রুপা আমাদের বাসায় এসেছে। আমি নিয়ে আসতে চাইনি এত তাড়াতাড়ি। এত তাড়াতাড়ি না নিয়ে আসতে চাওয়ার দুই ধরনের ভয় ছিল। এক হলো মা আর অন্য ভয়টি হলো বড় ভাই রিপন। ও ছাড়বে না আসবেই। তাই নওশিনকে হাত করে রেখেছিলাম। নওশিন আমার ছোট বোন। রুপা বাসায় ঢুকেই নওশিন নওশিন করে চিৎকার করে ডাকতে লাগল। নওশিন ডাক শুনে ওর রুমের দরজায় বের হয়েছে মাত্র অমনি খপ করে ওর হাত ধরে রুপা। এক নিশ্বাসে বলে ফেলে,তুমি নওশিন,খুব ভালো ছাত্রী আবার খুব ভালো রবীন্দ্র সঙ্গীত করো। শুধু এইটুকু জানতাম। এখন দেখছি তো তুমি দেখতেও মিষ্টি। আমার পরিচয় নিশ্চয় জানো না? আমার পরিচয় দেই, আমি ----। এমন সময় মা নওশিনের ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে,কে ও নওশিন। নওশিন চটপট জবাব দেয়,মা উনি রুপা আপু। ভাইয়ার বন্ধু। আবার মজার ব্যাপার হচ্ছে রুপা আপু তন্মির বড় বোন। মা এবার জিজ্ঞেস করে তন্মি কে? নওশিন অবাক হওয়ার ভান করে তন্মি কে চেন না! ঐ যে আমার জন্মদিনে মেরুন রংয়ের জামা পড়ে আসল। মা জবাবে বলে,দেখলে হয়তো চিনব। ওভাবে মনে নেই। এরপর মা রুপার সাথে কুশল বিনিময় করে ওদের দুজনকে গল্প করতে বলে চলে গেলেন। রুপা অবাক হলো। নওশিন তার সম্পর্কে সব জানে। আবার রুপার যে একটা ছোট বোন আছে তার নাম তন্মী তাও জানে। সব তথ্য দিয়ে নওশিনকে আপডেট করে রেখেছে। ভাবে রুপা। রুপা এবার নওশিন এর কাছ থেকে তার মিষ্টি কন্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনার জেদ ধরে। নওশিন না গাইতে চাইলেও গাইতে শুরু করল- আজি ঝরো ঝরো মুখরও বাদল দিনে ----। আমি তো মহাখুশি। নওশিন কিভাবে মাকে পটপট করে মিথ্যা কথা বলে বিষয়টা সহজ করে দিলো। এখন শুধু ভয় রিপন ভাইয়া। ভাইয়া হচ্ছে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। সারাটা দিন উল্টা পাল্টা করে। এটা ভাঙবে ওটা ভাঙবে। ঠাস ঠাস,ঝন ঝন করে শব্দের দূষন ছড়াবে পুরো বাসায়। অতিথি আসলে অতিথির কানের কাছে গিয়ে যে কোন জিনিষ দিয়ে শব্দ করে কান ঝালাফালা করবে। এজন্য অতিথি আসলেই ভাইয়াকে ওর রুমে আটকে রাখা হয়। আজকে নিশ্চয় আটকে রাখা হয়নি। ভাইয়ার রুমে সামনের দিকে পা বাড়াতেই চিৎকার আর ঠাস ঠাস শব্দ শোনা গেল। বুঝলাম নওশিন ভাইয়াকে আটকানোর কাজটাও করে রেখেছে। স্বস্তি পেলাম। শব্দ পেয়ে রুপা বের হয়ে এলো। পিছনে পিছনে নওশিন। ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কিসের শব্দ রওনক? আমি বললাম কিছু না। নওশিন আমার সাথে তাল মিলিয়ে তাই বলল। এরপর মা রুপাকে আপ্যায়ন এর কাজ সারলো। রুপাকে বিদায় দিয়ে এসে বাসায় ঢুকে দেখি হুলুস্থুল কর্মকান্ড শুরু করেছে ভাইয়া। ও নওশিনকে খামচে’ ধরেছে। চুল টেনে ধরেছে। দেখে আমি ছুটে যাই। ভাইয়া তুমি কি করছো? কি হয়েছে আমাকে বলো,আমাকে বলো। ভাইয়া সুবোদ বালকের মতো বলে,ও আমাকে ঘরে বন্ধ করেছে কেন? ওকে আমি মালব। এ্যাই কে এসেছিল বল, বল।এরকম কর্মকান্ড প্রতিনিয়ত করে ভাইয়া। রুপা প্রথম দিনে ভাইয়াকে দেখতে না পেলেও দ্বিতীয় দিন ঠিকই ভাইয়ার খপ্পড়ে পড়ে গেল। রুপা ড্রয়িং রুমে বসেছিল। হঠাৎ ভাইয়া একবারে কাছকাছি হয়ে ওর মুখের সামনে এসে হা হয়ে তাকিয়ে থাকল। রুপা অবাক হয়ে ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল কোন রা শব্দটিও করল না। ভেবেছিলাম ভাইয়াকে ওভাবে দেখে ভীষণ ভয় পাবে রুপা। কিন্তু না। ভাইয়া উল্টাপাল্টা কিছু করার আগেই আমি ওকে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করলাম। আমার সাথে এসে নওশিন ও ভাইয়াকে টানতে লাগল। কিন্তু দুজনের কেউই ওকে সরাতে পারছিলাম না। ভাইয়া সবার হাত ঝটকে দিয়ে রুপাকে বলল,সুন্দল সুন্দল! এ্যাই তুমি এতো সুন্দল কেন? রুপা শুধু হা হয়ে এসব কর্মকান্ড দেখতে লাগল। আমি আর নওশিন ভাইয়াকে আবার ধরে টানা শুরু করেছি। টেনে টেনে যখন প্রায় ভাইয়ার রুমের কাছে নিয়ে এসেছি ঠিক তখনই রুপা বলল,রওনক তুমি উনাকে ছেড়ে দাও। আমি নওশিন দুজনের কেউই ভাইয়ার হাত ছাড়লাম না। রুপা আমাদের কাছে এসে আমার হাত ছাড়িয়ে নিল। এরপর ভাইয়াকে সোফায় বসিয়ে নানান কথা জিজ্ঞেস করতে শুরু করল। ছোট বাচ্চদের মতো গল্প শুরু করল। আশ্চর্যের বিষয় ভাইয়া যেসব করে ওসব উল্টপাল্টা কিছুই করল না। খারাপ কোন আচরণও করল না। এই বিষয়টা দেখে মা আমি নওশিন সবাই অবাক হলাম। ভাইয়ার কথা সব রুপাকে খুলে বলেছি। রুপা বলেছে তাই বলে তাকে ঘরে আটকে রাখতে হবে। এটা অমানবিক। আমি প্রতিত্তরে কিছু বলিনি। রুপা এরপর প্রায় মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসতে শুরু করল। এসেই ভাইয়ার খোঁজ । ভাইয়ার রুমে বিছানায় বসে গল্প করে। মাঝে মাঝে খাইয়েও দেয় ভাইয়াকে। কোন কোন দিন আমি জানতেই পারিনা যে রুপা এসেছিল। পরে এসে শুনতে পাই রুপা আমাদের বাসায় এসেছিল। রুপা আমাদের বাসার সাথে এমন ভাবে মিশে গেল মনে হচ্ছিল সে এই পরিবারের সদস্য। এক সময় তো এই পরিবারের সদস্য হবে আমার সাথে বিয়ে হয়ে গেলে । বিয়ের আগেই পরিবারের সবার সাথে কত আন্তরিক হয়ে গেছে দেখে আমার খুব ভালো লাগে। সবচে’ বেশি ভালো লাগে ভাইয়াকে দেখে। ভাইয়া এখন আর কোন উল্টা পাল্টা করে না। নওশিনকে খামচায় না। চুলও টেনে ধরে না। আমাকে গুতোও দেয় না। সে শুধু শান্ত বালকের মতো আসবে যা প্রয়োজন তা মিউ মিউ করে বলে নিয়ে চলে যাবে। ভাইয়ার কর্মকান্ড দেখে বাসার সবাই খুশি হবে। ভাইয়া যদি সত্যি সত্যি পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠে তাহলে সব্বাই খুশি হবে। সবচে’ বেশি খুশি হবে মা। রুপার সাথে আর আমার আগের মতো অত ঘনঘন ক্যাম্পাসে আড্ডা হয় না। দেখা হয় মাঝে মাঝে। যখনই অবসর পায় তখনই সে আমাদের বাসায় ছুটে আসে। ভাইয়ার সাথে ছোট বাচ্চদের মতো গেঞ্জি,শার্ট পড়িয়ে দেয়। গল্প করে। বল নিয়ে দুজনে খেলাতেও মেতে উঠে। মাঝে মাঝে আমার হিংসা হয়। কিন্তু পরক্ষনে আবার নিজেকে ছি ছি বলি। রুপা তো আমার পরিবারের একজনকে স্বাভাবিক করার জন্য এসব করছে। একদিন দেখলাম ভাইয়াকে নিয়ে রুপা পার্কে এসেছে। আমি দূর থেকে দেখলাম। বাসায় এসে শুনি ভাইয়া কে কোথাও খুঁেজ পাওয়া যাচ্ছে না। বুঝলাম কাউকে না বলেই রুপা ভাইয়াকে নিয়ে বের হয়েছে। আমরা সবাই যমুনা ফিউচার পার্কে এসেছি বেড়াতে। রুপা বায়না ধরল ভাইয়াকে নিয়ে বেড়াতে যাবে সাথে নওশিন এবং আমি। পার্কে বিভিন্ন রাইডে চড়িয়ে খুব মজা করল রুপা ভাইয়া আর নওশিন। আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলাম। ভাইয়া খুব আনন্দিত। তার আশে পাশে যেন রংয়ের ছড়াছড়ি। একসময় ভাইয়াকে নওশিন খাইয়ে দিচ্ছিল। ঐ সময় রুপা আমার কাছে এসে আর একটা বায়না ধরল। ও যা বলল তা নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। ও বলল,রওনক তুমি একদম মন খারাপ করবা না। আমি একটা সিরিয়াস কথা বলব। আমি শোনার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করলাম। সিরিয়াস কথা বলার আগে ও নানান ভাবে বোঝাল যেন আমি কোন ভাবেই ভেঙে না পড়ি। মন যেন খারাপ না করি। ও বলল আমি রিপনকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। ওর শিশু সুলভ আচরণ আমাকে এতই মুগ্ধ করেছে তোমাকে সেটা কোন ভাবেই বোঝাতে পারব না। এরপর আরও কি কি যেন বলল। আমি তখন একবারে অন্য জগতে হারিয়ে গিয়েছি। সেই জগতে অন্ধকারের ঘনঘটা। আমার পুরো মেঘ মেঘলা। সকল রং যেন ধূসর হয়ে গেছে। ঝাপসা চোখে ভাইয়ার দিকে তাকাই। ভাইয়ার হাত ধরে হাটছে রুপা। ভাইয়ার মাথার উপরে ডানে বায়ে যেন রংধনুরা ঘিরে ঝক ঝক করে আলো ছড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি সুতো ছাড়া আকাশে যে রঙ্গিন ঘুড়ি উড়াচ্ছি। সেই ঘুড়ি অন্যের আকাশে মনের আনন্দে ইচ্ছে মতো উড়ে বেড়াচ্ছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।