অন্য আলো

অস্থিরতা (জানুয়ারী ২০১৬)

মোহাম্মদ আবুল হোসেন
  • ১০
কনকনে ঠাণডায় হিম হয়ে আছে চারদিক। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে প্রকৃতি। বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঠাণডা বাতাস হু হু করে বইছে। তাতে গায়ের কাঁথা যেন ভিজে উঠছে। একটু ওম পাওয়ার জন্য কাচুমাচু হয়ে, হাঁটু ভেঙে গোল হয়ে শুয়ে আছে রেজা, রেখা আর অন্তরা। তিন ভাইবোন। গরিব পিতামাতা করিম আর আয়েশার তিন সন্তান। তাদের এই কড়া শীতেও শীতের কাপড় জোটেনি। তাই যতক্ষণ এই কাঁথার ভিতর শরীরটাকে সেঁধিয়ে রাখা যায় ততক্ষণই স্বস্তি। কিন্তু তাতে বাধ সেধেছে ওই প্রকৃতির ডাক। যত ঠাণডাই পড়ুক, যতই বাতাস প্রবাহিত হোক, যতই আধার থাকুক, এই ডাককে উপেক্ষা করার উপায় নেই কারো। তাই বাধ্য হয়েই কাঁথার ভিতর থেকে পপাই কার্টুনের মতো বহু কষ্টে নিজের শরীরটাকে বের করে রেজা। তড়িঘড়ি ছুটে যায় পালানে। সেখানে গিয়েই বসে পড়ে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই যেন স্বর্গসুখ ধরা দেয় তার কাছে। আহ! এত স্বস্তি। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে রেখা, অন্তরা।
অনেকক্ষণ আগেই উঠেছেন করিম আর আয়েশা। তাদের চোখেমুখে আজ ভিন্ন রকম এক স্বস্তি। অস্থিরতা থেকে এ স্বস্তি। এই শীতে এতটা দিন তাদের মধ্যে এক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। নানাভাবে চেষ্টা করেছে। সেই অস্থিরতা থেকে স্বস্তি মেলাতে পারছিলেন না তারা।
তিন ভাইবোন মুখ হাত ধুয়ে পড়তে বসেছে। এমনিতেই অভাবী সংসার। তারা আগের রাতে সামান্য জাউ ভাত খেয়ে ঘুমিয়েছে। সকালে মুখে কিছু জুটবে কিনা তা জানে না। গ্রামে একটা চল আছে। তা হলো সকালে ঘুম থেকে উঠেই মুখহাত ধুয়ে মানুষ বাসিপান্তা খেয়ে কাজ শুরু করে। ওদেরও সেই স্বভাব হয়েছে। যেদিন বাসিপান্তা জোটে সেদিন তা খেয়েই পড়তে বসে। যেদিন থাকে না সেদিন খালি পেটেই বসে যায় মাদুর পেতে।
আজও মাদুর পেতে পড়তে বসেছে তিন ভাইবোন।
করিম আর আয়েশা অনেকক্ষণ ঘরের মধ্যে চুপচাপ কি যেন করছেন। কয়েক মিনিট পরে সন্তানদের নাম ধরে ডাকলেন- রেজা, রেখা, অন্তরা একটু ঘরের ভিতর আয় তো বাবারা!
ডাক পেয়ে তারা ছুটে যায় ঘরের ভিতর।
হায় হায় একি! ভিজানো পিঠা!
চোখ আকাশে ওঠে রেজার। আনন্দে লাফাতে থাকে। রেখা, অন্তরা তাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করতে থাকে আনন্দে- ভিজানো পিঠা? কোথায় পাইলা মা, আব্বা?
সন্তানদের চোখেমুখে এই আনন্দ করিম, আয়েশার কাছে কোটি টাকার পুরস্কারের চেয়ে বেশি আনন্দের। অবাক বিস্ময়ে তারা তাকিয়ে থাকেন সন্তানদের মুখের দিকে। তাকিয়ে দেখেন কেমন আনন্দ করছে ওরা। এ দৃশ্য দেখে করিম আর আয়েশার মনের ভিতর এতদিন যে অস্থিরতা ছিল তাতে স্বস্তি মিলেছে। শীতের মৌসুমে সন্তানদের পিঠা খাওয়াতে পারছেন না সেই অস্বস্তি, অস্থিরতা তাদেরকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। অবশেষে তা পেরেছেন তারা। রাতে সন্তানরা যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন করিম, আয়েশা গভীর রাত পর্যন্ত এই পিঠা বানিয়েছেন। একটা একটা পিঠা বানিয়েছেন আয়েশা, করিম তা মিষ্টি দুধ রসের ভিতর ভিজিয়ে রেখেছেন। তবে এক্ষেত্রে ব্যত্যয় একটিই। তাহলো অন্যরা এই পিঠা বানান চালের গুঁড়া দিয়ে, আর এই দম্পতি পিঠা বানিয়েছেন আটা দিয়ে। সামর্থকে তারা অতিক্রম করতে পারেন নি। তাই এই ব্যবস্থা। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কি!
রেজা, রেখা, অন্তরা পাটি বিছিয়ে খেতে বসে যায় পিঠা। মুখে দিয়েই ওরা বুঝতে পারে আটার পিঠা। রেখা বলে- মা এতো আটার পিঠা।
তো কি হয়েছে- বলে অন্তরা- মজাই তো হইছে। একেবারে চালের পিঠার মতো।
ঠিক কইছো বুবু- বলে রেজা। আমাগো কাছে এইটাইতো ভিজানো পিঠা। এর মজা আর কে পাবে!
তা মা এই পিঠা কই পাইলা- রেখা জানতে চায়।
এই পিঠা! সে অনেক কথা মা। কাল রাতে তোর বাপ আটা আর গুড় আনছে। আমারে আগে থেকেই দুধ জোগার করতে বলছিল। দুই জনে মিলে এই বুদ্ধি করছি কয় দিন ধইরা। তারপর রাতে তোরা যহন ঘুমায়ে পড়ছিস তহন তোর বাপ আর আমি দুই জনে মিলে এই পিঠা বানাইছি। তোগো চমকাইয়া দেব বলে এমন আয়োজন করছি আমরা। তোরা কেউ জানিস না এই কথা। তাই সামনে পিঠা পাইয়ে তোরা পুলকিত হবি, আনন্দ পাবি সেই জন্যি আমরা তোগো কাছে আগে কিছু জানাই নাই।
রেজা, রেখা আর অন্তরা আনন্দে কেঁদে ফেলে। এ কান্নার অর্থ দুনিয়ার কোন মানুষ জানে না। জানে আল্লাহ আর যে কাঁদে সে। রেজা খাওয়া রেখে উঠে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে। বলে- মা মাগো তোমরা এত ভালো। বাবা তোমরা এত ভালো। তোমাগো টাকা নাই তবু আমাগো তোমরা কত্তো ভালবাস। আমাগো পিঠা খাওয়ানোর জন্য তোমাগো মনে কত আয়োজন। এই ভালবাসা টাকা দিয়ে মাপা যায় না মা। এই আনন্দ, এই ভালবাসা চিরদিন মনে থাকবে আমাগো!
সন্তানের কথায় চোখের কোণে অশ্রু জমে আয়েশার। আনন্দে, পরম এক সুখে কেঁদে ফেলেন করিম। আজ তার মনের অস্থিরতা কেটে গেছে। আজ তিনি সন্তানদের মুখে শীতের পিঠা তুলে দিতে পেরেছেন। দু’হাত তুলে প্রার্থনা করেন- হে আল্লাহ তুমি সবই জান, সবই দেখ। তুমি আমার মনের অস্থিরতাকে থামিয়ে দিয়েছ। আমার মনের আশা পূর্ণ করেছ। আমার সন্তানদেরকে সামর্থ দিও। তারা যেন আমার মতো মনে অস্থিরতা নিয়ে দিন না কাটায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পীযূষকান্তি দাস আন্তরিকতাই বড়ো । এখানে মা -বাবা তাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়েও সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেছেন । অন্তরের আবেগই অস্থিরতার অবসান ঘটালো ।
আল মামুন অসম্ভব সুন্দর গল্প । চালিয়ে যান । শুভ কামনা রইলো কবির জন্য । আমার লেখা পড়ে দেখবার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ।
এম এস, মাধু অনেক সুন্দর গল্প শুভকামনা রইল কবি
অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভ কামনার জন্য।
Fahmida Bari Bipu সুন্দর গল্প। শুভেচ্ছা।
তরিকুর সজীব খুবই ভালো লাগল। মানুষের এসব কোমল অনুভূতি এখন আর কোথাই দেখতে পাই? সবাই যদি এভাবেই ভাবত, তাহলে আমাদের চারপাশটা অনেক বদলে যেত।
ফয়েজ উল্লাহ রবি বেশ ভাল লেগেছে শুভেচ্ছা রইল আর ভোটও।
সাবিহা বিনতে রইস বেশ ভাল
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০১৬
ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না।
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০১৬
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ অপূর্ব স্বাদ এ গল্পের ! আয়েশার অভাবের সংসারের ভিজানো পিঠার মতই ! বাচ্চাদের অপূর্ণতাকে পূরণ করার যে আকুতি এবং তার বাস্তবায়নে যে অস্থিরতার বিলোপ, সেই চিত্রটাকেই বড় সুন্দর করে তুলে ধরলেন আপনার চমৎকার গল্পে । খুব ভাল লাগল । ভোট রেখে গেলাম ।
ভালো লাগেনি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫
ধন্যবাদ সানাউল্লাহ ভাই। এর মাঝেই তো আমাদের জীবন, সমাজ। এ সমাজকে আমাদের অনুভূতি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০১৬

১১ মার্চ - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪