অনন্ত নীলিমা

দিগন্ত (মার্চ ২০১৫)

সাদিক ইসলাম
  • ১১
  • ২৫
১ম অংশ:
কতোদিন ছিলো অপেক্ষার প্রহর , কতোদিন ছিলো দিন গোনা। আশার প্রতীক্ষায় মন বলছিলো এই এলো এই এলো। কিন্তু দিন যায় রাত যায় কাটেনা অপেক্ষার সেই প্রহর। তারপর একদিন যখন মনে হলো এই দিনগোনা শুধু আকাশ কুসুম কল্পনা ; সে হয়ে গেলো কল্পনার প্রেয়সি। সেই হাসি সেই খুশি , আর দিন গোনার সুন্দর ক্ষণগুলো বিবর্ণ হতে থাকলো দিন দিন। মনে হলো সবাই জীবনে সব কিছু পায়না। না পাবার বেদনা ধীরে ধীরে মধুর বেদনা হতে থাকলো অনন্তের কাছে। কল্পনার রাজ্যের রানীকে নিয়ে একটি সীমার প্রেম ছড়িয়ে পড়লো ভাবনার অসীম সাগরে। মনে মনকে সান্ত¦না দিলো না পাবার জনকে যদি কল্পনার ঘোরে তৈরী করা যায় নব নব মাধুর্যে তবে ক্ষতি কি? তবু হারিয়ে এটাও কি পাওয়া নয়? গান কখনো কখনো ধেয়ে এলো বেদনাকে মধুর করে দিতে। মনে বেজে উঠে
‘আমি কেবলি স্বপনও করেছি বপনও বাতাসে
তাই আকাশো কুসুমো করিনু চয়োনো হতাশে’
হতাশার গভীর প্রান্তে বসে কখন যেন চোখ চলে গেলো আকাশে কিংবা দূর দিগন্তের প্রান্তে যেখানে মাটি আর আকাশ একাকার হয়ে গেছে। মনে হলো দিগন্তের ঐ প্রান্ত থেকে সেও যতো দূরে আমার দূরত্বও তো তাই । সেখান থেকে দিগন্তের চোখ তাকেও যেভাবে দেখছে আমাকেও সেভাবেই ; সেখান থেকে তো আমরা দুজনা সমান দূরত্বে। দিগন্তের ঐ সীমানায় দুজনে যেনো এক হয়ে যায়। দিগন্ত এক করে দেয় সব ব্যর্থ দূরত্বকে। মনে মনে ধ্বনিত হয় কবিতা :
‘আমরা দুজন ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয় উৎস হতে’
তাই অনাদিকালের প্রেম বর্তমান থেকে ভেসে বয়ে চলে অসীম দিগন্তের দিকে;যেখানে না পাওয়া প্রেম গুলো বোবা কান্না হয়ে থাকে হয়ে থাকে নির্বাক গল্প হয়ে। ভাবনার রাজ্যে কখন যেনো নিজের অজান্তেই ভাষা পায় লেখায়। কখনো ছন্দে কখনো গল্প বা কবিতায়। দু:খগুলো কথা হয়ে ধরা পড়ে কাব্যে আর গানে। প্রেম হয়ে যায় একের পর এক লেখায়। বন্ধুরা জানতে পেরে কেউ সান্তœনা কেউ সমবেদনা আবার কেউবা ছেড়ে যায় আকাশ কুসুম কল্পনার মানুষকে। নাম হয় ছন্নছাড়া,অমনোযোগী হিসেবে। মা শুধু বোঝে ;বলে বাবা তোর কি হলো? কাতর হয় সন্তানের এমন অস্বাভাবিক পরিবর্তনে। জানতে চাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টাও চলে। কিন্তু না পাওয়ার ব্যর্থ অনুভূতি কে বা পারে খুলে বলতে। সে তো তার কোনোদিন হবেনা এটা তো চৈত্রের ঝকঝকে দুপুরের মতো পরিস্কার । তাই মা বা কাছের জনেরাও জানতে পারেনা। শুধু মনে বেদনার স্রোতে
বয়ে যায় কবিতা:
‘কে হায় হৃদয় খুলিয়া বেদনা জাগাতে ভালোবাসে’
কিংবা আকাশের দিকে চোখ মেলে মনে বেজে উঠে:
ভালোবাসি ভালোবাসি ---
এই সুরে কাছে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি
আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যাথা বাজে,
দিগন্তে কার কালো আঁখি আঁখির জলে যায় ভাসি।।
২য় অংশ:
নীলিমা আর পূর্ণতা দুই বান্ধবি আর অনন্ত ও তাদের সাথেই এক সঙ্গে পড়ে তাদের বন্ধু। নীলিমা রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। তার মায়ের রয়েছে কঠোর অনুশাসন আর মধ্যবিত্ত বাবার রয়েছে সংগ্রামি চেতনা যেখানে প্রতিনিয়ত জীবন গড়ার তাগিদ। ভালোবাসা, প্রেম , আবেগ তাদের কাছে পরিত্যাজ্য। পরিবর্তনশীল সমাজের খোলামেলা চিত্র তাই নীলিমার মাকে ভাবায়, মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর এই অরক্ষিত পরিবেশে বেড়ে উঠায় শংকিতও করে রাখে সবসময় তাই সে তার মেয়েকে আগলে রাখে। নীলিমাও বেড়ে উঠেছে এমনি পারিবারিক বেড়জোলের মাঝে তাই অনন্তের হৃদয় উৎসারিত গভীর ভালোবাসা নীলিমা এড়িয়ে চলে। পারিবারিক মূল্যবোধ আর বাবা মায়ের বিচলতা নীলিমাকে রাখে সতর্ক। তাই নীলিমার প্রেমে আকন্ঠ নিমজ্জিত অনন্তের আকুলতা স্পর্শ করতে পারেনা নীলিমাকে । সে বুঝেনা কি অপরিসীম প্রেম নিয়ে অনন্ত নীলিমার প্রতীক্ষায় দিন পার করে দেয় একে একে। তার পথ চাওয়ার আনন্দ ধীরে ধীরে বিষাদের যন্ত্রণায় রূপ নেয়; শুধু নীলিমা বুঝেনা সেই কষ্ট।

৩য় অংশ:
ভার্সিটিতে নীলিমা আর পূর্ণতা । পূর্ণতা দেখেছে, বুঝেছে অনন্তের বুকের আগুন কতো তীব্র । তার চোখে মুখে ধরা পড়ে সেই দিগন্তপ্লাবী প্রেম। কিন্তু কি নিদারুণ আর কঠোরভাবে নীলিমা প্রতিনিয়ত প্রত্যাখান করে অনন্তের প্রেম। নীলিমার মাঝে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করেনা অনন্তের আলোড়িত প্রেম। কতোবার ছুটে যাওয়া , কতো দিনের সত্য ,সুন্দর, নির্ভেজাল আকুতি নীলিমা বুঝেনা কিংবা বুঝেও সায় দেয়না একবিন্দু। তার কাছে প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ জীবনের এগিয়ে চলার পথে বাধা মনে হয়। মনে হয় মধ্যবিত্ত জীবনে অপরিণামদর্শী বিলাশিতা। কিংবা এক ফাঁদ যা আষ্টেপিষ্টে বেঁধে ফেলে মায়াজাল আর গোপন হৃদয়ের মিথ্যা ছলনা দিয়ে। তাই সে গুটিয়ে থাকে নিজেতে। তার জগতে শুধু স্থান আছে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে অর্জিত জীবন যুদ্ধে স্থান করে নেবার প্রত্যয়। পূর্ণতা নীলিমকে বুঝায় ‘দেখ ভালো করে অনন্তের চোখের দিকে চেয়ে ওর অবিরত মনের ছটফটানি দেখ ও আর সাধারণ পাঁচ দশটা ছেলের মতো নয়। ’নীলিমা বলে ‘তাহলে এই যে এতো এতো ছেলে তাহলে তাদের সবকে আমাকে গ্রহণ করে নিতে হবে, তাই না?’ ‘তোর কি আর সবারটা অনন্তের মতো মনে হয়?’ পূর্ণতা বলে। ‘হ্যা সবারি মুখে আর ভাষায় তো ঐ একটাই কথা ভালোবাসি ভালোবাসি তাহলে আমি কি সব কাজ ফেলে এই সব ভালোবাসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বো?’ ‘না আমার কাছে এসব খুব বেশি হ্যংলামি মনে হয়।আর আমি একটি ছাত্রী আমার কাজতো এই ভার্সিটি, ক্লাস, পড়ালেখা বাদ দিয়ে প্রেম নিয়ে মেতে থাকা নয়’ বলে নীলিমা। ‘নারে নীলিমা’ বলে পূর্ণতা ‘তোকে এর জন্যে পড়ালেখা বাদ দিতে হবেনা। দেখ তোর কথা ভেবে ভেবে বেচারা অনন্তের কি হাল হয়েছে। তুই যদি ওকে মেন নিতি তবে তো ওর এই অবস্থা হতো না। এতো ভালো ছাত্র দিনে দিনে কী অবস্থা হয়েছে ওর। দেখ ও যদি সত্যিই তোকে ভালোবাসে তবে ও তোর পড়ালেখার ব্যাপারে আরো যতœশীল হবে।ওর লেখা পড়াও ভালো হবে।আর বোকা মেয়ে একদিন না একদিন তো কোনোনা কোনো ছেলেকে তোর মেনে নিতে হবে গ্রহণ করতে হবে।’ ‘হ্যা’ বলে নীলিমা তা হবে তার একটা বয়স আছে , আর তুই আমার পরিবারের ব্যাপার জানিস। বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে কিংবা এমন কাজ আমি করবো না আর আমার যা সিদ্ধান্ত তা বাবা মা নিবে আমি কেনো?’ পূর্ণতা বলে ‘দেখ সংসারটাতো তোকেই করতে হবে। আর যে ভালোবাসে তাকে পেলেই তো তুই ভালো থাকবি, তাইনা? ‘সব কিছুর একটা সময় আছে পূর্ণতা, অনন্ত স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে ওর চিন্তা আর আমার চিন্তা এক নয়’ পূর্ণতা বলে ‘কিন্তু তোর যে সমস্যা তা যদি অনন্ত শেয়ার করে নেয় তবে কি তোর জন্যে তা ভালোনা? বেচারা তোকে খুব ভালোবাসেরে। দেখেছিস কলেজের কোনা মেয়ের সাথে কোনাদিন ওকে কথা বলতে?। আর কোনোদিন এমন আনমনা আর এলোমেলো দেখতে? সব তোর কথা চিন্তা করে। তোকে তো ও বলে দিয়েছে সারাজীবন ও তোর অপেক্ষায় থাকবে। দেখেছিস তোর চিন্তায় ওর কী অবস্থা হচ্ছে দিনে দিনে। এইবার তুই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নে’। ‘শোন পূর্ণতা ’ নীলিমা বলে ‘তুই তো এমন প্রেম দেখছিস কতো মধুর মধুর কতা বলে ছেলেরা আর বিয়ের সময় আসলেই তাদের কোনো খবর থাকেনা। আমি আমার বাবা মায়ের ইচ্ছা ছাড়া কিছু করতে পারবোনা আর এই প্রেম, ভালোবাসা এইসব আমাকে টানেনা।’ ‘তাই’ পূর্ণতার কন্ঠে বিস্ময়, ’ যদি প্রেম ভালোবাসা না থাকতো তবে কোন প্রেমে তুই তোর বাবা মায়ের বন্ধনে আবদ্ধ আছিস? তাদের কথাতেই তাদের ভালোবেসেই তো তুই এমন অনঢ় হয়ে আছিস।’ নীলিমা কেমন জানি আনমনা হয়ে যায়। মনে মনে কিছু ভাবে। তারপরে পূর্ণতাকে বলে ‘আজ থাক বাসায় যাবো। কাল দেখা হবে।’ বিদায় নিয়ে পূর্ণতা চলে যায়।

৪র্থ অংশ:
ভার্সিটিতে পূর্ণতা অনন্তকে দেখতে পায়। অনন্ত কনক্রিটের পাড় বাঁধানো পুকুরটার ধারে বসে কানে এয়ার ফোনে গান শুনছে। পূর্ণতা নিজেই অনন্তের দিকে এগিয়ে যায়। ‘কেমন আছিস অনন্ত?’ ‘ভালো তুই কেমন ?’ অনন্ত বলে। ‘তোকে ইদানিং এতো আনমনা মনে হয় কেনো বন্ধু।’ পূর্ণতা বলে। ‘না তেমন কিছুনা দেখনা আকাশটা কেমন মেঘলা হয়েছে দিগন্ত জুড়ে মেঘ ছেয়ে গেছে, থমথমে একটা ভাব, মনটা এমনিই কেমন খারাপ হয়ে যায়। ‘কী গান শুনছিস?’ পূর্ণতা বলে। ‘কেনো শুনবি?’ উত্তর দেয় অনন্ত। হ্যা শুনবো। পূর্ণতা একটা এয়ার ফোন টেনে কানে নেয়। অনন্ত বেদনার গান শুনছে।
পূর্ণতা জানতে চায় ‘আচ্ছা তুই আর কতোকাল এমন বেদনার গান শুনবি, বল? মন যদি সবসময় খারাপ থাকে তবে শরীরের কি অবস্থা হবে জানিস?’ । অনন্ত বলে কোথায় বেদনার এই গান হৃদযের গান; দিগন্তপ্লাবী ভালোবাসার গান আর যে গানে বেদনা নেই তার মাঝে সুর নেই , নেই ভালোবাসার গভীরতা। সবাই তা বুঝেনা। পূর্ণতা বলে এই গান তো তোকে আরো বেশি বিষন্ন করে দিবে তোকে ধীরে ধীরে শেষ করে দিবে। তুই আশার গান শোন ,ভালোবাসার গান শোন, পাওয়ার গান শোন। না পাওয়ার গান নয়। ‘জানিস পূর্ণতা’ অনন্ত বলে ‘আনন্দের গান , সুখের গান আমাকে আরো বেশি কাঁদায়। আমার না পাওয়ার সাথে কেমন বিষাদের গান মিলে যায়। আজকাল সবকিছু কেমন খাপছাড়া, এলোমেলো অনুজ্জল মনে হয়। কোথায় যেন কী একটা ছিঁড়ে গিয়েছে;। আমি আর কিছুর সাথে কিছু মেলাতে পরিনা।’ পূর্ণতা অনন্তের কথায় খুব কষ্ট পায়। কি বলবে ভেবে পায়না। তবু বলে ‘শোন অনন্ত মানুষ জীবনে শুধু একটা আশা নিয়ে বাঁচে না। তার জীবনের মূল্য অনেক বেশি, জীবনের প্রসারতা অনেক। কোন পাওয়া দিয়ে জীবন পূর্ণ হবে তা আমরা একেবারে ভেবে ফেলতে পারিনা। জানি নীলিমা তোকে বুঝতে পারেনি; ওর ভাবনা আর তোর ভাবনা এক হয়নি । তুই জানিস ওকে আমি কতোটুকু বুঝিয়েছি কিন্ত ওর পারিবারিক দিকটা ওকে তোর থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। তুই ওর পরিবারের কাছে যাবিনা শুধু ভালোবাসার দাবি বিয়ে বসে থাকবি এটা কি হয়? ’ অনন্ত বলে ‘হ্যা আমি ওর পরিবারের সাথে যে কোনোভাবে যোগাযোগ করতাম কিন্তু ওতো আমাকেই বুঝলোনা। ঝরনার জল তো হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় কিন্তু তা ফেলে টাকা দিয়ে জল কিনে খেলে তৃষ্ণা মেটে মনের পরিপূর্ন তৃপ্তি আসেনা। আমি ওকে জয় করতে চেয়েছিলাম আমার ভালোবাসার মুগ্ধতা দিয়ে। হৃদয়ের টান দিয়ে; পারিবারিক দরকষাকষি দিয়ে নয়।’ অনন্ত আরো আবেগি হয়ে যায়। ‘পূর্ণতা তুই কি আমার চোখে দেখিসনি ওর জন্যে কি লেখা আছে! তুই কি দেখিসনি স্বচ্ছ কুয়ার মতো আমার হৃদয় আয়নায় কার মুখ দেখা যায়? তবে ও কেনো দেখেনা ? পূর্ণতা বলে ‘শোন তুই সব আবেগ দিয়ে বিবেচনা করছিস আর ও তো খুব বাস্তববাদী তাতো তুই জানিস। অনন্ত বলে ‘আমি হতে পারি অনুভূতি চালিত কিস্তু আমার কাছে নীলিমার জন্যে প্রেমই সবচেয়ে বাস্তব। আমি তাকে সাদামাটা একজন করে নয় আমার প্রেমের মন্ত্রে পেতে চাই। যেখানে শর্ত নেই, দেয়াল নেই, ভনীতা নেই, কপটতা নেই সেই প্রেম কেনো সে বুঝবেনা! কেনো মেনে নিবেনা আমার এই সবাঙ্গীন সমর্পণ ? পূর্ণতা কি বলবে ভেবে পায়না তবু বলে ওকে আরেকটু সময় দে ঠিক একদিন দেখবি তোর ভালোবাসার ডাকে ওর জড়তার দেয়াল ভেঙে যাবে। পূর্ণতা চলে যায় ভাড়ি মন নিয়ে। বাইরে বৃষ্টি নামে। অনন্ত একা একা বসে গান শুনে:
গোধুলি গগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা।
আমার যা কথা ছিল হয়ে গেলো সারা।।
হয়ত সে তুমি শোনো নাই সহজে বিদায় দিলে তাই- -
আকাশ মুখর ছিল যে তখন ঝরোঝরো বারিধারা।।
৫ম অংশ:
বেশ কিছুদিন পরের কথা। অনন্ত হয়ত: তখনও নীলিমার পথ চেয়ে দিন গুনতো কিন্তু নীলিমা পড়ালেখা , পারিবািরক দায়িত্ব বোধ আর নিজের ভবিষ্যতের জন্যে তৈরী হচ্ছিল ধীরে ধীরে। ওর মনের এক প্রান্তেও অনন্ত নামের সেই সারাদিন আপন মনে পথ চেয়ে থাকা ছেলেটির কথা একবারো আসেনি। এরি মাঝে ওর মামা ওর জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। ছেলে আমেরিকায় পড়াশুনা শেষে চাকুরি করে। খুব ভালো পরিবারের ভদ্র আর মেধাবী ছেলে। ওর বাবা মা তাই দ্বিতীয় কোনো ভাবনা ছাড়াই এই প্রস্তাব হাত পেতে গ্রহণ করে। ছেলে বিদেশ থেকে দেশে আসে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নীলিমাকে নিয়ে যায় আমেরিকায়। পিছনে পরে থাকে অনন্ত তার অনন্তকালের আরাধনাকে নিয়ে ধ্যান আর বিষাদের গহীন দেশে হয় তার স্থান।

৬ষ্ঠ অংশ:
নীলিমা আমেরিকায় শুরু করে নতুন জীবন। এখন সে একজনের স্ত্রী । ভার্সিটি পড়ালেখা ,পরিবার এর দায়িত্ব আর বাবা মায়ের মেয়ের বন্ধন শেষে বিয়ে করে সে নতুন পরিচয়ে পার করে দেয় অনেক দিন। ভার্সিটি জীবন তার কাছে ধীরে ধীরে ধূসর হতে থাকে। তবু মাঝে মাঝে পূর্ণতার সাথে কথা বল্লে কেমন জানি মন আনচান করে উঠে বুঝতে পারেনা। এখন অনন্তের কথাও কেমন ভাবায় হঠাৎ হঠাৎ। পূর্ণতা সেদিন বল্লো ছেলেটা নাকি কেমন আরো ছন্নছাড়া আনমনা হয়ে যাচ্ছে দিনদিন আর বেশি কিছু বলতে চাইলোনা। একদিন পুরানো বই গোছাতে গিয়ে ও অবাক হয়ে যায় ওর প্রিয় একটা গল্পের বইয়ে সুন্দর করে ভাঁজ করা একটা চিঠি যেনো কোনোদিন পড়া হয়নি। নীলিমা মাঝে মাঝে এই বইটা ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতো। চিঠিটা খুলে নীলিমা অবাক হয়ে যায়। অনন্তের লেখা না পড়া একটা চিঠি। ও পড়তে শুরু করে চিঠিটা।

নীলিমা
কেমন আছো? ভালো বা মন্দ । কেনো জানিনা এই ছোট্ট প্রশ্নটা তোমাকে করতে গিয়ে থেমে যাই । কারণ যদি অনধিকার চর্চা হয়ে যায়। আমি তো জানি তুমি তোমার মতো থাকতে ভালোবাসো। এটা জানি নিজেকে গুাটয়ে রাখা নয় নিজের ভালোলাগার সীমানায় থাকা। এটা ব্যক্তি স্বাধীনতা। কেউ যদি চায় তার একাকী সত্তায় কেউ ভাগ না বসাক তাতে দোষের কিছু নেই। তবে কাউকে কারো ভালো লাগতেই পারে। ভালো লাগা আবার কোনো নিয়ম মানেনা। ভালোলাগা কখনো কখনো অনধিকার চর্চা করে য়েলে। কিন্তু বলতে পারবোনা কবে থেকে তোমাকে প্রথম ভালো লাগে। তোমার মতো আমারও একটা ব্যাপার আছে সবাইকে কাছে টানতে পারিনা। নিজেকেই যেনো ভালোবাসি সবচেয়ে বেশি। হঠাৎ একদিন তুমি তোমার মনোরম উপস্থিতির সবটুকু দিয়ে আমার আমিকে ভুলিয়ে দিলে। সেই আমি কেনো জানিনা তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে একদিন যেনো আমাকেই আবিস্কার করলাম। সে ভালোলাগা নিজেকে নিজে ভালো লাগার চেয়েও বেশি। জানিনা তার নাম কী ! যে গান আমার মনে বাজতো সে গান তোমার মুখে তাকিয়ে শুনতে পেতাম। যে নির্ভরতা , আস্থা, বিশ্বাস আমার সম্বল তা তোমার চোখের দিকে চেয়ে দেখতে পেতাম। দিনের দিগন্তে যেমন রাতের তারারা লুকিয়ে থাকে তেমনি তুমি আমার মনের অতলে অদৃশ্য ভালোলাগায় জেগে থাকো। রাতের আঁধারে যেমন হাসনাহেনা সুগন্ধ ছড়ায় তেমনি তুমি আমার নির্জন ভালোলাগার সুগন্ধ। জীবনে লাখ লাখ টাকা হাত দিয়ে দেয়া নেয়া করেছি কিন্তু তবুও বুঝতে পেরেছি টাকা নয় একজন ভালো মানুষ জীবনের জন্যে অনেক মূল্যবান। তোমার নিষ্পাপ, কোমল আর স্বচ্ছ মন আর অতি পরিচিত হাসি আমার হৃদয় বীণায় মন্ত্রের মতো ছুঁয়ে দেয়। আপনজনও অনেক সময় আপন হতে পারেনা কিন্তু তোমাকে মনে হয় কতোজনমের আপনজন; আত্মার আত্মীয়।এতো দূরের তুমি এতো কাছে কীভাবে এলে তা আমি জানিওনা বুঝাতেও পারবোনা। তুমি ছাড়া আমার প্রতিটি দিন, প্রতি মুহূর্ত মূল্যহীন, সহায়হীন, তোমাকে ছাড়া সীমাহীন দ্বীন আমি। চিঠিটা হাতে দিতে পারতাম কিস্তু ঐযে একটা অদৃশ্য আবরণ তুমি দিয়ে রেখেছ তাই মনে হয় তুমি নিজ হাতে এটা নিতে কুঞ্চিত বোধ করবে; তাই তোমার অগোচরে তোমার জন্যে আমার এই মনের কথা গুলো লিখে দেয়া। আশা রাখি তুমি ভুল বুঝবেনা। আর তোমার অপেক্ষায় আমি থাকবো এক কাল বা এক জীবন নয় অনন্তকাল কারণ কেন জানিনা মনে হয় আমার শেষ আশ্রয় তুমি। যেমন একলা পাখির আশ্রয় সীমাহীন দিগন্ত। ভালো থেকো সমসময়।
অনন্ত

অনন্তের চিঠি পড়ে নিলীমা বিরাট একটা ধাক্কা খেলো। খুব দ্রুত স্মৃতিগুলো তাকে ফিরিয়ে নিতে লাগলো পিছনের দিকে। সেই ভার্সিটি, সেই দিনগুলো। নিলীমা শুধু দিনগুলোকে ভেবেছিলো জীবন নির্মাণের সিঁড়ি হিসেবে কিন্তু জীবনের ভিতর আরেকটা জীবন যে তাকে গভীর আকুতি নিয়ে ডাকছিলো তা বুঝতে চেষ্টা করেনি একবিন্দুও। কিন্তু সেখানে ছিলো ভালোবাসা, নিশ্চয়তা আর নির্ভরতার হাতছানি। একজনের হৃদয় নিংড়ানো গভীর সত্য ভালোবাসা। ওর মনে হলো ও বেশি বড় অবহেলা করেছিলো অনন্তকে বড় একটা ভুল থেকে গেছে ওর সিদ্ধান্তে। সত্যকে মিথ্যা ভেবে এভাবে কাউকে প্রত্যাখান করা তো অনেক বড় অপরাধ। কিন্তু এখনতো আর সময় নেই সেই ফেলে আসা দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার। সেই চিঠিটা কেনো ও সেই সময় পেলোনা। ভাগ্য কী করুণ হয়ে এলা ওর জীবনে। নিজেকে অপরাধী মনে হলো ওর। এই সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ে বসে মনে জানি কেমন একটা হাহাকার উঠলো। একবার অন্তত একবার অনন্তের সাথে ওর দেখা করতে হবে। বলতে হবে ওকে বুঝতে পারেনি ;অনন্ত সত্যিই ওকে খুব ভালোবাসতো; পারিবারিক কড়া শাসন আর নিজের মধ্যে ডুবে থেকে ওকে বড় বেশি অবহেলা করা হয়েছে। ওর এতো অবহেলা একটা ছেলেকে না জানি এখন কী অবস্থায় রেখেছে! ওকে একবার বাংলাদেশে যেতে হবে অনন্তের জন্যে এটা হবে নিলীমার প্রায়শ্চিত্য। নিলীমার হৃদয়ে হঠাৎ কোত্থেকে একরাশ ভালোলাগা এসে বৈশাখি বাতাসের মতো মনটাকে অনন্তের জন্যে বয়ে নিয়ে গেলো অতীতের ফেলে আসা দিনে প্রগাঢ় টানে।

৭ম অংশ:
গতকাল নিলীমা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে; পৌঁছেই কল দিলো পূর্ণিমাকে কিন্তু ওর মোবাইলটা অফ পাচ্ছে। কি মনে হলো খুব তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়লো বাইরে। আজ অনেকদিন পড়ে মনে হলো ও যেন ভুল শুধরাতে চায় ও জানে ও আর কোনোদিন অনন্তের কাছে ফিরে যেতে পারবেনা কিন্তু একবার দেখা হলে বলতে পারবে ওর অবুঝ মনের সেই অপূরণীয় ক্ষণগুলোর ভুলের ব্যাপারে। সামনে এগোতেই মিশন মোড় পাড় করে গোল চক্কর পাড় হয়ে একটা জটলা দেখতে পায় ; অনেক লোক জটলা করে হাসি তামাশা করছে আর কেউ একজন উঁচু গলায় বক্তৃতা দিচ্ছে। কিসের টানে যেনো নিলীমা এগিয়ে যায়। উৎসুক জনতা আরো বেশি উল্লাসে মেতে উঠে। পাশে এক ছেলেকে বলে নিলীমা কী হয়েছে , ছেলেটা হাসতে হাসতে উত্তর দেয় পাগল ক্ষেপছে নেতার বক্তৃতা দেয়। আর একটু ভিতরে ঢুকে এবার স্পষ্ট দেখতে পায় নিলীমা; নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারেনা।এ কি হাল হয়েছে অনন্তের! পাগলের মতো বকছে কেনো? কী বলছে এসব ও! ওকে তো সেই অনন্ত মনে হচ্ছে না একি সেই অনন্ত যে চমৎকার কবিতা লিখতো , ভার্সিটিতে সবার আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু ছিলো। ও এগিয়ে যায় । ডাক দেয় ‘অনন্ত কেমন আছো ?’ অনন্ত নীরব হয়ে যায় ওর দিকে তাকায় কেমন ভাবলেসহীন করুণ দৃষ্টি কী যেন বলতে চায় পারেনা। হেসে উঠে খুব জোরে। আবোল তাবোল অর্থহীন কি যেন বলে। নিলীমা সহ্য করতে পারেনা পিছিয়ে আসে। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। অনেক দিনের চাপা কান্না বেরিয়ে আসতে চায় যেমনভাবে মাটির নিচ থেকে ছিটকে বেরোয় জলের ধারা। কিন্তু অনেক কষ্টে নিলীমা নিজেকে সামলে নিতে পারে। পেছনে সেই অনন্তকে ফেলে আসে যে অনিন্দ্য সুন্দর ভাষায় হৃদয়ের কথা লিখেতে পারতো আজ সেই ভাষা বদলে পাগলের প্রলাপ হয়েছে। জীবন কেনো এমন! নিজে নিলীমা আরো বেশি বিবেকের দংশনে দংশিত হতে থাকে। না সে আর এখানে এক মুহূর্ত থাকতে পারবেনা। ও জানে ও নিজেই এর জন্যে দায়ী। ও কয়েকদিন পর দেশ থেকে ফিরে আসে আমেরিকায় কাউকে কিছু বলেনা শুধু পূর্ণতার সঙ্গে দেখা করে জানতে পারে নিলীমা বিয়ে করে বিদেশে চলে যাওয়া কী ভীষণ একা হয়ে যায় অনন্ত আর মেনে নিতে পারেনা ওর বিচ্ছেদ বেদনা। তারি পরিণতিতে ধীরে ধীরে অনন্তের এই করুণ পরিণতি। ও এখন সব মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগল। ওর বাবা অনেক চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল পায়নি। তীব্র ভালোবাসা কামিছেলেটা এখন ভালোবাসা, মায়া মমতা দেবার নেবার সব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। নিলীমা আর শুনতে পারেনা পূর্ণতার কথা।

৮ম অংশ:
আমেরিকায় ফিরে গিয়েও নিলীমা বড় বেশি পড়ে থাকে বাংলাদেশে, তার ভার্সিটি জীবনে , তার মন পড়ে থাকে বিফল জীবনের যোগ বিয়োগে। পড়ে থাকে তার মন অনন্তের কাছে। এক সময় কাছে থেকে যাকে দূরে ঠেলে রেখেছিলো আজ এতো দূরে গিয়েও তার কাছে পড়ে থাকে তার সমস্ত সত্তা সবসময়। বুঝতে পারেনা আজ এতো দূরে থেকেও কেনো হারিয়ে যাওয়া সময়কে এতো বেশি পেতে চায় ফিরে। আগে যেই গান শ্রবণে এসে হারিয়ে যেতো আজ সেই গান কান থেকে এসে মনে বিঁধে যাচ্ছে। পাখির গান , পাতার ঝিরিঝিরি, ঝরনার কল্লোল সব কিছুতেই কী ঘনো বিষাদের ধ্বনি! ছোট্ট জীবনটাকে দিগন্তের মতো বিরাট, তীব্র না পাওয়ার গ্লানি গ্রাস করে। হতাশার গভীর প্রান্তে বসে কখন যেন চোখ চলে যায় আকাশে কিংবা পূর্ব দিগন্তেÍ যেখানে কোনো একখানে অনন্ত এখনো ওর প্রতীক্ষায় আছে। নিলীমার পুরো জীবন সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে সেখানে ফিরে যেতে চাইলেও আর তার উপায় নেই। তবু সেই দিগন্তেই খুঁজে ফেরা অনন্তকে খুঁজে পাওয়া অনন্তকে। না পাবার বেদনা এতো মধুর হয় কীভাবে! না পেয়েও প্রিয় ভাবনায় আর সুতীব্র আকাংখায় সেই হারিয়ে ফেলা অনন্ত নিলীমার হয়ে রয়ে যায়। একাকী , নিরুপায় , করুণ আর হতাশ মন আশ্রয় নেয় অনন্তের প্রিয় কোনো গানে:
দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি
তাই চমকিত মন, চকিত শ্রবণ, তৃষিত আকুল আঁখি।
চঞ্চল হয়ে ঘুরিয়ে বেড়াই , সদা মনে হয় যদি দেখা পাই
এত ভালোবাসি এত যারে চাই , মনে হয়নাতো সে যে কাছে নাই।
যেন এ বাসনা ব্যাকুল আবেগে তাহারে আনিবে ডাকি।
দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সাদিক ইসলাম শেখ শরফুদ্দীন মীম dhonnobad kintu apnar profile a probesh korte parlamna .....
শেখ শরফুদ্দীন মীম অনেক ভালো লিখেছেন । শুভেচ্ছা ও ভোট রইল। সময় করে আমার কবিতাটি(আলোর সন্ধানে) পড়বেন।
রবিউল ই রুবেন খুব ভালো লাগলো. ভোট দিলাম,
সাদিক ইসলাম মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ vai onek onek dhonnobad
সাদিক ইসলাম সৃজন শারফিনুল ভাই অনেক অনেক ধন্যবাদ
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ এমন গল্পে যে কেউেই স্মৃতি কাতর হয়ে পড়তে পারে ! সুন্দর লিখেছেন ।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
সৃজন শারফিনুল অনেক ভাল লাগলো ... গুছানো কথামালা সেই সাথে গভীর ভাব । ভোট রইলো ।।
সাদিক ইসলাম রুহুল আমীন রাজু রুহুল আমীন রাজু ধন্যবাদ অবস্যই পর্ব আপনার লেখা
রুহুল আমীন রাজু ভালো লিখেছেন ....শুভ কামনা রইলো .(আমার লেখা 'কালো চাদ ' গল্পটি পড়ার আমন্ত্রণ রইলো )

০৮ ফেব্রুয়ারী - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪