বেশ কিছুদিন ধরেই মনটা খুব আনছান করছে। কেন জানিনা মনটা খুব খারাপ।কারোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগছেনা,কোথাও বেরাতে ভালো লাগছেনা।টেবিলের এক কোনে সেল ফোনটা পরে রয়েছে দুদিন ধরে কতবার রিং হয়েছে কটা এসএমএস এসেছে দেখিইনি। ফ্রিজে কাল দুপুরের খাবার কাজের মেয়েটা কাজ শেষ করে যাওয়ার সময় আমার না খেয়ে থাকার কারন জানতে গিয়ে দিদিমনি বলার পর জানিনা কেন ওর আর সাহস হল না আগে কিছু বলার শুধু মাথা নিছু করে বলে গেল রাতে খাবারটা গরম করে খেয়ে নিবেন। না হলি শরিরডা ভেঙি যাবি। আমি ওর কথার কোন উত্তর দিইনি। আমার কেন এমন হল, আমি কেন এমন করছি সবার থেকে সব কিছু থেকে দূরে সরে যাচ্ছি কেন,কেন...?
সেই তিন বৎসর আগে আমার প্রথম প্রেম রাহুল।আমার প্রথম স্বপ্ন সাজানো আমার প্রেমিক যাকে আমার সব সব দিয়ে ভালোবেসে ছিলাম। যার সাথে আমি ভালোবাসার গোপন শয্যাই হয় অসতী।যার চাহিদার দাসি হয়ে আমি বারবার ছুটে গেছি শুধু ভালোবাসার ভিক্ষারিনী হয়ে কামনা পূরণ করতে। তবু সব বিলিয়েও আমি বারবার হয়েছি ওর সন্দেহের উপমা মাত্র। বারবার ওর সন্দেহ কথার বিষ হয়ে ছোবল দিয়েছে। পারিনি তারপর আর পারিনি জানেন একদিন সব শেষ করে দিলাম সম্পর্ক,স্বপ্ন সব সব। সেই তিন বৎসর আগে এভাবেই অন্ধকার ঘরে দিনের পরদিন রাতের পর রাত কাটিয়ে ছিলাম। কতদিন যে ছাঁদে যায়নি। কতদিন যে সূর্য উঠা দেখিনি। আমার সাধের গোলাপ বাগান শুখিয়েছে জলের আভাবে আর আমার বালিশ ভিজেছে বন্যায়। সেই তিন বৎসর আগের কথা, তারপর বাড়ি ছেরেছি,নতুন করে বাঁচতে নতুন চাকরি নিয়ে চলে এসেছি অন্য শহরে। সেল ফোনের নম্বর বদলেছি সেই তিন বছর আগেই। তিন বছর রাহুলের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। অবশ্য শুনেছি ও ওর নিজের ভূল বুঝে অনেকবার আমার সাথে দেখা করতে আমাদের বাড়িতে গেছে।কিন্ত আমি তো আর চাইনি একজন এমন মানুষের সাথে আবার সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে যে আমাকে শুধু ভূলই বুঝেগেছে।রাহুল অনেকবার আমার বান্ধবিদের দিয়ে খবর পাঠিয়েছে ওকে আবার একটা সুযোগ দিতে আমি আর দিইনি। কারন আমি ও নিজেকে তৈরি করে নিয়েছিলাম আমি ও আর কাউকে ভালোবাসবো না শুধু অভিনয় করবো,ছলনা আর একটা একটা করে ছেলেকে ঠকিয়ে আমার প্রতিশোধ নেব। তাই আর কখনো আমার ভূল গুলো ভাবিনি, ভাবিনি কেনোই বা রাহুন এমন করতো, কখন রাহুলের মনের গভিরের রাহুলকে খুজিনি শুধু বাইরেটা নিয়েই পড়েছিলাম। আমার ভুলগুলো কখনো দেখিইনি শুধু ভেবেছি আমি তো ওকে সব দিয়েছি সব। নিজেকে ওর মতো করে পালটে নিচ্ছি।
কিন্ত কোন দিন ভেবেই দেখিনি আমি কি রাহুলের মনের মতো হতে পেরেছি, ভাবিনি।সেই তিন বছর আগে জানেন, এক,দুই,তিন.....।
তারপর অনেকছেলে এসেছে গেছে আমার জীবনে এই তিন বছরে। কিন্ত একটা মজার ব্যাপার জানেন শেষে কিনা আমি এক বছর পরে আছি আমার আফিসের এক পিওনের প্রেমে। অনেক চেষ্টা করেছি কিন্ত ওই সহজ সরল ছেলেটাকে কোন ভাবেই আমি খারাপ ওর কাছে প্রমান করাতে পারিনি। ছেলেটা এতোই ভালোবাসে যে ও আমার খারাপ গুন গুলোর ও প্রশংসা করে। ও যানে আমি ওকে ছাড়া আরো দুটো না তিনটে ছেলের সাথে এখন রিলেসনে আছি। কিন্ত এ প্রশংঙ্গে কোনদিন কথা বলতে গেলেই কেমন ভাবে এরিয়ে যায়। যদি সত্যি কথা বলি এই তিন বছরে রাহুলের পরে আর এই ছাপোষা পিওনটা ছাড়া আমি প্রায় গোনা বাইশেক প্রেম করেছি কিন্ত কারো প্রেমেই পড়িনি। যদি দ্বিতীয় বার কাউকে বিশ্বাস করি তবে এই পিওনকে তবু আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিনি।
আমার সব সমিকরন পাল্টেগেল দুদিন আগে। আমাদের অফিসে এলেন নতুন এমডি আমরা সবাই তাকে সম্বর্ধনা দেবার জন্য ফুলের মালা,পুষ্পস্তবক হাতে দারিয়ে আছি। একপাশে আফিসের সব ছেলে ষ্টাপের লাইন অন্য পাশে আমরা মেয়েরা। যথা সময় নামলেন এমডি সাহেব সবাই এগিয়ে গেলাম। সেই চেহারা,সেই মায়াবি মুখ, কিন্তু ঠোটের কোনের হাসিতে আর নেই যেটা আগে সব সময় থাকতো কেমন গম্ভির। আমার সময় থমকে দারিয়ে গেল আমি আর সামনে এগিয়ে যেতে পারলাম না দরজার আরালে দারিয়ে গেলাম। লুকিয়ে খুটিয়ে খূটিয়ে দেখছি। চোখের কোনে জল চলে এলো তিন বছর পর আবার। এই প্রথম। এমডি সাহবেব ম্যানেজার বাবুর হাতের পুস্পস্তবকটা নিলেন শুধু, আর মেয়েদের দিকে তাকিয়ে কি যেন বললেন মেয়েরা মাথা নিচু করে চলে এলো। আমি দারিয়েই রইলাম দরজার আরালে।কত বদলে গেছে।
হারিয়ে যেতে থাকি অতিতে। মনে পরে একের পর এক স্মৃতি, কথা দেওয়া নেওয়া। জানেন রাহুল খুব ভালো ভবিষ্যতবাণী করতো ও সব সময় বলতো জান প্রিয়া আমরা একে অপরকে এতো ভালোবাসি তো একদিন ভালোবাসার পরিক্ষায় না আমরা হেরে যাব। এখন যেমন আমরা একে অপরকে না দেখে থাকতে পারিনা, আমাদের যতই কথা কাটাকাটি হয় আমরা দেখা করলেই সব রাগ অনুরাগ কোথায় যেন মিলিয়ে যায়।একদিন এমন হবে দেখ, আমরা আর কেউ কারো সাথে দেখা করবো না।কারো সাথে কথা বলবো না। দুজন দুজনকে এমন ভূল বুঝবো যে, কেউ আর কাউকে বুঝতেই চাইবো না। আমি সেদিন খুব কেঁদেছিলাম আর আমার হাতের রিষ্টলেট ওর হাতে পরিয়ে দিয়ে বলেছিলাম এটা আমাদের ভালোবাসার প্রমান আমি তোমাকে পরিয়ে দিলাম যতদিন এটা তোমার হাতে থাকবে যানবো আমি তোমারি আছি। আজ দূর থেকে দেখলাম রাহুলের হাতে সেই রিষ্টলেট টা। পিছন থেকে শ্যামল আমার পিওন আমার হাত ধরে ডাকতেই চমক ভাঙলো আমি ওর দিকে তাকানোর আগেই ও একদমে বলতে লাগলো, প্রিয়া তুমি যাওনি ভালোই করেছ। আমাদের নতুন এমডি রাহুল বাবু নাকি মেয়েদের পছন্দ করেন না ম্যানেজার বাবু বললেন। কি নাকি অতিতের প্রেমটেম কেস উনার বিশ্বাস ভেঙে উনার প্রেমিকা নাকি চলে যায় তাই তো সব মেয়েদের দারিয়ে থাকতে দেখে মেলা বসেছে বলে আপমান করলেন। তুমি যাওনি ভালো হয়েছে বলে শ্যামল আমার হাত ধরে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলে এই প্রিয়া তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো কোন দিন। আমার চোখ তখন জলে ভেসে যাচ্ছে। শ্যামলের চোখের দিকে তাকাতে পারিনি। ও কি যেন ভেবে আমার হাত ছেরে দেয় আমি আর এক মুহুর্ত দাঁড়াতে পারিনি চলে আশি বাড়ি। শ্যামলের থমকে যাওয়াতে বুঝতে পাড়ি ও আমার চোখের জল দেখে নিশ্চয় বুঝেছে এই সেই রাহুল যার গল্প আমি ওকে কথায় কথায় বলতাম।
জানেন তারপর আজ দুদিন আমি এই ঘর থেকে বেড়াইনি কিছু খেতে পাড়িনি, চোখে ঘুম নেই। জানেন আমি আবার সেই তিন বছর আগে ফিয়ে গেছি। সকালের সূর্য ওঠা দেখিনা, গোলাপের টবে জল দিয় না পড়ে আছি। আর আমার চার পাশে এই যা দেখছেন সব স্মৃতি আর স্মৃতি আমি আজ যেন স্মৃতিরই ক্রীতদাসী।
২৬ এপ্রিল - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
১৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪