জানিনা ভাগ্য আমার বৈরি ছিল কিনা

বৈরিতা (জুন ২০১৫)

আল আমিন
  • ২৯
সময়টা ছিল মার্চ মাস। খুব সম্ভবতঃ ২৬ শে মার্চ ছিল সেদিন। তখন আমার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা প্রায় আসন্ন, তো পড়াশুনা প্রস্তুততির একফাঁকে খুলনার বাইরে কোন এক আত্মীয়ের বাসায় দেখা হয়ে গেল ওর সাথে, তারপর ফোন নাম্বার বিনিময় এবং এভাবেই শুরু।

এই ঘটনার কিছুদিন আগে হঠাৎ আমার এক খায়েশ হয়েছিল। আমি গ্রামের ছেলে হলেও খুলনায় থেকে পড়াশুনা করতাম। প্রায় সব বন্ধুদেরই একটা বা একাধিক (!) করে গার্লফ্রেন্ড নামক কেউ ছিল। আমার সাথে এরকম কিছু ঘটতে গেলেও আমি এ ব্যাপারে বেশিরভাগ সময়ই একেবারে গুঁটিয়ে-সুঁটিয়ে থাকতাম । তবে কলেজে আমার বন্ধুদের তালিকায় ছেলেদের চেয়ে মেয়ের সংখ্যা একেবারে কম ছিলনা; ছেলে-মেয়ে সবার সাথেই মিশতাম । তবে এই প্রেম-ঘটিত ব্যাপারগুলো সামনে আসলেই নিজেকে অদ্ভূৎভাবে গুঁটিয়ে ফেলতাম ।

ঠিক এরকম অবস্থায় খায়েশ জেগে উঠলো-- প্রেম করবো (!) আমিও । তবে মেয়ে শহরের হলে চলবে না। মেয়ে হতে হবে গ্রামের । মেয়েটা ইনোসেন্ট হবে (!) আর যখন তখনই দেখা করতে চাইবে না ইত্যাদি ইত্যাদি । এর পেছনে আমার মাথায় বিশেষ যে যুক্তিগুলো কাজ করেছিল তা মনে পড়লে আজও আমার হাসি পায়।

গ্রামের ছেলে আমি, শহরে যাওয়ার পর শহরের মেয়েদের সম্পর্কে বিকৃত কিছু ধারণা তৈরি হয়, অবশ্য বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতার কারণে । তবে গ্রামের হয়েও গ্রামের মেয়েদের সম্পর্কে আমার ধারণা যে এরকম; একেবারে শুন্যের কোঠায়, তা আমার জানা ছিলনা। সত্যি ভুলেও ভাবিনি।

যাইহোক, কথা চলতে থাকলো তার সাথে । কিন্তু ব্যাপারটা অনেক চেপে-ঢেকে সবসময় কেমন লুকিয়ে লুকিয়ে ব্যাপার টা চলতে থাকল। এখন আম্মু আছে কথা বলা যাবে না, তখন ছোট বোন ছিল, কখনো আব্বু এসেছে । এত কিছুর মধ্য দিয়েও ফাঁক-ফোঁকর বের করে দিনে কয়েকবার কথা হত অল্প অল্প করে। কী আজব ব্যাপার ! কিছু দিনেই আমি ওর ব্যাপারগুলোয় প্রায় অভ্যস্ত হয়ে গেলাম । কখন ও ক্লাসে যাবে বা ক্লাস থেকে ফিরবে সেই পথে ফোন দিবে আমাকে সে জন্য রীতি-মত অপেক্ষাও করতাম!

এরমধ্যে আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। হঠাৎ একদিন জিজ্ঞেস করে বসলাম --"আচ্ছা তুমি কি আমাকে ভালোবাস"?
ও কাঁচুমাচু হয়ে মুখ নিচু করে একটু হাসিতে (তখন মনে হয়েছিল হাসিটায় লজ্জা মাখা!) আস্তে করে বলল--"অত কিছু জানিনা, আমার কেন যেন মনে হয় সেই প্রথম দিনই আপনি আমার পাঁজরে জড়িয়ে আছেন" । হয়তো বৃহৎ কোন খুশির আশায় অথবা জানি না কেন যেন ঐ কথাটির মানে খুঁজতে যাইনি । সুধু মনে হচ্ছিল এ যেন পুরাণের কোন বয়স্ক প্রেমিকের প্রেমলীলা শুরু হলো। আর একটু মনে হলো-- এ হয়তো হয়ে গেল আমার প্রেম, এ হয়তো খাঁটি প্রেম পেয়ে গেছি আমি কত দামি, অনেকেই নাকি পায়না এটা(!)...

শেষ পর্যন্ত আমার খায়েশ ও পুরোন হতে লাগলো। গ্রামের মেয়ে তো, গ্রামে বেশি দেখাও করা যায়না, আমিও জোর করতাম না কারণ আমার খায়েশটা এরকমই ছিল । মাঝে মধ্যে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য দেখা হতো দু'টি একটি কথা, ছোট একফালি হাসি -- খুব সন্তুষ্ট ছিলাম আমি, এটাইতো চেয়েছিলাম । সরল স্বীকারোক্তি করেই ফেল্লাম একদিন । একটু হেসে বলে ফেললাম --"ভালোবেসেছি তোমায়" ।তখন নিজেকে একটুও নির্লজ্জ বা ব্যাক্তিগত মূল্যবোধহীন মনে হয়নি মোটেও। ওই যে! খাঁটি প্রেম! পবিত্র প্রেম! ততদিনে সম্বোধন টা দুজনেরই 'তুমি'তে।
ব্যাপারটা যেন ওর আগেই জানা ছিল। আজ আর আড়ষ্ট বা কাঁচুমাচু হয়ে গেলনা বরং চটপট বলে ফেলল --"আমিও তো ভালোবাসি তোমায়" ।
পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল, ঢাকায় যেতে হবে; আব্বুর ইচ্ছা আমি যেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং ঢাকাতেই করি । পরীক্ষার পর বেশি সময় পেলাম না, তড়িঘড়ি করে চলে গেলাম ঢাকায়। যাওয়ার আগে খুব সকালে যখন গাড়ির কাউন্টারে গেলাম, ও ফোন করে জানালো যে তখনই আমার সাথে দেখা করতে চায়, এবং ওই সময়েই ওই নির্জন ভোরে সে আসলো আমাকে দেখতে, যেন পারলে আমাকে কোথাও যেতে দিবেনা। ও মুখে বেশি কিছু না বললেও ওর চোখে যে নীরব জল-জোয়ার দেখেছিলাম ওটা আমার কাছে কেন জানিনা তখন অনেক মূল্যবান মনে হয়েছিল। আর একটা বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছিল-- ও আমাকে সত্যিই ভালোবাসে।

কোচিং প্রায় শেষের পথে ততদিনে আমি অন্যান্য বন্ধু-বান্ধব গুলোরে প্রায় ভুলেই গেছি , রীতিমত এড়িয়ে চলেছি বলা যায়। ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি; সামনে ভর্তি পরীক্ষা । চান্স পেতেই হবে নাহলে কত ব্যাপার-স্যাপার। আব্বু কি বলবে, ব্যাক্তিগত এবং সামাজিক ব্যাপার তো আছেই এদিকে ও আবার কি না কি ভাবে, কত চিন্তা । ঠিক এরকম অবস্থায় খেয়াল করতে লাগলাম কারণে অকারণেই ও আমাকে এড়িয়ে চলছে। আগের মত সেই নির্দিষ্ট সময় গুলোতে এখন আর ফোন দেয়না, এবং এটা দিন দিন বাড়তেই থাকলো। আমি কেমন উদভ্রান্তের মত হয়ে গেলাম। ওর নীরব অবহেলা আমি টের পাচ্ছিলাম ভেতরে ভেতরে যেন কুরে' কুরে' শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত হঠাৎই একদিন ফোন বন্ধ পেলাম এবং এভাবে কয়েকদিন চলে গেল।

এরকম টা তো হওয়ার কথা না, মাঝে মাঝে কোন রাতে পড়ার চাপ বেশি থাকলে আমি ফোন বন্ধ করে রাখতাম। শুনেছিলাম সেই সব রাতে আমার ফোন বন্ধ পেয়ে ও আমাকে বারবার ফোন দিত, আর কখনো কাঁদতো । কাঁদতে কাঁদতে অথবা আমাকে ফোন দিতে দিতেই ফোন টা হাতে নিয়ে ওভাবেই ঘুমিয়ে যেত। অথচ এখন! আমি তো পড়েছি সত্য প্রেমের দায়ে।

শুনতে পেলাম ওর সাথে সম্পর্ক ওর কোন এক সহপাঠীর সাথে । এবং সেটা আরো প্রায় এক দশক আগে থেকেই। আরো শুনতে পেলাম হয়তো এটা সুধু সম্পর্কই নয় আরও কিছু শরীরি গল্পও জড়িত আছে এর সাথে। আমার কোন প্রশ্ন রইলো না। থাকার কথাও নয়। মাস কয়েক বাদেই রাস্তায় দেখা হলো। আমার কাছাকাছি হতেই খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে ফেলল--"কেমন আছ"?
আমি কিছু না বলে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে হাটতেই দেখি ওরই বয়সী এক ছেলে আসলো, ওকে বললো--"কে ওটা? কার সাথে কথা বললে"?
ঈদের বাজারে আবারও একদিন দেখা হলো সেদিনও ওর সাথে সেই ছেলে। আগেই জানতে পেরেছিলাম ততদিনে ওরা বিয়ে করেছে। আমার সাথে থাকা বন্ধুটি কে ডেকে হাসতে হাসতে বললাম --"দ্যাখ দ্যাখ মাধূরীর বর আর মাধূরী যায়"।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সাদিক ইসলাম বেশ ভালো লাগলো .. . . . আমার কবিতায় আমন্ত্রণ রইলো
কবিরুল ইসলাম কঙ্ক বেশ ভালো লাগলো পড়ে । ভোট রইলো । রইলো শুভেচ্ছাও ।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
তাপস চট্টোপাধ্যায় খুব ভালো লাগলো. আমার পাতায় আমন্ত্রণ.
ধন্যবাদ আপনাকে। আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম।
হুমায়ূন কবির আসলে প্রতিটি গল্প বা উপন্যাস একটা জীবন কাহিনী, আর তার ভেতর প্রেমের উদ্ভব থাকাটাই স্বাভাবিক। কখনো বা বিরহ আবার কখনো মিলন......
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ জন্ম থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যা কিছু ঘটে সব কিছুকে নিয়েই তো জীবন । এ গল্পটাও জীবনেরই একটা খন্ডিত অংশ । যাকে সুন্দর করে উপস্থাপনার চেষ্টা । এটাই তো ছোট গল্প । জীবনের সব অংশই তো এক রকম হয় না । ভাল লাগল । ভোট রেখে গেলাম ।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় কবি। আমার জীবনের সর্বপ্রথম গল্প লেখার প্রচেষ্টা এটি। শুভাকামনা জানবেন।
শামীম খান কিশোর প্রেম আর তার জটিলতা , শেষে আবিষ্কার হয়েছে প্রতারনার । ভাল লিখেছেন । শুভ কামনা রইল ।
হম ভাইয়া, ধন্যবাদ আপনাকে।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
Fahmida Bari Bipu যদি কোন লেখা গল্প-কবিতা অথবা অন্য কোন সাইট বা কোন পত্রিকার জন্য লেখার কথা ভাবো, কিংবা যদি নতুন একটা লেখা এমনি লিখে থাকো...তাহলে প্রথমেই সেটা ফেসবুকে শেয়ার করো না। ফেসবুকে আস্ত ধীরে শেয়ার করলেই ভাল। আগে অন্য কোথাও প্রকাশ করার চেষ্টা কর।
ওহঃ আপু, বুঝেছি। আমি আসলে এই ব্যাপারটা নিয়ে কখনো এভাবে ভাবিনি। আপনার কথাটি আমি মাথা পেতে নিলাম আপু। আপনার আন্তরিকতা সত্যিই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
Fahmida Bari Bipu লেখাটা ভাল লেগেছে। আগে পড়েছি। ফেসবুকে পরে শেয়ার করো।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। আপনি আগে পড়েছেন, মনে রেখেছেন জেনে খুশি হলাম। আপু আগেও অনেক চেষ্টা করেছি গল্প লেখার, কিন্তু কোন গল্পই শেষ পর্যন্ত লিখতে পারিনি। এটাই সর্ব প্রথম এবং আমার লেখা একমাত্র গল্প। তবে এটা লেখার পর মনে হয়েছিল যে এটা হয়তো গল্প হয়নি, তবে ছোটখাট একটা জীবন কাহিনী লেখা হয়েছে। যাইহোক, শ্রদ্ধা জানবেন আপু। আপনার শেষ কথাটি ( #ফেসবুকে পরে শেয়ার করো।) ঠিক বুঝলাম না।

২৩ জানুয়ারী - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী