আমার বাম কাঁধে ভ্যানিটি ব্যাগ, ডান হাতে ট্রাভেলিং ব্যাগ। কমলাপুর রেল ষ্টেশনের প্লাটফর্ম ধরে হাঁটছি। বেশ কিছুক্ষণ এলোমেলো হাঁটার পর ব্যাগ দু’টো পাশে নামিয়ে রেখে প্লাটফর্মের একটা বেঞ্চিতে এসে বসলাম। অল্প সময়ের ব্যাবধানে যাত্রী বোঝাই বেশ কয়েকটি ট্রেন ষ্টেশনে এসে ভিড়ল। আবার বেশ কয়েকটি ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ষ্টেশন ছেড়ে চলেও গেল। আমার গন্তব্য অজানা। কোথায় যাব, এখনও স্থির করতে পারি নি। একরকম ঝোঁকের মাথায় আজ আমি ঘর ছেড়ে চলে এসেছি। না, কেউ আমাকে ধোকা দেয় নি। কারো হাত ধরে পালিয়ে যাওয়ার জন্যেও আমি ঘর ছেড়ে এখানে আসি নি। সেই ছোটবেলা থেকেই দূরে কোথাও চলে যাওয়ার ভূত মাঝে মাঝেই আমার মাথায় চেপে বসে। ইচ্ছে করে দীগন্তের কাছাকাছি কোথাও চলে যেতে, অজানা কোথাও হারিয়ে যেতে। টিভি রিপোর্টিং এর চাকরিটা ছেড়ে দেয়ার পর আমার ঘর ছাড়ার এই নেশাটা যেন আরো ক’য়েকগুণ বেড়ে গেছে। বই পড়ে, গান শুনে কিছুতেই আমার সময় কাটতে চায় না।
ঢাকার বাইরের দুর্গম এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এসাইনমেন্টগুলো কাভার করার দায়িত্ব আমি স্ব-ইচ্ছায় অফিস থেকে চেয়ে নিতাম। যদিও একা একটি মেয়েকে টিমের সাথে এভাবে বাইরে পাঠাতে খুব একটা ভরসা পেতেন না সীমান্ত দা। কিন্তু আমার প্রবল ইচ্ছার কাছে প্রতিবারই তাঁকে হার মানতে হয়েছে। আমাকে আটকাতে না পেরে অনেকবার তিনি নিজেই আমার সফরসঙ্গী হয়েছেন। কিন্তু সর্বশেষ কুয়াকাটা সফরে অনেক আকুতি-মিনতি করেও আমি তাঁর সফরসঙ্গী হতে পারি নি। সব সময় সব কাজ নাকি মেয়েদের দ্বারা সম্ভব হয় না- এই অজুহাত দেখিয়ে আমাকে যেতে দিলেন না। উপকূলে তখন চলছে ১০ নম্বর সতর্ক সংকেত। টিম নিয়ে তিনি একাই কুয়াকাটা চলে গেলেন ঘুর্ণিঝড়ের নিউজ কাভার করতে।
প্লাটফর্মে দীর্ঘ সময় বসে থেকেও গন্তব্য স্থির করতে পারলাম না। ষ্টেশন থেকে বের হয়ে এলাম। রিকশায় উঠে বসতেই প্যাডেল ঘুরাতে শুরু করল রিকশাওয়ালা। ভাবটা এমন, বহুদিন ধরে তিনি আমাকে চেনেন এবং আমি কোথায় যাব সেটাও তিনি জানেন। রিকশাওয়ালা গন্তব্য জানতে না চাওয়ায় আমিও কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছি। পূর্ব রাজাবাজারের মেসটা আজ দুপুরেই আমি দিয়েছি। কাকরাইল মোড়ে এসে রিকশাওয়ালা প্রশ্নটা শেষ পর্যন্ত করেই ফেলল-
‘আফা, যাইবেন কই? কিছুই তো কইলেন না!’
‘রামপুরা।’
মুখ ফসকে হঠাৎ কেন ‘রামপুরা’ বললাম, আমি নিজেই বুঝতে পারলাম না। ঐ এলাকায় তো আমার আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত কেউ থাকেন না। সীমান্ত দা অবশ্যি থাকতেন বনশ্রীতে। অনেকবার তিনি বাসায় যেতে বলেছেন। এই তো মাস দু’য়েক আগে তাদের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে খুব করে বলেছিলেন বাসায় যেতে। ভিজিটিং কার্ডের উল্টো পার্শ্বে বাসার ঠিকানাও লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু যাওয়া হয়নি একবারও। কার্ডটা এখনও হয়ত ব্যাগের সাইড পকেটে রাখা আছে। খুঁজলেই পাওয়া যাবে। কুয়াকাটা থেকে সীমান্ত দা’র লাশ যখন ঢাকায় আনা হল, তখনও আমি যাই নি। রিপোর্ট নিয়ে যে লোকটি সারাক্ষণ আমাকে বকাঝকা করতেন। কন্ঠ এবং শরীরের যতেœর ব্যাপারে নিয়মিত উপদেশ দিতেন। একটু অনিয়ম হলে কড়াভাবে শাসন করতেন। সেই লোকটিকে নির্জীব এবং অসহায় অবস্থায় দেখার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিল না। শুনেছি সীমান্ত দা’র স্ত্রী ও মেয়ে এখনও সেই আগের বাসাতেই আছে।
দু’বার কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলে দিল সীমান্ত দা’র স্ত্রী, লাইজু। প্রথম দেখাতেই আমি ওনাকে চিনে ফেলেছি। সীমান্ত দা’র ফেসবুক প্রোফাইলে আমি ওনার ছবি দেখেছি। এছাড়া শাহবাগে একদিন তাদের দু’জনকে এক রিকশায় আমি ঘুরতেও দেখেছি। আমি আমার নাম বললাম-
‘আমি অর্পা।’
শুধু নাম দিয়ে আমাকে চিনতে না পেরে তিনি কিছুটা অবাক ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। এখনও তার চেহারায় শোকের ছায়া স্পষ্ট। আমি নিজেই আবার নিরবতা ভাঙলাম।
‘আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না, এই তো!’
আমাকে চিনতে না পারার কারণে তিনি মনে হয় কিছুটা বিব্রত।
‘আমি আর সীমান্ত দা একই টিভি চ্যানেলে কাজ করতাম।’
‘ও.. আচ্ছা...। আসুন, ভেতরে আসুন।’
দরজা ছেড়ে দিয়ে তিনি আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিলেন। ড্রইং রুমে বসতে দিলেন। আমাকে বাসিয়ে রেখে তিনি ভেতরে চলে গেলেন।
‘আপনি একটু বসুন, আমি আসছি।’
ড্রইং রুমের পুরোটা দেয়াল জুড়ে শুধু সীমান্ত দা’র ছবি। আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলো দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর লাইজু বুবু ফিরে এলেন। হ্যাঁ, উনাকে আমি ভাবি কিংবা আপা ডাকতে পারছি না। আকেটা কথা- সীমান্ত দা কিন্তু হিন্দু নন, উনি ছিলেন সুন্নী মুসলমান। আমি ইচ্ছে করেই তাকে ‘সীমান্ত দা’ ডাকতাম। এখন আমার মন চাইছে এই ভদ্র মহিলাকে আমি ‘বুবু' বলে ডাকব। কেন ডাকব, সেটিও আমি জানি না। মাঝে মাঝে না জেনে আমি আনেক কিছুই করি। হঠাৎ মেসের সিট ছেড়ে দিয়ে উদ্দেশ্যহীন বাইরে চলে আসার ব্যাপারটিও অনেকটা সেইরকম।
‘বুবু, আরও আগেই আপনার এখানে আমার আসা উচিত ছিল। কিন্তু ব্যাক্তিগত কিছু সমস্যার কারণে আসতে পারি নি।’
‘বুবু’ ডাক শুনে উনি মোটামুটি বিস্মিত হলেন। আমি তাকে ‘বুবু’ বলে ডাকব, এটা মনে হয় উনি নিজেও চিন্তা করতে পারেন নি।
লাইজু বুবু নিজেকে সামলে নিলেন। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তিনি আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেন।
‘আমি টিভি খুব একটা দেখি না। নিউজ চ্যানেল তো আরও দেখা হয় না। নিয়মিত দেখলে হয়ত আপনাকে চিনতে পারতাম।’
‘না, না। তাতে কোনো সমস্যা নেই। আমি নিজেও রিপোর্টিং খুব কম করতাম। আর সীমান্ত দা’র ঐ এক্সিডেন্টের পর তো চাকরিটাই আমি ছেড়ে দিয়েছি।’
‘চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন!’ বুবু মনে হয় খুব অবাক হলেন।
‘হ্যাঁ, ছেড়ে দিয়েছি। দীর্ঘদিন এক কাজ করতে আমার ভালো লাগে না। এক জায়গায় বেশিদিন থাকতেও আমার ভালো লাগে না।’
‘বেশ করেছেন। রিপোর্টিং এর চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে খুব ভালো কাজ করেছেন। এরচে' অন্য ছোটখাটো একটা জব করেন, সেটাও অনেক ভালো।’
‘আমাকে দয়া করে ‘আপনি’ বলবেন না, ‘তুমি’ করে বলবেন। বয়সে বড় কেউ আমাকে ‘আপনি’ সম্বোধন করলে আমি ভীষণ বিব্রত হই।’
‘দেখলে তো, এই সাংবাদিকতা পেশাটাই আমার জীবনটা কেমন তছনছ করে দিল। এসব বাদ দিয়ে ও যদি অন্য কোনো প্রফেশনে থাকত, তাহলে হয়তবা এই অল্প বয়সে ওকে এভাবে চলে যেতে হত না।’
‘আপনি হয়ত ঠিকই বলেছেন। তবুও হায়াত-মউতের ব্যাপারে মানুষের তো কিছুই করার থাকে না। চরম বাস্তবতা মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কিই বা করার আছে।’
বুবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আমাকে একলা বসিয়ে রেখে তিনি আবারও ভেতরে চলে গেলেন। আমি আবারও মেনোযোগ দিলাম দেয়ালে টাঙানো সীমান্ত দা’র ছবি গুলোর দিকে। টেকনাফে তোলা একটা ছবিতে আমার চোখ আটকে গেল। অল্প খরচে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া পাড়ি দেয়ার এই প্যাকেজ এসাইন্টমেন্টটা অফিস থেকে আমি চেয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু সীমান্ত দা আমাকে একা ছাড়তে ভরসা পান নি। তিনি নিজেও আমার সঙ্গে টেকনাফে গিয়েছিলেন। তাঁর এই ছবিটা আমার নিজেরই তোলা। জুস আর পানির গ্লাস নিয়ে বুবু ফিরে এলেন। ছবিটা দেখতে দেখতে আমি কখন যে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম খেয়াল করি নি। বুবুকে দেখে আমি সোফায় বসে পড়লাম। জুসের গ্লাসটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। আমি সবিনয়ে গ্লাসটা হাতে তুলে নিলাম।
‘টিভিতে না হয় আপনি আমাকে দেখেন নি কিংবা দেখলেও খুব কম দেখেছেন বলে মনে নেই। তাই বলে সীমান্ত দা কি কখনই আমার কথা আপনাকে কিছু বলে নি!’
বুবু মনে হয় এবারও কিছুটা ইতস্তত। ‘কই না তো!’
‘হ্যাঁ, আমি জানতাম। সীমান্ত দা গল্পের ছলেও কোনোদিন আমার কথা আপনাকে কিছু বলবে না। আর বলবেই বা কেন, অফিসে সে তো আমাকে সহ্যই করত পারত না। সারাক্ষণ শুধু ভুল ধরত, আর বকাঝকা করত।’
‘ও মানুষটা ছিল একটু অন্য ধরণের। কাজ ছাড়া কিছুই বুঝতে চাইত না। দেরি করে অফিস থেকে ফেরার কারণে কতদিন যে আমাদের ঝগড়া হয়েছে।’
‘আপনি ঠিকই বলেছেন। এমন কাজ পাগল সিরিয়াস টাইপের মানুষ আমি আমার জীবনেও দেখি নি।’
সীমান্ত দা’র প্রশংসা শুনে বুবুকে কিছুটা গর্বিত মনে হল। তার মনের কষ্টটাও আমি স্পষ্ট টের পাচ্ছি। সে জোর করে মুখে হাসি ধরে রাখার চেষ্টা করছে। আরেকটা চুমুক দিয়ে জুসের গ্লাসটা নামিয়ে রাখলাম। টেকনাফে তোলা ছবিটার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম।
‘আমি রিপোর্টিংএ এসেছিলাম শুধুমাত্র সীমান্ত দা’র অনুপ্রেরণায়। সীমান্ত দা’র উপস্থাপনা ভঙ্গিটা ছিল অসাধারণ। আমি মনোমুগ্ধ হয়ে নিয়মিত এই লোকটির রিপোর্টিং দেখতাম। অথচ জলজ্যান্ত এই মানুষটা আজ আর নেই। নির্মম এই চিরন্তন সত্য বিষয়টি বিশ্বাস করতেও আমার কষ্ট হচ্ছে।’ আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি সীমান্ত দা’র ছবিটির দিকে। পিছন থেকে বুবু কখন চলে গেছে আমি জানি না। আমি গা ছেড়ে দিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে সোফায় বসে পড়লাম।
সন্ধ্যার একটু আগে আগে অরিণ বাসায় ফিরল। অরিণ সীমান্ত দা’র একমাত্র মেয়ে। স্কুলের পর সম্ভবত কোচিং শেষ করে এই সময়ে সে বাসায় ফিরেছে। ঢাকা শহরে এখন সবচে’ রমরমা ব্যবসা হচ্ছে এই কোচিং ব্যবসা। হরতাল, অবরোধ কিংবা ধর্মঘটে অন্যান্য ব্যবসার মতো এই ব্যবসায় কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ে না। স্কুল-কলেজে নিয়মিত ক্লাশ না হলে উল্টো এই ব্যবসা আরো জমজমাট হয়। অসময়ে আমাকে বসে থাকতে দেখে অরিণও মনে হয় কিছুটা বিস্মিত। সন্ধ্যার সময় অপরিচিত একা একটা মেয়েকে ড্রইং রুমে এভাবে বসে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হবারই কথা। নিজের রুমে ব্যাগটা রেখে, জামা-কাপড় না পাল্টেই সে সোজা চলে গেল রান্না ঘরে, মায়ের কাছে।
‘মা, ড্রইং রুমে বসে আছে কে?’
‘তোর বাবার কলিগ।’
‘কই, একে আগে কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না তো!’
‘তুই সবাইকে চিনিস না কি? যা জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নে।’
আমাকে আরেক পলক দেখে নিয়ে অরিণ তার নিজের ঘরে চলে গেল। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। আমি কোথায় যাব, এখনও স্থির করতে পারি নি।
আজকের রাত টা কি এদের এখানেই কাটিয়ে দেব? আমি যদি নিজে থেকে না যাই তাহলে নিশ্চয়ই এরা জোর করে আমাকে বাসা থেকে বের করে দেবে না। আর আমি যদি চলে যাওয়ার নাম মুখে না নেই তাহলে এরা মা-মেয়েও হয়ত বড় ধরনের আরেকটি চমক খাবে।
অনেকদিন পর লাইজু আজ অনেকগুলো আইটেম একসাথে রান্না করেছে। সীমান্তর মৃত্যুর পর এ বাড়িতে বড় কোনো আয়োজন হয়নি। চুলোর আগুনের পাশে তার মুখটা বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। মুখ অন্ধকার করে অরিণ খাবার টেবিলে এসে বসেছে। রাতের খানাপিনার পর বুবুর কথা মতো আমি এলাম অরিণের ঘরে। অরিণ সোজা চলে গেল ওর মায়ের ঘরে। সম্ভবত এই নিয়ে সে এখন ঝগড়া করবে।
‘তুমি ওনাকে আমার ঘরে পাঠালে কেন?’
‘একটা রাতই তো, সমস্যা কোথায়?’
‘না, আমি অচেনা অজানা কারো সঙ্গে বেড শেয়ার করতে পারব না। ওনাকে রাখতে হলে তোমার কাছে এনে রাখ।’
‘দেখ অরিণ, বাসায় কিন্তু মেহমান আছে।’
‘কীসের মেহমান, উনি আমাদের কে হয়?’
‘সমস্যা মনে করলে তুই আমার কাছে এসে থাক।’
‘অচেনা অজানা একজন মানুষকে আমার ঘর ছেড়ে দিয়ে এসে আমি তোমার কাছে থাকব কেন? তোমার জিনিস যদি অন্য কেউ শেয়ার করে তখন তোমার কেমন লাগবে?’
অরিণ রাগ করে রুমে ফিরে এল। আমার দিকে না তাকিয়ে সে সোজা পড়ার টেবিলে গিয়ে বসল। একটু পর বুবু এসে আমাকে ঘুমিয়ে পড়ার তাগিদ দিলেন। বুবু চলে গেলে আমি শুয়ে পড়লাম। অরিণ আড় চোখে আমাকে আরেকবার দেখে নিল। আজকের রাতটা না হয় এখানে কাটিয়ে দিলাম। কালকে আমি কোথায় যাব? শুধু শুধু চিন্তা করে আরামের ঘুম নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। আমরা প্রায় সকলেই ভবিষ্যতর ভাবনা ভেবে বর্তমানের সুখকে নষ্ট করি, এটা ঠিক না। এদের এখানে এসে আমার কেন যেন ভালই লাগছে। কালকের ভাবনা কালকে ভাবা যাবে। এখন শুধু কষ্ট হচ্ছে অরিণের জন্য। সে শুতে আসছে না, পড়ার টেবিলে গো ধরে বসে আছে। রাত জেগে পড়াশোনা করছে ব্যাপারটা ঠিক তাও না। আজ তার পড়ায় মন বসার কথা না। কারণ, সে আমাকে সহ্য করতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর পর সে আড় চোখে আমাকে দেখছে। অরিণের জন্য বিছানায় পর্যাপ্ত পরিমান জায়গা রেখে আমি ঘুমুনোর চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণ পর অরিণ বিছানায় এল।
‘আমি হঠাৎ এসে তোমাদের মনে হয় সমস্যায় ফেলে দিলাম।’
অরিণ কোনো কথা বলছে না। সে হয়ত ভেবেছিল আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
‘অরিণ, তোমার সমস্যা হলে আমি নিচে চলে যাই। আমি কিন্তু ফ্লরেও ঘুমোতে পারি।’
‘না না, আমার কোনো সমস্যা নেই। আপনি এখানেই ঘুমান।’
সেই রাতে অরিণর সাথে আমার অনেক কথাই হল। এক রাতের ব্যবধানে ও আমাকে খুব সহজভাবে মেনেও নিল। রাতে অরিণর মনে যে কালো মেঘ জমেছিল, সকালে তা অনেকটাই কেটে গিয়েছে। বুবু রান্না ঘর থেকে অরিণকে ডাকছে। হাই তুলতে তুলতে অরিণ রান্না ঘরে চলে গেল।
‘কিরে, রাতে তোর কোনো সমস্যা হয়েছে?’
‘কই না তো! মনে হচ্ছে অর্পা আন্টি মানুষটা খুব ভালো। দ্রুত মানুষকে বন্ধু করে নিতে পারে।’
অরিণ স্কুলে চলে যাবার পর পাশের বাসার একজন মহিলা এলেন। আমাকে আড় চোখে বেশ কয়েকবার দেখে নিলেন। তার চোখের দৃষ্টিতে যথেষ্ট সন্দেহ।
‘ভাবি, মেয়েটা কে?’
‘অরিণের বাবার কলিগ।’
‘এখানে কী চায়?’
‘কী আর চাইবে! আমাদের দেখতে এসেছে। কাল অবেলায় এসেছে তাই রাতে যেতে দিইনি।’
‘ভালোভাবে না জেনে এভাবে বাসায় রাখা আপনার ঠিক হয় নি।’
‘একদিনেরই তো ব্যাপার। আজকেই চলে যাবে।’
আমি এখনও ঠিক করতে পারি নি- কোথায় যাব, কী করব। এখানে আমার মন্দ লাগছে না। এ বাড়ির সর্বত্রই সীমান্ত দা'র স্মৃতি। দুপুরে ছাদে গিয়ে দেখলাম সীমান্ত দা’র জামাগুলো সব ধুয়ে দেয়া হয়েছে। যে জিনিসগুলো মানুষটির আর কখনো কাজে লাগবে না সেগুলো এক যতœ করে ধুয়ে দেয়ার কারণ বুঝতে পারলাম না। এগুলো হয়ত ফকির মিসকিনদের দান করে দেয়া হবে, নয়ত স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে যতœ করে তুলে রাখা হবে। আমার নিজেরও কয়েকটি জামা-কাপড় ধুয়ে দেয়া দরকার। গোসলের সময় কিছু জামা-কাপড় ধুয়ে আমি ছাদে নিয়ে গেলাম। সীমান্ত দা'র জামার ফাঁকে ফাঁকে আমার ভেজা কাপড়গুলো শুকোতে দিলাম। সীমান্ত দা'র জামার পাশে আমার জামা বাতাসে দোল খাচ্ছে, দৃশ্যটি মন্দ না। আমি ছাদ থেকে নিচে চলে এলাম। দুপুরের খাওয়ার সময় বুবু বারবার আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছিলেন। আমি চলে যাচ্ছি না বলেই কি তিনি এভাবে বারবার আমাকে দেখছিলেন?
বুবু মনে হয় আজ আমাকে চিনতে পেরেছে। আজ গোসলের পর আমি যে জামাটা পড়েছি, এই জামাটার দিকে বুবু কেন বারবার তাকাচ্ছিলেন সেটিও কিছুটা বুঝতে পেরেছি। শাহবাগে তাদের দু’জনকে যেদিন আমি রিকশায় ঘুরতে দেখেছি সেদিন আমার পরনে ছিল এই জামাটাই। বুবুও হয়ত আমাকে সেদিন লক্ষ্য করেছিলেন। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সীমান্ত দা বুবুর খোপায় ফুল গুঁজে দিয়ে আরো কাছাকাছি বসার চেষ্টা করছিলেন। সেদিন ছিল তাদের বিবাহ বার্ষিকী। সীমান্ত দা আমাকে দাওয়াত করেছিলেন। আমি যাই নি। কিন্তু সীমান্ত দা সেদিন আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কেন বুবুকে ওভাবে কাছে টানার চেষ্টা করলেন? কেন বার বার আমাকে বাসায় যেতে বললেন? হ্যাঁ, তাঁকে আমি ভীষণ পছন্দ করতাম। কিন্তু এই পছন্দ করার ব্যাপারটিকে কি তিনি অন্যভাবে চিন্তা করেছেন?
আমাকে চিনতে পেরে বুবুও মনে হয় কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। পাশের বাসার ভাবির পরামর্শে আমাদের অফিসের আরেক কলিগ আকাশকে ডেকে আনা হয়েছে। ড্রইং রুমে বসে ওরা কথা বলছে। কথা শেষ করে আকাশকে ছাদে আসতে বলে আমি ওখান থেকে চলে এসেছি। ছাদে এসে দেখলাম শুকোতে দেয়া আমার জামা-কাপড়গুলো একদিকে চাপিয়ে রাখা হয়েছে। সীমান্ত দা’র জামা-কাপড়গুলো অন্যদিকে। কে এমটা করল! বুবু কি করেছে! সে কি তাহলে হিংসা করে এই কাজটি করেছে! সীমান্ত দা’র জামার সাথে আমার জামার সংস্পর্শ কি তিনি সহ্য করতে পারেন নি! সীমান্ত দা’র মাফলারটা আমি হাতে নিলাম। একদিন ঠান্ডা লাগিয়ে অফিসে গিয়েছিলাম। সীমান্ত দা নিজের গলা থেকে এই মাফরারটি খুলে আমাকে পড়তে দিয়েছিলেন।
‘আকাশ ভাই, অর্পা মেয়েটি সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?’
‘ভাবি, ও এখানে এল কীভাবে!’
‘আপনারাও তো মাঝে মধ্যে আসেন। ও অবশ্যি এবারই প্রথম এসেছে। সীমান্তর সাথে চাকরি করত জেনে আমি বাসায় ঢুকতে দিয়েছি। চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, মেসের সিট ছেড়ে দিয়েছে এসব শুনে বাসায় থাকতেও দিয়েছি। মেয়েটার এমনিতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ওর আচার আচরণ আমার কাছে যেন কেমন কেমন মনে হয়?’
‘ও তো একটা পাগলী মেয়ে। ওর মাথায় সমস্যা আছে। ডাক্তার দেখানোর জন্য ওর বাইরে যাওয়ার কথা।’
‘পাগলী মেয়ে!’
‘ওর পাগলামী কিন্তু সব সময় বোঝা যায় না। একবার ফান করে আমি ওকে প্রপোজ করেছিলাম। ওরে বাবা, সে কি কান্ড। ওর মাথায় রক্ত উঠে গেল। চিল্লাচিল্লি করে সমস্ত অফিসের লোক এক জায়গায় করে ফেলল। লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়ে গেল।’
‘আমি জানতে চাচ্ছি সীমান্তর সাথে ওর সম্পর্কটা কেমন ছিল।’
‘সীমান্ত ভাই ওকে কীভাবে দেখত সেটা আমি জানি না। তবে ও যে সীমান্ত ভাই’র প্রতি ভীষণ দূর্বল ছিল সেটা অফিসের সবাই কমবেশি জানে।’
‘এইজন্যই কী ও আামকে বুবু ডাকে! ও কি তাহলে মনে মনে আমাকে সতীন ভাবে!’
‘আপনাকে বুবু ডাকে নাকি!’
‘হ্যাঁ ভাই, আপনাকে তাহলে বলছি কী?’
‘ভাবি, আমি আপনাকে আরো একটা তথ্য দিচ্ছি। কুয়াকাটায় ঘূর্ণিঝড়ের রিপোর্টটা কিন্তু অর্পারই করার কথা ছিল। সবকিছু ঠিকঠাক। কিন্তু কী থেকে কী হল বুঝতে পারলাম না। অর্পার নাম কেটে দিয়ে সেখানে রিপোর্ট করতে চলে গেলেন সীমান্ত ভাই নিজেই।’
‘আপনি এসব কী বলছেন আকাশ ভাই! তার মানে ওর জন্যই আমাদের ফ্যামিলির আজ এই দশা!’
‘আমি কিন্তু সেটা বলছি না। হায়াত-মউতের ওপর তো কারো হাত নেই। যাই হোক, ওকে এখানে বেশিদিন থাকতে দেয়াও মনে হয় ঠিক হবে না।’
কথা শেষ করে আকাশ ছাদে চলে এল।
‘বুবু আপনাকে কেন ডেকেছে এখানে?’
‘কই আমাকে ডেকে আনে নি তো! আমি তো প্রায়ই আসি।’
‘কী কী কথা হল?’
‘অফিসে সীমান্ত দা’র কিছু লেনদেন আছে এসব ব্যাপারেই জানতে চাইল। তা তোমার খবর কী? তুমি না চাকরি ছেড়ে দিলে বাইরে চলে যাবে বলে।’
‘হ্যাঁ, যাব। ভিসাটা হয়ে গেলেই চলে যাব।’
‘অর্পা, আজ আমার একটু তাড়া আছে। নিচে একজনকে বসিয়ে রেখে এসেছি। তোমার সাথে পরে কথা হবে।’
আকাশ ভাই চলে গেলেন। একটু পর জামা কাপড়-গুছিয়ে নিতে বুবু ছাদে এলেন। আমার হাতে সীমান্ত দা’র মাফলার দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। হাঠাৎ এগিয়ে এসে কোনো কথা না বলে হেচকা টান দিয়ে মাফলারটা তিনি নিয়ে নিলেন। সীমান্ত দা’র অন্য জামা-কাপড়গুলো গুছিয়ে নিতে তিনি দ্রুত নিচে নেমে গেলেন। এর আগে খাবার টেবিলেও একটা ঘটনা ঘটেছিল। সীমান্ত দা কোন মগে বাসায় পানি খেতেন আমি জানি না। জানার কথাও না। আমি একটা মগ নিয়ে পানি খেতে যাব ঠিক এমন সময় বুবু আমার মুখের সামনে থেকে গ্লাসটা একরকম কেড়েই নিলেন। অরিণের কাছে পরে জেনেছি ওটা সীমান্ত দা’র মগ।
অরিণের সাথে আামর সম্পর্কটা অনেকটা বন্ধুর মতো হয়ে গেছে। একদিন স্কুলে নিয়ে গিয়ে ওর বন্ধুদের সাথে আামকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। আমি বুঝতে পারছি বুবুর মনটা আজ ভীষণ খারাপ। আকাশ ভাই নিশ্চয়ই এমন কিছু বলেছে যার জন্য তিনি আমার উপরেও যথেষ্ট বিরক্ত। এদিকে শিক্ষা সফরে যাওয়ার ব্যাপারে মা’কে রাজি করাতে আমাকে সাহায্য করতে বলেছে অরিণ। খাওয়ার টেবিলে সে এই প্রস্তাবটি তুলল।
‘মা, সামনের সপ্তাহে আমাদের শিক্ষা সফর। তুমি কিন্তু আমাকে না করতে পারবা না।
‘কোথায়?’
‘কুয়াকাটা।’
‘কী বললি ! কোথায় যাবি তুই? তোর বাবা যেখানে ডুবে মরল, আর তুই কি না সেখানে যাবি আনন্দ ফূর্তি করতে !’
‘শিক্ষা সফর তো আনন্দ ফূর্তির ব্যাপার না!’
‘শিক্ষা সফরের ব্যাপারে তুমি আমাকে শিক্ষা দিতে এসো না। ওগুলো আমার সব জানা আছে। তোর যাওয়া হবে না।’
‘কেন ?’
‘আমি নিষেধ করেছি, এই জন্য যাওয়া হবে না।’
অরিণ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কথা বলার সাহস পাচ্ছি না। হঠাৎ সে প্রতিবাদী হয়ে উঠল।
‘আমি যাব যাব যাব।’
কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুবু অরিণকে একটা থাপ্পড় মেরে বসল। অরিণ অর্ধেক খাবার প্লেটে রেখেই রাগ করে তার ঘরে চলে গেল। বুবু রাগে গজগজ করতে লাগল।
‘কেউ আমাকে বুঝতে চায় না। কেউ আমার কথা শোনে না। ঐ লোকটাও কোনেদিন আমাকে বুঝতে চায় নি। আমার কোনো কথাই সে শোনে নি।’
হঠাৎ করে পরিবেশটা অন্যরকম হয়ে যাওয়ায় আমি বিপদে পড়ে গেলাম। অরিণ আমার ফোন নিয়ে কার সাথে যেন রাত জেগে দীর্ঘসময় নিয়ে কথা বলল। আধো ঘুমে আধো জেগে ওর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারি নি। সকালে অরিণের সাথে স্কুলে গেলাম। ওখান থেকে গেলাম ভিসা অফিসে। ভিসাটা এখনও হয়নি। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি আমার ব্যাগ গুছিয়ে রাখা হয়েছে। বুবু মুখে কিছু বলার আগেই আমি যা বোঝার তা বুঝে গেলাম। কিন্তু এই সময়ে আমি কোথায় যাব বুঝতে পারছি না। ব্যাগ নিয়ে নিচে না নেমে ছাদে চলে এলাম, নিরিবিলি কিছুক্ষণ ভাবব বলে।
সকালে নিজেকে আবিষ্কার করলাম অরিণের বেডে। বুবু আমার শিয়রে বসে মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। ঠান্ডা জ্বরে আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ছাদে কখন যে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম বলতে পারব না। পাশের ফ্লাটের ভাবি নাকি প্রথমে আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায়। এরকম ঘটনা এটিই প্রথম না। এর আগেও বেশ কয়েকবার আমি হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। এটা ঠিক জ্ঞান হারানো বলে না। ধুপ করে পড়ে গিয়ে আমি গভীর ঘুমে চলে যাই। বুবু আমার সেবা করছে বিষয়টি ভাবতেই আমি যেন অনেকটা সুস্থ হয়ে গেলাম। বুবু সারাদিন খুব যতœ করে স্যুপ-ট্যুপ বানিয়ে খাওয়ালেন। একদিনের সেবায় আমি প্রায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলাম। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। অরিণ এখনও বাসায় ফেরেনি। বুবু কোথায় কোথায় যেন ফোন করলেন। হঠাৎ সেদিন রাতে অরিণের ফেনালাপের কথা আমার মনে পড়ে গেল। ও কার সঙ্গে যেন কোথায় যাওয়ার কথা বলছিল। লঞ্চে চড়ে বরিশাল পটুয়াখালী হয়ে ওদের কুয়াকাটা যাওয়ার কথা। আমি অসুস্থ শরীরেই বিছানা থেকে নেমে এলাম। বুবু বাঁধা দিলেন। শরীরের এই অবস্থা নিয়ে কিছুতেই তিনি আমাকে বাইরে বেরুতে দেবেন না। বুবুসহ একটা সিএনজি নিয়ে সদর ঘাটে চলে এলাম। বরিশালের একটি লঞ্চে অরিণকে তার এক বন্ধুসহ হাতে নাতে ধরে ফেলাম।
পরের সপ্তাহেই আমার ভিসা কনফার্ম হয়ে গেল। অরিণদের বাসা থেকে আমি চলে এসেছি। কুয়াকাটা থেকে ফিরেই বাইরে চলে যাব। যে স্থানটিতে সীমান্ত দা ঘুর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছিলেন, আমি এখন ঠিক সেই স্থানটিতে দাঁড়িয়ে আছি। যতদূর চোখ যায় শুধু বিস্তৃর্ণ জলরাশি। আকাশ আর সমুদ্র মিশে আছে দূর দীগন্ত রেখায়। দীগন্ত আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি দীগন্ত রেখার দিকে। হঠাৎ মনে হল কেউ যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। ‘অর্পা’ নামটা আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম। তবে, ডাকটা কি সামনে থেকে আসছে না পিছন থেকে আসছে, সমুদ্রের গর্জনে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে আমি হাঁটুজল পেরিয়ে এসেছি। বড় একটি ঢেউ এগিয়ে আসছে আমার দিকে। ঠিক এমন সময় পিছন থেকে দৌঁড়ে এসে কারা যেন আমাকে জাপটে ধরল। পাশ ফিরে দেখি অরিণ আর লাইজু বুবু।