বাবা মা অনেক সাধ করে তার নাম রেখেছিল আকাশ। হয়েছেও সে আকাশের মতই। বন্ধুবান্ধব পাড়া প্রতিবেশী সবার দরকারেই যেন নিজের সবটা উজার করে দেয়। রাস্তার ঢালে ভারি ভ্যান বা ঠেলাগাড়ি নিয়ে যখন চালক আর পেরে উঠছে না তখন এই ছেলেকে দেখা যায় তার সাথে ঠেলাগাড়ি ঠেলে সাহায্য করতে। আবার এই ছেলেকেই দেখা যায় পাশের বাড়ির আঙ্কেল এর এক্সাম এর খাতা এক্সামিন করে দিতে। সারাক্ষন হাসিখুশি প্রানবন্ত উচ্ছল এক যুবক আকাশ।
আকাশ আমার ছেলেটাকে একটু স্কুলে থেকে আনতে হবেঃ আচ্ছা আনটি নিয়ে আসব। আকাশ আমার এখনও কারেন্ট বিল দেয়া হয় নিঃ আচ্ছা দাদু আমাকে দিবেন। আমি দিয়ে আসব। আমাদের বাসার ডিশ লাইন টা সমস্যা করতেছেঃ আচ্ছা আপু আমি দেখছি কি করা যায়। আকাশ আমার পার্সেল টা আনতে হবে। কিন্তু কাউকে পাচ্ছি নাঃ টেনশনের কোন কারন নেই, আমি এনে দিচ্ছি। কোন কথায় তার না নেই। কিভাবে যে সে এত সময় বের করে সে ই জানে।
আরও একজন আছে তার জীবনে। অর্পিতা। জীবনের সবকিছুর থেকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে তাকে। খুব বেশিদিন হয় নি তাদের রিলেশন এর। কিন্তু এর মাঝেই সে আকাশের পুরোটা দখল করে নিয়েছে। যখন সবুজ ঘাসের গালিচার উপর দিয়ে একসাথে হেঁটে যায়, কিংবা পার্কের বেঞ্চে বসে গল্প করে তখন সমগ্র পৃথিবীটাকেই যেন ভুলে যায়। এভাবেই হাসি খুশি আর আনন্দের মাঝেই কেটে যাচ্ছিল তার দিনগুলো।
গত কিছুদিন যাবত একাধারে বৃষ্টি হচ্ছে। থামার কোন নাম নিশানা নেই। সকাল সন্ধ্যা আকাশ ঘন কাল মেঘে ছেয়ে থাকে। আকাশের সাথে যার মিতালি তার সাথে মিল রেখেই যেন আকাশের জীবনও মেঘে ছেয়ে গেল। অর্পিতার মাঝে কিছুদিন যাবত আস্তে আস্তে একটা পরিবর্তন দেখছে সে। কোন কুল কিনারা করে উঠতে পারছে না। একবার জিজ্ঞেসও করেছিল। কিন্তু অর্পিতা এড়িয়ে গেছে। তাই সে এবার সিদ্ধান্ত নিল সরাসরিই কথা বলবে এটা নিয়ে।
দুইজন পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে। কিন্তু একটা স্পষ্ট ছন্দপতন লক্ষ করা যাচ্ছে তাদের মাঝে। কাছেই কোথাও বেসুরো ভাবে একটা মাইকে গান বাজছে। খুব বিরক্ত লাগছে আকাশের। আকাশ ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না কিভাবে শুরু করবে কথাটা। অর্পিতাই নিরবতা ভাঙল। -আকাশ আমি চলে যাব। আর কখনও তোমার সামনে আসব না। আসলে তুমি আমাকে নিয়ে সুখী হতে পারবে না। আকাশ পাশে থেকে সামনে আসল। কথা বলার মত শক্তিও তার মাঝে অবশিষ্ট নেই। সমগ্র পৃথিবী নড়ে উঠেছে তার।এক নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে।
-শোন আকাশ তুমি আমার চেয়ে অনেক ভাল মেয়ে deserve কর। তুমি অনেক হ্যাপী থাকবা বিশ্বাস কর। পাশের মাইকের শব্দ আর তার কানে যাচ্ছে না। একটা ঘোরের মাঝে চলে গেছে আকাশ। সে অর্পিতার দুই কাধে হাত রেখে অপ্রকৃতিস্থের মত বললঃ
-অর্পিতা তুমি না থাকলে আমি মারা যাব বিশ্বাস কর। আমি তোমাকে নিয়ে অনেক হ্যাপী থাকবো। প্লিজ তুমি যেও না। -এগুলা কথার কথা। তুমি দেখো অনেক ভাল থাকবা। অনেক হ্যাপী থাকবা। বলে আকাশের হাত কাধ থেকে নামিয়ে দিল । তারপর আস্তে করে ঘুরে চলে গেল। আকাশের চোখে অশ্রু যেন আর বাধ মানল না। শ্রাবণের বারিধারার মতই অঝোরে ঝরতে লাগল। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। সে অর্পিতাকে পৃথিবীর সবথেকে বেশি বিশ্বাস করত। কিন্তু সেই অর্পিতাই তার সাথে এরকম কেন করল??? তাহলে কি অর্পিতা এতদিন যা করেছে সবই ছলনা ছিল??? তার মানে সে বন্ধুদের কাছে মেয়েদের সম্পর্কে যা কিছু শুনেছে এতদিন তার সবই সত্যি??? মেয়েরা আসলেই এতটা স্বার্থপর হয়???
অনেকদিন পর সেদিন রোদ উঠেছিল। রোদের আলোয় ঝলমল করছিল চারদিক। বিষণ্ণ শহর যেন তার প্রান আবার নতুন করে ফিরে পেয়েছিল কিন্তু এত জীবনের মাঝে আকাশ ছাড়াও আরও একজনের চোখে বৃষ্টির ধারা নেমেছিল। অর্পিতা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না সে আকাশকে কথাগুলো বলেছে। শেষ করে দিয়েছে তার এতদিনের পুষে রাখা সকল স্বপ্ন। ভেঙ্গে দিয়েছে আকাশের সকল বিশ্বাস। কিন্তু তারই বা কি করার ছিল? ভাগ্য তার সাথে এরকম নিষ্ঠুর খেলা খেলবে সেটা সে আগে থেকে জানবে কিভাবে? সে কিভাবে জানবে যে তার বাবা না জানিয়েই তার বিয়ের আয়জন করে ফেলবে। তার ইচ্ছে করছিল আকাশকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে। সেখানে একসাথে জীবন পার করে দিবে যেমনটা সে স্বপ্ন দেখে। নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে শুধু একে অপরকে ভালেবেসে কাটিয়ে দিবে সারাটা জীবন। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সে। এই পরিবারের মেয়েদের অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। মধ্যবিত্ত জীবনে প্রেম-ভালোবাসা-আবেগ নামক বিলাসিতাগুলোর কোন স্থান নেই। তাদের জীবনটা সিনেমার মত না। পান থেকে চুন খসলেই পাড়াপ্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনের মুখে কথার ফুলঝুড়ি ছোটে। যে মেয়ে কখনও বাবার সামনে উচ্চস্বরে কথা বলার সাহস পায় নি সে মেয়েই জোর গলায় বলেছিল বাবা আমি আকাশ ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারব না। বাবা একটা কথাই বলেছিল "জীবনে আমাকে কখনও কারো বাঁকা কথা শুনতে হয় নি। এই শেষ বয়সে এসে তুই আমাকে সবার সামনে অপমান করিস না।" পরিবার না আকাশ, আকাশ না পরিবার। অনেক ভেবেছে সে। শেষ পর্যন্ত পরিবার বেছে নিতে হয়েছে। যে মানুষগুলো তাকে ছোট থেকে বড় করেছে তাদের সাথে সে বিশ্বাসঘাতকতা করবে কিভাবে?
স্বপ্নদেবতা এবং ভাগ্যদেবতার মাঝে দ্বন্দ্ব যেন চিরকালের । কেউ কারো সাথে মিলেমিশে চলতে পারেন না। তাদের এই বিভেদের মাঝে শেষ হয়ে যায় অনেক অনেক জীবনের অনেক অনেক আশা, অনেক অনেক নিস্পাপ সম্পর্ক। তাদের দ্বন্দ্বের কারনেই যেন হাশিখুশি প্রাণোচ্ছল মেয়েটার মুখের হাসি মিশে যায় চিরকালের জন্য, সাধাসিধে ছেলেটার জীবনে নেমে আসে অন্তহীন জটিলতা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পবিত্র বিশ্বাস
ভাল লাগলো... শুভ কামনা রইল। আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।