মালিক

দিগন্ত (মার্চ ২০১৫)

নাঈম
  • ১৬
পিকুদের বাসার কাজের ছেলে সাত বছর বয়েসের জিকু , সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকাই ওর স্বভাব। পিকু যখন সেই জিকুকে দেখল চিলেকোঠাতে যাওয়া সিঁড়িটার ভাঙা জানালার পাশে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে বাইের তাকিয়ে আছে একটু অবাক হয়েই ওর কাঁধে আলতো ঝাঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করেলা , কিরে জিকু, কি দেখিস? ঘটনার আকস্মিকতায় হকচিকেয় যায় জিকু , হড়বড়য়ে বলে উঠলো, “ ভাইয়া আফনের ঘর জারু দিতে যাই , আফনে না থাকলে ডর করে ।” সে পিকুর পিছু নেয় । পিকুদের পাড়ায় রটনা আছে এই বাড়ীর চিলেকোঠায় ভূত আছে , অনেকে নাকি ভূতটাকে দেখেছেও, জিকু কারো কাছ থেকে এ খবর জেনে থাকবে, সেই থেকে ওর চিলেকোঠায় একা যেতে ভয় করে। কিন্তু আজকরে ব্যাপারটা পিকুর ওরকম মনে হয়নি, জিকুর মনে আরও কিছু একটা চলেছ, যা কারণে সে একটু অমনোযোগী হয়ে আছে। খুব অবাক লাগে, মানুষ এর বাহুতে শক্তি কিন্তু সে বাহুকে চালায় মন। মন ভাল থাকেল সব কাজ করা কত সহজ, আর তার বিপরীত হলে পৃথিবীর সবকিছুই যেন বোঝা হয়ে যায়।
জিকু এ বাড়ীতে এসেছে প্রায় দুই বছর, ও কখেনা এ রকম করে নাই, ও সব সময় চটপেট এবং দায়িত্ববান। ও নিজেই বাড়ীর চারিদিকে খুঁজে পেতে কাজ বের করে, সময় মত সব কিছুর ব্যবথা করে, সারাদিনে ও অবসর নেয় শুধুই ঘুমের সময়টুকু, ঘুম থেকে উঠেই আবার ব্যস্ত । প্রকৃতি নিজের খেয়ালে কিছু মানুষ কে জন্মের পর ছোট থাকার সুযোগ দোয়না, জিকু ঐ রকেমরই একজন, সে সাত বছেরই যেন একজন বড় মানুষ হয়ে উঠেছে। জিকু ঝাড়ু দিতে শুরু করেল, পিকু বই পত্তর রেখে ঘমে ভেজা শাটটা খুলে জানালার পাশে দেয়ালের আংটায় ঝুলিয়ে দিল। এখন গোসলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষষা করতে হেব, মিনু কখন গোসলে ঢুকেছে বুঝে উঠেত পারলনা, মিনু বের হলে তখন গোসলে যেতে পারেব। জিকু ঝাড়ু দিচ্ছে, তাই টেবিল ফ্যানটাও চালানো যাচ্ছেনা। বিছানায় পা লম্বা করে বসে কয়েকদিন আগে বৃট্রিশ কাউিন্সিল থেকে আনা টাইম ম্যাগাজিন গুলোতে চোখ বুলাতে থাকে পিকু। আড় চোখে ও দেখিছল জিকু কেমন যেন নিস্তেজ ভাবে ঝাড়ু দিচ্ছে। পিকুরা অথাৎ পিকুর মা , বাবা আর ভাই বোন মিলো পাঁচ জেনর সংসার, এখন জিকুও তার অংশ। পিকুর মা আর বাবা অধ্যাপক , পিকু বিজ্ঞানের একটা বিষয়ে পড়তে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছে , বোন মিনু শহরের ভাল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছ, ছোট ভাই ইকু গত বছর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়েছে। ভালবাসা আর বই, এই দুই ছাড়া আর সব কিছুই পিকুদের বাড়ীতে টানাটানি, মধ্যবিত্ত পরিবারের চিরকালের কাহিনী। অধ্যপক মা-বাবা অর্থের চেয়ে শিক্ষষা দেয়ার সামাজিক দায়িত্বকে বেশী গুরুত্ব দেন ফলে , ভাতের মধ্যে আলুর টুকেরার মিশেল দেখলে তিন ভাইবোন এর বুঝেত অসুবিধা হয়না মাসের শেষ সপ্তাহে মা টেনেটুনে দু’টিবলে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন , ওই সময় আলু ভর্তা , সস্তা পাঁচ মিশেলের সবজির তরকারির কদর এই বাড়ীতে বেড়ে যায়। বাড়ীতে রাতে থাকার অতিথি না আসেল ঐ সপ্তাহে মাছ মাংস দু’টিবলে আসেনা। এক বেলা ডিমের দেখা মিললে সবার মন বশে খুশী হয়ে ওঠে । অতিথি যদি এসেই পেড় মায়ের চোখের ইশারায় ওদের তিন ভাইেবানের তখন মাছমাংসে একদমই রুচি থাকেনা। আর অতিথি আসে না এমন মাসও যে খুব কম তাও নয়, মাবাবা দু পক্ষের আত্মীয়রাই আপন মনে করে বিভিন্ন কারনে আসেন , কারো লোখাপড়ার বিষয়ে , কারো চাকুরীর ইন্টারভিউ, কারো চিকিৎসা ইত্যাদি নিয়ে ।
পিকুদের এই মেপে চলা জীবনে জিকুর আবিরভব বেশ আকস্মিক। একদিন পিকু ক্লাস থেকে এসে ঢুকেছে , মা ওকে রান্নাঘর থেকে ডাকলেন। অন্য দিনগুলোতে , ক্লাশ থেকে ফিরে বাসায় ঢুকেই পিকু একটা হাঁক দেয় এক নাগাড়ে বলে যায় , “ মা আমি এসে পড়েছি , গোসল করে খেতে আসিছ , খুব ক্ষিদা লেগেছে, তুমি কোথায়?” মাকে করা প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায় ও থাকেনা। মা উত্তের শুধু ওনার অবস্থান জানান, ততক্ষণে পিকু ওর চিলেকোঠায় ছোটে। বই গুছিয়ে গোসলের কাপড় নিতে যেতে হয়। সেদিন নিয়মের ব্যাতিক্রম হল , ও রান্না ঘরে গিয়ে দেখে মিশ মিশে কালো সজারু চুলের পাঁচছয় বছরের একটা ছেলে বসে আছে , পরনে অনেক বড় একটা লাল রঙের ছেড়া গেঞ্জি , ঢোলা বাদামী রঙের একটা হাফ প্যান্ট হাঁটুর নীচ প্যান্ট নেমে এসেছে,পথের ক্ষতবিক্ষত ওর চেহারায় ভেসে আছে । খুব রোগা শরীরে গোল একটা মুখ, বিস্ময় আর বিষাদে ভরা বড় বড় দুটো চোখ। ওকে দেখিয়ে বললেন , “ তোমাদের এসিস্টেন্ট , ওর নাম জিকু , বয়স পাঁচ বছর। মা জিকুর দিকে তাকিয়ে বলেলন এটা বড় ভাইয়া ,” ছেলেটি উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়ার চেষ্টা করল। পিকু বেশ অবাক , এমন মাপা সংসারে মা হঠাৎ করে একজন অতিরিক্ত কাজের লোক নিশ্চয় রাখবেননা।
বিস্ময় আর বিষাদে ভরা বড় বড় দুটো চোখ। দৃষ্টিতে মার দিকে তাকাতে, মা জানালেন , ওনার কাজের লোক দেশের বাড়ীতে ছুটিতে যেতে হবে, বাড়ীতে বিয়ে লেগেছে, তাই জিকু কয়েক দিন মাকে সাহায্য করতে এসেছে। অবাক হয়ে পিকু বলে উঠলো, “কিন্তু মা ও তো বেশী ছোট।” মা হেসে বলেলন , “ ওকে এখনও ভাত মাখিয়ে দিতে হয় , তবুও ভাল নিজে খেতে পারে। খারাপ কি , আমার পিকু আর ইকুর সাথে যোগ হোল জিকু।” পিকু বুঝে নেয় কোন এক অজানা কারনে মায়ের এই ছেলেটার প্রতি মায়া লেগেছে, এ বাড়ীতে তাই ওর চাকরী হয়ে গেল। পিকু একটু মজা করে মাকে বলল , “ ইনিও কি তোমার লম্ব মৌলভী সাহেবের সাপ্লাই?” মা পিকুকে চুপ করতে ইশারা করে দেখালেন মৌলভী সাহেব সামনে বসার ঘের বেস আছেন। পিকুদের বাড়ীতে দুই জন মৌলভী আসেন , একজন লম্বা, উনি আসেন গ্রাম থেকে , বিভিন্ন জনের দানের কাপড় , ও জিনিস পত্তর নিতে , উনি মাকে কাজের লোকও মাঝে মাঝে এনে দেন। মায়ের এখনকার কাজের মহিলাও ওনার এনে দেয়া। সঙ্গত কারেন অন্য মৌলভী সাহেব বেঁটে মৌলভী বলে পরিচিত, কাছের এক মসজিদে উনি ইমাম। উনি পিকুদের সবাইকে এক সময় ধর্ম শিক্ষা দিয়েছেন , এখনও ঈদে পরবে বেড়াতে আসেন । পিকু আর মিনু মাঝে মাঝে ওনার ছেলেকে লেখাপড়া বুঝতে সাহায্য করে , কয়দিন আগে বেঁটে মৌলভী সাহেবের ছেলে বৃিৎত পেল, মিষ্টির বাক্স নিয়ে উনি দেখা করতে এসেছিলেন, পিকু, মিনু আর ইকুর জন্যে অনেক দোয়া করে গেলেন । পিকু সেদিন আর কথা না বাড়িয়ে কাপড় জামা নিয়ে ছুটেছিল গোসল করতে , ক্লাস থেকে এসে গোসল নিয়ে একটা অঘোষিত প্রতিযোগিতা চলে মিনুর সাথে , মিনু গোসলে ঢুকলে এক ঘণ্টার আগে আর কারো সুযোগ নাই , তাই পিকুর এই তাড়াহুড়া। মিনু গোসলে ঢুকেল বাইরে থেকে ডেকে তাড়া দেবার সুযোগও দুই ভাইয়ের নাই, মা খুবই রাগ করেন। মায়ের ভাষায়, “মেয়ে বিয়ে হয়ে কোথায় চলে যাবে, সারা জীবন ছুটতে হবে সংসারের জন্য, বাপের বাড়ীতেই একটু আরাম করার যা সুযোগ।”
তাই প্রতিযোগিতার একটা কারন আছে বই কি। গোসল , দুপুরের নামাজ সেরে পিকু খেতে বসে। এই সময়টা পিকু, মিনু, ইকু আর মায়ের গল্পের সময় , সারা দিন ক্লাসে এবং বাইরের সব গল্প হয় , বেশীর ভাগ সময়ই মা ব্যস্তা । ঐ দিন অস্থা ভিন্ন হল, মা জানালেন জিকুর বাবা কাজের খোঁজে ঢাকা শহরে গিয়ে আর ফেরেনি, তখন জিকুর বয়স দেড় বছর। ওর মা অনেক খুঁজেও ওর বাবাকে আর পায়নি , বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে, থানায়ও খুঁজেছে। কয়েদিন পর জিকুর বাবার বাড়ী থেকে জিকু আর ওর মা কে বের করে দেয়। বছর খানেক পর ওর মায়ের আরেকটা বিয়ে হলে, মা স্বামীর সাথে ফেনীতে চলে যেতে হয়, মায়ের বর্তমান স্বামী জিকুকে নিতে চায়নি। তখন থেকে ও নানীর কাছেই বড় হচ্ছিল , মাস দুয়েক আগে ওর নানী মারা গেলে ঘরে খাওয়ার মানুষ কমানোর জন্য, মামারা জিকুকে কাজ করতে পাঠিয়েছে। মৌলভী সাহেবকে ওর মামারা বলে দিয়েছে ওকে যেন আর বাড়ীতে ফেরত না আনেন। জিকুর জীবনের কাহিনী শুনে এবার পিকুর বুঝেত অসুবিধা হয়না মায়ের ওকে রাখার প্রবল ইচ্ছার মূল কারন।
ঐ দিনই বিকেলে মা ছুটলেন ওর জন্য কয়েকটা কাপড় কিনে আনতে। পরের দিন মা ওকে গোসল দিয়ে সাফ সুতরা করে তুলেছেন। মা শিখিয়ে দিয়েছেন, মাবাবাকে ও মামী আর মামা ডাকে, পিকু আর ইকু ওর ভাইয়া এবং মিনু, আপা। দুই দিন পর জিকুর ঝক ঝকে সাদা দাঁত দেখানো হাসি দেখা গেল। কয়েক দিনের মধ্যেই পিকুদের বাড়ীর একজন হয়ে উঠেলা জিকু ।
পিকুরা তিন ভাইবোন জিকুকে নিয়ে বেশ মজা পেয়েছে। মিনু আবিষ্কার করল জিকু ওর চেয়ে উঁচুতে কাজ গুলোর বেশী আকর্ষনবোধ করে। যেমন সে সকালে উঠে বাসার সব জানালার পর্দা সরানো নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে ওঠে। মা ওকে বলেছেন সকালের রোদ জানালা দিয়ে ঢুকেল বাড়ীর সবার স্বাস্থ্য ভাল থাকবে সেই থেকে নিয়ম করে সে সব জানালার পর্দা সরায় ।
একদিন ভোরে ধুম করে একটা শেদর পর মাগো বলে চিৎকার শুনে পিকুর বাবা ছুটে গিয়ে আবিষ্কার করলেন, জিকুর মাথায় পর্দার লম্বা লাঠি খুলে পেড়েছ। সে যাৎরা মাথায় বরফ দিয়ে জিকুকে ভাল করে তোলা হল। এর কয়েকদিন পর পিকু ক্লাস থেকে ফিরে দেখল, মা খাওয়ার টেবিলে খাতা দেখেছেন, পাশে জিকু মাথায় আইসবার্গ দিয়ে মাটিতে বসে ওর বর্ণমালা পড়ছে। মজা করে পিকু জানতে চাইলো, “আইস ব্যাগ দিলে কি মা ওর মাথায় লেখাপড়া তাড়াতাড়ি ঢুকবে?” মা হেসে ওকে ঘটনাটা বলেলন, জিকু মাকে সাহায্য করবার জন্য সব সময় উৎসুক হয়ে থাকে, তারই ফলাফল এই দুর্ঘটনা। রান্নার খালি হাঁড়ি গুলো রান্নাঘরে উপরের একটা তাকে তুলে রাখা হয়। মা অন্য ঘরে গিয়েছিলেন সে এই ফাঁকে তাকে হাঁড়ি তুলবার চেষ্টা করতে গিয়ে তাকরে বাকি সব হাঁড়ি ওর মাথায় পড়েছে।
এই বাড়ীতে জিকুর সবচেয়ে প্রিয় ব্যাক্তি ছোট ভাইয়া, অর্থাৎ ইকু । ইকু ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হবার আগে, প্রতিদিন বিকেলে ইকুর ক্রিকেটর ব্যাটবল এগিয়ে দিতে পারেল জিকু নিজের জীবন ধন্য মনে করত, এর বদলে মাঝে মাঝে ব্যাটিং বা বোলিং করার সুযোগ পেত সে, সেই সব দিন সে আনন্দে ফুরফুরে হয়ে ঘরে ফিরত । ইকু ক্যাডেট কলেজ চলে যাওয়ার পর জিকুর ওই সময়টুকু একটু নিরুত্তাপ হয়ে গেছে। ইকু ওকে ক্রিকেটের সরঞ্জামাদি দেখে রাখতে বলেছে, ওদের পিরকপনা, ছুটিতে আসলে আবার খেলা হবে। মাঝে মাঝে বিকেলে উঠানে সে নিজে নিজেই বোলিং চর্চা করে, পাড়ায় ইকুর বন্ধুদের ব্যাট বা বল দরকার হলে মা ওকে দিয়ে ওগুলো পাঠান সে সময় সেও একটু খেলার সুযোগ পায়। এই বাড়ীটা তে জিকু শুধু চিলেকোঠায় একা যেতে ভয় পায়, আর সেখানেই রাতে ঘুমায় পিকু, সে কারণে ও বড় ভাইয়া অর্থাৎ পিকুকে বেশ সমীহের চোখে দেখে।
পিকুদের ভাড়া করা বাড়ীটা পঁচাশ বছর বা তারও বেশী পুরানো, তাতে আবার ভূতের উৎপরেবর রটনা, সব মিলে এ বাড়ী অনেক বছর ভাড়াটে ছিলনা। পিকুরা সবাই যখন বিভিন্ন দিকে লেখাপড়ায় ঢুকেছে, মাবাবার আর্থিক সামর্থ বেশ চাপের মুখে, শহরের মাঝখানে কম ভাড়া হওয়ায়, ওদের বাবা এই বাসাটা ভাড়া করেছিলেন । বাড়ীটা বানিয়েছিলেন বর্তমান মালিকের বাবা, উনি গনিতের অধ্যাপক ছিলেন। সে যুগে স্থথপিত দিয়ে বাড়ীর নকশা করানোর রিতী ছিলনা হয়ত, গনিতিবেদর কারিগরেত তৈরী তাই বাড়ীটা গোলক ধাঁ ধাঁর মত, ঘর গুলো বেঢপ মাপের। মাবাবার ঘর বসার ঘেরর পাশেই, বাড়ীর একমাৎর গোসলখানাটা তৃতীয় শোবার ঘরের মেঝে দিয়ে যেতে হয়, ইকু ঐ ঘরটা পেল। ওপরে একটা চিলেকোঠা আছে, ওটা পিকুর ঘর হল। মাবাবার সীমিত আয়ে তিন ভাই বোন নিজেদের একটা করে কামরা পেয়ে ওরা খুশী, বাড়ীতে মাঝে মাঝে অতিথি আসলে অবস্থা পিকু গিয়ে ইকুর ঘের ঘুমায়। উপর তলার চিলেকোঠার ছাদ থেকে মাঝে মাঝে সুড়িক খেস পড়ে, এখনো কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি, একটু সাবধানে থাকেত হয় এই যা । এই বাড়ীটার সব জানালা গুলো রায় ভেঙে পড়েছ, একটু বাতাসেই বেশ যাঁচ যাঁচ শেদ বয়স জানান দেয়। এখেনা পর্যন্ত পিকু অবয ভূতের দেখা পায় নাই, মনে হয় ভূতেরা পিকুকে ওদের এক জন মনে করে, অথবা অল্প সাম যর পরিবারেক ভূতেরা বািলেয় আরাম পায় না, এটাও হেত পারে। বাড়ীটার বতমান মালিক, মহিলা বেশ অবথাপন বলে এই বাড়ী ভাড়া দেয়ার তেমন কোন চটাও করেনিন, পিকুর বাবাই উনাকে খুঁজে ভাড়া নিয়েছেন। ঘরটা পিরকার পিরছন করে, ভিতরটা রঙ করে থাকার যাবথা হয়ে গেছ।পিকুরা এই বাড়ীতে মোটা মুটি মানিয়ে নিয়েছে।
পিকু এতষেন টাইম ম্যাযাগাজিন এ ফিদল কাস্ত কে নিয়ে যে লেখাটা পড়া শেষ করে লক্ষ্য করল, জিকু ঝাড়ু দেয়ার মাঝে দাঁড়িয়ে কি যেন চিন্তা করেছ, পিকু বিছানায় বেসই জিজ্ঞেস করল, জিকু তোর কি শরীর খারাপ লাগেছে?
নাহ ভাইয়া, বলে সে একটু ষন নঃরব থেকে জিজ্ঞেস করল, “ভাইয়া মামী কত দিন ভাল হইব, না আর ভাল হইব না?”
পিকু বেশ অবাক হয় জিকুর রন শুনে । মুখের একটা ঘা অনেক দিন থেকেই পিকুর মাকে কট িদেছ। পিকুর মা খুব নিয়ম নীতির মানুষ, কখনই পান শুপারী খানিন। বরাবরই পরিবারের ডাতার আৎমীয়রা বলে আসিছল এটা ওনার শরীরে কোন পুিটর অভাব থেকে হেছ।পিকুর মায়ের জীবেনর উপর কত বড় বিপদের ঘন ঘটা সেটা কেউ বুঝে উঠতে পারেনি।অনেক চিকিৎসাতেও মায়ের মুখের ঘা ভাল না হওয়াতে, পরিবারের ডাতার আৎমীয়রা শেষ পর্যন্ত যাসারের পরীক্ষার কথা চিতা করেলন। পরীক্ষার ফলাফল ওনাদের সেদহেকই সেৎয রূপ দিল। বিপদ কম বেশী সবার হয়, বিপদ না হলে ভাল দিন গুলোর আর সৗদয রইল কি, কিন্তু বিপেদর সময় কাছে দাঁড়ানোর মানুষ কমই পাওয়া যায় এটাই পৃথিবীর নিয়ম হয়ে গেছ, সবাই নিজের চারপাশের ঝামেলা সামলাতে যেতে, অেযর বিপদে হাত বাড়াবে কখন? পিকুর মা সে রকমেরই কম সংযক মানুষের একজন, যাঁর কাছে আৎমীয়রা বিপেদর সময় ছুটে আসেন। বিপেদর সময় যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়েদেন ওদেরও বিপদ আসে, কিন্তু এটা অনেক সময়ই বাকিদের মনে থাকে না।
শুরু হল িচিকৎসা, পিকুর মাবাবা এতদিন তবু মেপে মেপএ সংসার চালাতে পারতেন, এবার দেনার পব শুরু হল। অথ জীবেনর ছোট ছোট চাওয়াকে হয়ত পূরণ করতে পারে, কিন্তু নিয়তির কাছে অেথর কোন মূল্য নাই, তাই জীবেনর সব অমুয জিনিসগুলোর সাথে অেথর যোগযোগ রায় নেই বললেই চলে। অনেক ধার দেনা করে পিকুর মাকে ঢাকায় িচিকৎসা করাতে নিয়ে কোন ফল হলনা। উনি ফিরে আসলেন আেরা অসুস্থ হয়ে। বিভিন্ন রকমের চিকিৎসা চলতে থাকল, কিন্তু অবথার উনিত হলনা।
পিকুর মা চাকুরীতে নামে মাত্র আছেন, কিন্তু আজকাল আর ক্লাস নিতে যেত পারেননা। পিকুরা যখন বাড়ী থাকে মাকে দেখা শুনাই এখন মূল দায়িত্ব। ওদের অনুপিথিতর সময় গুলো জিকু এগিয়ে আসে, সে এখন মায়ের সব সুবিধার দিকে নজর রাখে, ওনার ঔষধ গুলো সময় মত এিগেয় দেয়। মাত্র ক'দিন আগেও জিকুকে মা ভাত মাখিয়ে দিতেন হঠাৎ করেই ও যেন বড় হয়ে গেল। পিকু নিজেও জানেনা ওর মা কবে ভাল হবে, কিন্তু পরিবারের ওপর যে এক ঝড় শুরু হয়েছে, ওদের সাথে ছোট জিকুরও বুঝেত অসুবিধা হয়না। সংেষেপ পিকু উত্তর দেয়, ঠিক বলতে পারিনা জিকু মা কেব ভাল হবেন। উত্তরটা যেন জিকুও যানত, তাই বুকরে গভীর থেকেই সে বললে উঠলো।ওহ!
দুই বছর যুদ্ধ করে ককেটর আরমনে পিকুর মা আসীেমর পথে চলে গেলন। পরিবারটার পরিবেশ হঠাৎ করেই যেন বদলে গেল,আজকাল পিকুর বাবা কেমন নিচুপ িনিলততা নিয়ে থাকেন। জিকু এখনও কাজ করে কিন্তু আগের সেই উদাম ওর নেই। পিকুদের পুরো পরিবারটা যেন রণ লাত হয়ে পেড়েছ। ওদের সংসারের ভরেক র িছেলন মা, তাঁর অনুপিথিত তে পুরো পরিবারটা যেন দম ফুরানো লাটিমের মত টলতে শুরু করল। পিকুর বাবা হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ পেয়ে ওটা হাত ছাড়া করতে চাইলেননা। সাথে মিনু আর ইকুও সঙ্গী হল, দেশে পিকু একাই রয়ে গেল, একা বলেল ভুল হবে, পিকুর সাথে জিকুও রয়ে গেল।
মা, বাবা, ভাই, বোন কেউ আর কাছে নেই, পিছুটানহীন পিকু নাতেকাৎতর লেখা পড়া করতে ঢাকায় চলে আসাটাই ভাল মনে করল । লালমাটিয়ায় চিলেকোঠায় এক কামড়ার ভাড়া ঘর, সেখানেই পিকু আর জিকুর জীবন গড়াতে থাকে। জিকুর জন্য খেলার মাঠ নেই, ভূতের ভয় নাই, এমন কি তেমন কোন কাজও নেই, দুজনের জন্য ভাত ডাল রান্না করে জানালা দিয়ে বাইের তাকিয়ে সময় কাটে। পিকু ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া নিয়ে রচড যেতে থাকে। একাকিত্বই যেন জিকুর সঙ্গী, ওর জন্য খুব মায়া লাগে পিকুর। নয় বছরের জিকু যেন বিদ হয়ে আছে। পিকু বেশ কয়েক বার মায়ের পুরানো হিসাবের খাতা খুঁজে লম্বা মৌলভী সাহেবের ঠিকানা খুঁজেছে কিন্তু পায়নি, জিকু শুধু ওর পাড়ার নামটাই জানে। পিকু ঠিক জানেনা কোথায় জিকুর পরিবার?
ওর পরিবারে বলেত আছে মামারা, ওদের কাছেতো ও অবাঞ্ছিত। উপায় না দেখে পিকু সিদ্ধান্ত নিল খালার কাছে জিকু কে পাঠিয়ে দেয়াটাই ভাল হবে। পিকুর খালার পরিবারের সাথে জিকু ভালই থাকবে। একদিন বিকেলে বাড়ী ফিরে জিকুকে ইচ্ছাটা জানালো, অবাক হয়ে পিকু দেখছিল, জিকুর মনে কোন ভাবান্তর নেই, ও যেন এমনটাই আশা করছিল। রাতে খাওয়ার পর পিকু পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত, জিকু শুতে যাওয়ার কথা, ও টেবিলের পাশে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। পিকু মুখ তুলে তাকাতেই, গভীর স্বরে জিকু বলেত লাগলো। “আমার বাবা আমার জন্মের সময় আমার আর মায়ের মালিক আসলে, বাপে চইযা গেল, মায়ে হইল আমার মালিক, মায়ে চইযা যাওনের পর নানী হইল আমার মালিক, নানী মইরা গেলে মামী (পিকুর মা) হইল আমার মালিক, অহন আফেন হইলেন আমার মালিক। আমার জীবনে কত মালিক আইল, কেউ নিজে চইযা গেল কেউ আমারে ফালাইয়া দিল। আমি নিজের মালিক নিজে হইতে পারেল আর মালিক বদল হইতনা।” পিকু জিকুর কথার গভীরতম অথ বুঝেত পারে, পিকুর
কিছু একটা বলতেও ইচ্ছা করছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গুছিয়ে উঠতে না পেরে মৌন হয়ে রইল। আগামীকাল জিকুর মনটা একটু হাল্কা হলে ওকে বুঝিয়ে বলাটাই ভাল হবে বলে মনে করল। উত্তরের অপেক্ষা না করে জিকু ধীর পায়ে ওর বিছানায় শুতে চলে গেল। পিকু লেখাপড়া শেষ করে বেশ রাত করে ঘুমায় সকালে ক্লাস না থাকেল একটু দেরী করেই ওঠে। ঐ দিনও একটু বেলা করে চোখ খুলে ঘরটা অস্বাভাবিক রকম নিতধ লাগল, দরজার দিকে চোখ গেল, অল্প একটু করে খোলা। বিযুত পৃেটর মত লাফিয়ে বিছানায় উঠে বেস পিকু, দেখতে পায় জিকুর বিছানাটা খালি, দেয়ালে ঝুলানো ওর কাপড় গুলো নাই। বুঝে নিতে হয়,
জীবেনর নূতন দিগন্তের পথে বেরিয়ে পড়েছে জিকু, আজ থেকে ও নিজেই নিজের মালিক!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাঈম বানান ভূল গুলো খুবই দৃষ্টিকটু লাগছে, কিন্তু কিছু করার ছিলনা, .pdf file দিয়ে শিক্ষা হয়ে গেল। এখন পরের গল্পটা নিয়েও ভয়ে আছি। এরপর থেকে docx file তুলবো।
শেখ শরফুদ্দীন মীম ভালো লিখেছেন। ভোট রেখে গেলাম। সময় করে আমার কবিতাটি( আলোর সন্ধানে) পড়বেন।
ধন্যবাদ, নিশ্চয়ই পড়ব।
রবিউল ই রুবেন গল্পটি ভালো লেগেচে .

২৭ জানুয়ারী - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪