তখন সকাল দশটা বাজবে বোধহয়। ফার্ষ্ট ক্লাশ শেষ হতেই কলেজ পালালাম। মাঝে-মাঝেই কলেজ পালিয়ে আড্ডা দিতাম কয়েকজন বন্ধু। তাস খেলা ছিল প্রিয়, সিগারেটের ধোয়ায় বয়ে যেত বেলা। আমার কলেজ থেকে বাসা বেশ দূর…। লেগুনায় উঠে যাত্রাবাড়ী আসলাম, অনেকক্ষন হাটাহাটির পর বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তায় একটা ছোট ছেলে ময়লা-ছেড়া পোশাক, হাতে একটা প্যাকেট। আমাকে ডাকল সাহায্যর জন্য।
-মামা এখানে কোথাও বড় বেকারির দোকান আছে?
-ক্যানো?
-আমি একটা বিপদে পরছি
-কি সমস্যা?
-আমার বাড়ি মেঘনা ঘাট, আমি একটা বেকারির কারখানায় কাজ করতাম, মালিক তিন মাস বেতন দেয়না। চাইলে মারে…।এক শ্বাসে বলে গেল
-এখন কি সমস্যা ক?
-আমি ঐ কারখানা থেকে ছেকারিন চুরি করছি এক পাউন্ড
-কছকি হালার পো ? কি করবি এইটা দিয়া
-এইডা দিয়া বড় কেক বানায়, এইডার দাম অনেক
-কি? কত দাম?
আমি ইতিমধ্য তার সবকথা বিনা তর্কে পালন করে যাচ্ছি, অদ্ভুত ভাবে!
-এই দিকে যদি বড় বেকারির দোকান থাকে আমারে একটু বেইচা দিবেন
-(ঝাড়ি দিয়ে) আমি বিক্রি করবো কেন? তোরটা তুই বেচ
কথা বলতে বলতে আরো একজন এসে হাজির। লুঙ্গী পরা শার্ট গায় আমাদের দেখে বলল-কি হইছে মামা?
-আমি এইডা লইয়া বিপদে পরছি
তার সব সমস্যা এক মিনিটে বলে ফেললো।
পথচারি সব শুনে বিজ্ঞের ন্যায় বলল-আসলে পোলাডা অসহায়! এতটুকু পোলা! চলেন এইডা বিক্রি করে দেই
-আমার মায়রে কতদিন দেহিনা ?
করুন সুরে তার ফন্দি এটে গেল। আমি পরউপকারী হয়ে গেলাম।
পথচারী বললো, এইডার দামতো অনেক আমি বেচতে গেলে আমারে চোর কইতে পারে…?
আপনে গেলে কিছুই কইবো না
ছেলেঃ আমরা খোজলমু আগে বেকারীরে এইডা কিনবো কিনা। আপনারে আমরা এই প্যাকেট দিমু। আপনি প্যাকেট দিয়া টাকা লইয়া আইবেন।
-নাহ্! আমি পারবোনা
পথচারীর অনুরোধ, আপনে এই উপকারটা করেন বিক্রি করে আপনেও টাকা নিয়েন।
ছেলেটাকে জিঙ্ঘাসা করে, কিরে বেইচা দিলে টাকা দিবিনা হ্যারে
ছেলেটি বিনয়ের সুরে বললো দিমুনা কেন? আপনেরা দুইজন আমারে বাসে উঢাইয়া দিবেন। আমার টাকা যদি কেই নিয়া যায়?
-ঠিক আছে চলো
হাটতে হাটতে ছেলেটা বললো মামা কেউ যদি পরিচিত দেখেন, কতা কইবেন না। যদি আর কেউ জানে, তাইলে আপনেরা আমারে মাইরা যদি সব নিয়া জান। আমি ওরে ভরসা দিয়ে বললাম না আমার কেউ পরিচিত নাই, আর সমস্যা নাই তোমার জিনিসটা আমি বিক্রি করে দিমু চিন্তা কইরোনা। হাটতে হাটতে প্রায় যখন যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার পাশে বেকারির কাছাকাছি এলাম পথচারি বলল মামা আপনেরা এখানে দাড়ান। আমি আগে জিগাইয়া আইতাছি, লাগবো কিনা। অনেকক্ষন পর এসে বলল, মামা ঐ যে দেখেন লুঙ্গি পরা লোকটা উনি দোকানের লোক, হ্যারে আপনে এই জিনিসটা দিবেন উনি টাকা দিবে আপনারে। আমি কথা কইছি বিশ হাজার টাকা দিবে।
আমি বললাম, ঠিক আছে প্যাকেট দাও। ওরা বলল, মামা আপনের সাথে টাকা আছে কত? আমি বললাম ক্যান, পথচারি বলল- মামা পোলাডা ভয় পাইতাছে…। আমি বললাম ক্যান ভয়পাইতাছো? পথচারি বলল-এতো টাকার জিনিস দিবো, বিশ্বাস কইরা কিন্তু আপনে যদি…। আমি বোকার মত ওদের কথা মতো আমার মানিব্যাগ, মোবাইল, খুচরা কিছু টাকা তাদের হাতে দিয়ে বললাম তোমরা এইখানে দাড়াও। ছেলেটি বলল- আমি এইহানে দাড়াইয়া আছি, আপনে তারাতারি আইবেন, আবার টাকা নিয়া চইলা যাইয়েন না।
আমি দোকানের কাছে এসে বললাম,
এইটা নেন
কি এইটা?
ক্যান ঐলোকটা আপনারে বলে নাই কি?
কে?
পিছনে তাকিয়ে দেখি ঐ লোকদু’টা আর আগের জায়গায় নাই। আমি তারাতারি চলে আসি, এসে দেখি কেউ নাই..।পাশের মোবাইলের দোকান থেকে আমার মোবাইলে কল দিলাম, মোবাইল বন্ধ। আমিতো পুরাই মদন হয়ে গেছি। অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর হুশ হয়। বুঝতে পারলাম আমি ঠকবাজের হাতে পরেছি। কিন্তু ওরা যতক্ষন আমার সাথে ছিল ততক্ষন কেন বুঝিনি? ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসি। সারা বিকাল ভেবে ভেবে কোন উরাল সেতু খুজে পাইনি..। আমার মোবাইল মানিব্যাগ কিছু টাকা খোয়া গেল।
আমি প্যাকেট নিয়ে এসে দেখি ওটা এসিআই লবণের প্যাকেট।
আমাকে ধোকা দিলো দামি ছেকারিন বলে!
অনেক দিন পর জানতে পারি, যদিও এই তথ্যর কোন প্রমান আছে কিনা জানা নাই। এমন একটা মেডিসিন, যেটা মানুষকে অবচেতন করে ফেলে ( ব্রেইন ব্লাকমেইল ) । তখন তাকে যাই বলবে তাই করবে রোবটের মতন। হাতের খেলনা পুতুল হয়ে যায়। এই ধোকায় শুধু আমি একাই বোকা হইনি আরো অনেকেই এমন ফাদে পা দিয়েছে। আর সবার ঐ একই পরিস্থিতি ।
২৭ আগষ্ট - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪