বিয়ের পর এবারই প্রথম কোন পূজাতে মিশুর সাথে রুম্পার সারাদিন এত বেশি ঘোরাঘুরি হয়েছে আজ। অবশ্য পুরো প্ল্যানটা ছিল মিশুর। যান্ত্রিক জীবনে বাসা টু অফিস, অফিস টু বাসা করতে করতে সে যেন হাঁপিয়ে উঠেছিল। তাই তার সারাক্ষণ মনে হত, আই নিড এ ব্রেক! এজন্য এবার দুর্গাপূজার ছুটিতে সে তার কাঙ্ক্ষিত ‘ব্রেক’ কশার সুযোগ হারাতে চাইল না। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই সে রুম্পাকে বলল, চল, আজকে এই শহরের সব কটা পূজামণ্ডপে ঘুরব।
স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল রুম্পা। বিয়ের পর থেকে গত দুই বছরে যে মানুষটা সারাক্ষণ অফিসেই পড়ে থাকত, ছুটির দিনে বাইরে বেড়াতে যাবার কথা বললে যার দু’চোখ জুড়ে ঘুম আসত। সে কিনা আজ স্বেচ্ছায় তাকে নিয়ে বেড়াতে যেতে চাইছে! সূর্য আজ কোন দিক থেকে উঠল গো? বিয়ের পর রুম্পার ধারণা জন্মেছিল বাকি জীবনটা তাকে এক কাজপাগল, হৃদয়হীন রোবটের সাথে কাটাতে হবে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে, রোবটেরও দেখি প্রাণ আছে!
রিকশায় উঠে মিশু রুম্পাকে বলল, বাদাম খাবে?
- খাব।
মিশুই বাদামের খোসা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে বউকে দিতে লাগল। কুটুশ কুটুশ বাদাম খেতে খেতে এগিয়ে চলল ওদের রিকশা। বিজয়া দশমীর দিন হবার জন্য আজকে শহরে বেশ লোকজন। শারদীয় হালকা বাতাসে দুর্বল সূর্যতাপে ঘোরাঘুরির মজাই আলাদা। তাই হয়ত ওদের মত আরও অনেকেই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি বলে আজকে বেড়াতে বেরিয়েছে। একটু পর চানাচুরওয়ালা দেখে মিশু বলল, চল চানাচুর খাই! এই ঘটিগরম!
- উহ এত ঝাল! পানি খাব। চানাচুর খেয়ে ঝালে অস্থির রুম্পা।
বউয়ের জন্য পানি কিনতে গিয়ে এক দোকানে ফুচকা দেখে মিশু বলল, রুম্পা ফুচকা চলবে?
এদিকে ঝালের চোটে অশ্রুসজল নয়নেও রুম্পা হেসে ফেলল। বলল, চলবে।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে ওরা আবার রিকশায় উঠে পড়ল। ছোট শহরে থাকার এই এক সুবিধা। ধুলোবালিহীন পরিবেশে প্রাণ খুলে রিকশায় ঘোরা যায়। হঠাৎ এক আলতো বাতাসে রুম্পার এক গোছা চুল এসে মিশুর নাকে লাগল। সাথে সাথে মিশু বলে উঠল, তোমার চুলের এই গন্ধটা আমাকে যেন মাতাল করে দেয়!
- ছিঃ ছিঃ কি সব যে বল না! চুপ কর। লোকজন শুনে তো তোমাকে পাগল বলবে!
- হাওয়া মে উড়তা জ্যায়ে ... ও মেরা লাল দোপাট্টা ...
রুম্পাকে অবাক করে দিয়ে মিশু এবার গান ধরে।
- এই থামো, থামো।
মুখে মুখে থামতে বললেও মনে মনে রুম্পা বলে, মিশু তুমি থেমো না ... আজকে আমার অনেক ভাল লাগছে ... লাইফ ইজ বিউটিফুল ...।
সারাদিনে বেশ কয়েকটা মণ্ডপে ওরা পূজা দেখল। প্রসাদ খেলো। নানান ভাবে নানান রঙে দুর্গা প্রতিমাকে রাঙানো হয়েছে। একেকটা মণ্ডপের বাহ্যিক কারুকাজও একেক রকম। তবে একটা জিনিস সব জায়গাতে একই। সেটা হচ্ছে দুর্গার হাতের ত্রিশূলটা। যেটা দিয়ে অসুরকে বধ করা হয়েছে। রুম্পা বলল, এমন একটা ত্রিশূল হাতে পেলে মন্দ হত না।
- কি করতে ওটা দিয়ে? বলল মিশু।
- আমাকে আগামীতে রেগুলার সময় না দিলে ওটা দিয়ে তোমার উপরের অসুরের অপচ্ছায়া বিনাশ করতাম!
- বাপরে! খাইছে আমারে!
[ দুই ]
কিছুক্ষণ পর।
ঘড়িতে এখন রাত নয়টা বাজে।
ঝিরঝিরে ঠাণ্ডা বাতাসে নদীর মৃদু ঢেউগুলো ছলাৎ ছলাৎ নৌকার গায়ে আছড়ে পড়ছে। দূর আকাশে চাঁদের আলোয় পেজা মেঘেরা দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করছে। হঠাৎ রুম্পা বলল, দেখো একটা তারা খসে গেল।
মিশু দেখল পুবাকাশে একটা তারা ছুটে গিয়ে দূর দিগন্তে মিলিয়ে গেল।
সারাদিন ছোটাছুটির পর এই নৌবিহারে এসে মাঝ নদীতে বসে মিশুর মনে হল, কেমন যেন ঝিমুনি চলে আসছে। ইচ্ছে করছে যেন, এই নৌকাতেই এক চোট ঘুমিয়ে নেই।
এদিকে রুম্পার চোখে ক্লান্তির ছিটেফোঁটা নেই। সে মুগ্ধ নয়নে শারদীয় রাতের নদী দেখতে লাগল। চাঁদের আলোয় আজকে সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সে মাঝিকে বলল, ওই যে কাশফুলের মাঝে যে জোনাকি দেখা যাচ্ছে না অদিকটায় চল।
নৌকা তীরে ভিড়তেই রুম্পা আবিষ্কার করল, এ যে এক দারুণ কাশের বন! দিনের আলোয় না জানি কত সুন্দর লাগে এগুলো দেখতে! তবে এসময়ে বনের ফাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকির লুকোচুরি খেলা দেখতে কারোরই খারাপ লাগবে না। রুম্পা মিশুকে বলল, চল আরেকটু ভিতরে যাই।
- না আজকে থাক। দেখছো না কোন লোকজন নেই। শেষে আবার না কোন বিপদে পড়তে হয়!
মিশুর কথা শেষ হতে না হতেই তার আশংকা যেন সত্যিতে পরিণত হল। হঠাৎ তিনটা গুন্ডা টাইপ লোক কাশবনের ভেতর থেকে এসেই ওকে ছুরি ধরল। সাথে সাথে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে লাগল। মাঝি দৌড়ে পালিয়ে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকগুলো ওদের টাকা পয়সা, মোবাইল সব কেড়ে নিল। ওদের মধ্যে একজন এসে রুম্পার হাত শক্ত করে চেপে ধরে অত্যন্ত বাজেভাবে বলল, অনেকদিন পর কঠিন একখান মাল পাইছি আইজ।
- হারামজাদা। মুখ সামলে কথা বল। চিৎকার করে ওঠে মিশু।
সাঁই করে ওদের একজন মিশুর পেটে ছুরি বসিয়ে দেয়।
- না ... আর্তনাদ করে ওঠে রুম্পা। সে মিশুর কাছে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। একটা গুন্ডা তাকে হিড়হিড় করে গভীর বনের দিকে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে। একটু দূরে নিয়ে মাটিতে ফেলে চেপে ধরার চেষ্টা করে। হঠাৎ নদীর তীরে রুম্পার চোখ পড়ে। একটা সদ্য বিসর্জন দেয়া দুর্গা প্রতিমার মূর্তি ভেসে এসেছে। ওগুলোর মাঝে কিছু একটা চক চক করছে। হ্যাঁ ... চাঁদের আলোয় রুম্পা চিনতে পারে, এটা দেবীর ত্রিশূল!
এক ঝটকায় গুন্ডাটাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে রুম্পা ছুটতে থাকে ত্রিশূলতার দিকে। ওটা তাকে পেতেই হবে। সে যেন এখন শুনতে পাচ্ছে বাতাসে হাজার ঢাকের শব্দ ... মানুষের চিৎকার... পুরোহিতের উচ্চারণ -যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা / নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ ... নমস্তস্যৈ নমঃ নমঃ।
[ তিন ]
পরদিন বিভিন্ন দৈনিকে একটা খবর ছাপা হল। যার শিরোনাম ছিল, ‘কাশবনে ত্রিশূলবিদ্ধ তিন চিহ্নিত সন্ত্রাসির লাশ উদ্ধার।‘
১৬ মার্চ - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪