প্রথম

কষ্ট (জুন ২০২০)

পারভেজ রাকসান্দ কামাল
  • ৩০


“তুতুন তোমার হোমওয়ার্ক শেষ হয়েছে? কী করছ, ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে।” শাহেলা ডাইনিং রুম থেকে জিজ্ঞেস করেন।
“এই তো আম্মু, আসছি।”
স্কুল থেকে ফিরে, গোসল করে তারপর দুপুরের লান্চ সেরেছে তুতুন। তাদের পাঁচ তলা ফ্ল্যাটের ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে টবের ফুল গাছের সাথে কথা বলছে। ঝিরি ঝিরি বাতাস বইছে ব্যালকোনিতে। গাছগুলো দু’দিকে মাথা নেড়ে বা কখন মাথা নুইয়ে তুতুনের কথায় সাড়া দিচ্ছে।
ব্যালকোনি থেকে দেখা যাচ্ছে, একটু দূরে মাঠে বেশ কিছু ছেলে মেয়েরা ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। আকাশে এখন সাদা সাদা মেঘ। তার ফাকে সূর্য লুকোচুরি খেলছে। কেউ কেউ নিজের ঘুড়ি দিয়ে অন্য ঘুড়ির সাথে কাটাকুটি খেলছে। ও! ভুলে যাবার আগে একটা কথা বলি, তুতুন এবার ক্লাশ সিক্স থেকে সেভেনে উঠেছে প্রথম স্থান অধিকার করে। তাই ওর স্থান ধরে রাখার দ্বায়িত্ব ও ঝক্কি দু’টোই বেশি। তা নাহলে অভিলাষা তার স্থান দখল করে নিবে। খুব কোমর বেঁধে নেমেছে অভি।
“কী হলো বাবু। সেই কখন তোমার লান্চ শেষ হয়েছে। দুপুরে বিছানায় শুয়ে রেস্ট নাও অথবা কালকের হোমওয়ার্ক রেডি করো।” শাহেলা একটু আদর ও আব্দারের স্বরে বলল কথাগুলো তুতুন কে।
তুতুন মায়ের বাধ্য ছেলে। মায়ের আব্দারের স্বর শুনে, একটা দীর্ঘনি:শ্বাস ফেলে নিজের ঘরে চলে এল। অন্ক বই ও খাতা নিয়ে বিছানায় উপুর শুয়ে আগামী কালের হোমওয়ার্ক করতে লাগল। তুতুনের বেডটা একটা বড় জানালর পাশে। বিছানায় শুয়ে দূরে বহু দূরে চোখ যায় তুতুনের। ভাবে রবীন্দ্রনাথের ‘তালগাছ’ কবিতাটি। বিশেষ করে শেষ লাইনগুলো, “মা যে হয় মাটি তার, ভাল লাগে আরবার, পৃথিবীর কোণটি।” পাঁচতলায় শুয়ে সে নরম সবুজ ভিজে ঘাসে পা ফেলে ছুটতে চাই। কিন্তু সেই সাধ পূর্ণ হবার নয়। কারণ, অভিলাষা। অভিলাষা যখন তখন তার জায়গা কেড়ে নিয়ে নিজে ফার্স্ট হয়ে যেতে পারে। আম্মু বলেছে, “No one remembers second” । না এটা তুতুন করতেই দেবে না অভিকে। সেই সুযোগ অভি কে দেওয়ায় যাবেনা।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ জানালা গ্লাসের উপর পত পত, ঠক ঠক, ঠাস ঠাস শব্দে তুতুন চমকে উঠল। জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে, সেই ঘুড়িটা জানালায় ধাক্কা দিচ্ছে। তুতুনের খুব ভাল লাগল। জানালার গ্লাস খুলতেই নীচে নেমে গেল ঘুড়িটি। আবার কিছুক্ষণ পর সেই শব্দ। এবার আর তুতুন চমকায়নি। জানালায় তাকিয়ে দেখে, ঘুড়ির গায়ে লেখা, “খেলতে আসবি? নীচে?”
“নাহ। যাব না। যাব কী করে? আম্মু বকবে।” তুতুন খাতার পাতা ছিড়ে কথাগুলো লিখে ঘুড়ির সুতোয় বেঁধে দিল।
“ আরে কিচ্ছু হবেনা। অল্প খেলেই উপরে চলে যাস। দুরে সবুজ বনে ছোঁয়া ছুঁয়ি খেলবো। জানিস ওখানে একটা পুকুর আছে। তার পাড়ে বাঁকা নারকেল গাছ। সেই গাছে উঠে আমরা পানিতে লাফ দেব। তোর ভয় নেই, তুই পাড়ে দাড়িয়ে দেখবি আর দেখবি।” আরেকটা চিরকুট এলো ঘুড়িতে ভর করে।
তুতুন লিখল, “ বারে! সে কি করে হবে! আম্মু যে ঘুম থেকে উঠে আমায় খুঁজবে।”
“ঠিক আছে থাক তুই। আমরা ঘন সবুজ বনে লুকোচুরি খেলিগে।”
তুতুন চিরকুটটা হাতে নিয়ে চুপ করে বসে আছে। তার মাথায় ঘুরছে, “ কোন মাঠে যে ছুটে বেড়াই সকল ছেলের জুটি।”
একসময় তুতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল যে, সে যাবে খেলতে। পা টিপে টিপে মায়ের ঘরের দরজায় গিয়ে বুঝলো আম্মু ঘুমাচ্ছে।
সে আস্তে আস্তে বেরিয়ে নীচে নেমে এল। একদল ছেলেমেয়ে খেলছে, হা হা হি হি করছে। ওরা তুতুনকে খুব আপন করে নিল। তুতুন প্রথমদিকে একটু আড়ষ্ট হয়ে থাকলেও পরে ওদের সাথে মিশে গেল। খুব মজা করে খেলতে লাগল। একটা লম্বা মত ছেলে ওকে ঘুড়ি ওড়ানো শিখিয়ে দিল। তুতুন জীবনে কোনদিন লাটাই হাতে নেয়নি। লাটাই হাতে পেয়ে সুতা ঢিল দেয়া ও সুতা টেনে ধরা শিখে খুব মজা পেল। জীবনে বোধহয় এত মজা সে কখনও পায়নি। অভিলাষার প্রথম স্থান দখল করার টেনশন মিলিয়ে গেল প্রথম লাটাই ধরতে পারা আনন্দে।
হঠাৎ একটা ছেলে তুতুনকে দূরে একজোড়া তালগাছ দেখিয়ে বলল, “তুতুন আমার সাথে দৌড়ে পারবি?”
তুতুন কিছু বুঝে উঠতে পারল না। একটু ভ্যাবাচ্যাকার মত চেয়ে রইল। শুধু ঘাড় নেড়ে শুধালো, “মানে কী?”
ছেলেটি বলল, “ ওই যে দূরে জোড়া তালগাছ দেখছিস, ওটাকে দৌড়ে যে আগে ছুঁতে পারবে সে চ্যাম্পিওন”।
তুতুনের মনে সবসময় ফার্স্ট হওয়া গেড়ে বসেছে। তুতুন তাই, কী লেখাপড়া বা কী খেলাধুলা কোনোটিতেই সেকেন্ড হতে চায়না। আম্মুর কথা কানে বাজে তাঁর। “No one remembers second”।
তুতুন সম্মতি দিল। শুরু হলো দৌড়। তুতুন অনেকটা এগিয়ে। তাঁকে ফার্ষ্ট হতেই হবে। কেউ দ্বিতীয়কে মনে রাখেনা। আর কোনোদিন এভাবে খেলতে আসতে পারবে কিনা তুতুন জানে না। তাই সে প্রাণপনে ছুটতে লাগল। মাঝে মাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে, সেই ছেলেটি কত পিছনে। সবাই তুতুনকে উৎসাহ দিচ্ছে যে, এগিয়ে যা তুতুন। শ্লোগান উঠছে, “তুতুন! তুতুন!! তুতুন!!!”
একবার মনে হলো পিছনের ছেলেটি তুতুনকে ধরে ফেলছে। তুতুনের পীঠে থাবা দিচ্ছে।
তুতুন ধরফরিয়ে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ পর সম্বিৎ ফিরে এলে বুঝলো অন্ক করতে করতে কখন যে তুতুন ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতে পারেনি।
সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, তাই শাহেলা তুতুনকে পীঠে থাবা দিয়ে ডেকে তুলছে। তুতুনের মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল। বাস্তবে তো তুতুন পাড়ার ওইসব ছেলেমেয়েদের সাথে খেলতে বা ঘুড়ি ওড়াতে যেতে পারেনা। স্বপ্নে ওদের সাথে খেলছিল। দৌড়ে তুতুন প্রথম হলো কিনা সেটাও দেখেতে পেলনা, আম্মুর ডাকাডাকিতে। এক অনির্বচনীয় কষ্টে তুতুনের মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে রইল।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী অপরিসীম ভালো লাগলো।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্পটি ছেলেবেলার কষ্ট নিয়ে লেখা। পড়ার চাপে, প্রথম হওয়ার চাপে শৈশব চুরি হয়ে যায়। বাস্তবে এমনকি স্বপ্নেও চাওয়া পাওয়া স্বাধীনতা নেই ছেলেমেয়েদের।

১৩ এপ্রিল - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪