মোবাইলে ৪টা মিসকল। আমার মোবাইলে সাধারনত কল বা মিসকল কোনটাই আসে না। আমার নাম্বার পরিচিতজন ছাড়া অন্য কেউ জানে না। তাই মিসকল আসলেই কল ব্যাক করি, হয়ত গুরুত্বপূর্ণ কোন কথা আছে। কিন্তু এই নাম্বারে কল ব্যাক করা হয়নি যদিও নাম্বারটা আমার চেনা। একটু খুলেই বলি, এটা একটা মেয়ের নাম্বার। যার নাম আমার জানা নাই। ওর সাথে আমার পরিচয় একটু অন্যভাবে। গ্রামে যাচ্ছিলাম ঈদ উপলক্ষ্যে। বাসের ড্রাইভারের পিছনে একদম সামনের সিটে বসেছি। এক্সট্রা যাত্রী উঠেছে আরো দশ-বারো জন। কেউ বসেছে ইঞ্জিন-কাভারে, কেউ বসেছে টুলে। তো আমাদের পায়ের কাছেই টুলে একজন মেয়ে বসল। প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছিল, যাব একটু আরাম করে তার উপায় নাই; পা মেলার জায়গা নাই। যাই হোক, কিছুক্ষন বই-টই পড়লাম, বাইরের দৃশ্য দেখলাম, সময় কেটে যাচ্ছিল ভালোই। পা বাথ্যা করছিল, মেলতেও পাড়ছি না; পায়ের জুতা খুলে আরাম করে বসলাম। এর মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম। বাস যখন ঘাটের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে তখন ঘুম ভাঙল কিন্তু চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলাম। হঠাৎ মনে হল আমার পায়ে মেয়েটির পা লাগল । আমি পা একটু সরিয়ে নিলাম। বেশ কিছুক্ষণ গেল, আবার আমার পায়ে মেয়েটির পা লাগল। আমি একটু কেপে উঠলাম। মেয়েটি কি ইচ্ছা করে পায়ে পা লাগাচ্ছে। আমি আবার পা সরিয়ে নিলাম। কিন্তু ততক্ষণে আমার মনে নানারকম প্রশ্ন, নানা চিন্তাভাবনা উঁকি দেয়া শুরু করেছে। মেয়েটি হয়ত চুলকানোর অজুহাতে পেটের কিছু অংশ অনাবৃত করে রাখছে এবং বারবার পেটের কাছে হাত নিচ্ছে। আমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে কি? জীবনে কোনো মেয়ের স্পর্শ আমি পাইনি কিংবা কোনো মেয়েকে স্পর্শও করিনি। আমার ভিতরে হরমোন নিঃসরণ বেড়ে গেল। আমি ঘামতে শুরু করলাম। আবার আমার পায়ে মেয়েটির পায়ের স্পর্শ পেলাম। এবার আর পা সরালাম না। মেয়েটি ওর পা দিয়ে আমার পায়ে হালকা ভাবে ঘষল আর আমার দিকে তাকাল। ওর চোখের দিকে তাকাতেই একটা মৃদু হাসি দিল। জীবনে কখনো এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন আমি হইনি। কি করব কিছু বুঝছি না। মেয়েটিকে কি মানা করব? কিন্তু কিভাবে? চারপাশেই মানুষ। আবার ভালোও লাগছে; পড়ে গেলাম দ্বিধার মধ্যে। আমার কি উচিত হচ্ছে এরকম কিছু করা, যা আমি কখনো কল্পণাও করিনি।কিন্তু আমি কেমন যেন ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলাম। আমিও মেয়েটির সাথে তাল মেলালাম। মেয়েটির পা হালকাভাবে ঘষতে লাগলাম। সবার দৃষ্টির আড়ালে যদিও আমরা খুব কমই সুযোগ পাচ্ছিলাম, তবুও যেটুকু পাচ্ছিলাম তার সবটাই উসুল করে নিতে খুব বেশি উদগ্রীব ছিল ও। মেয়েটি বোধ হয় কামুকতায় বেশ আগ্রাসী স্বভাবের, কেননা ও আমার পায়ে বেশ জোরে চাপ দিচ্ছিল এবং চিমটিও কাটছিল মাঝে মাঝে; যেখানে আমি কিনা কোমল স্পর্শে বিশ্বাসী। লম্বা-ভ্রমণে বেশিরভাগ মানুষই ঘুমিয়ে সময় কাটিয়ে দেয়। আমার আশেপাশের সবাইও ঘুমিয়ে গেছে। শুধু আমরা দুটি প্রাণি জেগে আছি। মেয়েটি আরেকটু সরে আসল যার ফলে আমার হাটুতে ওর নিতম্বের পরশ লাগল। আমিও একটু একটু করে হাটু ঘষছি। দুজন মানব-মানবী পৃথিবীর কাম সাগরের সামান্য সুধা পান করছিল যারা কিনা একে অপরকে চিনে না, এমনকি নামও জানা হয়নি। মেয়েটি ওর মোবাইল স্ক্রিনে ওর নাম্বার দেখাল। আমি নাম্বার নিয়ে কল করলাম। কিছুক্ষণ পরেই ও নেমে গেল। ঘণ্টা খানেক পরে আমিও বাড়ি পৌছে গেলাম আর ভুলে গেলাম মেয়েটির কথা।
বাড়িতে বেশ আনন্দে সময় কাটছিল। ঈদের পরদিন গেলাম মামা বাড়িতে। সেখানেও অনেক মজা হয়েছে। আমার দুইজন মামাত বোন; একজন সমবয়সী আর একজন কয়েক বছরের ছোট। ছোট জনের নাম আমি রেখেছিলাম। আমার নাম সাগর, তাই সাগরের সাথে মিলিয়ে ওর নাম রেখেছিলাম নদী। তখন আমার বয়স কতই বা হবে, চার কিংবা পাঁচ। ছোটবেলায় সবাই আমাকে আর নদীকে নিয়ে মজা করত, আমরা নাকি জামাই-বউ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সেই সব আজ অতীত। আমারও এইসব কিছুই মনে নেই। গ্রামে আসলাম দশ বছর পর। নদীর বয়স এখন কত হবে; পনের হয়ত। রাতে জ্যোছনার আলোয় বসে গল্প করছিলাম আমরা। হঠাৎ করে কে সেই পুরোনো দিনের কথা তুলল। যদিও খুব কম সময়ের জন্য তবুও আমার মনে হল আমার হৃদয়ে বুঝি একটা তীব্র অনুভূতির ঝাপটা লাগল। আমি ক্ষণিকের জন্য নদীর দিকে তাকালাম। ওর সাথে আমার চোখাচোখি হতেই দুজনেই চোখ নামিয়ে ফেললাম। নদীর সমবয়সী আর অন্য ঠাট্টার সম্পর্কের মেয়েরা মাঝে মাঝে আমাদের নিয়ে দুষ্টুমি করছিল। আমি সেদিকে কর্ণপাত করলাম না। কিন্তু আমার মনে কিছু বিষয় ঘুরছিল। নদী কি ছোটবেলার সেই বিষয় গুলো নিয়ে ভাবে কিংবা ওর বয়ঃসন্ধি কালের তীব্র আবেগের সময়টুকু কি আমাকে কল্পণা করে কেটেছে? এবং কাটছে? ওর চেহারার মাঝে লজ্জা এবং আনন্দের উপস্থিতি স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে। আমার মনে যেন ঝড় শুরু হল। বারবার নদীর লজ্জাবনত মুখটির কথা মনে পড়ছে। যেই আমি বলেছিলাম মামা বাড়ি একরাত থাকব, সেই আমিই আবার বললাম একদিনে কি বেড়ানো হয়? আরেকদিন থাকতে হবে। সারাদিন নানা কাজ, তার মাঝে খাওয়া-দাওয়া, কথবার্তা, খেলা নানাকিছুর মধ্য দিয়ে দুজনে যেন আরো কাছাকাছি আসলাম। সন্ধ্যায় ভরা জ্যোছনায় একা বসে আছি উঠানে। ওদের মেয়েদের দল কাজে ব্যস্ত। আমার পক্ষে তো আর যাওয়া সম্ভব না। আমার মনে হচ্ছিল এমন সময় যদি ও এসে আমার পাশে বসত তবে একটা রাত অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া যায়। হাতে হাত রাখার দরকার নেই, দরকার নাই চোখে চোখ রেখে কথা বলার, শুধু পাশে বসে থাকলেই হবে আর কিছু চাই না। শুধু ওর উপস্থিতিই সবকিছু সুন্দর করে তুলতে পারে। এমন মনে হবার কারণটা কী? আমি কি তাকে বাসি ভালো? যাই হোক রাত পেরিয়ে ভোর আসল, এখন বিদায়ের পালা। সবকিছু ঘুছিয়ে নিচ্ছিলাম আর টুকটাক কথা হচ্ছিল নদীর দিকে। একেকজন আসছে আর যাচ্ছে। এমন সময় ঘরে শুধু আমরা দুইজন। কবে আবার বাড়ি আসব, কেমন কাটল এই কয়দিন এসব কথা হচ্ছিল। অনর্থক কথা ফুরালো। ক্ষণিকের জন্য আমাদের চোখাচোখি হতেই আমার কাছে মনে হল ওর চোখের মাঝে হাজার কথা লুকিয়ে আছে আমাকে বলার জন্য, আমি স্পষ্ট ওর চোখে ভালোবাসা দেখতে পেলাম। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। সত্যি আমার ভীষন ভয় করতে লাগল। আমি সেই মুহূর্তেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।
চলে আসলাম ঢাকায়। নদীর চোখের ভাষা আমার পড়া হয়নি কিংবা শোনা হয়নি ওর না বলা কথাগুলো। কিসের ভয়ে আমি এমন করলাম; লোকলজ্জার ভয়? আমাদের সম্পর্কের জন্য সবাই আমাকে দায়ী করবে এই ভয়? নাকি আমি এখনো প্রুস্তুত না। কিন্তু আমার দিনগুলো কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল। ঢাকায় এসে আর ঠিকমত ঘুমাতে পারছি না। পড়ালেখাতেও সুস্থিত হতে পারছি না। সত্যি আমি নদীকে অনুভব করছিলাম প্রতি মুহূর্তে।
বাসের সেই নাম না জানা মেয়েটি যে আমার ভ্রমণটাকে আনন্দময় করে তুলেছিল, সেই মেয়েটিকে একবারের জন্যও আমার মনে পড়েনি। চার চারটি মিসকল দেয়ার পরেও আমি কলব্যাক করিনি। বরং আমার কাছে সেটা যেন এক কলঙ্কময় অধ্যায়। আমার মনের মাঝে শুধু তার অস্তিত্ব যার হাত আমি স্পর্শ করিনি, পাই নি নিঃশ্বাসের শব্দ কিংবা ওর শরীরের ট্যালকম পাউডারের গন্ধ। নরম আগ্রাসী পায়ের কথা আমার মনে পড়েনি, আমার মনে পড়ছে শুধু নদীর লজ্জাবনত শুভ্র মুখখানির কথা। নরম উষ্ণ নিতম্বের পরশ পাবার জন্য আমার মন এখন আকুল নয়, আমার মন আকুল হয়ে আছে ওই দুটি চোখের জন্য যে চোখে লুকিয়ে আছে হাজার না বলা কথা। আমার ভাবনা জুড়ে এই একজনেরই বিচরণ। আমি যাকে নিয়ে দিন-রাত ভাবছি সে কি আমাকে নিয়ে ভাবছে না। নাকি আমার জন্য তার ভালোবাসা এতোটা তীব্র হয়নি যতোটা তীব্র হলে সকল লজ্জার উর্ধ্বে গিয়ে অন্তত একটা মিসকল দেয়া যায়। অথবা তার জন্য আমার ভালোবাসা ততটুকু তীব্র হয়নি যতটুকু হলে সব লজ্জা ভুলে গিয়ে কল করা যায় আর জিগ্যেস করা যায়, তুমি কেমন আছ? আমিতো ভাল নেই।
৩০ জানুয়ারী - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী