ছোট্ট মেয়ে সুহানা। টুকটুকে পরীর মতো দেখতে। ওর কোন ভাইবোন নেই। তাই একা একা ঘুমিয়ে আছে এক ঘরে। তার দক্ষিণা জানালা খোলা। মিটমিট করে জ্বলছে সবুজ ডিম লাইট। পাশের ঘরেই ঘুমিয়ে আছেন মা জিনাত ও বাবা ইকবাল। পূর্ণিমার ভরা তিথি। বাইরে ঝলমল করছে পূর্ণ চাঁদের আলো। তারই এক চিলতে জানালার ফাঁক দিয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে সুহানার ঘরের মেঝেতে। চাঁদের আলো আর ডিম লাইটের সবুজ আলো মিলে কেমন এক অদ্ভুত রঙের সৃষ্টি হয়েছে। ঘুমানোর আগে ছোট সুহানা জানালার পাশে বসে বাইরের দুনিয়াটাকে দেখেছে অনেকটা সময়। এখন অনেক রাত। জানালা বেয়ে তার ঘরে প্রবেশ করেছে এক অদৃশ্য মানব। সে সুহানার পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তাকে উদ্দেশ্য করে বলল- সৃষ্টিকর্তা তোমার মঙ্গল করুন। ঘরের মধ্যে অকস্মাৎ এ শব্দে ভয় পাওয়ার কথা ৮ বছরের সুহানার। তার আর্তনাদ করে উঠার কথা। এর কারণ, কোথা থেকে এই শব্দ আসছে তা সে বুঝতে পারছে না। কোন মানুষও নেই তার ঘরে। তাহলে কে এমন শব্দ করছে! বলছে- সৃষ্টিকর্তা তোমার মঙ্গল করুন। ভয় পাওয়ার পরিবর্তে সুহানা কেমন যেন পুলকিত বোধ করল। আর্তনাদের বদলে তার কণ্ঠ শীতল হয়ে এলো। কান্নার পরিবর্তে সে টুকটুক করে হেসে বলল- থ্যাংক ইউ। পরিচিত হোক বা না হোক কারো সঙ্গে কথা বলতে গেলে শান্ত, ভদ্র ব্যবহার করতে হয় এ শিক্ষা সে তার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছে। তার থ্যাংক ইউয়ের জবাবে অদৃশ্য কণ্ঠটি বলল- তোমাকে অভিনন্দন। সুহানা জানতে চাইলো- কে তুমি? আমি সাইরা। তোমার নাম কি? সুহানা। ওহ! কি সুন্দর নাম। কিউট নাম। আবারও অদৃশ্য মানব সাইরার কথায় বিস্ময় প্রকাশ করে সুহানা বলল- থ্যাংক ইউ। তাদের এই কথোপকথনের শব্দ পেয়ে ওঘর থেকে ছুটে এলেন ইকবাল সাহেব। তিনি মেয়ের ঘরে ঢুকেই লাইট জ্বালালেন। এ সময় সুহানার মনে হয়েছিল সাইরা নামের ওই লোকটিকে সে তার পায়ের কাছে দেখতে পাবে। তাকে তার পিতা দেখে ভীষণ ক্ষেপে যাবেন। কিন্তু ইকবাল সাহেব সতর্কতার সঙ্গে মেয়ের পুরোটা ঘর পরখ করলেন। দেখলেন কোথাও কেউ নেই। সুহানাও এই ফাঁকে দেখে নিল তার ঘরে আসলে কোন মানুষ বা কোন জীবজন্তু নেই। সবকিছু পরখ করে ইকবাল সাহেব সুহানার কাছে জানতে চাইলেন- তুমি কার সঙ্গে কথা বলছিলে মা! সাইরার সঙ্গে। সাইরা? জানতে চাইলেন ইকবাল সাহেব। ততক্ষণে সুহানার মা জিনাতও এসে হাজির। তিনি তার স্বামীর কাঁধের দিকে বার বার করে তাকাচ্ছেন। তিনিও অবাক। ঘরে কাউকে দেখা যাচ্ছে না, কোথাও কোন প্রাণী নেই। তাহলে মেয়ে কার সঙ্গে এত রাতে গল্প করছে? সুহানা বলল- আমি গল্প করছিলাম সাইরার সঙ্গে। সে তো অদৃশ্য মানব। শুনেছি এ শহরের অনেক শিশুকে সে ভয় দেখায়। বললেন ইকবাল সাহেব। সুহানা বলল- না না, সে অদৃশ্য মানব নয়। সে প্রকৃত একজন মানুষ। তার অস্তিত্ব আছে। আমার সঙ্গে গল্প করার জন্য সে আজ জানালা বেয়ে আমার ঘরে এসেছে। সুহানার মা জিনাত তার স্বামীর কাছে কাছে গিয়ে কিছু একটা বললেন ফিসফিস করে। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ইকবাল সাহেব তার দিকে মুচকি হেসে বললেন- তোমার কি অদৃশ্য বন্ধুও আছে নাকি! সাইরা যেখানে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছে, সুহানা সেদিকে তাকিয়ে বলল- হ্যাঁ। ওহ, তাই নাকি! তা তোমার অদৃশ্য বন্ধুকে বলো আমরা তাকে গুড নাইট বলেছি এবং আরও বলেছি ঘুমাবার সময় কোন গল্প করতে নেই। তোমার সঙ্গে সকালে দেখা হবে সোনামনি।- বলেই সুহানার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তার পিতামাতা। জবাবে সুহানা বলল- গুড নাইট! গুড নাইট মা-মনি! সুহানার পিতা ঘরের লাইট অফ করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। দরজায় ক্র্যাক করে একটি শব্দ হলো। এর কয়েক মিনিট পরেই সুহানার ঘরে কোন অদৃশ্য মানব আছে কিনা তা যাচাই করতে বলল- বাবা-মা তোমাকে গুড নাইট বলেছে। আরও বলেছেন- ঘুমানোর সময় আমাদের কথা বলা উচিত নয়। সাইরা বলল- আমি জানি। তোমার পিতামাতা যতক্ষণ এখানে, এই ঘরে ছিলেন তারা কি বলেছেন তার সবই আমি শুনেছি। আমি তো এখানে এই ঘরেই ছিলাম। সুহানা এর আগে কোনদিন অদৃশ্য কিছু দেখেনি। তাই সাইরা’কে ঘিরে তার প্রশ্ন অনেক। তার মনে হতে থাকে- অদৃশ্য মানুষ মনে হয় খুব কুৎসিত দেখতে। তাই তারা অদৃশ্য হয়ে থাকে। কিন্তু এ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করাটা বোকামি মনে হয় সুহানার। সে এসব জিজ্ঞেস না করে অন্য কথা জিজ্ঞেস করল। বলল- তুমি কেন আমার বাবা-মাকে নিজে তাহলে গুড নাইট বলো নি? কারণ তারা তো আমাকে বিশ্বাসই করেন না। অবশ্যই করে!- খুব জোর দিয়ে বলল সুহানা। তবে সে শব্দ এতটা জোরালো হলো না যাতে তার পিতামাতা অন্যঘর থেকে শুনতে পান। তারা মনে করেন আমি কল্পনার জিনিস। সুহানা বলল- তারা কল্পনার জিনিস বলেন নি। তারা বলেছেন- অদৃশ্য। কিন্তু তারা বোঝাতে চেয়েছেন কল্পনার কিছু। কারণ বয়স্করা অদৃশ্য কোন কিছুতে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু সুহানাও অদৃশ্য কোন কিছুতে বিশ্বাস করে কিনা তা নিয়ে তার সংশয় ছিল। সে তাই সাইরাকে অনুরোধ করল এমন কিছু করতে যাতে প্রমাণ হয় যে আসলেই সে সুহানার ঘরে উপস্থিত আছে। তার এ কথা শুনে সাইরা বলল- আমার কণ্ঠই কি যথেষ্ট নয়? না, তুমি আমার ঘরের ভিতর থেকে একটা জিনিস টেনে তোল তো। সুহানা তার কণ্ঠ যতটা পারা যায় ততটা চেপে সে বলল এ কথাগুলো। তার কথাগুলো শেষ না হতেই বিস্ময়কর একটি ঘটনা লক্ষ্য করল। তার ঘরের মধ্যে যে ডিমলাইট জ্বলছে হঠাৎ তা তার অবস্থান থেকে যেন হাওয়ায় ভেসে গেল। কতক্ষণ ঘরময় উড়ল। সাইরা বলল- এটা কেমন খেলা মনে হচ্ছে তোমার কাছে? যতটুকু হলে সুহানা খুশি হবে তার চেয়ে সে খুশি হয়ে গেল। এবার ঠিকই সুহানা মেনে নিল তার একজন অদৃশ্য বন্ধু আছে। ফলে পরের কয়েক মিনিট তারা একে অন্যের সঙ্গে আলাপচারিতা চালিয়ে গেল। তারা গল্প করল সুহানার সারাজীবন নিয়ে। তার বন্ধুদের নিয়ে। গল্প করল গ্রামের ঝোপঝাড়ে উড়ে বেড়ানো নানা রঙিন প্রজাপতির কথা। বলল- দাদাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে পাড়ার সবার সঙ্গে কেমন সখ্য হয়েছিল তার। নানা বাড়িতে কি কি উপহার পেয়েছে জন্মদিনে। সুহানা তার জীবনে কারো সঙ্গে গল্প করে এত্ত মজা পায় নি। কিন্তু রাত বেড়ে যাওয়ায় সুহানার বেশ ঘুম পেয়ে বসেছে। তার খুব ক্লান্ত মনে হতে লাগল। আবার পরের দিন সেই ভোর বেলায় স্কুল আছে। তাকে এখনই ঘুমাতে হবে। তাই সে তার অদৃশ্য বন্ধু সাইরাকে ভদ্রতার সঙ্গে সব বুঝিয়ে বলে আজকের মতো গল্প শেষ করতে বলল। সাইরা তাতে সায় দিল। সে বলল- আমি খোলা জানালা দিয়ে চলে যাব। তুমি আমাকে দেখতে পাবে না। সুহানা তার কথায় সায় দিল। এর পর থেকে পরের দুই সপ্তাহ প্রতি রাতে সুহানার কাছে আসে সাইরা। তার সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে সে মোটেও ক্লান্ত হয়নি। সাইরার বয়স কেমন তা জানে না সুহানা। তার চেহারা কেমন তাও সে জানে না। তবে সাইরা বেশ মজার চরিত্র এটা সে বুঝতে পেরেছে খুব ভালভাবে। তার কোমলতা কিভাবে ব্যাখ্যা দেয়া যায় তা আট বছরের মেয়ে সুহানা ভালভাবে জানেও না। একদিন স্কুলের খেলার মাঠে হাজির সাইরা। তার উপস্থিতি বুঝতে পারল সুহানা। কারণ, সাইরা তার কানে কানে ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বলেছে। সে বলেছে- দেখ তোমাদের খেলার মাঠের এক কোণায় বসে আছে লম্বা নাকওয়ালা। ওর নাম নাকারি। তার কথা শুনে নাকারির দিকে তাকিয়ে দেখল সুহানা। সাইরার কথাই সত্যি। নাকারির লম্বা একটি নাক। বাঁশির মতো লম্বা। তাতে তাকে বেশ অদ্ভুত দেখাচ্ছে। সুহানা তাকে দেখেই বলে উঠল- তোমার কত লম্বা নাক গো! কি বললে তুমি?- পাল্টা প্রশ্ন করল সাইরা। আমার অদৃশ্য বন্ধু বলেছে তোমার লম্বা একটি নাক আছে। ঠিক বলেছে। তাই বলে তুমি আমাকে নিয়ে মস্করা করবে? তুমি মেয়ে বলে আমি তোমাকে ছেড়ে কথা বলব না। আমি তোমাকে আঘাত করব। এ কথা বলেই নাকারি যখন তার দিকে ধেয়ে এগিয়ে আসছে তখন সুহানার বেশ কান্না পেল। কিন্তু অকস্মাৎ কি এক অবাক কাণ্ড ঘটে গেল। উল্টো দিকে কেমন যেন ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল। সুহানা জানে কি ঘটেছে। নাকারি জানে না। সুহানা জানে, তাকে যখন আঘাত করার জন্য নাকারি দ্রুতবেগে তার দিকে ধেয়ে আসছিল তখন তাদের মাঝখানে অবস্থান নিয়েছে সাইরা। সে-ই তাকে ধাক্কা দিয়ে পিছনে ফেলে দিয়েছে। মাটিতে পড়ে গিয়ে নাকারির ভীষণ কান্না পেল। সে তাকিয়ে রইল সুহানার দিকে। তারপরই কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে স্কুল ছাড়ল। এদিন রাতেই এ ঘটনার জন্য সাইরাকে ধন্যবাদ জানালো সুহানা।
স্কুলের এ ঘটনার পর সুহানার মা-বাবা মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন। তারা এ বিষয়টি নিয়ে মাঝে মধ্যেই রাতে ঘুমানোর সময় তাদের ঘরে নিজেদের মধ্যে আস্তে আস্তে আলোচনা করতে লাগলেন। কিন্তু তার দুয়েকটি কথা আবছাভাবে ভেসে আসে। সে শুনতে পায় তারা অদৃশ্য মানব সাইরাকে নিয়ে আলোচনা করছেন। কখনও তাদের মুখে উচ্চারিত হয় সুহানার নাম। কখনও কখনও তার পিতা উত্তেজিত হয়ে উঠছেন। পরের সপ্তাহের ছুটির দিনে শুক্রবার তাকে নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেলেন তার পিতামাতা। সাধারণত চিকিৎসকরা যেভাবে কান, গলা দেখেন, ওষুধ দেন- এই চিকিৎসক তাদের মতো নন। এই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর দু’পাশে সে পিতামাতাকে বসিয়ে নিল। তাকে বসানো হলো আরামদায়ক একটি চেয়ারে। তাদের সামনের একটি চেয়ারে বসলেন ডাক্তার। তাকে যে কক্ষে ডাক্তার দেখছেন সেখানে দেয়ালে বিভিন্ন পশুপাখির চিত্র আঁকা। ডাক্তার সুহানাকে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। তিনি জানতে চাইলেন সুহানার নিজের সম্পর্কে ও সাইরা সম্পর্কে। কিন্তু এই ডাক্তারের কণ্ঠের মধ্যে তেমন মাধুর্য্য নেই। তাই সে ডাক্তারকে তেমন পছন্দ করতে পারল না।
সুহানাকে আরও দু’বার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। মেয়ের ওপর কিসে ভর করেছে তা নিয়ে তার মা ভীষণ টেনশনে ভুগছেন। সারাক্ষণ তাকে এই এক চিন্তায় পেয়ে বসেছে। অন্যদিকে সুহানার পিতা মেয়ের এমন কাণ্ডের জন্য বেশ চটে আছেন। বেশ কয়েকবার তারা শুনতে পেয়েছেন সুহানা ওই অদৃশ্য মানবের সঙ্গে রাতে কথা বলছে। সুহানার পিতা ইকবাল সাহেব যখন তা শুনতে পান তখন রাগে তার নাকের মাথা নাকারির মতো লাল হয়ে যায়। তিনি হতাশ হয়ে একদিন মেয়েকে শাস্তি দিলেন। এ সময় নীরব রইল সাইরা। সুহানাকে ভীষণ বকা দেয়ার পর যখন সে কাঁদতে লাগল তখনও তাদের কথার মাঝে বাধা দেয় নি সাইরা। সুহানার পিতামাতা এখনও ভাবতেও পারছেন না যে, বাস্তবে সাইরার মতো কোন অদৃশ্য মানব থাকতে পারে। প্রায়ই এ নিয়ে সুহানার সঙ্গে তার পিতামাতার বেশ কথা কাটাকাটি হয়। একদিন বাবা তাকে বকা দেয়ার পর সুহানা বলেই বসলÑ আমি তোমাদের একদিন দেখিয়ে দেব সত্যি অদৃশ্য মানব আছে। রাগত স্বরে ইকবাল সাহেব বললেনÑ তুমি কিভাবে দেখাবে ওই অদৃশ্য মানবকে? কারণ সে আমাকে বিশ্বাস করে। তোমাদের সঙ্গে তার কারণে আমার সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে তাও সে জানে। সুহানার এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে এক রকম সুনসান নীরবতা নেমে এল। সুহানা বেশ বিস্ময়ের সঙ্গে উপলব্ধি করতে পারছে তাদের এই কথোপকথনের মাঝে পৌঁছে গেছে সাইরা। তার মনে হচ্ছে, প্রতিদিন তার বিছানার পাশে তার পায়ের কাছে এসে সাইরা যেখান থেকে কথা বলে বলে মনে হয় সেখানেই এসে হাজির সাইরা। সুহানার কানের কাছে গিয়ে সে বলল- তুমি কি সত্যিই চাও যে আমি শরীরে দেখা দিই তোমাদের মাঝে? হ্যাঁ- সুহানার গণ্ডদেশ বেয়ে কান্না ঝরছে। সে অবস্থায়ই সে বলল- প্রতি রাতে এখান থেকে বিদায় নিয়ে তুমি যেখানে চলে যাও আমি সেখানে চলে যেতে চাই। আমি আর এখানে থাকতে চাই না। তুমিই একমাত্র আমাকে আদর কর। সাইরা তার এ কথায় ফের নীরব হয়ে গেল। তারপর বলল- তুমি কি সত্যি সত্যি আমার সঙ্গে যেতে চাও? কিন্তু সুহানা তাকে যে কথা বলেছে সেটা তার মনের কথা নয়। সে তার পিতামাতাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। তার পিতামাতাও তাকে খুব ভালবাসেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে বলল- হ্যাঁ, আমি যেতে চাই। ঠিক আছে- বলল সাইরা। তুমি বিছানা ছেড়ে চলে আসো। আমাকে তোমার হাত দাও। সুহানা গায়ের উপর থেকে পাতলা কাঁথাটি সরিয়ে ফেলল। উঠে বসল বিছানায়। তারপর শান্তভাবে পা রাখল মেঝেতে। কিন্তু সাইরা কোথায় তার কোন অস্তিত্ব পাচ্ছে না সুহানা। তাই সাইরাকে উদ্দেশ্য করে সে বলল- সাইরা, তুমি কোথায়? তোমার হাত দাও। যেদিক থেকে সাইরার শব্দ ভেসে আসছে সুহানা সেদিকে হাত বাড়িয়ে দিল। তুমি কি মনে কর আসলেই আমার পিতামাতাকে ছেড়ে চলে যাওয়া ঠিক.......। সুহানা এ কথাগুলো শেষ করার আগেই তার দু’হাত ধরে ফেলল সাইরা। আর সঙ্গে সঙ্গেই সুহানার কণ্ঠধ্বনি অস্পষ্ট হয়ে গেল। সুহানা ভেবেছিল তার হাত দু’খানা ধরবে যে সাইরা তার হাত হবে তার পিতার মতো বয়সী কোন ব্যক্তির। কিন্তু না, তাকে যে দুটি হাত স্পর্শ করল তা বিশাল, লোমশ। সেই হাত দিয়ে তাকে যখন ধরল তখন সেই হাতের এক মুঠোর মধ্যেই শক্ত করে আটকে গেল সুহানা। তাকে শক্ত করে ধরে খোলা জানালা দিয়ে বাইরে শোঁ করে উধাও হয়ে গেল সাইরা। সুহানা বুঝতে পারল অদৃশ্য বন্ধু আসলে অদৃশ্য হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। সাইরার হাতের মধ্যে আটকা পড়ে তার দম কেমন যেন বন্ধ হয়ে আসতে লাগল। সে চিৎকার দিয়ে উঠে বসল। দেখল তার বিছানার পর্দা এলোমেলো হয়ে আছে। আকাশের চাঁদ ডুবু ডুবু। সারা ঘরে ছড়িয়ে আছে ডিমলাইট বিস্ফারিত হয়ে। বেশ অন্ধকার নেমে এসেছে। তার ঘাম হচ্ছে। ভীষণ ভয় করছে। কোন কথা না বলে বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
১১ মার্চ - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
১৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।