মানুষের স্বপ্ন বা আশাগুলি খুব তাড়াতাড়ি পরিবর্তিত হয়।এগুলোর রং প্রতিদিন বদল হতেই থাকে।একদিন দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙার পর সিদ্ধান্ত নিলাম মানব সেবায় মন দিব।মানুষের হৃদয় জয় করাটাই হবে আমার আসল লক্ষ্য।সেই চিন্তাটাকে বাস্তবে রূপ দিতে বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়।ও বলে রাখি,আমি একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট(হবু ডাক্তার)।তাই নিঃস্বার্থ সেবাধর্ম শেখাটা হয়ত আমার জন্য অত্যাবশ্যক।যদিও আমি খুব আলসে প্রকৃতির মানুষ ছিলাম।মা কে ঘরের সব কাজ চাপিয়ে দিতাম মনের অজান্তেই।আজ অবশ্য সেজন্য খুব অনুশোচনা হচ্ছে।ভাবছি মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলে মনে হয় মা মাফ করে দিবেন।কিন্তু আমার সহপাঠীদের হৃদয় জয় করা কি এতটা সহজ হবে?এমনিতেই মেডিকেলের পড়াশুনার চাপ টা ঐতিহাসিক ভাবেই অনেক বেশি।ছোটখাটো বইয়ের হিমালয় ডিঙিয়েই ডাক্তার হতে হয়।এটা ভাবলেই অবশ্য আমার মনে খুব আতঙ্ক তৈরি হয়।এত পড়ালেখা শিখে কি বিদ্যাসাগর হব নাকি সাগরে ডুবন্ত মানুষকে সাহায্য করার উপযুক্ত হব সেটাই তো বুঝে উঠতে পারছিনা।আচ্ছা এই অদ্ভুত টপিক আপাতত বাদ দিই।রাস্তার মানুষের নানা কর্মকান্ড,শোরগোল দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মোড়ে।সেখানে গিয়ে দেখি দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি যেন ভাবছে আমার সহপাঠী নাবিলা।জিজ্ঞেস করলাম তাকে,"এত কি ভাবছিস দাদদাদাাাদাাধদধাদাা,নাবিলা"।সে জবাব দিল,"দোস্ত আমার মানসিক কন্ডিশন শোচনীয়।সাপ্লি আর আইটেমের পেন্ডিং খেতে খেতে আমি শেষ।সাব্বির,তুই আমাকে বাঁচা"।এটা শুনে আমি হেসে তাকে স্বান্তনা দিলাম,"আমি কি কম জ্বালায় আছি রে।এই জগতে যখন প্রবেশ করে ফেলেছিস তখন এই জীবনটাকে তো মেনে নিতে হবে দোস্ত।চল আজকে ক্লাস না করে সি বীচ চলে যাই"।যেমন কথা তেমনি কাজ।আমরা এখন সমুদ্রের কিনারে দাড়িয়ে হাটছি পাশাপাশি দুজন।নাবিলাকে আমি বললাম,"দোস্ত,নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব কি জীবনে দেখানো সম্ভব"।নাবিলা বলল,"অবশ্যই।তবে সুযোগ ও অবস্থা বিবেচনা করে এই গুণটি দেখানো ভাল"।শুনে আমি সম্মতি জানালাম।হঠাৎ এক আচমকা ঢেউ এসে টেনে নিয়ে গেল নাবিলাকে সজোরে।নাবিলার সেই যে কি গগণবিদারী চিৎকার।আমিও সাথে সাথে ঝাপ দিলাম সমুদ্রে কোন ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট ছাড়াই।কারণ সময় ছিল খুব সীমিত।আমি অআশ্য সাতার জানতাম।তাই অনায়াসে না হলেও কোনরকমে ডাঙ্গায় ফিরলাম আমি অচেতন নাবিলাকে নিয়ে।ভাগ্যিস সে শুধু জ্ঞানটাই হারিয়েছিল।নাবিলা সুস্থ হওয়ার পরের দিন সে কলেজে গিয়ে আমাকে তার কৃতজ্ঞতার কথা জানালো।আর বলল,"তুই যদি এভাবে আমার স্টাডির সব সমস্যা নিঃস্বার্থভাবে করে দিতি,তবে আমি খুব নিশ্চিন্ত থাকতাম"।এটা শুনে আমি সেখান থেকে চলে গেলাম।এফবিতে একটি ফেক আইডি খুলে মেসেন্জারেই আমি নাবিলার স্টাডির সব সমস্যা সমাধান করে দিতাম।এভাবে দিনের পর দিন নাবিলা আর আমার সম্পর্ক ঘনিস্ঠতায় রূপ নিচ্ছিল।সে বুঝতেই পারেনি যে আমি(সাব্বির)ছদ্মনামে তার যাবতীয় দূর্ভোগ কমানোর দায়িত্ব নিয়েছি।তবে এর মাঝে আমি আর নাবিলার সাথে দেখা করিনি।আমি যে ছদ্মনামে ফেসবুকে নাবিলাকে মেসেজ করতাম সেটির নাম ছিল রিদওয়ান।একই নামে আমাদের মেডিকেল কলেজেও এক ছাত্র আছে।নাম তার রিদওয়ান মাহবুব।যা কল্পনা করেছিলাম সেটাই হল।নাবিলা বাস্তব রিদওয়ানের প্রেমে পড়ে গেল।রিদওয়ান প্রথমে নারাজ থাকলেও পর সবকিছু ব্যবস্থা করে নিল বেশ চতুরতার সাথে।মাঝখানে ফেসে গেল ফেসবুকের রিদওয়ান।আমার চোখের সামনেই নাবিলা আর রিদদওয়ান জুটি জমে উঠল।যে চরিত্র টা আমার বানানো সেটিই যে বাস্তবে কালোসাপ হয়ে আমার হৃদয়ে ছোবল মারবে তা আমি বুঝতেই পারিনি।তখন আসলেই আমার আর কিছু করার ছিল না।দিন দিন ঘনিষ্ঠ হতে লাগল বাস্তব রিদওয়ান আর নাবিলা।আর পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছিলাম আমি।সব সাহায্য করছিলাম আমি আর নাবিলার কাছে বাহবা পাচ্ছিল বাস্তবিক রিদওয়ান।এভাবে দেখতে দেখতে আমাদের মেডিকেল জীবন শেষ হয়ে এল।আমার সহায়তায় বেশ ভালই পাস করে গেল নাবিলা।কিন্তু প্রশংসা পেল সেই রিদওয়ানই।আমি আর সত্য ফাস করতে চাইনি কারণ নিঃস্বার্থ ত্যাগের এতবড় সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে চাইনি।জোর করে নাবিলার কাছাকাছি যেতে চাইলে আমার অবদানটা হয়ত ছোট হয়ে গেল।মেডিকেল কলেজজীবন শেষে একই হাসপাতালে যোগ দিল ডাক্তার হিসেবে নাবিলা ও বাস্তব পৃথিবীর রিদওয়ান।আর ফেসবুকের সেই হতভাগা রিদওয়ান ত্যাগের বিনিময়ে পেল একাকীত্ব।আমি অন্য একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে যোগ দিলাম যাতে আমার জন্য নাবিলা-রিদওয়ান(বাস্তব) এর মাঝে কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয়।এরপর কয়েক মাস বাদে নাবিলা বিয়ে করে নিল বাস্তব পৃথিবীর রিদওয়ানকে।আর আমি সব নিজের চোখের সামনে ঘটতে দেখেও মেনে নিলাম ত্যাগের ধর্ম পালন করে।এরপর আমি জার্মানী চলে গেলাম নতুন কোন ত্যাগের ঘটনা ঘটাতে।মানে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার উছিলায় আমি সেই নাবিলা-রিদওয়ান দম্পতিকে মুক্তি দিলাম সকল সংকোচ থেকে।তবে কয়েক বছর বাদে আমার এক বন্ধু মনির থেকে আসল সত্য জানতে পেরে খুব কেদেছিল নাবিলা।তবে তখন যা হওয়ার সব হয়ে গেছে।বাস্ততব জগতের রিদওয়ানই তখন তার স্বামী। কিন্তু নাবিলা তার স্বামীকে অনেক জোরাজুরি করার পর সে সব স্বীকার করল ও আমার থেকে দুজনেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিল।তবে আমি তাদের কে মাফ করে দিলাম নিঃশর্তে ও বললাম যে তাদেরকে এক নিঃস্বার্থ সুখের সংসার করতে ও ত্যাগের ধর্ম কে বুঝতে ও জানতে এবং সাধারন মানুষের তরে সেটা প্রয়োগ করতে।রিদওয়ান ও তার স্ত্রী নাবিলা এই সিদ্ধান্তে পৌছাল যে তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে সাব্বিরের মত এক স্বার্থত্যাগী পরোপকারী ছেলের মত গড়ে তুলবে এবং সাব্বিরের মত করুন পরিণতি যেন আর কারো না হয় সে ব্যাপারে যথেষ্ঠ সজাগ থাকবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্
একজন লেখক যা খুশি তাই লিখতে পারেন, যদি সেটা শিল্প সম্মত হয় তবে প্রশংসনীয় ও হয় ।
ভাল লিখেছেন !
প্রাপ্যটা রেখে গেলাম ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।