সাব-ইন্সপেক্টরে ভর্তি হয়েছে মাত্র দুই মাস আগে। মেয়ের ঘটনায় মামলা-ফ্যাসাদ করলে ছেলের চাকুরি খেয়ে ফেলবে বলে হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। পাছে ছেলের সোনার হরিণ চাকুরিটা হারাতে হয়-এই ভয়ে ফজলুর বাবা মেয়ের অপমান গাঁয়ে সয়ে নিলেন। শারমিন কথা বলতে পারত না। কিন্তু যাদেরকে আল্লাহ কথা বলার শক্তি দিয়েছেন চোখের সামনে তাদের নির্বাক দেখে এই পৃথিবীর প্রতি একরাশ ঘৃনা নিয়ে শারমিন আত্মহত্যা করে। বোনের জন্য কিছু করতে না পারার যন্ত্রণা ফজলুকে তাড়িয়ে বেড়াত।



আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জসিম উদ্দিন আহমেদ কৃতজ্ঞতা জানবেন।
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম ।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
আশা জাগানিয়া এখন আপাতত মার্ক করে গেলাম। সময় সুযোগ মতো পড়বো। শুভেচ্ছা জানবেন।
ভালো লাগেনি ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
জসিম উদ্দিন আহমেদ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
আহা রুবন গল্প ভাল লিখেছেন। কিছু বানান ভুল আছে। ঘৃণা হবে, উক্তি ঊদ্ধরণ চিহ্নে দেননি ঠিক আছে, তবে আলাদা লাইনে দিলে হয়ত আরও সহজপাঠ্য হত। শুভ কামনা জানবেন।
satota 2007 সুন্দর গল্প। ভোট ও শুচেচ্ছা।

১২ ডিসেম্বর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪