সময় যে কীভাবে চলে যায়, তা বোঝা বড় দায়... মনে হল এই তো সেদিন... রাজশাহী কলেজে অর্নাস ভর্তি হলাম। তখন চলছিল ত্বত্তাবধায়ক সরকারের আমল। চারদিকে টান টান উত্তেজনা... এমন সময় অর্নাস প্রথমবর্ষ পরীক্ষা চলছিল... দেশের পরিস্তিতি খুব ভালো না থাকায় ঠিকমত ক্লাসগুলো করতে পারেনি অরুনধুতি। তাই কোনো সাজেশান ও জোগার করতে পারিনি, এই নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় সে। নতুন কলেজ- কোনো বন্ধু-বান্ধব ও নেই যে হ্লেপ করবে... এসব ভেবে ভীষন অস্থির হয়ে ওঠে অরুনধুতি। এমন সময় ঘড়ি দেখে চমকে ওঠে, দশটা বাজে ... তাই কলেজে পথে পা বাড়ায়...
মার্চ মাসের উত্তাল গরম পড়েছে খুব। চারদিক রোদের তেজ...তাও এখন তো বেলা গড়ানি...জানলা দিয়ে উঁকি মারে সবুজ...কলেজ যেতে হবে তো! এক লাফে বিছানা ছেড়ে ওঠে, তারপর কোনো রকমে ফ্রেশ হয়ে দেয় ভোদোঁড়।
রিক্শা আটো গাড়ি সব মিলিয়ে যেন জগাখিচুড়ি অবস্থা...এর মধ্যে কোন রকমে পা বাড়ায় সবুজ...ক্লাসে গিয়ে কোথায় বসবে ঠিক করে ওঠতে পারেনা সবুজ...দেখে কোণায় একটা সীট ফাঁকা আছে ধপ করে বসে পড়ে সবুজ... ঠিক অরুনধুতির পাশে ...
অরুনধুতি নড়েচড়ে বসে... এতক্ষণে পাশ ফিরে তাকায় সবুজ... দেখে এক অপরূপ সুন্দর মেয়ে পাশে বসে।
সবুজ বলে ওঠে ও সরি! ঠিক অনুমতি না নিয়ে বসে পড়লাম কিছু মনে করলেন না তো! আমি সবুজ...আপনি?
আমি অরুনধুতি...
বাহ্ খুব চমৎকার নাম যে... এভাবে সবুজের সাথে পরিচয় হয়েছিল অরুনধুতির।
আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগে...সবুজ আর অরুনধুতির বন্ধুত্ব গাঢ় থেকে আরোও গাঢ় হয়ে উঠেছিল।
মার্চ মাসের উত্তাল দুপুর তখন, মাথার উপর গণগণে সূর্য, মুক্তিযুদ্ধের মাস-চারদিকে স্বাধীনতা দিবস উদ্-যাপন প্রস্তুতি চলছে। কলেজে স্বাধীনতা দিবসে বইমেলা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-আলোচনা হবে, মুক্তিযুদ্ধের উপর ছোট্ট নাটিকায় অংশগ্রহণ করবে অরুনধুতি; এই নিয়ে কয়েকদিন ধরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে, প্রতিদিন বিকেলে কলেজের মাঠে এ নিয়ে রিহার্সাল হতো।
অরুনধুতির অভিনয় দেখে সবাই খুব প্রশংসা করেছিল,সবুজও।
এভাবে অরুনধুতি যে কখন সবুজের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় তা সে নিজেও বুঝে ওঠতে পারেনা।
বেশ ভালোই কাটছিল দিনগুলো, কলেজে-ক্লাসে-প্রাইভেটে প্রায় সবসময় দেখা হতো সবুজের সঙ্গে। সবুজ সব ব্যাপারে খুব এক্টিভ ছিল। ও পড়াশোনায় সবসময় সিরিয়াস ছিল।
রুমের ঢুকে অরুনধুতি দেখে, চারপাশ খুব আগোছালো-ছড়ানো ছিটানো বইখাতা, জামাকাপড়, রুমমেট সবসময় আগোছালো করে রাখে, ওহ্ ওর সাথে একরুম শেয়ার করতে একদম ইচ্ছা হয় না...
অরুনধুতি সবসময় খুব সাজানো পরিপাটি হয়ে থাকতে পচ্ছন্দ করে, এটা ওর ছেলেবেলার অভ্যাস...এবার এ নিয়ে ওর ছোট ভাই অয়নের সাথে খুব ঝগড়া হয়েছিল। ভাবতেই মুচকী হেসে ওঠে ও..মাঝে মাঝেই এমন হয়, কোন কথা মনে হলেই নিজের অজান্তে হেসে ওঠে... ঠিক যেমন সবুজের কথা মনে হলেই মনের মধ্যে প্রজাপতি নেচে উঠত... মন যেন হয়ে ওঠত পঙ্খিরাজ ঘোড়া, এক ছুটে যেন পাড়ি দিবে সাত-সমুদ্র তের নদী, সেসব দিনের কথা মনে হলে সত্যি কোথায় যেন হারিয়ে যায় অরুনধুতি, হেমন্তের সেই গানটা কানে ভাসে ‘পৌষের রোদমাখা সেদিন-ফিরে আর আসবে কী কখনও.. ’ আসলে ঠিকতো গত শীতেও ওরা দু’জন কত কাছাকাছি ছিল কিন্তু এখন সবই শুধু ঝাপসা আর কুয়াশার মত ঠেকে, ও যেন অরুনধুতির জীবনে এসেছিল কালবৈশাখীর ঝড়ের মত, যেমন ভাবে এসেছিল ঠিক তেমন ভাবেই হারিয়ে গেল।
কোথায় হারিয়ে গেল কেউ বলতে পারলনা, একদিন কলেজে সাদা জীপ এসে আরো কয়েকজনের সাথে ওকেও নিয়ে গেল, স্কলারশিপের জন্য ওকে ওরা জার্মান নিয়ে যেতে চায় কারন ও ছিল ছাত্র হিসেবে ট্যালেন্ট, বহুদিন আগে এক অনলাইন মেলায় খেলাচ্ছলে অ্যাপলিকেশন ফর্ম পূরণ করেছিল, সেদিন কী ভেবেছিল অরুনধুতি ও সুযোগ পাবে আর এভাবে ওকে বিরহের মাঝে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে যাবে অন্য দূরদেশে একেবারেই অচেনা প্রাণ্তরে, প্রথমে কিছুদিন ফোনে যোগাযোগ হলেও তারপর অনেকদিন ফোন না পেয়েও ওর দেওয়া ঠিকানায় চিঠি লিখেছিল অরুনধুতি, আজ আসবে কাল আসবে করে সে চিঠি উওর এসেছিল তিন মাস পর...সে চিঠিতে আবেগ জরানো কন্ঠে কিছুই লেখা ছিলনা ছিল রুটিনমাফিক জীবনের রোজনামচা...ক্লাস শেষে প্রাইভেট জব করা আবার পরের দিনের জন্য তৈরি হওয়া ...থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হলেও নিজের খরচ চালাতে হিমশিম খেয়ে যেত সবুজ...তাইতো গত জন্মদিনে অরুনধুতির জন্য শুধু কার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে ছিল সবুজ...তা নিয়ে ক্যাম্পাসে কম কানাঘুষা শোনা যায়নি সবাই বলে ওঠে বাবা এত প্রেম ঐ দূর দেশে গিয়ে কেমন টনটনে প্রেম...ওর জন্যই তো ফেসবুক আইডি খুলল অরুনধুতি...
পদ্মার পলিদ্বীপে পড়ন্তবেলায় হাঁটতে হাঁটতে এসব কথা মনে পড়ে যায় অরুনধুতির... যদিও সেসব দিন ওকে হাতছানি দেয়...ফিরে পেতে চাই....অজানা ভালোবাসাকে...
০৫ আগষ্ট - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
২৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪