সুমন: কিরে শান্ত কেমন আছিস ? আমি(শান্ত): এইতো সুমন ভালো। সুমন: গতকাল যে ক্লাসে আসলি না ? সবকিছু ঠিক আছে তো ? আমি: সব ঠিক আছে তোদের কি খবর ? জনি,অনুপমা আর নিলয় কোথায় ? সুমন: সবাই ঠিক আছে। ক্লাসেই আছে চল দেরী হয়ে যাচ্ছে তো। আমি : ঠিকই বলছিস তাড়াতাড়ি চল।
আমি আর সুমন ক্লাসে গিয়ে দেখি স্যার এখনো আসেনি। সবাই গতকাল না আসার বিষয়ে আরো কিছুক্ষণ কথা বলার সময় পেয়ে গেলো। কথা বলতে বলতে স্যার চলে এলো। সবাই ক্লাসে মনোযোগী হয়ে গেলো। দুপুর ১২ টার সময় ক্লাস শেষ করে সবাই বের হলাম। আমাদের গল্প করার প্রধান সময় হলো ক্লাসের পরে। সবার বাসায় মুটামুটি ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় তাই কলেজ ছাড়া তেমন দেখা হয়না। তাই জামান গল্পগুলো কলেজের ক্লাসের পরেই করতে হয়।
শান্ত,জনি,অনুপমা,নিলয় আর আমি আমাদের আলাদা একটা গ্রুপ। কলেজের সবার সাথেই মোটামুটি ভালো সম্পর্ক হলেও আমাদের সম্পর্ক আরেকটু ভালো। আমাদের সবার মধ্যে যেমন ভাব তেমনি খুনসুটিও লেগে থাকে সারাক্ষণ। সবাই নিজেদের দুঃখ কিংবা সুখ শেয়ার করার চেষ্টাও করি। কেউ মন খারাপ করে আমাদের মধ্যে থাকতেই পারতো না। আমরা ঠিকই কোনো না কোনো ভাবে মন ভালো করার আপ্রাণ চেস্টা করতাম।
অনুপমার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল ভালো। অন্য বন্ধুদের মধ্যেও ও ছিলো একটু আলাদা। অনুপমা আর আমার সম্পর্ক যেমন ভালো ছিল তেমনি আমাদের মধ্যে মান-অভিমান ও বেশি ছিলো। আমরা ক্লাসে বসেও বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য চিঠি চালাচালি করতাম। মাঝেমাঝে এসবের জন্য স্যারদের বকাও খেতাম তবুও আমাদের কাজ আমরা করেই যেতাম। আমাদের মধ্যে সুমন ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে কলেজে পড়ার জন্য আর অন্য সবাই ঢাকার।
কলেজে আমাদের বন্ধুদের আজব আজব কর্মকান্ড অন্য বন্ধুদের ও অবাক করতো আর আমাদের বন্ধু গ্রুপ টাও সবার নিকট ছিলো পরিচিত। কলেজ শেষে একসাথে ঘুরতে যাওয়া, খাওয়া, আড্ডা,দুষ্টামি সবকিছুতেই কেটে গেলো কলেজের ২টি বছর। কখন যে সময় কেটে গেছে কেউ বুঝতেও পারি নাই। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো আমাদের কেটে গেছিল খুব দ্রুত।
কলেজ শেষে সবাই আলাদা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আলাদা ভর্তি হলেও সবার সাথেই যোগাযোগ ছিলো শুধু অনুপমা ছাড়া। অনুপমা কি অজানা কারণে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের পরে অনুপমার সাথে আর কোনো কথায় হয় নাই আমার। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময়েই অনুপমার বিয়ে হয়ে যায় যদিও আমাকে বিয়েতেও দাওয়াত দেয় নাই। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম চেস্টা করেছিলাম অনুপমার কাছ থেকে জানতে আমার উপর অভিমানের কারণ কিন্তু জানতে পারিনি।
হঠাৎ একদিন অনুপমা আমাকে ফোন দেয়। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এমবিএ এর ক্লাস করছি। কথা তেমন একটা না বলে শুধু জানায়, ওই দেখা করতে পারবি ? আমি জানতে চাইলাম, কখন ? কোথায় ? অনুপমা সময় ও স্থান জানিয়ে ফোন কেটে দিলো।
প্রায় ৩ বছর পর অনুপমার সাথে আবার দেখা হচ্ছে। ওকে দেখে খুব ভালো লাগছিলো। কেমন যেনো অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করতেছিলো?
অনুপমা : কি খবর? আমি : এইতো আছি. তোর্ কি খবর? অনুপমা: আছি ভালোই। রাগ করছিস আমার উপর ? আমি : না রাগ করি নাই। আমার তো মনে হয় তুই রেগে আছিস আমার উপর। আমি তর সাথে কন্টাক্ট করার এতো চেস্টা করলাম কিন্তু তুই কোনো ভাবেই কথা কিংবা দেখা করলি না। যাই হউক ভাইয়া ভালো আছে? অনুপমা : হুম তর ভাইয়া ভালই আছে আর সবকিছু ভালোই যাচ্ছে। আসলে তোর্ উপর আমি রাগ করি নাই তবে আমি তোর থেকে কেনো যেন একটু পালিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। কেনো চেয়েছিলাম তা জানি না তবে আমি তোর কাছ থেকে নিজেকে দুরে রাখতে চেয়েছি। আমি: আমার দোষ কি ছিলো? বলবি ? অনুপমা: বলছি তো তর কোনো দোষ নাই. আমি: তবে আমাকে কেনো শাস্তি দিলি ? অনুপমা : আমি আসলে তোর কাছে কিছু জানতে চাইবো সত্যি কথা বলবি তো ? আমি: অবশ্যই সত্যি বলবো। আমাকে কখনো মিথ্যা বলতে দেখেছিস ? অনুপমা: না, মিথ্যা বলিস না তবুও বললাম। আমি: কি বলবি বললি না ? অনুপমা: আচ্ছা তুই কি আমাকে ভালোবাসিস ? হয়তো তুই রাগ করতে পারিস, ভুল ও বুঝতে পারিস আমাকে তবে কি আমার কলেজের পর থেকে মনে হতো তুই আমাকে ভালোবাসিস কিন্তু বলতে পারিস নাই। আমি: এখন আর এই প্রশ্নের কোনো মানে হয়না।তর বিয়ে হয়ে গেছে। অনুপমা: আমি জানি। কিন্তু এই প্রশ্নটা আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাথায় ঘুরছে কিন্তু জবাব পাচ্ছি না। নিজেকে অনেক বুঝানোর চেস্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না। এমনকি অনিচ্ছা সত্বেও তোর সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। উত্তরটা জানা আমার খুব দরকার। আমার আসলে উত্তরটা না জানা পর্যন্ত শান্তি হবে না।
আমি: চুপ করে বসে রইলাম। অনুপমা: বলবি না তুই ? আমি: অনেকক্ষণ পরে বললাম হা, ভালোবাসতাম। সবসময় ভালোবেসে যাবো আর আমি চাই তুই আমার না হলেও সবসময় ভালো আর সুখে থাক। অনুপমা: কেন বললি না আগে ? অনুপমার চোখের কনে জল।চোখের জল আমার কাছ থেকে লুকানোর জন্য দ্রুতই বললো তুই কাজটা একদম ঠিক করিস নাই। আমাকে তোর কলেজে থাকতেই বলা উচিত ছিলো। ভালো থাক বলেই দ্রুত বেরিয়ে গেলো। আমি: পিছনে যাওয়ার চেস্টা করলাম কিন্তু ওকে বিব্রত করতে চাইলাম না। খুব খারাপ লাগচতেছিল। এক একা মনে হচ্ছিল নিজেকে, নিজের উপর কেমন যেন একটা পছন্দ রাগ ও ঘৃনা কাজ করতেছিলো। একরাশ কষ্ট বুকে চেপে বাসার পথে রওনা দিলাম। জানি এ কষ্টটা সবসময় থেকে যাবে ঠিক যেমনি অনুপমা আমার মনের মধ্যে আজ থেকে গেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
গোবিন্দ বীন
ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম ।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।