কিরে কতক্ষণ ধরে তোকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না নাফিজ বিরক্তভরা মুখে বললো তন্ময়কে। তন্ময়ঃ সত্যি শুনতে পাইনি বন্ধু। নাফিজঃ আজকে আমাদের মার্কেট যাওয়ার কথা ছিল। এতবার ফোন দিলাম ধরলি না। কি হইছে বলতো? গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কোনো সমস্যা? তন্ময়ঃ নারে, এমনি পরীক্ষা খারাপ হইসে তাই একটু মন খারাপ ছিল। আরেকদিন যাই কেনাকাটা করতে, সমস্যা আছে আজকে না গেলে? নাফিজঃ আরে না। পরে যাওয়া যাবে। চল ছাদে যাই আড্ডা দেই। তন্ময়ঃ রুমি আর শাকিল সহ অন্যদের ও ফোন দে। একসাথে আড্ডা দেই।
নাফিজ এর ছাদ সব বন্ধুদের আড্ডাখানা। ৬ তলা ছাদের উপরে আবার ছাদে আলাদা রুম থাকায় সব বন্ধুরা এখানেই আড্ডা দেয়।সবাই সময়মতো আসলো। আড্ডাতে সাধারণত মেয়েদের কথা নিয়েই বেশি কথা হয়। কার গার্লফ্রেন্ড কি করছে, কে কতো বেশি মেয়ের সাথে প্রেম করলো এগুলো নিয়ে আলোচনা হয় বেশি। আমাদের সব বন্ধুর মধ্যে নাফিজ ছাড়া অন্য সবাই প্রেম করতো। মাঝেমাঝে তাই নাফিজকে নিয়ে পচাতে কেউ ছাড়তো না। নাফিজ অবশ্য এসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতো না। আমাদের মধ্যে শাকিল ছিল মেয়ে পটানতে ওস্তাদ। কিছুদিন পর পর ভিন্নভিন্ন মেয়ের সাথে ঘুরতো। রুমি ভালো গান গাইতে পারে তাই মাঝেমাঝেই আমরা গানের আসর বসাতাম। সবাই গলা ছেড়ে গান গাইছে। ভালোই কাটতো সবার সময়।
কয়েকদিন হলো নাফিজের কোনো পাত্তা নেই। ওর বাসার ছাদে আমরা আড্ডা দিচ্ছি কিন্তু নাফিজের কোনো খোঁজখবর নেই। বাসায় ও পাওয়া যাচ্ছে না। নাফিজকে ফোন করলেও ধরে না। আমরা সবাই বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তায় আছি, হঠাৎ কি হলো ছেলেটার। কয়েকদিন পরেই ওকে পাওয়া গেলো।কিরে কোথায় হাওয়া হয়ে গেলি? তোর ছাদে তোকে ছাড়া আড্ডা হয়? বন্ধু একটা কথা বলবো কাউকে বলবি না তো? বলতো কি হইছে? বন্ধু আমার সাথে যে কোচিং এ পড়তো রিমি মনে আছে ওর কথা? হম মনে আছে কি হইছে? ওরা তো আমাদের এলাকায় বাসা ভাড়া আসছে। তো কি হইছে? ওরেতো বন্ধু আমি পছন্দ করি। কিরে শেষ পর্যন্ত তুই ও প্রেমে পড়লি? বন্ধু একটু হেল্প করনা। কাউকে বিষয়টা বলিশ না প্লিজ। আচ্ছা হেল্প করবো।
রিমিদের বাসা ছিল নাফিজদের বাসার খুব কাছেই। নাফিজ এর বাসা থেকে ওদের বাসা দেখা যায়। নাফিজকে তাই ওর বাসায় বারান্দাতে বেশি সময় কাটাতে দেখা যায়। সারাক্ষণ বারান্ধায় বসে থাকে রিমি কখন বারান্দায় আসবে ওকে যদি দেখতে পাওয়া যায় এই আশায়। নাফিজ এর অবস্থা দেখে বুঝলাম ও সেরিয়াস তাই ওকে সাহায্য করবো বলে সিধান্ত নিলাম। রিমি এর সাথে কথা বললাম। রিমির কাছ থেকে নাম্বার নিলাম, যদিও বলিনি যে নাফিজ ওকে পছন্দ করে। নাফিজ এর সাথে রিমির ভালো সম্পরকই ছিল কোচিং এ পড়ার সময়। যদিও তখন বলেনি ও রিমিকে পছন্দ করে। রিমির নাম্বার নাফিজকে দিলাম। নাফিজ রিমিকে ফোন দিলো। পরিচয় দেওয়ার পর ওরা কথা বলে রিমি। সবকিছু ভালোই চলতে থাকে নাফিজের, যদিও নাফিজ রিমিকে জানায়নি যে ওকে ভালোবাসে।
বন্ধু হিসাবে ভালোই চলতে থাকে নাফিজের কিন্তু কিভাবে রিমিকে ওর ভালোবাসার কথা জানাবে ভেবেই পায়না। আমি নাফিজকে বলি কিছুদিন পরেই তো ভালোবাসা দিবস ঐ দিন তুই তোর ভালোবাসার কথা রিমিকে জানা। নাফিজ দিন গুনতে থাকে ফেব্রুয়ারী এর ১৪ তারিখের। নাফিজের দিনগুলো অসাধারন কাটতে থাকে। রিমিকে নিয়ে মাঝেমাঝে ঘুরতে যাওয়া, খেতে যাওয়া , ফোনে কথা বলে ভালোই চলতে থাকে নাফিজের। এসব কিছু নাফিজের মনের আশাগুলো আরও বাড়িয়ে দেয়। নাফিজ রিমির পছন্দগুলো জানে তাই ও যা পছন্দ করে তাই করার চেষ্টা করে।
নাফিজঃ রিমি তোমার সাথে কিছু কথা ছিল। আগামীকাল আমরা দেখা করতে পারি? রিমিঃ তোমার সাথে আমারো কিছু কথা আছে, ঠিক আছে তাহলে আগামীকাল বলবো।
আজ ভালোবাসা দিবস। নাফিজ আর আমি দুজনে যাই রিমির সাথে দেখা করতে একটা রেস্টুরেন্ট এ। সঠিক সময়েই আমরা গিয়ে হাজির হই রেস্টুরেন্টে। আমরা দুজন অপেক্ষা করছি রিমির জন্য। নাফিজ অনেক খুশি। কখন রিমি আসবে এই অপেক্ষায় বসে আছি আমরা। কিছুক্ষণ পরেই রিমি আসলো। রিমির সাথে একটা ছেলে আসলো। আমি ভাবলাম রিমির কোনো বন্ধু হবে।
রিমিঃ তোমাদের একটা কথা বলবো। তোদের একটা বিষয় জানানো হয়নি। স্কুল জীবনের এতদিন পরে তোমাদের আবার দেখবো। এতো ভালো কিছু সময় কাটবে চিন্তাই করিনি। আমার সাথে যাকে দেখছ ওর নাম জাবেদ ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমাদের ৪ বছর ধরে সম্পর্ক ছিল। এখন পারিবারিকভাবে সবকিছু ঠিক হলো। তোরা আমার কাছের বন্ধু তাই তোদের সবার আগে জানালাম বিয়ের বিষয়টা।
এ কথাগুলো রিমি যখন বলছিলো, আমি নাফিজের দিকে তাকালাম ওর অবস্থা এতই খারাপ যে আর কিছুক্ষণ অইখানে বসলে ও কেঁদে দিবে। রিমির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পালানোর যখন চেষ্টা করছি তখন রিমি বললো, নাফিজ তুমি না আমাকে কি বলবে? নাফিজ কোনো রকমে প্রসঙ্গ এড়িয়ে আরেকদিন বলবে কথা দিয়ে দ্রুত বের হয়ে পড়লো। আমিও বের হয়ে পড়লাম। নাফিজকে কি বলবো ভাবে পাচ্ছি না। নাফিজ দ্রুত হেঁটে চলছে ওর পিছনে আমি হাঁটছি। কিছু সময় ভাষা হারিয়ে যায়, কিছুই বলার থাকে না। হাঁটছি দুই বন্ধু পাশাপাশি, কেউ কিছু বলছি না। শুধু হেঁটে ছলছি...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শেখ শরফুদ্দীন মীম
অনেক ভালো লাগলো। ভোট রেখে গেলাম। সময় করে আমার কবিতাটি( আলোর সন্ধানে) পড়বেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।