নিঃশব্দ প্রস্থান

পার্থিব (জুন ২০১৭)

শাহ আজিজ
  • ২০
ভোরবেলা ঘুম ভেঙ্গে গেল প্রতিদিনের মতই । সকালবেলার কিছু কাজ অতি আবশ্যিক যেমন সন্তানদের মায়ের শর্করা মাপা, বিপি,ইনসুলিন তারপর নাস্তা। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম এবার ডানে তাকিয়ে একটা ভীষণ হোঁচট খেলাম। আমার ছেলেটি তোমার জায়গাটি আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। তুমি আছ গোরের মধ্যে কাচা মাটির বিছানায়। উঠে পড়লাম বাকি অতিথিরা ঠিকমত ঘুমাচ্ছে কিনা তা দেখতে। সবাই অঘোরে ঘুমাচ্ছে।
ডাইনিঙে যে চেয়ারটিতে তুমি বসতে তাতেই বসলাম যাতে সব দরজার দিকে নজর রাখা যায়। ছেলেটিকে দেখছি পাশ ফিরে শুলো । দরজা খুলেই রেখেছি যাতে কাজের মহিলা বেল না বাজায় আর ভেতরের বদ্ধ হাওয়ার একটা গতি হয়। সবগুলো ঘর থেকে ফ্যানের আওয়াজ। বেগম এসে গেছে , ওকে সবার নাস্তা বানাতে বললাম। রাতে এতো খাবার এসেছে যে বিশাল ফ্রিজটি ভরে গেছে। দুপুরের রান্নার ঝামেলা নেই। বেগম আমার পেছনে রান্নাঘরের দরজা থেকে জিজ্ঞাসা করল গরম পানি করবে কিনা। স্তব্ধ হয়ে গেলাম, বললাম নাহ, পানির দরকার হবেনা। মনে মনে উচ্চারন করলাম যার জন্য পানি সেইতো নেই ! বাদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বিদেশী ওটস আর মুস্লির অনেক প্যাকেট , দুধ দেখে নিলাম । আমিই বানিয়ে দিতাম । কাল সন্ধ্যায় ঘরে ঢুকতেই জুতার আলমিরার পাশে ওর কয়েক জোড়া জুতা দেখাচ্ছিল আমার কন্যা। বুকটা হাহাকার করে উঠেছিল। সাথে আসা শালীরা ও কন্যারা চুপ মেরে ঢুকেছিল অতীত স্মৃতিচারন না করেই। রাতের খাবার টেবিলেও সেইরকম নিস্তব্দতা ১০/১২জন মানুষের মাথা নিচু করে নিঃশব্দ আহার গ্রহন। আমাদের ঘরে হ্যাঙ্গার আলনায় লুঙ্গি নিতে গিয়ে ওর সালোয়ার কামিজ হাতে চলে এলো । খাবার শেষে সোফায় বসে সবাই ইজি হওয়ার চেষ্টা করছি এমন সময় আমার মুখে জুতা আর কাপড়ের প্রসঙ্গ এসে গেল। এখন এই সকালে খেয়াল করলাম জুতাগুলো আর ওখানে নেই , নেই কাপড়গুলো । যা কিছু নজরে এলে ইমোশনাল হয়ে পড়ি তা আমার চতুর কন্যা সরিয়ে ফেলেছে। পুরো ড্রইং রুম থেকে ফ্রিজ পর্যন্ত খুব খুঁটিয়ে দেখলাম কোথাও ময়লা আছে কিনা। বেগমের নিত্যদিনের কাজ ছিল ওগুলো ঝাড়পোশ করা। আজ বোধকরি কেউ আর বলবে না ওগুলোর কথা।
মেয়েটি তার রুম থেকে বেরিয়ে এসে ঢুলু ঢুলু চোখে আমায় শুধালো কোন সমস্যা? আমি মাথা নাড়ালাম । তাহলে এখানে বসে আছ কেন? এই এমনিই তাছাড়া বেগম রান্নাঘরে একটু নজরদারি দরকার,ঘরে অতিথি । আমি বললাম তুমি বরং আরেকটু ঘুমিয়ে নাও।জামাই উঠলে বাকি সবাইকে নিয়ে নাস্তা খেয়ে নিও।
মেয়ে আমায় বলল ইনসুলিন নিয়ে নাও খাবার দিচ্ছি ।
খাবার এসে যাবে , দুটো রুটি মাত্র হয়ত বানিয়েই ফেলেছে সব। তুমি শোও গিয়ে ।
ফ্রিজের ডোরে ইনসুলিন নিতে গিয়ে আরেক ধাক্কা !
পাশেই ওর গুলো রাখা। নিত্যদিনের অভ্যাস ওকে আগে দিয়ে খাওয়া সারিয়ে আবারো বিছানায় শুইয়ে দিতাম । তারপর আমার পালা।
আজ আর দরকার হবেনা এসবের । এই দরকারি কাজগুলোর প্রয়োজন চিরতরে শেষ হয়ে গেল , শেষ হয়ে গেল কর্কট রোগ আর ইনার ইনজুরি থেকে অজান্তে যে ব্লিডিঙ হয়েছে তার কারনে। চোখ ভিজে এলো । এমনিতেই টার্মিনাল স্টেজ , লাংস ভরে গেছে পানি আর সেলে হয়ত কিডনি আর ব্রেন ধরেছিল বলে আমার সন্দেহ। সাড়ে চারটি বছর আগলে ছিলাম ।
একটা গুরুদায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেলাম । কন্যা কাদতে কাদতে বলছিল ভাল হয়েছে ঐ নির্মম কষ্ট সওয়ার ক্ষমতা মায়ের ছিল না।আল্লাহ তার নসিব করেন---।লাইফ সাপোর্টিং এ যন্ত্রনাহীন ঘুমিয়ে পড়া আর আমরা তিনজন দাড়িয়ে তার পরম নিশ্চিন্তে ঘুমানোর দৃশ্য দেখছিলাম। মাকে ওরা শেষ চুম্বনে আবদ্ধ করল । ওদের মায়ের মুখ ঢেকে গেল সাদা চাদরে , চিরতরে।
ছেলে আর মেয়েটির অদ্ভুত সহন ক্ষমতা হয়েছে দেখে দেখে আর সরকারী হাসপাতালের দোজখে সারা রাত দাড়িয়ে হার্ট থেকে পানি বের করার অপেক্ষায় । ওয়ার্ড বয়রা পানি বের করে আর ডাক্তাররা দাড়িয়ে দেখে । এই পার্থিব নিয়ম আমাদের মানতে হবে , মানছিইতো ।
এই যাহ ভুল করে উল্টো পাল্টা ইনসুলিন ভরেছি সিরিঞ্জে। ফেলে দিয়ে নিজেকে উপদেশ দিলাম এই সেনসেটিভ কাজের সময় খুব কেয়ারফুল ! ভাজি , কুসুম ছাড়া ডিম আর রুটি আমার জীবনের বাকি দিনগুলোর সঙ্গী। ডায়েট মিষ্টি থাকলে দুজনেই রসিয়ে রসিয়ে খেতাম তারপর ফ্যাট ফ্রি মিল্ক দিয়ে চা, আহা সবকিছু হারিয়ে গেল জীবন থেকে , বড্ড একা হয়ে পড়ব ওরা চলে গেলে ।
রান্নাঘরে বেগমের খুন্তি আর কড়াইয়ের যুদ্ধ চলছে ।
একাকীত্ব যেন জঙ্গিদের মত নীরবে আমায় ঘিরে ফেলছে।
পৃথিবীতে এটাই বাস্তব এবং মেনে নেওয়াই শ্রেয় ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
sagor ahmed বেদনাবিধুর গল্প ... দারুন লিখেছেন ।
ধন্যবাদ বেদনা ভাগ করে নেওয়ার জন্য।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী দাদু ভাই খুব কষ্ট অনুভুত হলো। অসাধারণ গল্প কিন্তু বেদনাদায়ক। অনেক অনেক শুভকামনা ও ভোট রইলো.....
বেদনা নিয়ে বাকি দিনগুলো কাটবে ।
আসলে জীবনটা ছোট, কিন্তু বেদনা এত বেশি কেনো? বোঝা বড় দায়ী.... বিধির লীলাখেলা বোঝা বড় দায়ী।
এশরার লতিফ 'নাচে নাচে জন্ম-মরণ নাচে'-তবু কষ্টকর মৃত্যু অপ্রত্যাশিত। খুব ভালো লাগলো।
কষ্ঠ দেখতে দেখতে বেশ বাস্তববাদী হয়ে গেছি

০৮ মে - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৮১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪