জয়ের মাথা আজকে প্রচণ্ড গরম। অসম্ভব রকম খিঁচড়ে আছে তার মেজাজ। সবকিছু তার ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে... একবার, মাত্র একবার যদি ওকে হাতের কাছে পেতাম ছিঁড়ে-খুঁড়ে একদম ছিবড়ে বানিয়ে ছেড়ে দিতাম! এত বড় সাহস ওর! জয়কে ফিরিয়ে দেয়! দেখা যাবে কোন চাঁদ ওকে বিয়ে করতে আসে! জয় পূজামণ্ডপের দিকে এলোমেলোভাবে হেঁটে যেতে থাকে। ঘড়িতে রাত সাড়ে ১১টা বাজে। আজ বিজয়া দশমী। একটু পরে প্রতিমা বিসর্জন হবে। মাইকে পুরোহিত জোরে জোরে মন্ত্র পড়ছেন। মণ্ডপ থেকে ঢাকের বাড়ি তন্দ্রার কাছে এসে পৌঁছায়। তার ঘুম আসে না। অদ্ভুত এক ভয়, আতঙ্ক যেন তাকে জাপটে ধরেছে। যদিও আজ সে একটা বিরাট সাহসের কাজ করেছে। দিয়েছে হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ বদমাশটার গালে বসিয়ে। বেয়াদপ, বখাটে একটা... বলে কি না তাকে ভালোবাসে! ওর মতো অশিক্ষিত ছেলে তার হাত ধরার সাহস পায় কোত্থেকে, এটা ভেবে তন্দ্রা প্রচণ্ড অবাক হয়। নাহ, আর জেগে থাকা যাবে না। ঘুমানো দরকার। কালকে তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। ছেলে একটা মুঠোফোন কোম্পানিতে ভালো চাকরি করে। তন্দ্রা ছেলেটার ছবি দেখেছে। দেখতে সে ভালোই। নিজের অজান্তেই মুচকি হাসে তন্দ্রা। এদিকে মণ্ডপের পেছন দিকের বড় মাঠের মাঝখানে আজ যেন অসুরের অপচ্ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভর করেছে ওদের ওপর! ওহ,জয়! তুই জিনিয়াস। আহ,খাসা মাল একটা... জয়,আমাকে একটু ভাগ দিস। দে,আমাকে দে। আমি ব্লুটুথ অন করেছি। বাংলা মদের গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি অশ্লীল খিস্তিখেউড় যেন এর উৎকটতা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েক গুণ। নেশায় বুঁদ হওয়া জয় তার মোবাইল দিয়ে এমএমএস এদিক-ওদিক পাঠাতে থাকে। ‘দে আমাকে আরও নম্বর দে। আমি শালির বিয়ে আজই করাইয়া দিমু!’ পাশাপাশি বাড়ি। তন্দ্রাদের বাসার বাথরুম যে জয়ের রুম থেকে তেমন দূরে ছিল না—এটা যদি কেউ আগে খেয়াল করত,তাহলে এমনটা হতো না। আর কাজটা যে জয়ই করেছে,তাও তেমন কেউ জানল না। সবাই জানল,তন্দ্রা আত্মহত্যা করেছে। আহারে... মেয়েটা.....আহারে!
দুই//
দশ বছর পর বিয়ের পর এবারই প্রথম পূজায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছে জয়। প্রতিদিন মাছ,মাংস,দুধ,দই খেয়ে খেয়ে এ দুদিনে তার ওজন যেন ১০ কেজি বেড়ে গেছে। আর বউটাও হয়েছে তার এমন—পারলে যেন সারাক্ষণ তাকে জড়িয়ে থাকে। এ জন্যই তার তাপসীকে এত ভালো লাগে। এখানকার লোকগুলোও বেশ মিশুক। এলাকার অনেকের সঙ্গেই তার পরিচয় হয়েছে। অনেক শালা-সম্বন্ধীও জুটে গেছে। ভালোই কাটছে সময়। রাত ১০টার দিকে জয়কে ঘরের দরজা খুলতে দেখে তাপসী বলল,কোথায় যাচ্ছ? এই তো মণ্ডপে। প্রতিমা বিসর্জন দেখে আসি। চলো, আমিও যাব। না,না থাক। সারাক্ষণ অনেক খাটাখাটি করেছ। এখন রেস্ট নাও। মন্দিরে-মণ্ডপে যেন লোক গিজগিজ করছে। জয় হাঁটতে গিয়ে মানুষের ঠেলা-গুঁতা কম খাচ্ছে না, তবুও তার মনটা খুব ভালো লাগছে। অনেক দিন পর আবার সে আজ দেবী প্রতিমার বিসর্জন দেখবে। আ রে, জামাইবাবু যে! জয়কে দেখেই হাত বাড়িয়ে দিল তাপসীর এক পাড়াত ভাই রাম। সব খবর ভালো তো! হ্যাঁ ভালো। আপনি এসেছেন খুব ভালো হয়েছে। একসঙ্গে আমরা মাকে আজ বিদায় দেব। জামাইবাবু,আপনার একটা ভিজিটিং কার্ড দেন তো। আমি মাঝেমধ্যেই আপনার এলাকায় যাই। তখন দেখা করে আসব। কার্ডটা নিয়ে রাম ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। রাত বাড়ছে। ঢাকের শব্দ বাড়ছে। লোকজন সবাই মণ্ডপের সামনে জড়ো হচ্ছে। হঠাৎ জয়ের মোবাইল ফোনটা কেঁপে উঠল। এমএমএস। হায় ভগবান! এটা কী! ওহ সিট! তাপসীর সঙ্গে রাম এসব কী করছে! জয় আর দেখতে পারে না। সে উদ্ভ্রান্তের মতো মানুষের ধাক্কা খেতে থাকে। জোরে জোরে ঢাকের ওপর বাড়ি পড়তে থাকে। জয় যেন কিছুই শুনতে পায় না... ঢাকের শব্দ... মানুষের চিৎকার... পুরোহিতের উচ্চারণ—যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা/ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমঃ নমঃ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।