কম্বল জড়ানো কাল বিড়াল

ত্যাগ (মার্চ ২০১৬)

মনিরুজামান Maniruzzaman লিংকন
  • ৩৬
এলাকায় গতবছর শৈত্যপ্রবাহে একজন মারা গিয়েছিল। শীতার্ত মানুষগুলোর জন্য দলের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে কম্বল বিতরণের জন্য শীত শুরু হওয়ার আগেই জরিপ চালিয়ে দুস্থ পরিবার গুলোর তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। নিহতের পরিবারের নামও ছিল তালিকায়। অথচ বিতরণের সময় তারা কম্বল পেল না!

বরংচ লোকটির মৃত্যুর পরে তদন্ত রিপোর্টে অলৌকিকভাবে তারা হয়েগেল মধ্যবিত্ত পরিবার। জরিপের ভাঙ্গা টিনের ঘরটির জায়গায় দেখা গেল একতলা ভবনের কাজ চলছে!

গত বছরের মত এই বছরও দলীয় প্রধান ঐ পৌরসভার সভাপতিকে ডেকে আনলেন এবং প্রতিটি দুস্থ পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণের পরামর্শ দিলেন। পৌর-সভাপতি এলাকার মেয়রও বটে। তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন, প্রতিটা কম্বল উদ্দেশ্য সফলের জন্য ব্যবহৃত হবে।

দলীয় প্রধানের পক্ষ থেকে পরদিন কম্বল ভর্তি ট্রাক মেয়রের বাড়ির সামনে এসে থামল। ড্রাইভারের পাশ থেকে নেমে এলেন গোঁফ দাড়ির ষাটোর্ধ একজন। মাথায় টুপি, ধব ধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। তিনি মেয়রকে দলীয় প্রধানের চিরকুটটি দিলেন। মেয়র পড়লেন, “ উদ্দেশ্য সফলের জন্য সাদা হুজুরকে পাঠিয়ে দিলাম।“

মেয়রের রাগ হল। ইচ্ছে হচ্ছে সাদা হুজুরের সাদা পাঞ্জাবিতে পানের পিক ছিটিয়ে দিতে। রাগ আর সামলাতে পাড়ল না বলল,” শেষ মেষ দলের মধ্যে হুজুর! আপনি দলে ঢুকছেন কবে? তদবির করছে কেডা?”

ট্রাকের ড্রাইভার নেমে এসে বলল,” রাগ করে কোন প্রশ্ন করলে উনি উত্তর দিবেন না।“

মহা যন্ত্রণা!
কোন যন্ত্রণা না। অত্যন্ত ভদ্রলোক । সাদা মনের মানুষ।
আচ্ছা তোমারে প্রশ্ন করলে তুমি উত্তর দিবা?
হু, করেন।
লিডারে তারে পাইল কই?
তিনি আপনার এলাকার লোক। বাড়িতে গরু পালেন। গোবর হয়। সার বানান। সেই সারে বীজ বপন করেন। চারা হয়। প্রতিটি বাড়িতে গিয়া সেই চারা বিনা পয়সায় রোপণ করেন। তিনি সাদা মনের মানুষ।
একটু থেমে বলল,” এরশাদ শিকদাররে সবাই চিনে সাদা মনের মানুষকে কেউ চিনে না। দুঃখ।“
তাই বইলা একজন হুজুর। আরে হুজুর শুনলেই মনে হয় রাজাকার।
কেন হুজুরদের কি রাজাকারদের কাছে নিরানব্বই বছরের লীজ দেয়া!
কয়েকটা গাছ লাগাইয়া সাদা মনের মানুষ হওয়া যায় না।
গাছ নিয়া হেলা করবেন না। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়।
জানি জালানি দেয়, ফুল- ফল, তরকারি সব দেয়। এবার আমারে বাচতে দাও। তোমরা দুজন কি একই রুমে থাকবা। তিনি জীবে প্রেম করে যেই জন মার্কা লোক। সাদা মনের মানুষ, নিশ্চয়ই তোমারে পায়ে ঠেলবে না। সাদা মন, আহারে বান্দরেও তার সমস্যা নাই।
আমার সমস্যা আছে। সম্মানিত মানুষ, ঘুমের মধ্যে পা লাগতে পারে। আমার ঘুম ভাল না। লুঙ্গি হাঁটুর উপড় উঠে। আবার নাক ডাকার শব্দে হুজুরের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
হে আল্লাহ্‌ আমারে দুই পাগলের হাত থেকে রক্ষা কর।
আমাকে পাগল বলেন ঠিক আছে কিন্তু উনার দলীয় প্রধানের সাথে সরাসরি কানেকশন, সাবধান।

মেয়র সতর্ক হলেন। রাতে সাদা হুজুরের জন্য ভাল একটা রুমে থাকার ব্যবস্থা করলেন। এয়ার কণ্ডিশন্ড রুম। বিছানার চাদর দেখে ময়ুরের পাখা মেলার কথা মনে পরে। বিছানার একপাশে একটা কম্বল ভাঁজ করে সাজানো। কাশফুল রঙ। সাদা হুজুর কম্বল খানা ছুঁয়ে দেখলেন। অনুভব করলেন একটা মৃত্যু। আবিস্কার করলেন এই রুমের একটা অপ্রয়োজনীয় উপাদান।

খুব সকালে মেয়র যখন কিভাবে কম্বল বিতরণ করা যায় সেই গবেষণায় ব্যস্ত, ঠিক তখন সাদা হুজুর বেরিয়ে পড়লেন। সাথে নিলেন মেয়রের এয়ার কন্ডিসন্ড গাড়ী। কম্বলগুলো বিতরণ করে রাতে ফিরলেন। ট্রাক ড্রাইভার কে দিয়ে মেয়রকে জানালেন একটা পরিবারকে কম্বল দেয়া যায়নি, কারন হিসাবে জানালেন একটা কম্বল কম ছিল।

মেয়র বিরক্ত। তাকে না জানিয়ে কম্বল বিতরণের জন্য এবং আরও কিছুর জন্যও। মেয়রের চোখ তখন প্রশ্ন হুজুরের গায়ের চাদরের দিকে। বললেন,” চাদরটা দিয়ে আসতেন। খুব সাদা মনের মানুষ সাজেন। ভন্ডামি! যদি শীতে ঐ পরিবারের কেউ মারা যান! গাছ দিয়া সাদা মন। ফাইজলামি। আপনাকে উচিৎ রাস্তার মোড়ে নিয়া সকলের সামনে থুথু ছিটান। দলীয় প্রধান জানতে পাড়লে আপনার রাজাকারগিরি ছুটাইবে।“

প্রস্ন হুজুর কোন কথা না বলে রুমে গিয়ে বিছানার কম্বলটা এনে তার সামনে ধরলেন। কম্বলের এক কোনের লেখাটি স্পষ্ট পড়া যায়,” বিনা মূল্যে বিতারনের জন্য।“ পাশে লেখা সালের সংখ্যা বলে দেয় গত বছর শীতের।

সাদা হুজুর বললেন,” থু থু যখন ছিটাবেন তখন নিজের গায়ে ছিটান।“

সাদা হুজুর চলে গেলেন পায়ে হেটে।
মেয়র অনুভব করলেন একটা পচা শামুক নিজের পায়ের তলায়। এতদিন সব পুকুর গুলো চুরি করেছে পরিকল্পিতভাবে। কখনও ধরা পরেনি। অথচ একটা শখ, যা ছিল ক্রিকেটারের টুর্নামেন্টের স্ট্যাম্প জমানোর মত। তাই কোন পরিকল্পনার প্রয়োজনের কথা মাথায় আসেনি। সত্য গোপন করার জন্য পরিবারটিকে বাড়ি পর্যন্ত করে দিতে হয়েছে। এমনকি তাদেরকে দিয়ে বলানো হয়েছিল রিলিফের কম্বল নেয়ার মত গরীব তারা কখনও ছিল না।

মেয়র বুঝতে পারলেন, গত বছরের কথা স্মরণ করানোর জন্য ইচ্ছে করেই বলা হয়েছে একটা কম্বল কমের কথা। মেয়র ভাবতে লাগলেন দোষ এড়ানোর সব থেকে কার্যকর উক্তি “সব ষড়যন্ত্র” বলে ঘটনাটা কিভাবে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া যায়। এমন সময় মেয়রের পি এস আবু বকর জানালেন,” দলীয় প্রধানের একটা ই-মেইল এসেছে!“

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,আমার গল্প পড়ার আমন্ত্রন রইল। শুভ কামনা ও ভোট রইলো...
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ লেখার হাত বেশ পাকা । ভাল লাগল ।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন চমতকার! কিন্তু তারপর? ভাল লিখেছেন। খুব ভাল। শুভেচ্ছা রইল।

১০ এপ্রিল - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪