জেগে জেগে মিষ্ দুঃস্বপ্ন দেখছে যেন মাহফুজ।আজ তার আসমার কথাগুলো খুব মনে পড়ছে।তাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে বারান্দায় ঘুমচোখে সেইদিনগুলি মনে করতে লাগল সে। 'গুড মর্ণিং আসমা।কেমন আছেন আপনি',কথাটি বলল মাহফুজ।সে আসমার খুব ভাল ঘরোয়া বন্ধু।আসমা অসুস্থ শুনে ছুটে এসেছে তার বাসায়। আসমার মা বাবা বেশ ভালই চিনে ছেলেটাকে।তাই এই সাতসকালে জোয়ান ছেলেটাকে বাসায় allow করতে দ্বিধাবোধ করেনি তারা।আসমা অবশ্য মাহফুজের ব্যাপারে তেমন সিরিয়াস না।জাস্ট বন্ধু হিসেবে যতটুকু কথা বলা উচিত ততটুকুই বলে সে । মাহফুজের গুড মর্ণিং উইশের রিপ্লাই দিল আসমা এভাবে,'হ্যালো দোস্ত।কি অবস্থা তোর(ঘুমকাতর চোখে)।এই সকালে এখানে কেন?'এটা শুনে মাহফুজ বলল,'তোকপ দেখতে আর তর সইছিল না।এছাড়া তোর অসুস্থতার কথা শুনে সোজা তোর বাসায় চলে আসলাম'। তারপর আসমা বলল,'আমাকে এতটা কেয়ার করিস তুই?'হ্যা করি তো।তুই ছাড়া আমার আর আছে টা কে বল।',বলল মাহফুজ।আসমা উত্তর দিল,'আচ্ছা যা যা আর ঢং করতে হবেনা।পোলার ইমোশন দেখে মনে হয় সে প্রেমের উপর মাস্টার্স পাশ।নাস্তা করেছিস তুই'।'না দোস্ত।সকালে জাস্ট দ্রুত এক কাপ চা খেয়ে বের হয়ে গেলাম',বলল মাহফুজ। এবার আড়মোড়া ছেড়ে উঠল আসমা।একটু সুস্থ লাগছে তার এখন।আজ সে বেড়াতে যেতে চায়।সঙ্গে নিয়ে যাবে মাহফুজ কে যে কিনা তার সেই ছোট্টবেলার সঙ্গী।এখনো কত কেয়ার করে মাহফুজ তাকে।ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে ছেলেটা।পরিবারে একমাত্র বাবাই আছে তার আপনজন।আর আছে আসমাদের পরিবার যাদের সাথে তার ১২ বছরের জানাশোনা। সময়মত বের হয়ে গেল আসমা আর মাহফুজ।আজ তারা ফয়েজ লেক যাবে।জায়গাটা নিয়ে বহুদিন ধরে আসমার অনেক আগ্রহ।সে শুনেছে সেখানে নাকি অনেক পাহাড় ও লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আর সবুজ শ্যামল প্রকৃতি বেশ ভালোবাসে মেয়েটি।তাই মাহফুজের সাথে প্রথমে কিছু রাইডে চড়ে সোজা হাটা দিল সবুজ সৌন্দর্যের খোজে।এভাবে তারা প্রায় ২ ঘন্টা হাটল।আস্তে আস্তে দুপুর হয়ে গেল।ছবিটবি তুলা শেষে লাঞ্চ করে দুজনে ফিরল যার যার বাসায়।ঘটনাটা এত সিম্পল ভাবে শেষ হতে হতেও হলোনা।হঠাৎ করে আসমার সাইনাসের সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।হয়ত হঠাৎ এক্সট্রা খোলামেলা পরিবেশে ঘোরাফেরার কারণে হয়েছে এমনটা।সাথে সাথে খবরটা গেল মাহফুজের কানে।সে দ্রুত আবার চলে আসল আসমাদের বাসায়।এবার মনে হয় হাসপাতালে নিয়েই যেতে হবে আসমাকে।খুব কষ্ট হচ্ছিল আসমার।পরিস্থিতি সিরিয়াস।তাড়াহুরা করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হল।
হাসপাতালের ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে শুয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছে আসমা সুলতানা নামের মেয়েটি। ছোটবেলা থেকে তার ড্রইং এর খুব শখ।কয়েকটি প্রতিযোগিতায় প্রথম ও হয়েছিল সে।গ্রামবাংলার প্রকৃতি,পাহাড়পর্বত,নদীনালা ছিল তার ছবি আকার বিষয়।আজ সবগুলো ছবি যেন ঝাপসা হয়ে ভাসছে তার চোখে আর অশ্রু যেন বরফজমা হয়ে দলা হয়ে চাচ্ছে বের হতে।কিন্তু হাসপাতালের এয়ারকন্ডিশন রুমে তা সহজ ছিলনা। বাইরে দাড়িয়ে ধীরে ধীরে কান্নার ফোটা ফেলছে মাহফুজ।ছেলেদের নাকি কান্না করা শোভা পায়না।তবুও আজ অশ্রু যেন বাধ মানতে চাইছেনা। কত স্মৃতি জমে আছে আসমা সুলতানার সাথে।ছোটবেলা থেকে একসাথে খেলাধূলা করে বেড়ে উঠেছে তারা। বয়স বাড়লেও তাদের মাঝের আত্মিক ও আন্তরিকতার টান যেন একটুও যেন কমেনি।একে অপরের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল।মাহফুজের মায়ের মৃত্যুর পর আসমা ও তার পরিবার তাকে এতটা মানসিক সাপোর্ট দিয়েছিল যার জন্য আজও যথেষ্ট কৃতজ্ঞ মাহফুজ।কিন্তু হঠাৎ করেই যেন ছন্দপতন।আসমার শ্বাসকষ্টের সমস্যাটা দুই বছর ধরে চলছে।ডাক্তারের কথামত ঔষুধ খেয়ে, ডায়েট মেনে চললেও যেন সারছিলোনা এই অসুখ কিছুতে।দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছিল সমস্যাটা।নেব্যুলাইজার মেশিন যেন আসমার নিত্যসঙ্গী হয়ে যায়।আসমার শ্বাসকষ্ট একসময় মরণব্যাধি হয়ে দাড়ায়।তার দূর্বল শরীর আজ সকালে হঠাৎ অদ্ভুত রকম সতেজ ও সুস্থ অনুভূত হওয়ায় এই পাগলী মেয়েটা বেড়াতে যেতে জোর করেছিল।মাহফুজ আর আসমার মা অনেকবার মানা করলেও আসমার মন যে একেবারে মানছিলনা এসব।সে আজ যাবেই।এটা যেন তার শেষ জার্নি!!!মনে করতে করতে আরেক ফোটা চোখের পানি ফেলল মাহফুজ। ওদিকে আসমার মায়ের অস্থিরতা যেন সুনামিকে হার মানাবে। একমাত্র মেয়ের এই আর্তনাদ যেন তার বুকে শেল হয়ে বাধছে।অনেক অপেক্ষার পর বিয়ের ১০ বছরের মাথায় প্রথম মেয়েসন্তান হিসেবে পান আসমাকে।আসমার বাবা একজন বিজন্যাসম্যান। তবুও এত ব্যস্ততার মাঝে মেয়ের প্রতি ভালোবাসার টানে ছুটে এসেছেন হাসপাতালে।যদিও আসমার মা আর আসমা রা কয়েক বছর ধরে আলাদা ছিল আসমার বাবা থেকে।এটা নিয়ে আসমার বাবার যেন আজ আফসোস আর হতাশার সীমা নেই।
কাহিনী যেন শেষ দিকে মোড় নিচ্ছে।ডাক্তাররা বলছেন আসমার বাচার আশা জাস্ট ১%.আল্লাহ চাইলে বাচবে আসমা।প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে আসমার নাক গলা দিয়ে।রক্তশূন্যতা থেকে বাচাতে অনবরত ব্লাড দিতে হচ্ছে। আসমার সাথে মাহফুজের রক্তের গ্রুপ না মিললেও সে যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে ব্লাডব্যাংক ও বন্ধুবান্ধব থেকে রক্ত কালেকশনের।তবুও যেন শেষ রক্ষা হয় আসমার। এভাবে সন্ধ্যা হয়ে গেল।আসমা একটু করে যেন জ্ঞান ফিরে পেল।ডক্টরকে অনুরোধ করল যে সে মাহফুজের সাথে কিছু কথা বলবে।মাহফুজ প্রবেশ করল আসমার রুমে।আসমা মাহফুজকে দেখে অশ্রসিক্ত চোখে বলল, 'দোস্ত আমাকে নিয়ে এত ভাবিসনা।আমার মা টাকে দেখিস।আমার ড্রইং খাতাটা আজ থেকে তোকে দিয়ে দিলাম।আমার স্মৃতি যদি রাখতে চাস ধরে,তাহলে আজ থেকে ড্রইং শিখায় মন দে।আর প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো তুলে রাখবি আমার খাতায়। বুঝলি পাগলা।আর পড়াশুনায় সিরিয়াস হ।তোকে ভাল একজন আর্কিটেক্ট হতে হবে। এরপর একটা আমার মত পাগলী সুন্দরী কে বিয়ে করে নিস।বৌকে আমার কীর্তিকলাপের কথা বলে বলে হাসিস না আবার।আমার স্মৃতি জাস্ট তোর হৃদয় আর ড্রইং খাতাতে সীমাবদ্ধ থাকলেই আমি খুশি'।এটা শুনে মাহফুজ বলে ফেলল,'দোস্ত আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবনা।আমি তোকে যে ভালোবাসি।আমাকে ফেলে চলে যাসনা অসীম দূরে'।আসমা বলল,'তা আর হয়না দোস্ত। আমার সময় মনে হয় শেষ।'আমি....বলতেই শ্বাসআটকে গেল আসমার।ডাক্তার নার্স এসে গেল রুমে। সেখান থেকে বের হয়ে গেল মাহফুজ।
মেজর অপারেশন হলো আসমার।খরচপাতি সব আসমার বাবাই দিল।কিন্তু বাচানো গেলনা আসমাকে।মাহফুজ আর আসমার মা যেন ভেসে গেল কান্নার বন্যায়।সেদিনের আঘাত সইতে পারেনি আসমার কঠোর চরিত্রের বাবাও।আসমার মার সাথে তার সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিল তারা। আসমার ড্রইং খাতা দিয়ে দেওয়া হলো মাহফুজকে।আসমাকে হারানোর দুঃখ ভুলতে না পেরে আরেকটি বাচ্চা অ্যাডাপ্ট করল এতিমখানা থেকে আসমার মাবাবা।নাম রাখল আসমা চৌধুরী।স্বামীর টাইটেল মানল এবার আসমার আম্মা। চারবছর পরের কথা।দুঃস্বপ্ন ভাঙল তখনি।আজ অনেক বড় আর্কিটেক্ট হয়ে গেছে ততদিনে মাহফুজ।সে আবার এক ড্রইং একাডেমী খুলেছে ছোটদের জন্য। সেখানে জাস্ট গ্রামবাংলার দেশীয় প্রকৃতির রূপের চর্চা করা হয় রংতুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে।সে একটা বিয়েও করছে।তার বউয়ের নাম ও আসমা সুলতানা!!! হঠাৎ করে মাহফুজের কানে ভেসে আসল এক চেনা আওয়াজ,'ওই মাহফুজ পাগলা,আমাকে ভুলে গেলি এত তাড়াতাড়ি'.মাহফুজ একটু বাইরে গিয়ে মনে মনে বলতে লাগল,ভুলিনি তোকে আসমা।তোকে স্বপ্নে ভুলা সম্ভব না'।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এম এ রউফ
বাংলা সাহিত্যে ইংরেজির অবতরণ। অনেক বাক্যে শ্রুতিমধুরতা মানানসইয়তা নষ্ট করে দেয়। ইমারজেন্সি ওয়ার্ড, আর্কিটেক্ট এগুলি ঠিক আছে কিন্তু allow, জাস্ট, অ্যাডাপ্ট এই শব্দগুলির পরিবর্তে বাংলা শব্দ অনুমতি, এইমাত্র, খাপ খাইয়ে নেয়া বা পরিবেশের সাথে মিশে যাওয়া এগুলি ব্যবহার করলে ভাল হত--এটা আমার মত। শুভকামনা।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।