শৈশবে জেনেছিলাম; মাটি দিয়ে গড়া মাটি’র মানুষ । মাটিতেই জন্ম তারপর তার বুকে হেঁটে হেঁটে বড় হওয়া, বড় হলে মাটি’র খাজনা চাষ দিয়ে স্বপ্নের পিঠে ডানা গজিয়ে দেশকে সবুজ রাখা । সবুজ গাঢ় হতে হতে সবুজ হয়ে গিয়ে মাটিতে মিশে যাওয়া । এমনটাই তো কথা ছিলো?
যে কথা দিয়ে পৃথিবীতে এনেছিল জন্মদাতা সেই কথার ভাঙ্গনে চর হলো -তাতেই বুঝে গেলাম সময়ের হাত, পা ও মাথা আছে আর সুযোগে ধারালো অস্ত্রও আছে । কথাটা মৃত হলে এখানে কারো দায় নেই শুধুই অন্তর থেকে পৃষ্ঠা খুলে কথা পড়া ।
আমি তো এমনটা চাইনি । আমিও কবিতা লিখতে চেয়েছি_পাতা আর ফুলে মৌমাছির সাইকেল চালানোয় । নদী পাড় আর পিচ রাস্তায় আমার পাও ভিজবে_আমাদের অনুভবের গভীর নিমগ্নতায় । সভ্যতা পরিবর্তনের মাঝমাঝি দাঁড়িয়ে সত্তার দ্বিখণ্ডিত রূপ বড় তীরবিদ্ধ রক্ত ক্ষরণ_প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয় । নগরে আমি নাগরিক হয়েছি_আমাকে দিয়েছে অধিকার নামে কিছু লোম_যেগুলো শিহরণে দাঁড়িয়ে থেকে জানিয়ে দেয় আমি নাগরিক । দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে দেয়ালকে কাঁধে নিয়েই পিছু হেঁটেছি_পায়ের অনুগত্য আর ভোর হয়েছে বৈরাগী । নগর শুধু নাগরিক প্রসব করেছে মানুষের মাঝে কোন প্রাণ দেয়নি ।
এখানে ভীষণ ভীড় যেন পিঁপড়ের লাইনচ্যুত সমাজ । কাতর হলেও কাঁদা যায় না, কান্নার জন্য প্রয়োজন বৃষ্টির আড়াল । সে আড়াল এখন আর পৌছে না নাগরিক দ্বারে, কি অদ্ভুত আমার কোন দাওয়া নেই । যেখানে থৈ থৈ কাঁদায় পায়ের কলঙ্ক এঁকে দিবো চৈত্রে বর্ষার সাক্ষী ।
সবকিছু দূরে সরে গেছে । ঋতুর আগমন ছাদে গিয়ে ঠেকে, কংক্রিট পার করে দেয়ালে ঝুলন্ত ক্যানভাসে চোখ রেখে বলি:- “এক সময় বৃষ্টিতে ভীষণ ভিজতাম আর ঠাণ্ডা আমাকে ধরলে মা বকতো, কচুর চোখ বন্ধ হলে আমাদের উনুনে দাউ দাউ ধোঁয়া হতো” । শ্রাবণের ধারা আজ কোথাও নেই । না বুকে-না আকাশে সর্বত্র ক্ষরণ, এক নিদারুণ ক্ষরণ ।
এই নগরে বৃষ্টি হয় না_হয় আকাশের ধৌতকরণ । যে জল কর্পোরেট ছাতা গলে বাইলে পড়ে_প্রমাণ দিয়ে যায় এখন উন্নয়নের সময় রাস্তায়, বিদুতের ট্রান্সফরমারে, তিন পায়ের রিকশায়, সচিবালয়ের মেইন গেটে আর মাটির দম আটকে জলাবদ্ধতায় ।
বদলে বদলও বদলায় । কেউ শব্দ কিনে নিলেও রূপ কিনে না_বৃষ্টির রূপও বিকিয়েছে প্রাইম টাইমের কর্পোরেট নাটকে । মাটির কি দোষ?? আগে শুষে নিতো জল এখন নগরের পাপ নিতে চায় না । বুড়িগঙ্গাও বলি হতে হতে এখন ধর্ম হয়ে গিয়েছে_আমি তাতে ইমান এসেছি তবে তাতে কোন লেভেল লাগেনি তাই আজও তাকে ঘিরে আন্দোলন হয় । বৃষ্টির কি দোষ?? বৃষ্টিরও শেষ আছে বুড়িগঙ্গায় মিশতে মিশতে বৃষ্টি হারিয়েছে ইমান তাই খাল খেটে প্রকল্প আনে । বলো বৃষ্টির কি দোষ ।
আগামীর দোষ । আগামীর যত ক্ষয় । আগামী যেন এক জন্মান্ধ-সকল কিছু দৃশ্যত দৃশ্যায়িত কল্পনা । সবুজ থেকে নদীর বেহুলা বাঁশি কিংবা ষড়ঋতুর যত লাললিক মন-সব হবে শব্দে, ইথারে আর নারীর বুকে কান পেতে । নারী সামগ্র্যই প্রকৃতির দ্বিতীয় রূপ । তবে কি নারীতেই থেকে যাবে অনুভূতির বন্ধ্যাত্ব?
হয়ত.............................জানি না । সভ্যতার অনিকেত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বোধগুলো শব্দে প্রসব করছি । কেউ হয়ত জানে না সত্তার বিখণ্ডকরণে এক মানবিক যন্ত্রনায়_শ্রাবণও রূপ নেয় নতুন কোন রূপের গঠনশৈলীতে । শ্রাবণের সত্ত্ব কিনে নেয়নি বাংলাদেশ তাই উন্নত বিশ্বের অহরহ চলাচলে ও উন্নতে-বিক্ষত হয়েছে আমাদের আকাশ । সেখানে আমার আকাশ ছিল ছোট্ট_মাকে নিয়ে । সেটাও গেলো দূষণের থাবার আয়ু যেন সবার সাথে গোসসা করেছে । এই নগরে শ্রাবণকে কেউ চেনে না । উন্নয়ন কতৃপক্ষের এক ব্যস্ত সময়ই আজ এর নামকরণ । কদমগুলো মাছের বিনোদন যে শপিংমল ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বড় বড় মাছদের অভিবাদন জানায় । এখন সর্বত্র সংবিধিবদ্ধ সর্তকীকরণ, “সহবাস হবে শুধু ফ্ল্যাটে, কর্পোরেট ফ্ল্যাটে শরীর হবে সিঁড়ি, পেশা ধাবিত হয়েছে সিঁড়িতে” । তাই কবিরা আর মহৎ কবিতা লিখতে পারে না_সমাজও বিপ্লবে রুখে দাঁড়ায় না । শ্রাবণের ভেতরে পাপ_অসচ্ছ জল কখনও আয়না হয় না । ******* যেখানের লালের কোন বিভক্তি নেই-ক্ষুধার জন্য সত্তার কর্পোরেট বানিজ্য নেই-আমার মা শুধুই মা হয়ে থাকে শাড়িতে, ঘোমটায়-সকল আশ্রম হবে থিয়েটার-আশ্রমবাসী চলে যাবে যেখানে তাদের অধিকার । মানুষ বদলাক আলোতে-আঁধার গাঢ় হলে পরিবর্তন নয় । সকল বদল হোক বুকের বা’পাশে-যেটা মুখোমুখি থাকে নিজের সাথে নিজে ।
পৃথিবীতে আবার শ্রাবণ হোক আকাশে-মানুষের বুকে বুকে । কাঁদতে কাঁদতে বাংলাদেশীরা জানুক-অনুভূতি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ । রক্তের খাদ্য নিয়ে নিঃশ্বাস নিতে নিতে কোষগুলো শুধু বেড়ে যায়-মানুষ হয় না । আমাদের মানুষ হতে হবে সকল মানবিকতায় তাই বৃষ্টি হোক, ঝরে পড়ুক সকল অন্যায় চক্র । ভেসে যাক-বয়ে যাক যে নীল নিয়ে নাগরিক । নগরের রঙ হোক শুভ্র-আমি আমার মায়ের হাসি দেখতে চাই যে মা আমার গর্ভধারিণীকে প্রসব করেছে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিজানুর রহমান রানা
আমি মনে করি মন্তব্য হবে লেখকের লেখা নিয়ে। লেখকেব ব্যক্তিগত কোনো কিছু নিয়ে নয়। সবচেয়ে বড় কথা আমরা এখানে লেখতে, পড়তে এসেছি দাদাগিরি করতে নয়। তাই সবাইকে অনুরোধ করবো, দয়া করে আপনারা লেখকের লেখার আলোচনা-সমালোচনা করুন। কিন্তু গল্প-কবিতার নিয়মের বাইরে কোনো বিষয় নিয়ে নয়। সকলকে ধন্যবাদ।
sakil
প্রত্যক মানুষের নিজস্সো একটা স্টাইল থাকে সেখান থেকে তিনি অনেক কিছু উপলব্ধি করতে পারেন . আর সে যদি লেখক হয় তাহলে তো কথায় নাই . তাই আমি ভাবি আপনি ও আপনার চারপাশের অস্ন্গগতি গুলো তুলে ধরের্ছেন গদ্যর মাঝে . অসাধারণ শুভকামনা রইলো অভি ভাই .
Muhammad Fazlul Amin Shohag
লেখাটি ভালা লাগলো, দেখলাম কেউ কেউ লেখাটা নিয়ে বিতক করছে। আমি মনে করি, এই সব সামান্য ব্যাপারে লেখককে হয়রানি না করাই উচিত। ভালো থাকবেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।