আইড়

শিক্ষা / শিক্ষক (নভেম্বর ২০১৫)

মনিরুজামান Maniruzzaman লিংকন
  • ১৮
জলিল সাহেবকে আজ দুটো ডেস্ক সামলাতে হচ্ছে । একটা নিজের অন্যটা আক্কাস সাহেবের । আক্কাস সাহেব সাত বছর যাবত ডেস্কটা আগলে আছেন । হঠাৎ আজ সকালে একটা খাম পেয়েছেন । খোলা খাম , বদলীর আদেশনামা । সাথে সাথে সে তদবিরে ছুটে গেলেন।

খাম পেয়েছেন জলিল সাহেবও । কিন্তু সকাল থেকে গ্রাহক নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন যে কি করা যায় তা ভাবার সময়টুকু পাচ্ছেন না কিম্বা সময় নিচ্ছেন না ।

আক্কাস সাহেব পথ জানা লোক । পথটা চিনেছিলেন ছয় বছর আগে প্রথম যেদিন বদলীর আদেশ পেয়েছিলেন সেদিন । ছুটে গিয়েছিলেন বিভাগীয় কার্যালয়ে । বড় স্যারকে অনুরোধ করেছিলেন ট্রান্সফার টাফেরানোর জন্য । বড় স্যার বলেছিলেন , “ স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা শৃঙ্খলা মেনে চলেন । প্রতিদিন সূর্য পূর্ব দিকে উঠান পশ্চিম দিকে অস্ত নেন । আর আপনারা !“

বড় স্যার স্পস্ট কথা বলতেন এবং স্পস্ট শুনতে পছন্দ করতেন । মিডিয়া ঘৃণা করতেন । আক্কাস পকেট থেকে পাঁচটি এক হাজার টাকার নোট বের করে সরাসরি বড় স্যারকে দিয়েছিলেন। বড় স্যার বলেছিলেন ,“ সংক্ষিপ্ততা আমার পছন্দ , নেয়া সহজ ।“

আক্কাস বলেছিলেন,” আমারও পছন্দ স্যার, দেয়া সহজ ।“

- ভেরি ইন্টেলিজেন্ট ।

বড় স্যার অমল বাবুকে ডেকে টাইপ করিয়েছিলেন, প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে আক্কাসের ট্রান্সফার অর্ডার বাতিল ।
প্রথম অর্ডারটা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আর দ্বিতীয়টা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তরও স্বার্থে । আক্কাস সেদিন বুঝতে পেরেছিল স্বার্থ আর বৃহত্তরও স্বার্থের মধ্যে তফাতটা ।

বড় স্যার বদলালেন। নতুন স্যার এলেন । বদলালনা আক্কাসের চিরচেনা পথটা । এখন বছর বছর তাকে টাকা গুনতে হয়। কোন কারনে টাকা পৌঁছে দিতে ভুল করলে বদলীর অর্ডার হয় । আক্কাস তখন বৃহত্তর স্বার্থ তত্তের সফল প্রয়োগ ঘটান ।

আক্কাস আজও ফিরলেন হাসিমুখে । বৃহত্তর স্বার্থ জয়ী হয়েছে । জলিল সাহেবকে বললেন, “ আপনাকে বললাম, গেলেন না। যা করার আমি করতাম ।“

জলিল সাহেব বললেন ,” সবই ঠিক আছে, কিন্তু আমার পুকুরে তো ভাই ইলিশ মাছ নাই !“

- আরেভাইকাজ তো করে দিতাম নিজের স্বার্থে । পাশে সৎ লোক থাকলে সুবিধা হয়। সৎ মানুষের মডেল দেখিয়ে বেশি মাল খাওয়া যায় ।

আক্কাস সাহেব নিজের কাজে মন দিলেন। আর জালিল সাহেব খামের ভিতর থেকে অতি পরিচিত ( এক বছরের মাথায় তিন বার ) বদলীর আদেশটা পড়লেন ।

দূরের পথ । বয়স হয়েছে । মন যেতে চায় শরীর বাঁধা দেয়। আবার ঈদের বোনাস পেয়ে জলিল সাহেবের আইড় মাছ কেনার কথা । বাবার ইচ্ছা আইড় মাছ খাওয়ার। ছেলের সাধ্য তার অজানা নয়। তাই ঈদ বোনাসের অপেক্ষা করছেন । জলিল একবার ভেবে ছিলেন হোটেল থেকে কয়েক টুকরা কেনার কথা। কিন্তু তার বাবা ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। রিটায়ার্ড আদর্শ শিক্ষক। সবাইকে বাদ দিয়ে পাতে মাছ তোলার লোক সে নন ।

এমনিতেই নতুন জায়গায় সংসার পাতা বাড়তি খরচের কাজ । তার উপর দুটো সংসার। ছেলে মেয়েকে সাথে নেয়া যাবে না। দুজনই কলেজে পড়ে । তারা থাকবে দাদা দাদীর সাথে। বউকে সাথে নিতে হবে । কারন জলিলের বাড়তি যত্ন লাগে। এমনকি তার গোছলের পানিও গরম করে দিতে হয়। তাই পরের ঈদই হল আইড় মাছ কেনার ভরসা। যদি বাবা বেঁচে থাকেন !

নতুন কাজ করার জায়গা আর নতুন পরিবেশে অত্যন্ত অভ্যস্ত জলিল সাহেব। এই পরিবেশ কখনও তার কাছে পুরনো হতে পারেনি !

কয়েক মাস পরে একটা খাম এলো। অনেক পুরনো প্রতীক্ষার অবসান হল । সতের বছর পরে প্রমসনের চিঠি। শাখা ব্যবস্থাপকনিজ হাতে খামটি জলিল সাহেবের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, “ আপনার প্রাপ্য।“

এরপর একদিন হঠাৎব্যবস্থাপক বললেন,” বড় স্যার অডিটে আসছেন । তার ধারণা তার কারনেই আপনার প্রমসন হয়েছে । কোন কিছু যে দিবেন না, এটা সে জানেন । তাই আপনার বাসায় দাওয়াত খাবেন।“

জলিল সাহেব বড় স্যারদের সবসময় এড়াতে চাইতেন। তার ধারনা বড় বসদের বড় ধরনের দুর্নীতি করার সুযোগ থাকেআর তৃতীয় বিশ্বে সেটা অধিকার হিসেবেই সংরক্ষিত থাকে !ব্যবস্থাপকপাওয়ার লেস মানুষ । আর সে কারনেই জলিলের কাছে তার কথার দাম আছে। আর জলিল সাহেব খাবেন আর খাওয়াবেন এর মধ্যে পার্থক্য টুকু ঠিকই বোঝেন । অনিচ্ছা আর ভদ্রতারদন্দে অবশেষে অনিচ্ছা জয়যুক্ত হল।

জলিল সাহেব টাকা ধার করলেন। বড় সাহেবের জন্য তার পছন্দের কাঁটা ছাড়া মাছ কিনতে এসেজলিল সাহেবের নিজের বাবার কথা মনে পড়ে গেল । বাড়িতে মা বাবাকে ফোন করলেন।আইর মাছের কথা জানালেন। ছেলে মেয়ে তো সাথে আসবেই। আসবেন ছোট ভাই। ভাইয়ের বউ আর তাদের ছেলে মেয়ে। ওরা মাধ্যমিকে পড়ে।

অফিস আর ঘর মিলে বিশ জনের আয়োজন । তিন কেজির একটা আইড় মাছ, দেশি মুরগী, সবজি আর সাথে ডাল থাকবে।

ঘরের মধ্যে নিউজ পেপার পড়ার টেবিলটায় দুটো চেয়ার বসান যায় । একটায় বসলেন বড় স্যার অন্যটায় শাখা ব্যবস্থাপক। অফিসের অন্য রা বসলেন খাটে। ঘরের অতিথিরা স্থানীয় শ্রমিক ধর্মঘটে আটকে আছেন পথে। পৌছতে দেরি হবে।

বড় স্যার জলিল সাহেবের কাছে ম্যানু জানতে চাইলেন । ম্যানু শুনে জানতে চাইলেন আইড় মাছের কড়াইয়ের তলায় কালি জমেছে কিনা। জলিল উত্তর দিলেন, “গ্যাসের রান্না ।“

- তাহলেকড়াইসহনিয়েএসো।

এরপর শুরু হল কাণ্ড ! বড় স্যার ধীরে ধীরে মুখও গহ্বরে চালান করলেনমাছের মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত । মাঝেমধ্যে শুধু ঝিম মেরে মাছের মশলা ডালে ধুয়ে নিয়েছিলেন । সবাই মুরগী খেলেন। এমনকি পাশে বসা ব্যবস্থাপকও পেলেন না মাছের এক টুকরা। বড় স্যার শুরুতে শুধু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ভদ্র তা করে বলেছিলেন ,” তোমরা মাংস খাও, আমি মাছটা খাই ।“ বড় স্যার ঠিকই জানতেন পুরোটা খাওয়ার অধিকার তৃতীয় বিশ্বে তার জন্যে সংরক্ষিত।

অফিসের অতিথিরা সবাই চলে গেলেন। সব আয়োজন ঠিক ঠাক কিন্তু আইড় মাছের জায়গায় শুধু পরে রইল ঝোল চটকানো মাছ শূন্য কড়াই।

বাড়ির অতিথিরা আসলেন শেষ বিকেলে। খেতে বসলেন যখন তখনও মাছের পুচ্ছ পাখনাটা ডালের বাটিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। বড় স্যার শেষবার মশলা ধোয়ার পরে সেটাকে আর তোলেননি। বাবারজলিলের শুঁকনো মুখ দেখে যৌবনে নিজের মুখের কথা মনে পরে গেল। তখন ছাত্রদের তিনি পরাতেন,” সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।“ ক্লাসে ফাস্ট হলে ছেলেকে একটা ফুটবল কিনে দেয়ার কথা ছিল। ঢাকা থেকে ভাল বল কেনার বাহানায় ছেলেকে ঘুরিয়ে ছিল কয়েক মাস। যখন ঢাকা থেকে ফিরলেন তখন হাতে একটা প্লাস্টিকের বল ছিল আর ছিল তাপ খাওয়া জল শূন্য চুপসান সিমের বীচির মত মুখ।

বহু পুরনো এক তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর মুখ আজ এক কর্মকর্তার মুখে।
একটা প্লাস্টিকের বল যা কখনও ফুটবল ছিল না হয়ত সেটি আজ খেলা করে ডালের বাটিতে পুচ্ছ পাখনার সাথে।
একটা ফুটবল।
একটা আইড় মাছ।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিষ কিন্তু এত সু বিশাল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল অনেক সুন্দর একটি গল্প ।।
রেজওয়ানা আলী তনিমা ভালো লাগলো, অনেক অনেক শুভকামনা
এস আই গগণ প্লটটি ভাল, কিছু কিছু জায়গায় স্পেস না থাকায় পড়তে সমস্যা হচ্ছে। একটু খেয়াল করবেন, পাতায় আমন্ত্রণ রইলো।

১০ এপ্রিল - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪