এক
সুমিত কলেজের সামনের রা¯—াতে দাড়িয়ে আছে মৌমিতার অপে¶ায়। দূর রা¯—াতে যতদূর দেখা যায় সুমিত ল¶্য করে। মৌমিতার মুখটা আ¯ে— আ¯ে— দেখা যাচ্ছে। সে আজ একটি হালকা হলুদ কমলা মিশ্র একটি থ্রিপিস পরেছে। তার সাথে ম্যাচ করে কানে দুল, হাতে ঘড়ি এমনকি পায়ের স্যান্ডেল টাও। খোলা চুলে বার বার তার কপাল ঢেকে যাচ্ছে। সে আলতো হাতে চুলগুলো বার বার সরাচ্ছে। তাঁর এই সব কিছুই সুমিতকে পাগল করে। মৌমিতা হাঁটার সময় সাধারণত নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটে। এমন শাš— স্নিগ্ধ মেয়েটি যে কখন বাঘিনী হয়ে যায় তা কেউ বুঝতে পারেনা। যারা দুই একজন তার খুব ক্লোজ তারাই শুধু জানে। সুমিতও জানে কিন্তু সে অন্য সবার চেয়ে একটু বেশিই ভয় পায়। তবে আজকে আর তাঁর মধ্যে কোন ভয় নেই। সে আজ যে করেই হোক তাঁর মনের কথাটি মৌমিতাকে বলবেই।
সুমিত ভাবনার সাগরে ডুবে আছে এর মধ্যে মৌমিতা তাঁকে পার করে চলে যাচ্ছে। সুমিতের হঠাৎ যেন ধ্যান ভাঙ্গে। এই মৌমিতা শোন। মৌমিতা পিছন ফিরে তাকায়। আরে ইডিয়েট তুই এখানে দাঁড়িয়ে। আমিতো একদম খেয়াল করিনি। চল ভিতরে চল।
না । তোর সাথে একটু জর“রী কথা আছে।
তুই বলবি জর“রী কথা? এই সেরেছে। তা কি তোর জর“রী কথা? বল।
না মানে। ইয়ে। সুমিত আমতা আমতা করতে থাকে। একটু এদিক টাতে এসে দাঁড়া। রা¯—ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কি কথা বলা যায়।
ও। ঠিক আছে বাবা এই পাশে এলাম। এবার বল। গবেট টা কই? এসেছে না আজো লেট?
না আসাদ এখনো আসেনি। ও আসার আগেই তোকে কথা গুলো বলতে হবে।
তা বলনা কি বলবি?
মৌমিতা তুইতো জানিস। আমি তোকে খুব পচ্ছন্দ করি। আমি যতবারই তোকে এটা বলতে চেয়েছি। ততবারই তুই এড়িয়ে গিয়েছিস। কিন্তু আমি আর পারছিনা। আমি তোকে খুব ভালবাসি। তোর জন্য আমি যে কোন কিছু করতে পারি।
হু বুঝলাম। তারপর।
আমি কিন্তু সিরিয়াস।
শুনছি।
আমি তোর জবাব চাই।
আসাদ আসুক। তারপর দেই।
না। আসাদ কে আমি এর মধ্যে আনতে চাইনা। যা বলবি এখন এই মুহুর্তে বলবি।
দেখ সুমিত তোকে আমি আগেই যা বলার বলেছি। আমরা ভাল বন্ধু তুই এর মাঝে এ সব কেন নিয়ে আসিস।
ও আমার বেলায় ফ্রেন্ড আর আসাদ এর বেলায় কেন....?
মৌমিতা সুমিতকে কথা শেষ করতে দেয়না। দেখ তোর সাথে আমি এই বিষয়ে কোন কথাই বলতে চাইনা। আমি তোকে আগেও না করেছি। আজো না করলাম। তুই যদি এর পর আর একবারও আমাকে এধরনের কিছু বলতে আসিস তবে আমি কিন্তু তোর সাথে .....
রাগে মৌমিতা কথা শেষ করতে পারেনা।
ও এখন তো তুই এই সব বলবি। আসাদের সাথে তোর কি আমি জানিনা বুঝি।
কি? তুই কি জানিস? বল ?
তুই যে আসাদ কে ভালবাসিস তা কি আমি জানিনা।
বেশ করেছি। আমি কাকে ভালবাসবো আর কাকে ভালবাসবো না সেটা আমার ব্যাপার তোর কি?
আসাদ ভিন্ন ধর্মের আর তুই আমি অন্য ধর্মের।
মৌমিতা এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। সুমিতের গালে এক চড় কসায়। এটা অবশ্য নতুন কিছু না ওরা ছোট বেলার বন্ধু হাতাহাতি প্রায়ই হয়। কিš— আজকের বিষয়টা ভিন্ন। সুমিত মুখ হা করে হাত দিয়ে গাল চেপে ধরে।
মৌমিতা বলতে থাকে, এই জন্যই তোকে আমি ভালবাসিনা। তুই ভালবাসা আর ধর্ম কোনটাই বুঝিসনা। ভালবাসাকে যাত ধর্ম ছোট বড় কোন কিছুই ছুঁতে পারেনা। যেটা পারে সেটা হল মন আর তোর ওটার ই অভাব। আমরা ভালবন্ধু বলে তোকে ছেড়ে দিলাম। আর ভবিষ্যতে যদি এই নিয়ে কোন কথা বলিস তবে কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব শেষ।
দূর থেকেই আসাদ ডাকদেয় কিরে তোরা এখানে দাঁড়িয়ে কেন?
মৌমিতা উত্তর দেয়, তোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
তাই নাকি। কাছে এসে সুমিতের মাথায় একটা চাটি মারে, কিরে তোর কি খবর? গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কেন?
মৌমিতা পরিস্থিতি ¯^াভাবিক করে। ওর দাঁতে ব্যাথা। তাই ভাবছে কলেজ করবে কিনা।
আরে চল তোর দাঁত ব্যাথা আমি ঠিক করে দিবো। একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে। আজ তোর বক বক শুনতে হবেনা।
সুমিত আর কিছুই বলতে পারেনা। কিন্তু তার ভিতরে হাজার পরমাণু বিস্ফোরিত হতে থাকে। বিদ্বেষের এক চাঁপা অনল যেন তার ভিতরে চলতে থাকে। সে মনে মনে ভাবে, এর প্রতিশোধ,সে নিবেই। আর এর জন্য তাকে যা করতে হয় তাই সে করবে। এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার।
দুই
২৫ মার্চ, ১৯৭১ রাত দেরটার দিকে আসাদের দরজার কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। সে তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে। দেখে মৌমিতা আর সুমিত দুই জনই একসাথে। সে যেন এখনো ঘুমের মধ্যেই আছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। কিরে তোরা এতো রাতে। কি হয়েছে।
সারাদেশ জ্বলছে আর তুই ঘুমাচ্ছিস।
কেন? কি হয়েছে?
পাকি¯—ানিরা ঘরে ঘরে ঢুকে মানুষ মারছে। মৌমিতা আর আমাদের বাড়ী ঘর সব জ্বালিয়ে দিয়েছে। ক’জন বেঁচে আছে জানিনা।
আসাদের চেতনা ভাঙ্গে, জহির স্যার!
জহির স্যার! কি হয়েছে? সুমিত মৌমিতা দু’জনে এক সাথে জানতে চায়।
আমাকে এখনি যেতে হবে। তোরা কি যাবি না থাকবি?
মৌমিতা বলে উঠে আমি থাকতে পারবো না। আমি যাবো। কিন্তু কোথায়?
সুমিত বলে আমিও যাব।
চল চল। বেরহ্।
দু’জনেই ছুটতে থাকে আসাদের সাথে সাথে। আসাদ ওদের সাথে নিয়ে জহির স্যারের বাসার কাছে এসে দাঁড়ায়। পিছন দিক দিয়ে একটা ছোট পুকুর আছে। আসাদ আগেও এসেছে এই দিক দিয়ে। পুকুরের পাশে একটা ঝুপরির মত জায়গা আছে। আসাদ ঝুপরির ভিতরে ঢুকে যায়। সুমিত ও মৌমিতা কিছুই বুঝতে পারেনা তবু অন্ধের মত অনুকরণ করে চলে তাঁকে। জানে এখন ও কিছুই বলবেনা।
ভিতরে ঢুকে দেখে জহির স্যার বসে আছে। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে ভূত-টুত কিছু একটা দেখে ভিষণ ভয় পেয়েছেন। আসাদ কে দেখে যেন তিনি জ্ঞান ফিরে পান। এখানে কিভাবে এলে তোমরা? কেউ দেখেনিতো। আমাকে না পেয়ে বউ বাচ্চা কাউকে রেহাই দেয়নি। সবাইকে মেরে ফেলেছে। আমি কোন রকমে পালিয়ে এসেছি এখানে। একবার মনে হয়েছিল। সবাইকে যখন মেরে ফেললো আমি বেঁচে কি করবো? হঠাৎ মনে হ’ল, এটাতো হবার কথাছিল। ৭ই মার্চের পর থেকে তো আমি এর অপে¶াই করছি। আমাকে তো ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা। এখনইতো বড় দায়িত্ব।
আসাদের চোখ যেন চক চক করে উঠে। স্যার সময় তাহলে হয়ে গেছে।
হ্যাঁ। চল এখানে বেশি¶ণ থাকা যাবেনা। ওরা দুই বার এসেছে। আবার আসতে পারে। রক্তর নেশায় যেন ওরা হায়নাকেও হারমানায়। চল চল।
অন্ধকারে বেরিয়ে পরে চারটি প্রাণ। সুমিত ও মৌমিতা কিছুই বুঝতে পারেনা। শুধু অনুসরণ করে চলে। ¯^জন হারানোর বেদনা, কান্না সবই যেন ভয় এর কাছে চাঁপা পড়েছে।
তিন
আজকের অপারেশনের দায়িত্ব টা আসাদের উপর। জহির স্যার খুব অসুস্থ। সামনে থেকে আক্রমণ করবে আসাদ আর সুমিত পিছন থেকে ব্যাকাপ দিবে। সব কিছু পরিকল্পনা মত হলে আজ ঐ ক্যাম্পে ¯^াধীন বাংলার পতাকা উড়বে। আসাদ তার দল নিয়ে এগুনোর ৫ মিনিট পর সুমিত বের হবার কথা। সুমিত বসে আছে, মৌমিতাও প্রস্তুত। ২৫ শে মার্চের পর আর কারোই ফেরা হয়নি। তিনজন এক সাথেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করছে।
মৌমিতা সুমিত কে বলে, কিরে চল। ৫ মিনিট তো হয়ে গেছে।
সুমিত একটুও নরেনা। শুধু একটা মুচকি হাঁসি দেয়।
মৌমিতা আবার ডাকদেয়, কিরে সুমিত ওঠ।
সুমিতের হাঁসি টা একটু বড় হয়। সে বিরবির করে বলে, আজ সুযোগ পেয়েছি। এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন ওয়ার।
মৌমিতার কাছে হঠাৎ করে সব পরিষ্কার হয়ে যায়। সে বলে, সুমিত তুই এতো ছোট লোক তা আমি ভাবিনি।
সুমিত এবার জোরে জোরে বলে, কথায়তো আছে এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন ওয়ার।
তুই কি পাগল হয়েগেছিস। দেশের এই অবস্থাতে তুই....?
কেন? আমার জন্য সব এক নিয়ম আর তোদের জন্য আরেক।
মৌমিতা ঘৃণা ভরা কন্ঠে বলে তুই কি চাস বল। তোর জন্য না হোক আমি দেশের জন্য সব কিছু দিতে প্রস্তুত। বল তোর কি চাই? এই মুহুর্তে আসাদ কে দেশের প্রয়োজন ওর মত সূর্য্য সš—ানের জন্য আমি সব করতে রাজি। আমি তাকে ভালবাসি। তবু সে এখন আমার কাছে কিছুই না। আগে দেশ সব পরে। বল তুই কি চাস?
সুমিত আবার মুচকি মুচকি হাসে। তুই জানিস না আমি কি চাই? তুই কি পারবি আমার হতে? তুই কি পারবি?
মৌমিতা তার বুকের ওড়না ছুড়ে ফেলে দেয়। কথা বলার সময় এখন নাই আমি আমাকে তোর হাতে সপে দিলাম তুই যা খুশি করতে পারিস।
সুমিতের চোখ চকচক করে উঠে। সে তার জায়গা থেকে আর একপা এগিয়ে আসে। মৌমিতা দুই বাহু দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে তার কাছে টানে। মৌমিতার চোখে চোখ রাখে।
সুমিত ভেবেছিল দেখবে মৌমিতার চোখ জলে ভরে গেছে। কিন্তু না। তাঁর চোখে যেন বিজয়িনীর হাঁসি।
মৌমিতা বলে সুমিত সময় খুবি কম।
সুমিত তাঁকে ছেড়েদেয়। নিজেকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করে। একি হচ্ছে তাঁর। আজ তাঁর প্রিয় মানুষটিকে কাছে পেয়েও কেন সে পরাজিত। তাঁর চোখ কেন ভিজে আসছে। সে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সে শুধু মৌমিতাকে বলে যা সবাইকে তৈরী হতে বল। আমি আসছি, বলে সে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পরে।
মৌমিতা তাঁর ওড়না টা তুলেনিয়ে হাঁসি মুখে বেড়িয়ে যায়।
চার
আসাদ বিশ জনের একটা দল নিয়ে র“লিং করে করে এগিয়ে যাচ্ছে স্কুল ঘরটার দিকে। মাঝে মাঝে পিছনদিকে ফিরে দেখছে সুমিতদের দেখা যায় কিনা। এত¶ণে তো ওদের এসে পড়ার কথা। ওরা না আসা পর্যš— পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা যাবেনা। আবার বেশি দেরী করলে ভোরের আলো ফুটে উঠবে। আসাদ ভাবে সে তার পান মত এগিয়ে যাবে। সুমিত নিশ্চয়ই সময় মত পৌঁছে যাবে। আসাদ তাঁর সঙ্গীদের ইশারা দেয় নির্দিষ্ট দূর“ত্বে চলে যেতে। তারা এখনি এ্যটাক করবে। অনেকেই পিছন ছিরে একবার দেখে, কিন্তু নেতার নির্দেশ অমান্য করেনা কেউ। জীবন নিয়ে হোক আর দিয়ে হোক দেশকে শত্র“ মুক্ত করাই একমাত্র কাজ তাদের। তারা সবাই যার যার অবস্থানে গিয়ে এক মিনিট অপে¶া করে এরপর কাজটা খুব জটিল। কারণ তারা এদিক থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে দ্র“ত সরে যেতে হবে পিছন দিকটাতে। পাকবাহিনী এদিকটাতে এগিয়ে আসবে, আক্রমণ করবে। কিন্তু সে সময়টাতে এদিক টাতে কেউ থাকবেনা। ঠিক তখন আসাদ তার দল নিয়ে পিছন দিক থেকে আবার আক্রমণ করবে। তত¶ণে সুমিত এদিক টাতে পৌছে যাবে। এদিক থেকে ওরা আক্রমণ করবে আর ওদিক থেকে আসাদরা পাকবাহিনীকে দিশে হারা করে ফেলতে হবে।
আসাদ প্রথমে এদিক থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পিছনদিকে যেতে থাকে। সুমিত একটু দেরী করে ফেলেছে। তাই প্রাণ পণ চেষ্টা করছে দ্র“ত পৌছানোর জন্য। ঝোপের আড়াল থেকে বের হয়ে আসাদ মাত্র পুকুর পারে এসে দাড়িয়েছে আর ওমনি একটা গুলি এসে লাগে আসাদের তল পেটের ডান ধারের এক টুকরা মাংস খুলেনিয়ে বেড়িয়ে যায়। আসাদ শুয়ে পরে পিছন দিকে ইসারা দেয় সামনে না আসতে। আরো কয়েক টি ফায়ারিং হয়। আসাদ এবার সবাইকে বলে পিছনে সরে যেতে। এত¶ণে সুমিত এসে পৌছায় তার নির্ধারিত জায়গাতে গুলি শুর“ করে। কিন্তু তত¶ণে দেরী হয়ে গেছে। আসাদের দিকে পাকসেনাদের একটি দল এগুতে থাকে। আসাদ একাই থেমে থেমে গুলি করে। অপরদিক হতে সুমিতদের উপরও আক্রমণ হতে থাকে। মুক্তিসেনারা পিছু হাটতে বাধ্য হয়। আসাদের সাথে যারা ছিল তাঁরা সুমিতের দলের সাথে মিশে। সুমিতকে ঘটনা জানায়। সুমিত সবাইকে পিছু হাটতে বলে সে একা দিক থেকে বেকাপদিতে চায়। কিন্তু মৌমিতা তাতে বাঁধা দেয়।
সুমিত আসাদ আহত হয়তো পাকসেনাদের হাতে ধরা পরতে পারে। এই অবস্থায় যদি তোরও কিছু হয় তবে বিরাট সমস্যায় পরতে হবে। তারচেয়ে অন্যকেউ থাকুক। বরংচ্ আমি থাকি তোরা সব যা।
সুমিত জোর গলায় অ¯^ীকৃতি জানায়। কিন্তু পিছন থেকে কয়েকজন বলে উঠে মৌমিতা ঠিকই বলেছে। এখন আমাদের কাছে ব্যক্তির চেয়ে দেশ অনেক বড়। তোর অনেক দরকার। আমরা আবার আসবো এই ঘাটি অবশ্যই আমরা মুক্ত করবো।
মৌমিতা আবার বলে- সুমিত তোরা সব যা। আমি ট্যাকেল করছি। ওরা কাছাকাছি এসে পরছে। তাড়াতড়ি যা।
সুমিত আর প্রতিবাদ করেতে পারে না। ওরা সবাই পিছু হাটতে থাকে। সুমিত মৌমিতাকে প্রশ্ন করে আমি তোর শত্র“ তার পরও তুই আমার জন্য নিজের জীবন দিচ্ছিস।
তুই আমার শত্র“ কোনদিন ছিলিনা আজো নস। আর আমি তোর জন্য এটা করছিনা, আজকে এখানে আসাদ থাকলেও আমি একি কাজ করতাম। যা করছি সব দেশের জন্য। সবার আগে দেশ। তারপর . . . .।
মৌমিতা কথা শেষ করতে পারেনা। কয়েকটা গুলি ছুটে এসে বিধে ঠিক তার ফুট খানেক দূরে। মৌমিতা ঘুরে পাল্টা জবাব দেয়।
অপর পাশ হতে এতো¶ণ গুলির শব্দশোনা যাচ্ছিল। এখন আর হচ্ছেনা। মনে হয় আসাদ..। না । মৌমিতা আর কিছু ভাবতে চায় না সে আবার থেমে থেমে গুলি চালাতে থাকে।
আধঘন্টা এই রকম চলে। মৌমিতার গুলি শেষ। সে অপে¶া করতে থাকে পাকসেনাদের জন্য। এরচেয়ে বেশি আর কিছুই করার নাই। সে আপন মনে ভাবে, দেশটা ¯^াধীন হবেতো? অবশ্যই হবে। আপন মনেই উত্তর দেয়।
মৌমিতা ল¶্য করে পাকসেনারা তাঁর কয়েক গজ দূরে দাঁড়িয়ে। হুংকার দিচ্ছে। বের হোকে আজা মুক্তিকা বাচ্চা।
মৌমিতা মাথার উপর বন্দুকটি তুলে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসে।
পাঁচ
সুমিতরা ক্যাম্পে ফিরে আসে। নিজের ভুলে আজ এমন হ’ল। বারবার শুধু তাঁর এমন মনে হচ্ছে। সে জহির স্যারকে কিছু বলার আগেই জুনায়েদ বলে স্যার আমাদের কিছু ভুলে আজ এমন হয়েছে।
জহির স্যার বলে- কি ভুল?
স্যার আমরা ভেবেছিলাম আমরা সহজেই পুকুরটা পার হয়ে উল্টো পাশে চলে যাব। কিন্তু ওরা এই জায়গাটাকে বিশেষ ভাবে টার্গেট করে রেখেছিল। ওরা পানিকে বেশি ভয় পায় বলেই এদিকটাকে ওরা বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে। আমরা পুকুর পাড়ে তাই ঢুকার আগেই আসাদকে ওরা টার্গেট করেছে। আমারা আমাদের দুইজন সাহসী যোদ্ধাকে হারিয়েছি।
জহির স্যার সব শুনে বলে। আমরা কালই আবার এ্যাটাক করবো। আজকে করতে পারলে ভাল হতো কিন্তু ওরা দিনের বেলা বেশি সচেতন। তাই কালই আমরা যাব। সুমিত তুমি আসাদের দল নিয়ে। সরাসরি পিছন দিকদিয়ে যাবে। আর আমি সামনে দিয়ে ঢুকবো।
সুমিত কিছু বলতে চায়। কিন্তু কিছু বলতে পারেনা। সে শুধু ভাবে তবে কি তাঁর ভুলে এমনটা হয়নি। সে যদি দুই মিনিট আগে পৌছাতো তবে কি একই ঘটনা ঘটতো!
পরদিন রাতে আবার সুমিত তাঁরদল নিয়ে এগুতে থাকে এবার তাঁরা পুকুরে মাঝ বরাবর পানিতে নেমে পড়ে গলা পর্যš— পানি সুমিত একবার জিজ্ঞাসা করে সবাই সাঁতার পারতো ? কেউ কোন উত্তর দেয়না সম্মতি সুলভ কয়েক জন শুধু মাথা নাড়ে। সুমিত সবই বুঝে কারণ সেও ভাল সাতার জানেনা তবে শুনেছে এখানে পানি খুব বেশি নয়। কোথাও কোথাও গভীরতা গলা পর্যš—। সুমিত ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। পুকুরের অপর প্রাšে— উঠে দুই কনুইতে ভরদিয়ে র“লিং করতে করতে এগিয়ে যেতে থাকে। ঠিক পিছনে পৌছে অপে¶া করতে থাকে প্রথম গুলির শব্দের। প্রথম গুলি হওয়ার দুই মিনিট পর সুমিতরা গুলি শুর“ করবে। কিছু¶নের মধ্যেই প্রথম গুলির শব্দ পাওয়া গেল। এরপর দুই ঘন্টায় ঘটে গেছে অনেক কিছু। সুমিত পাগলের মত প্রতিটি র“মে র“মে খুঁজতে থাকে হঠাৎ একটি ক¶ে দু’জন লোক মেঝেতে পড়ে আছে একজন লোক চেয়ারের সাথে হাত-পা বাধা অবস্থায় হেলে পড়ে আছে। দরজা খুলার সাথে সাথে চেয়ারে বসা লোকটা গোংগানের শব্দ করে। সুমিত দৌড়ে যায়। আসাদ আমি সুমিত তুই আমাকে চিনতে পারছিস।
আসাদ ধীরে ধীরে মাথাটা তোলে। সুমিত তুই এখানে।
আমরা এই ক্যাম্প দখল করে নিয়েছি। তোর কি অবস্থা।
মনে হয় এ যাত্রায় আর ফিরা হবেনারে।
কি সব আবল তাবল বলছিস। তোর কিচ্ছু হবেনা। বলে সুমিত আসাদ কে বাঁধন খুলে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। দেখে ওর সারা শরীরে ¶তচিহ্ন। মনে হয় ছুরি বা বেয়নটের মাথাদিয়ে খুচিয়েছে। পেটের একপাশে ছোপ ছোপ রক্ত জমে আছে। প্রচুর রক্ত¶রণ হয়েছে। আসাদ আবার বসে পড়ে। সুমিত কি করবে বুঝতে পারেনা। দরজার কাছে যায় একবার আবার ফিরে আসে। সকালের আলো ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে। মেঝের একপাশে পড়ে থাকা লাশ দুটাকে সুমিত একটু পরখ করে। না বেঁচে নেই। এক কোনে রাখা ছোট একটি মাটির কলস হতে জল আনে আসাদ কে খাওয়ায়। আসাদ কে মনে হয় কাল হতে কিছুই খেতে দেয়নি। এমনকি জলও না।
আসাদ বলে উঠে জহির স্যার কোথায়, মৌমিতা কোথায়।
সুমিত আসাদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। সে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। আ¯ে— আ¯ে— বলতে থাকে আমি পারিনি। আমি পারিনি। ওকে র¶া করতে। আমাদের জীবন র¶ার জন্য ও নিজের জিবন....। সুমিত কথা শেষ করতে পারেনা। আবার কাঁদতে থাকে।
আসাদ সুমিতকে শাš—না দেয়। আরে পাগল কাঁদছিস কেন। আমি হলেও তাই করতাম তুই হলেও তাই করতি। প্রশ্নটা এখন দেশের এখানে আর কোন সম্পর্কের দরকার নেই।
আসাদ না। তুই কিছুই জানিস না। আমি তোদের বন্ধু হলেও অš—রে বৈরিতা বয়ে বেরিয়েছি। তুই সব শুনলে আমাকে ¶মা করবিনা।
সুমিত শোন শাš— হ। আমি কিছু জানতে চাই না। আমি যা বুঝেছি তুই এখন পূর্ণ একজন দেশ প্রেমিক। আলাহ বলেছেন, দেশ প্রেম ইমানের অঙ্গ। সেখানে কেন আমি তোকে কুলসিত করব। তুই কেন যুদ্ধে এসেছিস আমি তা জানতে চাইনা। কিন্তু তুই এখন দেশকে, দেশের মানুষকে র¶ার জন্য নিজেকে সম্পূর্ন র“পে ¯^পে দিয়েছিস।
তারপরও। সুমিত প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে।
আসাদ সুমিতকে থামিয়ে দেয়। থাকনা এসব না হয় ¯^াধীন দেশে কোন অশ্বথের নিচে বসে শুনবো তোর এই ইতিহাস। এখন সময় নতুন ইতিহাস রচনার তাই কর।
মিনিট পাঁচেক পার হয়ে গেছে। অপরাধীর মত সুমিত মাথা নিচু করে বসে আছে। হঠাৎ তার কাঁধে একটি নরম হাত এসে পরে। সুমিত ঘুরে দেখে ছিন্ন বিবর্ণ পোশাকে মৌমিতা দাড়িয়ে। সুমিত দাড়িয়ে মৌমিতাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত কাঁদতে থাকে।
মৌমিতা তুই বেঁচে আছিস। তুই বেঁচে আছিস। আসাদ দেখ মৌমিতা বেঁচে আছে। মৌমিতা বেঁচে আছে বলে আসাদের হাত ধরে টান দেয় কিন্তু কেমন পিছলিয়ে আসাদের হাতখানা সুমিতের হাত হতে ফসকে যায় সুমিত মৌমিতাকে ছেড়ে দিয়ে আসাদের কাছে ছুটে যায়। আসাদ আসাদ বলে ডাকতে থাকে। ঘুরে মৌমিতার দিকে তাকায় আবার ডাকে আসাদ ওঠ। মৌমিতা আসাদ কিছু বলছেনা কেন।
মৌমিতা এবার সুমিত কে টেনে দাড় করায়। সুমিত আসাদ আর নেই।
সুমিত আবার চিৎকার করে উঠে।
মৌমিতা বলে সুমিত এখন কাঁদবার সময় নয়। আসাদ শহীদ হয়েছে যে ল¶ নিয়ে তা পূরণ করতে হবে। শত শত মানুষ আজ নিজেকে নিয়ে ভাবা ছেড়ে দিয়েছে। চল ল¶ পূরণে। বড় কিছু অর্জনে কিছু বিসর্জন তো থাকবেই।
১৯ জানুয়ারী - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
১১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪