একুশের চেতনা এবং প্রিয় জন্মভূমি

বাংলা আমার চেতনা (ফেব্রুয়ারী ২০১৬)

ইমরানুল হক বেলাল
  • 0
  • ৬০
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি।•••"
শীতে ঘন কুয়াশায় ঢাকা চারিদিক। গভীর রাত।হঠাৎ মাইকে বাজতে থাকা বাংলার চেতনায় চির অমর এ গানটি শোনার শব্দে আমার ঘুম ভাঙলো।
আমার দাদু আগে থেকেই তাড়া দিয়েছিলেন।
শোয়া অবস্থা বিছানার পাশে এসে বলল,
-কিরে ইমু এখনও ঘুমাচ্ছিস•••?
শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাবি না?'
আমি বিরক্ত স্বরে বললাম, দাদু আমি ঘুমাচ্ছি কেন ডিসটার্ব করেছো?
দাদু আমার কথা শুনে অবাক নয়নে তাকিয়ে বলল,
হেরে অতবাগা, নরকের কীট!
তোর এখনও বুঝার বয়স হয়নি।
সেই কথাগুলো শৈশব বেলার গল্প। তখন আমার বয়স ছিল দশ বৎসর। মুক্তিযুদ্ধ,শহীদ ভাষা দিবস, কিংবা স্বাধীনতা•••। এসব বিষয়ে তখনো আমার কিছুই জানা ছিলনা।
তবে দাদার কথা গুলো এখনো আমার মনে পড়ে।
সেই দিন না না বললেও দাদার সাথে শহীদ মিনারে গিয়েছিলাম ঠিকই।
আমি যতদুর জানি যদিও তিনি মুক্তিযুদ্ধা ছিলেন না কিন্তু যুদ্ধে অংশ করেছিলেন ঠিকই।তাঁর হৃদয়ে ছিল দেশ প্রেম।
শেষ রাতে দূরে মসজিদে শোনা যাচ্ছে আযানের
স্পন্দন---
আর আযান দেয়া শেষ হতেই চারিদিকে মাইকে বেজে উঠেছে নানান রকমের একুশেরগান।
সারা শহর উৎসবে মাতোয়ারা।কেবল মানুষ আর মানুষ।সারা রাস্তায় আনাচেকানাচে দোকানপাটে
পত-পত করে উড়ছে আমাদের জাতীয় পতাকা।
সবাই নানান রঙের ফুল সাজিয়ে হাতে-হাতে নিয়ে এক সাথে দল বেঁধে হেঁটে চলেছে।
আজ কেন যেন কিসের টানে সবার মনে এক উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়েছে। বুঝতে পারলাম,সবাই শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাচ্ছে•••। আমরাও গুটি-গুটি পায়ে হেঁটে চললাম। হঠাৎ আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগে উঠল।
-দাদু, 'শহীদ মিনার" মানে এটা আবার কি•••?
এত মানুষ যে ওখানে ফুল দিয়ে আসে কিসের জন্য?
শহীদ দিবস এটা কিসের জন্য পালিত হয়?
দাদু বললেন, আরে বোকা! এত বড় হয়েছিস এখনো দেখছি কিছুই বুঝতে শিখিসনি।
তার পর তিনি বলতে শুরু করলেন। আজ যে একুশে ফেব্রুয়ারি এটাকে-"শহীদ ভাষা দিবস" বলা হয়। এই জন্য বলা হয় যে- বাংলার চেতনায় আমাদের জাতীয় জীবনে আচার্য অনুভূতিময় আনন্দ বেদনা শিহরিত এক উজ্জ্বল দিন। মহান স্মৃতি-চিত্ত এ দিনে সেই ইতিহাসের পাতায় এক অনন্য মাইলফলক মহান ভাষা আন্দোলন।পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের মাধ্যমে উন্মেষ ঘটেছিল বাঙালির ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার।এই চেতনার ধারাই ক্রমবিকশিত হয়েছে 1962-র শিক্ষা আন্দোলন,1966-র ছয় দফা আন্দোল, 1969-এর এগারো দফা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে।
এসব আন্দোলনের উতুঙ প্রচন্ডতার মুখে ঘটে যায় 69-এর গণ অভ্যুত্থানের স্বাধিকার চেতনা ক্রমেই রূপ নেয় জাতীয় স্বাধীনতার আন্দোলনে। সেদিন পাকিস্তানি শাসনামলে বাঙালির জাতিগত বিকাশের ধারাকে নস্যাৎ করার জন্যে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলেছিল। উর্দুকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করা হয়েছিল।
মাতৃভাষার বিরুদ্ধে এ হীন ষড়যন্ত্রকে তখন বাঙালি রুখে দাঁড়িয়ে ছিল। 1952 সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে রক্ত ও আত্মহতির বিনিময়ে অর্জন করেছে বিজয়।
এমনি করেই 1961 সালের 19 মে ভারতের আসাম প্রদেশের শিলচর ষ্টেশনে অসমিয়া ও বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা আদায়ের লড়াইয়ে শহীদ হয়েছিল এগারো জন বাঙালি। সারা বিশ্বে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে এ দুটি আত্মত্যাগের ঘটনা অনন্য ইতিহাস হয়ে আছে।
তার পর যত দিন যায়, বয়স বাড়ার সাথে বুঝতে শিখি•••।
ঘুরে ফিরে বারবার শহীদ দিবস আসে। কিন্তু আমার দাদা আজ পৃথিবীতে বেচেঁ নেই। আজ তেরোটি বসন্ত কেটে গেল। এখনো দাদার দেওয়া আদেশ গুলি মেনে চলি। মৃত্যু পূর্বে তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছিলেন, তুমি বড় হয়ে একজন আদর্শবান মানুষ হবে। দেশকে ভালোবেসো। আমরা যুদ্ধ করেছি স্বাধীনতার জন্য। আর তোমরা যুদ্ধ করবে দেশকে রক্ষা করার জন্য।
তার পর ইতিহাস পড়ে আরো জেনেছি, সেদিন বাঙালির স্বাধীনতা চেতনাকে নস্যাৎ করার হীন প্রয়াসে 71-এর 25 মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক জল্লাদ ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী হিংস শাপদের মতো তীক্ষ্ন নখদর্পণে বিস্তার করে অতর্কিত হানা দিয়েছিল সুপ্তিমগ্ন জনপদ।তার পর দীর্ঘ নয় মাস ধরে প্রতিটি দিন ও প্রতিটি রাতকে কলংকিত করেছে পাকিস্তানি দখলদর জল্লাদ বাহিনী। নিরস্ত নারী-পুরুষের শিশু-কিশোর -তরুণের যুবা-বৃদ্ধের রক্ত ধারার রঞ্জিত করেছে বাংলার শ্যামল মাটি আর নদীর স্বচ্ছ ধারাকে। শত সহস্র মা বোনের ওপর চালিয়েছে পাশবিক নির্যাতন। লুটতরাজ আর তছনছ করেছে জনপদ। জল্লাদ বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডব থেকে প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়েছে কোটি কোটি নিঃসম্বল মানুষ।সেই 71-এর দিনগুলোর নির্মম নির্যাতন মেনে নেয়নি বাংলার মানুষ। ওদের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধে নেমেছিল হাজার হাজার দেশপ্রেমিক।সমগ্র জাতি জাপিয়ে পড়েছিল মুক্তির সংগ্রামে।ছাএ-শিক্ষক,শিল্পী-সাহিত্যিক,ডাক্তার প্রকৌশলী,কৃষক-শ্রমিক,নারী-পুরুষ,হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ব-খৃষটান। এখন স্পন এসব রক্ত রঞ্জিত শিহরণ গুলি ভাবলে আমাদের মন উতলা হয়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখের বিষয়,আমরা পূর্ব ইতিহাস ভুলে চোখ-কান বন্ধ করে স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ভুলতে বসেছি।নির্বিকারভাবে অবহেলা করে চলেছি আমাদের কর্তব্যবোধ, শহীদের আত্মত্যাগের
উদ্দেশ্য আদর্শ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি। ক্ষুধা-দারিদ্র, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত স্বদেশ গড়ায় অপারগতায় লজ্জা আমরা কি দিয়ে লুকিয়ে রাখবো,আজ আর নয় মরুভূমির উটের মত বালিতে মুখ গুঁজে বসে থাকা।আজ আমাদের মা,মাতৃভাষা ও প্রিয় জন্মভূমির আলো বাতাসে সত্যনিষ্ঠ সাহসী কথাপূর্ণ মানুষের প্রয়োজন।যেমন করে মা,মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি সঙ্গে ওতেপ্রাতভাবে জড়িত আমাদের জীবন ও আমাদের অস্তিত্ব। আমাদের সুখ-দুঃখ,আনন্দ-বেদনা-ইচ্ছা- অনিচ্ছা,আকুলতা-ব্যাকুলতা প্রকাশের ভাষা মাতৃভাষা। জন্ম হতে মৃত্যু অবধি আমাদের পরম আশ্রয় আমাদের মাতৃভূমি। সন্তানের কাছে মায়ের আসন যেমন অতুলনীয়, মায়ের কাছে সন্তানের ঋণ ও অপরিশোধিত।মায়ের কাছে সন্তানের কোনো ভেদ নেই। দুঃখ ও যন্ত্রণা সয়ে,দৈন্য ও তুচ্ছতাকে বরণ করে মা হন সর্বংসহা। মায়ের কাছ থেকে আমরা যেমন পাই অনির্বাচনীয় ভালোবাসা। মায়ের ভালোবাসা পেয়ে যেমন আমাদের মন প্রাণ আনন্দে ভরে ওঠে তেমনি প্রীতি দিয়ে অন্যকে ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীকেও আমরা আনন্দভূবনে পরিণত করতে পারি।
আর এই জন্য এগিয়ে আসতে হবে নতুন প্রজন্মকে।
তখনি হয়তোবা হিংস্র হায়েনার কবল থেকে রক্ষা হবে দেশ। একাত্তরের মত এক পালা রক্তের ফিনকি ঝরে পড়ে এদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হবে মানবতা ও শান্তি।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

২৬ অক্টোবর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪