জনির খেতে যেতে ইচ্ছে করছেনা । এক লজ্জাবোধ তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। মাটির সাথে মিশে যেতে মন চাইছে । বসে বসে ভাবছে কি করবে ও এখন ? অপরাধবোধ, লজ্জা, ঘৃণা সব কিছু মিলিয়ে সে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। 'এ আমি কি করলাম'!! যদি রাগটা না করে চুপ থাকতাম তবে কত ভাল হতো, আজও সবার সাথে হাসি খূশিতে সকালের নাস্তা করতে পারতাম।
-'কি রে খেতে আই ! ' আম্মুর কথায় সে নিজেকে কল্পনার জগত থেকে ফিরে পায় ।
' -'আসছি....।
' দু:শ্চিন্তায় ওর গলা দিয়ে কিছু নামছেনা । কোন মতে সামান্য কিছু খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল ।
বাসা থেকে বের হয়ে ভাবছে এখন ও কি করবে ? মেসে ফিরে যাবে ? নাকি অন্য কোথাও ? হঠাৎ করে মনে হলো অনেক দিন তানভীরের সাথে দেখা হয়না । আর ওকে তো আমি সব কিছু খুলে বলতেই পারি । তানভীর ওর কলেজ জীবনের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু।দুজনেরই ইচ্ছা ছিল এক সাথে মেডিকেলে পড়বে। এক সময়তো এমন ছিলো যে একজন অন্যজনের সাথে সব কথা বলতে না পারলে পেটের ভাত হজম হতোনা । তানভীর এখন দিনাজপুর মেডিকেল এ পড়ে। ওর ফাস্ট ফেজ পরীক্ষা হয়ে গেছে ক্লাসও নেই ।তাই বাড়িতে এসেছে।
কলিং বেলের চেপে জনি অপেক্ষা করছে । দরজা খুললো তানভীর এর আম্মা।
'আসসালামু আলাইকুম । খালা ভালো আছেন ?
- ওয়ালাইকুম আসসালাম । আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তানভীর আছে খালা?
-হ্যা , তোমার মন খারাপ নাকি? ও ঘরেই আছে।
জনি রুমে ঢুকেই সালাম দিল। দেখলো তানভীর ও তার ছোট বোন শম্পা এক সাথেই রয়েছে। ওরা দুই জন ই ভীষন খুশী হলো জনিকে দেখে । কূশল বিনীময়ের পর শম্পা বললো ,'ভাইয়া তোমরা গল্প করো আমি মুড়ি মাখায়ে নিয়ে আসি।' এই বলে শম্পা রুম থেকে বের হয়ে গেল।
অনেক দিনপর কাছে পেয়ে দুজনেই জড়িয়ে ধরে কে কেমন আছে সব নানা বিষয়ে কথা বলল ।জনি কথা বলতে বলতে কেঁদেই ফেলল। কোন মতে নিজেকে স্থির করে গতদিনের অপরাধবোধের কথা গুলো সব খুলে বলল।
তানভীর মনে মনে কস্ট পেল এই ভেবে যে তার সব চেয়ে প্রিয় বন্ধু এমন কাজ করতে পারল?
তার বারবার সূরা বানী ইসরাইলের ২৩ নাম্বার আয়াতের কথা মনে পড়ে গেল
“আপনার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে,তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং মাতা-পিতার সাথে উত্তম ব্যবহার কর । তোমাদের নিকট যদি তাদের কোন একজন কিংবা উভয়ই বৃ্দ্ধাবস্থায় তাকে তবে তুমি তাদেরকে “উহ” পর্যন্ত বলবেনা, তাদেরকে ভৎর্সনা করবেনা বরং তাদের সাথে বিশেষ মর্যদা সহকারে কথা বলবে।
বন্ধু! আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে
আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল কি? রাসূল (ছাঃ) বললেন,
‘সময়মত ছালাত আদায় করা। আবার জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি? রাসূল (ছাঃ)
বললেন, তারপর হচ্ছে পিতা-মাতার অনুগত হওয়া।
এ ছাড়াও
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন শ্রেণীর মানুষের প্রতি দয়ার দৃষ্টি দিবেন না। (১) পিতামাতার অবাধ্য ব্যক্তি (২) নিয়মিত নেশাদার দ্রব্য পানকারী (৩) দান করার পর খোটা দানকারী।তিনি আবার বলেন, তিন শ্রেণীর মানু ষ জান্নাতে যাবে না। পিতামাতার অবাধ্য ব্যক্তি, দায়ূছ ব্যক্তি, পুরুষের বেশধারী নারী’ (আত-তারগীব হা/৩৫৭০)
বন্ধু! পিতামাতার কাছে তুমি যতই রাগ করো /অপরাধ করো সেসব কিছু মনে রাখেন না,আমার পরামর্শ এই যে তুমি আংকেল এর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবা।
জনির মন কিছুটা শান্তনা পেলো,সবার কাছে দোয়া চেয়ে তানভীরের কাছ থেকে বিদায় এর সময় তানভীর তাকে একটা কার্টুন মুভি দিয়ে বললো এই মুভিটা তোমার মনকে একটু হলেও নাড়া করতে পারে।
রাস্তায় আজ অনেক গাড়ি , পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে মনকে শান্তনা দিতে গিয়েও বারবার ভাবছে কেন রাগ করলাম?
রাগ না করে যদি আব্বুকে বুঝিয়ে বলতাম ! ভীশন অপমান বোধ আর লজ্জা এসে তার মনে বাসা বাধছে।
রাত্রের খাবারের জন্য জনিকে ডাক দেয়, প্রতিদিন আব্বু আম্মুর সাথে ছাড়া তার খেতে ভালো লাগে না,কিন্তু আজ আব্বু আগেই খেয়ে নিয়েছে,
সামান্য কিছু খেয়েই রুমে আসলো,আজ সত্তিই মন খারাপ,ল্যাপটপ অন করে তানভীরের দেওয়া মুভিটা দেখতে লাগলো।
মুভিটার নাম Grave of the fire flies মুভিটা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ নিয়ে ।
ছোট্ট মেয়ে সেজুকোর জীবনের শুরুটা অনেক আনন্দের থাকলেও যুদ্ধ বিদ্ধস্থ দেশে বাবা মাকে হারিয়ে ছোট্ট ভাইয়ের কাছে ঠায় হয়। ছোট ভাই অনেক কস্ট করেও কোন খাবার জোগাড় করতে পারে না,মিস্টি মেয়ে সেজুকো খাবারের অভাবে অসুস্থ হতে থাকে,
এক সময় এই ছোট্ট মেয়েটিকে মৃত্যু গ্রাস করে নেয় , ছোট ভাই বড় একা হয়ে যায়।
জনি কাদতে থাকে যতই এমন ছিনারি তার সামনে আসে ততই বুক ফেটে কান্না পায়।
এক বুক কস্ট নিয়ে মুভিটা শেষ করে শুয়ে শুয়ে ভাবছে নিজের কথা, মিস্টি মেয়ে সেজুকো সামান্য খাবারের অভাবে মারা গেলো আর আমার তো সবই আছে, আব্বুর কাছে যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।
কিছুদিন আগেই তো আমার পছন্দের মটর সাইকেল কিনে দিলেন,এখন নতুন মডেল এসেছে এই নতুন মডেলের মটর সাইকেল নিতে চাওয়া নিয়েই আব্বুর সাথে এমন খারাপ আচরন করলাম!
আমার তো মটর সাইকেল আছেই কারও যে সাইকেলই নেই,তার কি ইচ্ছা হয় না মটর সাইকেলে চড়তে?
আম্মু একটা কথা বার বার বলে থাকেন, যে তোমার চেয়ে নিচের দিকে দেখো তাহলেই উচ্চাভিলাসি হতে মন চাইবে না।
নিজেকে স্থির করে একটু একটু করে বাবার রুমের দিকে আগাইতে থাকে, প্রতিদিন আব্বুর সাথে টিভি দেখেই ঘুমায় কিন্তু আজ আব্বু আগেই শুয়ে গেছেন।
জনি তার আব্বুর কাছে এসে সালাম দিয়ে পা চেপে ধরে কাদতে লাগে আর বার বার ক্ষমা চাইতে থাকে।
বাবা কি আর রাগ মনে চেপে রাখতে পারে! হেসে সালামের উত্তর নিয়ে বলে যাও ক্ষমা করে দিলাম,কিন্তু এমন কাজ আর করো না,আমি হার্টের রুগী তুমি চাও না যে আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যায়।
জনির উপলব্ধি হয় সে ভুল করেছিলো ভিশন বড় ভুল, ক্ষমা চেয়ে খুশি মনে ঘুমাতে যায়,নিজেকে কেন জানি তার খুব পবিত্র মনে হচ্ছে।ভাবতে ভাবতে কখনযেন ঘুমিয়ে পড়েছে।
সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাংগে, আব্বুর সাথে নামাজ পড়ে এসে আবার একটু ঘুম দেয়।
ঘুম থেকে উঠে বাবার সাথে নাস্তা করে রুমে গিয়ে বই দেখতে থাকে ,
জনি! আমায় একটু বাজারে রেখে আসো তো…
অবাক লাগে তার ,আব্বুর মটর সাইকেল আছে তবুও কেন আমার যেতে বললেন?
খুব খুশি মনে তাড়াহুড়ো করে বের হয়। ছোট বেলার কথা তার ভিশন মনে পড়ে যায়,বাবার পেছনে বসে স্কুলে যাওয়া। বাআর সাথে এর আগেও অনেক বার অনেক জায়গায় গিয়েছে,
কিন্তু আজ যেন তার নতুন করে ভালো লাগছে।
ভালোলাগার কারন, তার সবচেয়ে প্রিয় ব্যাক্তিটা আজ তার উপরে খুব খুশি,
ভাবতেই তার চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো,বাবা বুঝে ফেলার আগেই চোখের পানি মুছে ফেললো সে।
২৫ মে - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪