অজানায় যাত্রা

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

সূর্য
  • ৯৭
  • 0
  • ১০৮৪
১.
আমি সামসুন্নাহার যুথী। কিন্তু ইদানিং আমাকে স্বপ্ন নামে ডাকলে আমার খুব ভাল লাগে। এই নামটা দিয়েছে আমার সূর্য। আমি আজ আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদকে নিজের হাতে বিসর্জন দিয়েছি। এখন টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছি। সাথে যে ছেলেটি, আমি যার হাতটি পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে হাঁটছি, আমার চাচাতো ভাই মনির। মনির কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি আমি কোনদিন বেঁচে থাকতে ওর এতো ঘনিষ্ঠ হয়ে হাঁটব। আমি দেখতে খারাপ, একথা আমার শত্রুও বলবেনা। ৫ফিট ৬ইঞ্চি লম্বা ফর্সা চেহারার একটি মেয়ে। রাস্তায় হেটে গেলে অনেকেই হা করে তাকিয়ে থাকে। এটা দেখতে দেখতে আমার এখন আর অবাক লাগেনা। আজকে এই ১লা বৈশাখের মেলায় মনিরের সাথে এভাবে আসব, একথা পৃথিবীর কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। মনিরও জানেনা একটু পরে কি ঘটতে যাচ্ছে। আমার একটা মেয়ে আছে, আমার সূর্য আছে, তারপরও। ঐ তো সূর্য আমার মেয়েটাকে কাঁধে তুলে রাজু ভাস্কর্যের উল্টোদিকে পাথরের মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে। এটা দেখে আমি মোটেও অবাক হচ্ছিনা বরং আমি যে ওদেরকে দেখছি এটা ওদের বুঝতে দিচ্ছিনা।

২.
হাজিগঞ্জ (চাঁদপুর) জেলায় শাহরাস্তী উপজেলার নিজমেহার গ্রামে আমাদের বাড়ীটা বিশাল, যৌথ পরিবার যাকে বলে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। জেঠা, কাকা তাদের ছেলে মেয়ে সবাই একই বাড়ীতে। আপাতত আমিই এই পরিবারের শেষ প্রজন্ম। আমার একভাই, নাম গোলাম আহসান বিপ্লব চাকুরী করেন, এখনও বিয়ে করেননি। প্রায়ই তার বাড়ীর বাইরে থাকা হয়। বর্তমানে ভাইয়া নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ উপজেলার চিটাগাংরোডে এককামড়ার একটা ভাড়া বাসায় থাকেন।

আর দশটা মেয়ের মতো মাথার দুপাশে বেনি দুলিয়ে স্কুল ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যাই। চাচাতো জেঠাতো ভাইবোনরা সাথী হয়। মেঝ চাচার ছোট ছেলে শান্ত এবং আমি ক্লাস এইটে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। শিউলী, জোৎস্না, মনির, বনি, দশম শ্রেণীতে পড়ে, পরীক্ষার্থী। এরা সবাই আমার চাচাতো-জেঠাতো ভাই-বোন। কদিন স্কুল বন্ধ। ভিসিআরে বাংলা, হিন্দি ছবি দেখে আর ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটে।

সুখের সংসারে আগুন লাগা যেন একটা নিয়মিত ব্যপার। বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেন। আমার পরীক্ষা শেষ হওয়ায় ভাইয়া বাড়ী এসেছেন। বাবাকে নিয়ে কালীবাড়ীতে ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার দেখে শুনে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসার কথা বললেন। বাবার অবস্থা আরেকটু খারাপ হলে ভাইয়া বাবা ও মাকে নিয়ে ঢাকা চলে গেলেন। আমাকে আমার জেঠাতো বোন শিউলীকে সাথে এনে থাকার ব্যবস্থা করে গেলেন। প্রথমদিন ভয় করলেও পরের দিন মুক্ত জীবনের স্বাদ পেয়ে আর খারাপ লাগলোনা। পরদিন মেঝো চাচার বড় ছেলে বনি ও বড়চাচার ছোট ছেলে মনির ওদের ভিসিআর এবং কয়েকটা হিন্দি ছবি নিয়ে আমাদের ঘরে এলো। বড় চাচা দুবাই থাকেন। তার ঘরে ভিসিআর, ভিডিও ক্যামেরা, ইলেকট্রিক ওভেন সবই ছিল। আমি ও শিউলী আপা টিভিতে নাটক দেখছিলাম। ভিসিআর আনাতে আমরা দুজনই পুলকিত হলাম।

শীতের রাত। আমরা সবাই কাথা মুড়িদিয়ে "খুলি খিড়কি" নামে একটা হিন্দি ছবি দেখছিলাম। তার আগে আরো দুটা ছবি দেখা শেষ হয়েছে। আমার ডান পাশে তাকিয়ে দেখলাম শিউলী আপু ঘুমিয়ে গেছেন। কিছুক্ষণ পরে আমি আমার বুকে একটা হাতের স্পর্শ পাই। আমার পুরো শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। আমি যেন নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। আমার শরীর জমে কংক্রিটের মতো হয়ে গেছে। মনিরের হাতটা আমি সরিয়ে দিতে পারছিলামনা। কি যেন অজানা একটা অনুভূতি আমায় গ্রাস করে নিচ্ছিলো। মনিরের হাত আমার সুঢৌল দুটি স্তন যেন মিশিয়ে দিতে চাইছিল আমার দেহের সাথে। এই শীতের রাতেও আমি ঘেমে যাচ্ছিলাম। অনেক কষ্টে মনিরের দিকে ফিরে দেখলাম ওর পাশে বনিও ঘুমিয়ে গেছে। টিভির পর্দায় যুবতি একটা মেয়ে তার ঘরের বাথরুমে গোসল করছে, দেহের অনেকটাই দেখা যায়। জানলা দিয়ে সমবয়সী একটা ছেলে আড়ালে তাকিয়ে দেখছে মেয়েটার গোসল করা। মনিরের হাত আমার বুক থেকে পেট ছুঁয়ে নিচে নেমে যায়। আমার দেহে একটা পরিবর্তন লক্ষ করলাম। মনে হলো আমার স্যালোয়ার ভিজে যাচ্ছে। আস্তে করে উঠে গেলাম। আমাদের দু'কামড়ার ঘরের লাগোয়া একটা বড় বাথরুম। নেমেই আমি সোজা বাথরুমে চলে এলাম। নিঃশব্দে মনির যে কখন আমার পিছনে পিছনে বাথরুমে চলে এসেছে খেয়ালই করিনি। আমার মুখটা চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে
- কিছু হবেনা, চুপ করে থাক।

আমার মুখে কোন রা নেই। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। মনির সুনিপুন হাতে আমার স্যালোয়ার খুলে ফেলে। আমি দুটো পা পেচিয়ে আমার লজ্জা ঢাকার বৃথা চেষ্টা করি। আস্তে আস্তে আমার কামিজটাও খুলে ফেললো। আমার শরীরে কাপড় বলতে শুধু ব্রা- টা অবশিষ্ট আছে। মনিরের চেষ্টায় সেটাও আর থাকলোনা। শীতের রাতে টিভির হালকা আলোতে স্পস্ট কিছুই দেখা যাচ্ছিলনা। মনির আমাকে ধরে বাথরুমের ফ্লোরে শুইয়ে দিল। অসীম উৎসাহে প্রাগৈতিহাসিক জৈবিক চাহিদা মিটে যায় দুজনের।
- এই ট্যাবলেট দুটো রাখ। ঘুমানোর আগে খেয়ে ফেলিস।
: কিসের ঔষধ?
- এতো জানা লাগবেনা।

আমি গোসল সেরে এসে শিউলী আপুর সাথে শুয়ে পরি। বুকে হাত দিতেই একটা ব্যথা অনুভব করলাম। কখন যে মনিরের ধারালো দাঁতের কামড়ে আমার স্তনের বোটা খানিকটা কেটে গেছে খেয়ালই করিনি। মনির বনিকে ডেকে তুলে ওদের ঘরে চলে যায়। পরদিন রাতে আমার আর ভালো লাগছিলনা, কেমন একটা চাওয়া ভেতরে ভেতরে অনুভব করতে লাগলাম।

বাবার অসুখটা সেরেছে। কিন্তু খুব ভালো খবর নেই। প্রায়ই তাকে নিয়ে ঢাকা যেতে হবে চেকআপের জন্য। ১৫দিন পর মা বাবাকে নিয়ে ফিরে এলেন। এই ১৫দিনে আমার ভেতর অনেক পরিবর্তন এসেছে। সবার সামনে যেতে লজ্জা লাগে। বাবার চোখের দিকে তাকাতে পারিনা। এভাবে ৬টি মাস চলে যায়। আমি নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছি। মনির ভর্তি হয়েছে কুমিল্লা পলিটেকনিকে। আমাদের যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

৩.
আজ আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান। কেমন যেন একটা অনুভুতি, নতুনকে পাবার আকাঙ্খা, আবার এতোদিনের একটা পরিবেশ, বন্ধু ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট। আমাকে মাইকে কিছু বলতে বলা হলো। কি বলব, কথা বলতে গিয়ে নাকের পানি চোখের পানি সব একাকার। অনুষ্ঠান শেষে দেখলাম বনি ভাইয়া এগিয়ে আসছে, হাতে ক্যামেরা। সামিয়ানার নিচে বসে আমরা অনেক গল্প করলাম। বনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশোনা করছে। ওর কলেজের কথা, বন্ধুদের কথা অনেক কথা বললো। আমার কিছু ছবিও তুললো। ওর শেষ কথাটা এখনও আমার কানে বাজছে "যুথী আমি তোকে ভালবাসি"। কথাটা বলেই ও দ্রুত চলে যায়। এ দুবছরে আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমি ভালোবাসা বুঝতে শিখেছি, যৌনতা কি জিনিস তাও জেনেছি। আমার মনে পরে গেল মনিরের কথা। কই মনিরতো কখনও আমাকে ভালবাসি বলেনি?

বনির কথায় আমার মধ্যে একটা পরিবর্তন হতে লাগলো। নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হতে লাগলো। বনির সাথে আমার কথা হয়, ও চিঠি লিখে, আমিও লিখি। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের ভালোবাসা। আমার পরীক্ষা শেষ হয়। এদিকে বাবার অবস্থা আরো খারাপ হয়। ভাইয়ারও চাকুরীর সমস্যা হতে থাকে। একদিন ভাইয়া মাকে বলল-

= মা চলো সবাই ঢাকা চলে যাই। যুথীরও পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ওকে ঢাকায় ভালো একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেবো। বাবাকেও কষ্ট করে দৌড়াদৌড়ি করতে হবেনা। আর আমারও চাকুরীটার সমস্যা হবেনা।
:: বাবা তোর আয়েই তো সংসার চলছে। জমি জিরাত থেকে যা পাই তাতেতো চলবেনা, তাই তোর চাকুরীটার সমস্যা হলে ভীষন অসুবিধা হয়ে যাবে।
= তাহলে বাবাকে বুঝিয়ে বলো।
:: ঠিক আছে বাবা।

মা আর ভাইয়ার কথা শুনি। আমার ভেতরটা হু হু করে ওঠে। আমরা চলে গেলে বনির সাথে দেখা হবেনা। আমার কিশোরী মনে তখন অন্য কিছু নেই। ভাবতেও পারিনা, আমার সমস্ত চিন্তা জুড়ে শুধু বনি। সামনে বিশাল শুন্যতা, যেখানে নিজের খুশিতে সাজিয়ে নেওয়া যায় নিজের পৃথিবী। গ্রীষ্মের ছুটিতে বনি বাড়ী আসে। আমি তাকে সব খুলে বলি। বনি শুধু অসীম আদরে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
- তুই কি আমাকে ভালোবাসিস না?
: আমি বনির বুকে মুখ ঘষে সম্মতি দিয়ে জানাই হ্যা ভালবাসি।
- তাহলে চিন্তা করছিস কেন?
: তোমাকে দেখতে পাবোনা। তোমার ছোয়া পাবোনা। আমার দিনগুলো কিভাবে কাটবে?
- দুর বোকা, আমিতো হারিয়ে যাচ্ছি না।
বনি আমার কপালে আলতো ভাবে একটা চুমো একে দেয়। আমি হারিয়ে যাই অজানা একটা দ্বীপে, যেখানে আমি আছি, বনি আছে, আছে চির সবুজে ঘেরা গাছপালা যেখানে পাখিরা বাসা বেধেছে নিশ্চিন্ত মনে। সেখানে হারাবার কোন ভয় নেই। নেই কোন কলুষতা।

দুজনে মিলে ঠিক করি, বনি ফ্রান্স চলে যাবে। আমি ইন্টার পাশ করার পর ফিরে এসে বিয়ে করবে। সুন্দর একটা রঙিন স্বপ্ন নিয়ে মা-বাবা ও ভাইয়ার সাথে আমরা ঢাকা চলে আসি। ডেমরা থানার সারুলিয়া ইউনিয়নের হাজীনগরে একটা ফ্লাট ভাড়া নেয়া হয়েছে। ভাইয়া আমাকে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে ভর্তি করে দেয়। দেখতে দেখতে দুটো বছর কেটে যায়। আমার পরীক্ষা শেষ হয়।


৪.
এই দুই বছরে আমার চিন্তা চেতনা অনেক সম্বৃদ্ধ হয়েছে। মফস্বল শহরের ছোট্ট একটা গ্রামে কেটেছে আমার ষোলটি বছর। সেখানে প্রতিদিন একই মুখ দেখেছি প্রতিনিয়ত। শহরের যান্ত্রিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে এখানে মানুষগুলো বদলে যায় চোখের পলকেই। ভালোবাসা মানুষকে ধরে রাখতে পারেনা। পরিবর্তনকে আটকে দেয়ার শক্তি ভালোবাসার নেই। পরীক্ষা শেষে ঘরে বসে রইলাম কিছু দিন। কেমন একঘেয়ে লাগছে।

= কিরে তুই এমন মনমরা হয়ে বসে থাকিস কেন? ভাইয়া মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলাতে বুলাতে বলে।
:: আমিও দেখছি কদিন ধরে মেয়েটা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। মা বলেন
: আমি শুকনো হাসি দিয়ে বলি, কই কিছু হয়নি তো।
= কিছু হয়নি বললেই হলো?
: না ভাইয়া কিছুই হয়নি। পরীক্ষাটা শেষ হয়ে গেছে। কেমন যেন বেকার বেকার লাগছে।
=ও এই কথা । তা তুই কোথাও কম্পিউটার শিখতে যা। এখন যে যুগ পরেছে, সবইতো কম্পিউটারে হয়।
:: আমারও তাই কথারে মা, মনমরা হয়ে না থেকে কম্পিউটার শিখেনে, বলা তো যায়না কোন কাজে আসতেও পারে।

কিরে যুথী কেমন আছিস? হুড়মুর করে ঘরে ঢুকে পরে শীলা, গীতা, ফেরদৌসী। ওরা আমার ক্লাশমেট। শীলা আমাদের গ্রামেরই মেয়ে। ছোট বেলাতে একসাথে স্কুলে যেতাম, খেলতাম। ও ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় জুন মাসে ওর বাবা বদলী হয়ে ঢাকায় চলে আসেন। এখানে এসে ওকে পেয়ে আমার কিযে ভালো লেগেছে। আমার একাকিত্বের অসুখে ওই হয়ে উঠল পরম সেবক। আমাদের দুজনার বলা-নাবলা কথা সমান ভাগ করে নেই।

:: বলছিলাম যুথী ঘরে বসে থাকে মনমরা হয়ে, কোথাও গিয়ে কম্পিউটারটা শিখে নিতে। ওদের চা-নাস্তা দিতে দিতে মা বললেন।
্#৬১৬৫৬; আরে কাকি আমরাওতো একথা বলতেই এসেছি। গীতা আর ফেরদৌসীও যাবে আমার সাথে। যদি যুথী যায় চারজন মিলে খুব মজা হবে।

আমি রাজি হয়ে যাই।
্#৬১৬৫৬; কিরে এমন পেঁচামুখী হয়ে বসে আছিস কেন? তোর এমন চেহারাটা দেখতে মোটেও ভালনা।
: তুইতো জানিস সব কিছু। আমার ভালো লাগেনা।
্#৬১৬৫৬; বনিকি আবারও চেয়েছে।
: হ্যা।
্#৬১৬৫৬; আমার কিন্তু কেমন কেমন যেন লাগছে।
: কেমন?
্#৬১৬৫৬; এই ধর, সে তোকে ভালবাসে, আছে অনেক দুরে, ফোনে কথা হয়। তুই মাঝে মাঝে ছবি পাঠাস, ঠিক আছে। কিন্তু সে তোর নগ্ন ছবি চাইবে কেন? এটাতো কোন রুচিকর ব্যাপারনা।
:কিন্তু দেশে থাকতে ওতো কোনদিন আমার শরীর ছুয়ে দেখেনি।
্#৬১৬৫৬; এটাইতো চিন্তার বিষয়। ইউরোপ খুবই উন্নত যায়গা আর ফরাসী শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত। সেখানে সব কিছুই খোলামেলা। কোন জড়তা নেই। কোন রাখডাক নেই। মানুষের বদলে যেতে কত দিন?
: তোরা এভাবে বলিসনা, এমনিতেই আমার মনটা ভালো না তার মধ্যে আবার এসব বলছিস।
্#৬১৬৫৬; থাক তোর আর এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা, ওকে বলে দিস হবেনা। স্টুডিওতে এই ছবি যদি কপি করে রাখে কেমন কেলেঙ্কারী হবে ভেবে দেখেছিস?
: আমি কিছু ভাবতে পারছিনা।

আমার মনে পরে যায় ৪বছর আগের কিছু স্মৃতি মনির, খুলি খিড়কি শীতের রাত। ভেতরে একটা শিহরণ দোলা দিয়ে যায়। আচ্ছা মনির এখন কোথায় আছে কি করছে? শুনেছিলাম পলিটেকনিকে ভর্তি হয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পরেছে। তারপর মারামারি। একটা খুনের কেসের আসামিও হয়েছে। ভাইয়া রেডি হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। ডেকে জিজ্ঞেস করি
: ভাইয়া মনির ভাই এখন কোথায়রে?
- আরে ওই হারামজাদার কথা বলিসনা। সে এখন টিএসসির ক্যান্টিনে ওয়েটারের চাকুরী করে। বাপ বিদেশে থেকে ছেলের কোন খোজ রাখেনি, আর মাকেতো কোন পাত্তাই দেয়নি। মারামারি করে লেখাপড়াটাও খেয়েছে।

ভেতরে কি একটা কষ্ট বোধ কাজ করছে? নাকি অন্য কিছু? গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায়।


৫.
আমরা চার বান্ধবী মিলে অদিতি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে যাই। প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় এই প্রতিষ্ঠানটা দেখা হয়। কিন্তু কখনো ভেতরে যাবার বা জানার উৎসাহ হয়নি। ভেজানো দরজা ঠেলে জিজ্ঞেস করি
: আসতে পারি?
কতক্ষন তাকিয়ে থেকে ২৫/৩০বছর বয়সী একটা যুবক ছেলে উত্তর দেয়
- এসো
আমার খুব হাসি পায় এই এসো বলতে এতক্ষন সময় লাগে? প্রয়োজনীয় কথাবার্তা শেষে আমাদের সবাইকে কম্পিউটারে বসিয়ে ক্লাশ শুরু করে দেয়। আমি এমন যান্ত্রিক মানুষ দেখিনি। প্রথম দিনই ক্লাশ শুরু? আর ছেলেটার নামটাও বেশ "সূর্য"। সময়টা বেশ ভালোই কাটতে লাগলো। আমরা সূর্যদার সাথে বেশ সচ্ছন্দই বোধ করছি। তার মধ্যে পুরুষ সুলভ মনোভাব দেখিনি। দেখিনি পূর্ণ যৌবনা মেয়েদের প্রতি লোভাতুর দৃষ্টি। বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে তিনি আমাদের শেখাতে লাগলেন।

সূর্যদা খুব ভালো কবিতা লিখতে পারতেন। তার একটা কবিতায় লিখেছেন
------------
তোমাতে জন্মাবে
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমার,
স্বপ্ন কথা দাও
তুমি হবে শুধু আমার।

মাঝে মাঝে লুকিয়ে কম্পিউটার থেকে তার কবিতা খাতায় লিখে নিতাম। খুব ভালো লাগতো। মেয়েলী কৌতুহল বশে আসে না। একদিন জিজ্ঞেস করলাম এই স্বপ্নটা কে?
- কোন স্বপ্নটা কে?
: ঐ যে স্বপ্ন কথা দাও তুমি হবে শুধু আমার।
- তার মানে তুমি আমার কবিতাগুলো দেখেছো। জানিয়ে দেখলেই পারতে।
: আসলে ফোল্ডার ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই পেয়ে গেছি।
- স্বপ্ন নামে কারো অস্তিত্বই নেই। এ হলো আমার মনের আকাঙ্খা। আমার জীবনে এমন কেউ আসবে যাকে নিয়ে পূর্ণিমা রাতে ছাদে বসে কবিতা শোনাব। যে আমায় গান শোনাবে। জড়িয়ে রাখবে মধুর আবেশে।
্#৬১৬৫৬; এমন কেউ কি আসেনি এখনও? শীলার প্রশ্ন।
- একজনকে দেখেছি, কিন্তু মনে হয় আমার মনের গভীরে থাকা আকাঙ্খাটা মনেই চাপা থেকে যাবে।
: বলে দিলেই তো পারেন।
- জীবনটা কি এতই সরল? চাইলেই কি সব পাওয়া যায়?
্#৬১৬৫৬; চেষ্টা করতে তো দোষের কিছু নেই।
: হ্যা তাইতো।
- ঠিক আছে বলবো কোন এক সময়। এখন কাজ করো।
আমাদের কথা আর এগোয়না।

একদিন ফোনে বনির সাথে আমার কথা হয়। শীলা সামনেই ছিল। ফোনটা নিয়ে ও বলল "বনি ভাইয়া আপনার মাথা ঠিক আছেতো? এটাতো ইউরোপ নয়, একটা মেয়ে দিব্যি তার নগ্ন শরীরের ছবি তুলে পাঠাবে। আপনি অনেক বদলে গেছেন। তা ওকে ভুলে গেলেইতো পারেন।" আমার চোখ বেয়ে শুধু দুফোটা লোনা জল গাল বেয়ে নিচে নেমে যায়।


৬.
্#৬১৬৫৬; যুথী চল কোথা থেকে ঘুরে আসি। রূপগঞ্জের জিন্দায় একটা পার্ক হয়েছে, খুব সুন্দর তোর ভালো লাগবে।
: ঠিক আছে যাবো। আমি সম্মতি দিলাম।
্#৬১৬৫৬; সূর্যদাকে সংগে নিলে কেমন হয়?
: যাবে নাকি?
্#৬১৬৫৬; বলে দেখি।
পরদিন আমরা সবাই চললাম জিন্দা পার্কে রিকসা করে। সবাই সবার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে উঠেছে, কিন্তু আমরা দু কপালপোড়া সাথী হলাম। সূর্যদার কথা বলছি। কেমন হাস্যকর ব্যপার বলেকিনা, "চলো আমরা প্রঙ্ িপ্রেমিক-প্রেমিকা হই"।
- যুথী তুমি আমার স্বপ্ন হবে?
: হঠাৎ চমকে উঠি। আবার জানতে চাই, কি বললেন।
- তুমি আমার স্বপ্ন হবে?
আমি কি বলবো ভাবতে পারছিলাম না।
- আমি কি তোমার হাতটা একটু ছুয়ে দেখবো?
আমি আমার হাতটা এগিয়ে দেই মন্ত্রমুদ্ধের মতো। সারাটা পথ আমার হাতটা সুর্য ওর দুহাতে চেপে ধরেছিল। সেখানে কোন কলুষতা ছিলনা। ছিল ভবিষ্যৎ স্বপ্নে বিভোর এক সৎ যুবকের আহবান। মাঝে মাঝে আমি ওর দিকে তাকাতাম, চোখে চোখ পরা মাত্রই সুর্য ওর চোখ নামিয়ে নিতো। ওর চোখে আমি স্বপ্ন দেখেছি। মনে হলো সেই স্বপ্নে আমিও আছি।

সন্ধায় আমরা ফিরে এলাম। কিন্তু আমার মনে হতে লাগলো আমার কি যেন হারিয়ে গেছে, তবুও সেই হারানোটা আমাকে ব্যথিত করলনা। বরং মনে হতে লাগলো আমার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। আমরা নিয়মিত ঘুরতে যাই। ফোনে কথা বলি। সুর্য আমাকে কবিতা লিখে পাঠায়। ওর আবৃত্তির গলাটা খুব চমৎকার। এতো ভালো লাগার মাঝেও আমার মনে একটুকরো মেঘ জমে থাকে। সেই মেঘটা বৃষ্টি হয়ে ঝড়েও পরেনা আবার মাথার উপর থেকে সরেও যায়না।

অনেকবার ভেবেছি সুর্যকে আমার সব বলব। কিন্তু বলা হয়না। আমার এই পর্যন্ত জীবনে যদি ভালো কিছু পেয়ে থাকি তা হলো সূর্য। আমাদের জীবন এগিয়ে যায়। সময় বয়ে চলে তার আবহমান ধারায়।

:: মারে বনি তোকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। ও কিছুদিনের মধ্যেই দেশে আসছে। তোর মতামত আছেতো? মা আমার মাথায় নারকেল তেল মাখাতে মাখাতে বলে।

কিছুদিন আগে হলে খুশিতে মনটা ভরে যেত। কিন্তু আজ আমার ভেতরে একটা হাহাকার শুধু বেজে যায়। আমার কিছুই বলা হয়না। আমার চুপ করে থাকাটা মা'র কাছে সম্মতিই মনে হয়। কারন তিনি এর পরে আর কিছুই জানতে চাননি।


৭.
আমি আজ পাহাড় দেখতে এসেছি, বন-বনানীর সীমাহীন সবুজতা। সামনে বিশাল সমুদ্র। সমুদ্রের ঢেউ কুলে আছড়ে পরছে। আবার নেমেও যাচ্ছে, ঠিক আমার জীবনটার মতো। সূর্যকে নিয়ে এসেছি। ও আসতে চায়নি, একরকম জোর করেই নিয়ে এলাম। বলে কিনা অবিবাহিত দুজন যুবক-যুবতি এতো দুরের পথ যাবে যেখানে দিনে দিনে ফেরা যাবেনা, এটা ভালো দেখায়না। আমি শুনে ভীষন হেসেছি।

আজ আমি মুক্ত। আমার কোন বাধা নেই। মুক্ত সুতোকাটা ঘুড়ির মতো আকাশে ভেসে যাব, আর দেখবো আমার সূর্যকে। আজ সূর্য ডোবার দিন। একটা রিকশা সারা দিনের জন্য ভাড়া করি। কঙ্বাজার থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত যাব। কিছু বাড়ীঘর ডানে রেখে এগিয়ে গেলেই সাগরের পাড় ঘেষে চলে গেছে ম্যারিন ড্রাইভ রোডটা। একপাশে পাহাড়, অন্য পাশে সমুদ্র। মাঝে মাঝেই রিকসা থামিয়ে আমরা নেমে হেটে যাচ্ছিলাম সমুদ্রের জল ছুয়ে। দুপুরের দিকে হিমছড়ি পৌছালাম। ঝরণার দিকে হাটা দিলাম, আওয়াজ পাচ্ছি, কিন্তু দেখা যাচ্ছেনা। আরো ভেতরে চলে গেলাম। অবশেষে দেখলাম পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনাটা। এখানে কপোত কপোতীরা অসীম উল্লাসে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে পাহাড়ী ঝরনার ঘোলাটে পানিতে গোসল করছে। ফিরে আসি সেখান থেকে। হোটেলে ফিরে এলে সূর্য গম্ভীর মুখে বসে রইল।
: কি ব্যপার এমন করে বসে আছো কেন?
- দুজন এক কামড়ায় থাকবো?
: খিলখিলিয়ে হেসে বললাম তাতে দোষের কি হলো?
- আমার কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে।
আমি কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ঠোটে চুমু খাই।
: আমার টুনটুনি পাখি রে। এতো লজ্জা কেন? তুমি না আমাকে তোমার স্বপ্ন বানাবে?
- কিন্তু এভাবে নয় নিশ্চয়।
: আজ পূর্ণিমা। আজ কিন্তু তোমার কবিতা শুনব। আমি ওর পিছনে বসে ওর মাথার উপর আমার চুল ছড়িয়ে, জড়িয়ে বসে থাকি।
- আমার কেমন যেন লাগছে। মনে হচ্ছে বমি হবে।
: কেন আবার কি হলো?
- শরীরটা ধরে দেখোতো জ্বর কিনা?
: ওর শরীরের তাপমাত্রা আসলেই বেড়ে গেছে। দর দর করে ঘামছে।
আমি হেসে উঠি। সামনের চেয়ারটায় বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি সূর্যর দিকে। দুটো নিষ্পাপ চোখ আমাকে ভেতর থেকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছিল।
কিছুক্ষন পর ও স্বাভাবিক হয়। আমরা দুজন দুিট খাটে শুয়ে পরি। কিন্তু দুজনের কেউ ঘুমাতে পারছিনা। রাত ৩টার দিকে বললাম
: সূর্য ঘুমিয়েছ?
- না, তুমিও ঘুমাওনি?
: ঘুম আসছেনা।
- আমার কেমন যেন অস্থির লাগছে।
: সতিত্ব হারানোর ভয়ে?
- দুর বোকা পুরুষের আবার এ ভয় কিসের?
আমি উঠে ওর বিছানায় চলে যাই। একে একে খুলে যায় পুরোনো দালানের পলেস্তারা। খোলস বদলে বেরিয়ে আসে নতুন সাপ। পৃথিবীর আদিম মানুষের মতো বস্ত্রহীন দুটো দেহ মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। পুরো একটি স্বর্গ নেমে আসে কঙ্বাজারের কলাতলী রোডের ছোট একটি হোটেলের তারচেয়ে ছোট একটি কামড়ায়। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম ৪টা ২০ মিনিট। বিছানা থেকে দুজনের কেউ উঠতে পারছিলাম না। রাজ্যের ক্লান্তি এসে জমাহয় দুজনার দেহে। সিলিং ফ্যানটা তার পুরো ক্ষমতায় ঘুরে যায়। তার মাঝেও সর্গের সুখ শরীরে ঘাম হয়ে ঝরে যায়। মনে শুধু প্রশ্ন জাগে এমন প্রাণবন্ত একজন পুরুষ মানুষ কিভাবে নিজের মাঝে গুটিয়ে থাকে?



৮.
কঙ্বাজার থেকে ফিরে আসলে মা জিজ্ঞেস করে-
:: কোথায় গিয়েছিলি? এই প্রথম আমি মার কাছে মিথ্যে বললাম-
: বান্ধবীর বাড়ী। কলেজে একসাথে পড়ে। ওর গায়ে হলুদ ছিল।
:: বলে গেলেইতো পারতি।

আমি কি সূর্যর কাছে যাব আজ? কেমন যেন একটা লজ্জা লজ্জা লাগছিল। আমি ওর চোখের দিকে তাকাবো কিভাবে?
আমার ভাবনায় ছেদ পরে একটি সালাম দেয়ার আওয়াজে।

ঃ আস্সালামু আলাইকুম, কাকি কেমন আছেন?
বনি মা ও বাবার পা ছু'য়ে সালাম করে। আমার বুকের ভিতরটা আবার মোচড় দিয়ে ওঠে। চমক ভাঙ্গে বনির কথায়।
ঃ কেমন আছো যুথী। বনি কখনো আমাকে তুমি করে বলেনি। খুব অবাক হই।
পরের ঘটনাগুলো এতো দ্রুত ঘটে যায় আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনা। পরদিন বনির মা-বাবাসহ আমাদের বেশ কিছু আত্মীয়স্বজন আসেন। আজ আমার বিয়ে। আমার চোখদুটোয় শুধু বান বয়ে যায় কিছুই বলা হয়না। মাকে শুধু বলি ু
: আমি বনিকে বিয়ে করবনা।
:: তুইতো আগে কিছু বলিসনি। তাছাড়া বনির সাথে প্রায়ই তোর কথা হতো আমরাতো ভেবেছি দুজন দুজনকে পছন্দ করিস।
: আগে করতাম মা, এখন না।
:: এমন মান অভিমান থাকতেই পারে।

রাতে ফুল দিয়ে সাজানো সুন্দর একটা বিছানায় আমাকে আর বনিকে থাকতে দেয়া হয়। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। মাদকাসক্তের ন্যায় বনির হাতের পুতুল হয়ে গেলাম। পরদিন বনি জানালো আমাদের পুরো রাতটিকে সে ধারণ করে রেখেছে। আমার চিন্তা করার শক্তি হারিয়ে গেছে। নিজেকে বড্ড কচুপাতা মনে হচ্ছিল, কোন ভাবেই জল ধরে রাখতে পারিনা। সপ্তাহ খানিক এভাবে ঘোরের মধ্যেই কেটে গেল।
মাকে সব খুলে বলি। মা মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকেন।
:: তুই আগে বলিসনি কেন?
: তোমরা বলার সুযোগ দাওনিতো।
:: মা যা হয়েছে থাক আর অন্য কিছু চিন্তা করিসনা।

মার এ কথাটা শুধু শোনলাম। কি করে একজন বিকৃতমস্তিস্কের মানুষের সাথে আমার সারাটা জীবন কাটাবো। অবশ্য খুব বেশীদিন কষ্ট হলোনা। বাবা হঠাৎ মারা গেলেন। মরে গিয়ে কি তিনি নিজে বেঁচে গেলেন না আমাকে বাঁচিয়ে গেলেন। আমি বনিকে ডিভোর্স দেই। বনির সাথে আমার বিয়ের স্থায়ীত্ব ছিল মাত্র ৭দিন। চুপচাপ ঘরে বসে থাকি। ফোনটাও বন্ধ থাকে। শীলা মাঝে মাঝে আসে। আর কারো সাথে যোগাযোগ হয়না।

((অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। ৪টা প্যারা লিখলামনা। অবশ্য এতে গল্প পড়ায় কোন ছেদ পড়বেনা। এই গল্পটা "বসন্তের কোকিল" এর সিক্যুয়াল ওটা পড়ে নিলে বুঝতে কোন অসুবিধা হবেনা))

৯.
আজ আমার একটা মেয়ে হয়েছে। সুর্য মেয়েটাকে পেয়ে যেন সবকিছু ভুলে যায়। ওর নাম রেখেছে "পুষ্প"। মেয়েটা অবিকল আমার মতো হয়েছে। মা নাতনির জন্য ছোট ছোট কাথা সেলাই করে নিয়ে আসেন। আমরা সুখেই আছি। সূর্যকে বলেছিলাম আমার বাবার বাড়ীর কারো সাথে যোগাযোগ না করতে। সূর্য কখনো আমার অতিত জানতে চায়নি। কিন্তু বিধাতার গণিত বোঝার ক্ষমতা আমার মতো এই ক্ষুদ্র মানুষের নেই। একদিন আমার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ এলো। ফেইসবুকের একটা আইডি এবং পাসওয়ার্ড। ঘরে সুর্যর একটা ল্যাপটপ ছিল। সুর্য ট্রেনিং সেন্টারে গেলে আমি গোপনে ফেইসবুকে ঢুকি। আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলি। সেখানে আমার সমস্ত ইতিহাস জলজ্যান্ত প্রমান হয়ে আমায় মনে করিয়ে দেয় সেই অষ্টম শ্রেণীর সামসুন্নাহার যুথী, মনির, খুলি খিড়কি, আমার একসময়ের স্বামী বনি। সব কিছু সেখানে রয়েছে। আমি কিবোর্ডের সাথে যুদ্ধ করে সেগুলো মুছে ফেলতে বৃথাই চেষ্টা করি। বনি আমাকে শুধু ইউজার পাসওয়ার্ড দিয়েছে, এডমিনিস্ট্রেটর পাসওয়ার্ডতো আমি জানিনা।
বনি ফোন করে, তার সাথে আমার কথা হয় কথা বলতে বাধ্য হই। তার সাথে হাসতে হয়। আমি ক্রমাগত মৃত্যু কামনা করতে থাকি। মনে পরে যায় আমি মা, আমার একটি ফুটফুটে মেয়ে আছে।
আমি আস্তে আস্তে সূর্যর কাছ থেকে দুরে সরে যাই। অকারণে সূর্যর সাথে খিটিমিটি লেগেই থাকে। আমার শুধু মনে হয় আমি সূর্য নামের একটা দেবতাকে ঠকিয়েছি। জীবন দিয়েও এর প্রায়শ্চিত্ত হবেনা। প্রায়ই আমি মার কাছে এসে থাকি। সারাদিন ভাইয়া বাড়ি থাকেননা। আমি আমার ঘরে বন্দি। আর ও ঘরে মা সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার জন্য দোয়া করেন।

অনেকদিন পর সুর্য আমাকে ফোন করে। আমি ভেতরে ভেতরে খুশিতে জ্বলে উঠি, কিন্তু ওর কথার জবাব দেয়ার ধরনে সেটা বোঝা যায়না। সুর্য আমাকে ও মেয়েটাকে নিয়ে বৈশাখী মেলায় যাবে। আমরা প্রতিবছরই যাই। কিন্তু এবার তাচ্ছিল্যের সাথে সূর্যকে না করে দেই। আমার ভেতরটা সূর্যের আগুনে পুড়ে যায়।

১০.
আজ ১লা বৈশাখ ভাইয়ার কাছ থেকে মনিরের মোবাইল নম্বরটা নিয়েছি। মনিরকে ফোন করে জানিয়ে দেই আমি আজ ওর সাথে ঘুরতে যাব। মনির খুশি মনে জানায় সে তৈরি থাকবে। মাকে বলে সেই ভোর বেলাতেই বেরিয়ে যাই। আমি জানি সূর্য আসবে। ও কখনও কাউকে দেয়া কথা পালন করে নি এমনটা আমি দেখিনি। আমি সকালেই টিএসসির বাইরে উচু বেদীটার উপরে মনিরকে নিয়ে বসে আছি। আমি জানি সূর্য মেয়েটাকে নিয়ে যাবে ভার্সিটির আমতলার খেলাঘরের শিশুদের অনুষ্ঠানে। আমি আমার মেয়েটাকে দেখতে পেলাম। এবার মনিরের হাত ধরে ওর সামনে দিয়ে যেতে হবে। যেন ও বুঝে আমি ওকে দেখিনি। পরিকল্পনা মতো সব হয়। সুর্যকে রাজুর পদতলে পাথর বানিয়ে আমি মনিরকে খুব আবেশে জড়িয়ে ধরে চলে যাই। সুর্য দাড়িয়ে আমাকে দেখে। আমি হাটতে হাটতে দোয়েল চত্বরের দিকে আগাই।
: মনির আমাদের ঘোরাঘুরি শেষ তুমি ফিরে যাও। মনির অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
মানে।
: মানে তুমি আর কখনো আমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করবেনা।
বললেই হলো?
: দেখো তুমি বাড়াবাড়ি করলে আমি চিৎকার করব। আমি তোমাকে চিনিনা। আর আজ এই মানুষের বন্যায় যদি -- । মনিরকে আর কিছু বোঝাতে হয়না। ও ফিরে চলে যায়। মনির কিছুই বুঝতে পারেনা। যেমন আমি বুঝতে পারিনি আমার সেই ১৩বছর বয়সে মনিরের হাতে হারানো সতিত্বের কথা।
(সংক্ষেপিত)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সুন্দর সকাল হে ভাই !!! অনেক যত্ন নিয়ে লিকেচেন ... ভালো লাগলো , সুভো কামনা রইলো...!!!
লক্ষীছাড়া আমি মামুন ম. আজিজ এর সাথে পুরাপরি একমত. একটু বুঝে শুনে ......
সোনিয়া নিশাত আলম এত সুন্দর লেখা!! এতদিন পর পরলাম...!!
জারিফ আল সাদিক লুইচ্যামির কাহিনী লিখ্যা ব্যাবাক নাম কামাইসো দেহি!
বিষণ্ন সুমন দোস্ত তুমি আমায় ভুলে গেলেও আমি কিন্তু ভুলিনি. তাই পুরনো তোমার মাঝে একটিবার ঢু মারবার লোভ সামলাতে পারলাম না. অভিনন্দন তোমায় বিজিতদের একজন হতে পেরেছ বলে
রবিউল আলম রবু সূর্য, উদীয়মান সূর্যের মত অবিরাম লিখে যান .
দীপক সাহা বিজয়ী বীর ! আন্তরিক অভিনন্দন .
সূর্য @ মো: হাসান মুন্না> অভিনন্দন গ্রহণ করলাম ।
সূর্য আহমেদ সাবের আপনাকে "অজানায় যাত্রা"য় দেখে অনেক ভালো লাগল। আর অভিনন্দন গ্রহণ করলাম
মো: হাসান মুন্না শহরের যান্ত্রিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে এখানে মানুষগুলো বদলে যায় চোখের পলকেই। ভালোবাসা মানুষকে ধরে রাখতে পারেনা। একে একে খুলে যায় পুরোনো দালানের পলেস্তারা। খোলস বদলে বেরিয়ে আসে নতুন সাপ। সাবলীল লেখনী। অভিনন্দন।

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪