অসমাপ্ত ক্ষুধা

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

ইউসুফ খান
  • ৪৩
  • 0
  • ২৫
‘জামাল’। একটা কাজের ছেলে। ঢাকা- শহরের অন্যতম এক ধনীর বাসায় সে কাজ করে। অনেক দূরের আত্মীয়তার সূত্র ধরে তার এখানে আসা। সে যেই বাসায় কাজ করে সেখানে তাকে বাদ দিয়ে আরও দুজন মানুষ থাকে। তাদের কথায় পরে আসছি।
জামাল খুবই ভদ্র- নম্র স্বভাবের একটা ছেলে। চুরি- ছ্যাঁচড়ামির অভ্যাস নেই। কখনো বাজার থেকে ২ টাকা ফেরত এলেও জামাল সেটা মালিকের কাছে দিয়ে দেয়। জামালের বয়স খুব বেশি না। ২০/২২ হবে। বাবা, মা কেউ নেই। দুইটা বোন আছে, তারাও মানুষের বাসায় কাজ করে। জামালের কাজ হলো বাসার দেখা-শুনা করা, আর মাঝে- মধ্যে বাজার করা। অনেকটা কেয়ার-টেকার টাইপ। বাসার অন্য দুইজনের কেউ ই সারাদিন বাসায় থাকে না। সকালে বের হয়, রাতে ফেরে। তারা স্বামী- স্ত্রী। জামালের মালিক লোকটা প্রচুর ধনী। মাঝে মাঝেই সে ব্যাবসার কাজে দেশের বাইরে যায়। সাথে স্ত্রীকেও নিয়ে যায়। তখন পুরো বাসায় জামালকে একা থাকতে হয়। এই জিনিষটা ওর একদম ভালো লাগে না। দম বন্ধ হয়ে আসে তালা-বদ্ধ ঘরে। ওর মালিকের একটা খারাপ অভ্যাস ছিলো। সেটা হলো, প্রতিদিন রাতে বাইরে থেকে মদ খেয়ে এসে জামালকে ইচ্ছামত পেটাতো। স্ত্রীকে সে বাঘের মতো ভয় পায়, তাই স্ত্রীকে না পিটিয়ে সে বাসার কাজের ছেলেকে পেটায়। পেটানোর সঠিক কারন জামাল তার স্বল্প জ্ঞান দিয়ে খুজে পায় না। অনেক দিন ধরেই এরকম চলছে। জামালও মার খেতে খেতে অভ্যাস্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য প্রথম দিকে ও ব্যাপারটা একদমই সহ্য করতে পারতো না। শেষে একদিন কাজ ছেড়ে দিয়ে বের হয়ে গেলো। কিন্তু ঢাকায় ওর পরিচিত কেউ নেই। কার কাছে যাবে? দুইদিন না খেয়ে থাকতে হলো তাকে। অবশেষে পেটের দায়ে ফিরে আসতে হলো কাজে। কেউ একজন ওকে বলেছিলো, ‘পেটে খেলে পিঠেও সইতে পারবি’। কথাটা ওর ভালো লেগে যায়। সেই থেকে ও সয়ে আসছে এই অমানুষিক অত্যাচার। মেনে নিয়েছে কঠিন বাস্তবতা। জামালের কাছে মনে হয়, পৃথিবীতে পেটের ক্ষুধার চেয়ে বড় আর কিছুই নেই।
জামালের মালিক ‘আনিস সাহেব’। দেশের অন্যতম একজন শিল্পপতি। গুলশানের এক আলিশান ফ্ল্যাটে সে তার স্ত্রীকে নিয়ে থাকে। কোন সন্তান- সন্ততি নেই। কখনো হবেও না। ডাক্তার তা ই মনে করেন। যা হোক, তার সম্পত্তি প্রচুর। বেশিরভাগ সে একাই ভোগ করতে চায়। নিজের স্ত্রীকেও ভোগ করতে দেয় না। দিন দিন তার সম্পত্তির পরিমান বেড়েই চলেছে। কমার কোন নাম নেই। ব্যাবসার এমন কোন ক্ষেত্র বাকি নেই যেখানে সে টাকা খাটায়নি। প্রতিমাসে তার যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে অন্তত ২০/২৫টা পরিবার খুব ভালো ভাবে চলতে পারবে। তার এই আয়ের মূল উৎস হলো ‘চোরাকারবারি’ আর ‘স্মাগলিং। ব্যাপারটা আর কেউ না জানলেও জামাল খুব ভালো করেই জানে। ব্যাবসার আড়ালে লুকিয়ে এই কাজগুলো করে থাকেন জামাল সাহেব। কাউকে ভুল করেও সে কোনদিন একটা টাকা দান করে না। নিজের স্বার্থ ছাড়া সে কখনোই কাউকে সাহায্য করে না। নিজের স্ত্রীকেও না। প্রতিদিন রাতে মদ খেয়ে বাসায় আসে আর কাজের ছেলেকে ইচ্ছামত মার-ধর করে। থামানোর কেউ নেই। স্ত্রী বুঝতে পারে, সন্তান না হওয়ার কারনেই তার এই মানসিক বিপর্যয়। তাই সে ও তখন বাধা দেয় না তাকে। কাজের লোকেরা তো মানুষের জাতের মধ্যে পড়েনা। মরে গেলেই কি আসে যায়! যখন সে মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন নিজেই থেমে যায়। একবার গাড়ী নষ্ট থাকায় আনিস সাহেবকে সি.এন.জি দিয়ে এক জায়গায় যেতে হয়েছিলো। সেখানে গিয়ে সি.এন.জি চালক ভাড়া ১০ টাকা বেশি চাওয়ায়ে তার সাথে আনিস সাহেব মারামারি শুরু করে দেন। বিচ্ছিরি অবস্থা! পরে মানুষজন এসে তাদেরকে থামায়। অনেকে চিনতে পারে আনিস সাহেবকে, আর এটা ভেবে অবাকও হয় যে উনার মতো মানুষের ১০ টাকা বেশি দিলে কি আসে যায়! কিন্তু কেউ কিছু বলে না বা বলার সাহস পায় না। তার অবস্থাটা এমন হয়েছে যে, যতো পায়-আরও চায়। নিজের সম্পদে সে সন্তুষ্ট না। সারাদিন সে চিন্তা করতে থাকে যে, কিভাবে এটা বাড়ানো যায়। তার দিকে তাকালে রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত কবিতার লাইনগুলো মনে পরে- “এ জগতে হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি-ভুরি; রাজার হস্ত, করে সমস্ত, কাঙালের ধন চুরি”। জামাল তার স্বল্প জ্ঞানে বুঝতে পারে, এটাও এক ধরনের ক্ষুধা। যে ক্ষুধা সহজে মেটে না। কেবল বাড়তেই থাকে। এর নাম ‘অর্থ-ক্ষুধা’।
আনিস সাহেবের স্ত্রী, ‘মিসেস আনিস’। সঙ্গত কারনে তার নামটা বলা হলো না। যাই হোক, তার কথা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। তবু বলতে হবে, না হলে ভদ্র, এবং অভিজাত সমাজের কিছু কর্মকাণ্ড মানুষের চোখের আড়ালেই রয়ে যাবে। মিসেস আনিসকে সরাসরি একজন ‘পতিতা’ বলবো। ঘরে স্বামী থাকা সত্ত্বেও তাকে এইরুপ সম্বোধন করতে বাধ্য হয়েছি। তবে, সমাজের উঁচু স্তরের মানুষ বলে তার এই ব্যাপারটা চাপা পড়ে রয়েছে। পড়ে থাকবে হয়তো এভাবেই।
আনিস সাহেবের কাছে তার সবকিছু হচ্ছে তার ‘সম্পদ’। সে এটাকে বাড়ানোর চিন্তায় সারাদিন ব্যাস্ত থাকে। স্ত্রী কি করলো না করলো তাতে তার কিছুই আসে যায় না। আর তার স্ত্রীও এই সুযোগটাই কাজে লাগান। সকালে দুজন একসাথেই বের হন। আনিস সাহেব চলে যান অফিসে আর তার স্ত্রী চলে যান ‘সোশ্যাল-এ্যাক্টিভিটি’ নামক কোনো এক ক্লাবে। যেই ক্লাবের মালিক মিসেস আনিস নিজেই। যাই হোক, মাঝে মধ্যেই বের হবার ১০ মিনিটের মাথায় বাসায় ফিরে আসেন মিসেস আনিস। আর প্রত্যেকবারই তার সাথে থাকে নতুন কোনো ভদ্রলোক। জামালকে তখন পাঠিয়ে দেয়া হয় বাজারে। বের হবার সময় পুরো ব্যাপারটা ধরতে জামালের বেশি বেগ পেতে হয় না। বাজারের ভিড়ে দাড়িয়ে জামাল নিজেকে প্রশ্ন করে- এগুলোর মানে কি? উনার তো কোন কিছুর অভাব নেই। না টাকার অভাব, না খাবারের অভাব, না কাপড়ের অভাব। তারপরও এমন কেনো? সমাজের সাধারন পতিতারা যেখানে নিজেদের পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য অভাবের তাড়নায় এই কাজে লিপ্ত, সেখানে মিসেস আনিসের মতো মহিলারা কোনো কিছুর অভাব না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র নিজেদের ফুর্তির জন্য এ ধরনের কাজে লিপ্ত। জামালের মাথায় আরও একটা প্রশ্ন প্রায়ই উঁকি দেয়- একই কাজ মিসেস আনিসও করছে, আবার রাস্তার একটা খারাপ মেয়েও করছে। রাস্তার মেয়েটাকে এই কাজের জন্য আলাদা একটা নামকরন করা হয়েছে অথচ মিসেস আনিসকে তা করা হয়নি। কেনো??? জামাল কোনো উত্তর খুজে পায় না। পাবে বলে মনেও হয় না। তাই সে হাল ছেড়ে দেয়। তবে এটুকু বুঝতে পারে যে, এটাও এক ধরনের ক্ষুধা। স্বামীর মতো অর্থের ক্ষুধা না থাকলেও মিসেস আনিসের ক্ষুধা কোন পর্যায়ের তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারে জামাল, তার স্বল্প জ্ঞানে। ভদ্র সমাজে এর নাম ‘যৌন-ক্ষুধা’।
একসময় জামালের মনে হতো, পৃথিবীতে পেটের ক্ষুধার চেয়ে বড় কোনো ক্ষুধা নেই। থাকতেও পারে না। অথচ দিন দিন তার ধারনার পরিবর্তন হচ্ছে। কারন পেটের ক্ষুধার কথা সে চিন্তা করেছিলো নিজের দিকে তাকিয়ে। বাসার অন্য দুইজনের দিকে তাকিয়ে সে এখন বুঝতে পারছে যে আরও অনেক ধরনের ক্ষুধাই পৃথিবীতে রয়েছে। একই পরিবারের তিনটি মানুষ। অথচ তিনজনের ক্ষুধা তিনরকম। জামালের ক্ষুধা আর তাদের ক্ষুধার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। জামাল বুঝতে পারে ধনী- গরীবের পার্থক্যটা হয়তো এই ক্ষুধার কারনেই তৈরি হয়েছে। কি আজব এই দুনিয়া! ধনী- গরীবের ক্ষুধার মাঝেও রয়েছে পার্থক্য আর ক্ষুধার কারনে সৃষ্ট এই পার্থক্য এভাবেই হয়তো চলতে থাকবে, আজীবন। আরও একটা প্রশ্নের উত্তর জামাল ইদানীং খুজে বেড়ায়। তা হলো, আনিস সাহেব বা তার স্ত্রী যদি জামালের মতো পেটের দায়ে আঁটকা পড়তো তখনও কি তাদের মধ্যে এরকম ক্ষুধা থাকতো কিনা?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ইউসুফ খান গল্পটা ২ ঘন্টার মধ্যে লিখা হয়েছে তাই কিছু ভুল ত্রুটি রয়ে গেছে. সবাই আশা করি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন.
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ইরতিয়ায দস্তগীর শুরুর দিকের বর্ণনা আমার কাছে ক্লান্তিকর মনে হয়েছে। নয়তো গল্প ভালো হয়েছে। আরো লিখুন।
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ইউসুফ খান অনেক ধন্যবাদ রানা ভাই।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ইউসুফ খান অনেক ধন্যবাদ জুয়েল ভাই।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মিজানুর রহমান রানা বাসার অন্য দুইজনের দিকে তাকিয়ে সে এখন বুঝতে পারছে যে আরও অনেক ধরনের ক্ষুধাই পৃথিবীতে রয়েছে। একই পরিবারের তিনটি মানুষ। অথচ তিনজনের ক্ষুধা তিনরকম।---------চমৎকার লিখেছেন। শুভ কামনা।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
এফ, আই , জুয়েল # ভাব গভীর । চিন্তাও বেশ । ভাষার আয়েসী চালে বাক্যের বিন্যাস ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছে মোহনার দিকে ।।
ভালো লাগেনি ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ইউসুফ খান অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রজাপতি মন.
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১
চৌধুরী ফাহাদ আমাদের সমাজের এই মুখোশধারী মানষগুলোর মুখোশ মাঝে মাঝে টেনে খুলে ফেলতে ইচ্ছে করে। জামালের মত অসহায় ছেলেরা শুধু দেখেই যায় তাদের কিন্ত কিছু করতে পারেনা। মিসেস আনিসের মত মহিলারা ভুরি ভুরি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঘরে ঘরে কিন্তু তাদের স্বামীর টাকার জোরের কাছে কেউই মুখ খুলতে সাহস পায়না। আর আনিস সাহেবের মত মানুষেরা তো সমাজের কীট যত পায় তত চায়, তাদের কি আর চাহিদার শেষ আছে? অনেক ভালো লাগল লেখার থিমটা।
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১
প্রজাপতি মন অদ্ভুত গল্প, আসলেই একেকজনের কাছে ক্ষুধার রকমফের একেক রকম, আপনার গল্প পরে একটা গানের কলি মনে পড়ে গেল__ বড়লোকের সবই wright হয় গরীব করলে wrong. আর এইজন্যই আনিস সাহেব আর মিসেস আনিস যত অন্যায় অপকর্মই করুক না কেন তা ঢাকা পড়ে যায় টাকার আড়ালে, হায়রে দুনিয়া!
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ইউসুফ খান অনেক ধন্যবাদ সেলিনা ইসলাম আপনার সুন্দর এবং মূল্যবান মন্তব্যের জন্য...ইনশাল্লাহ, চেষ্টা করব এবং হা,আরো পাবেন..
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১

০৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪