আকাশ চৈতিকে প্রথম যেদিন দেখেছিল সেদিন ই ওর প্রেমে পরে গিয়েছিলো। নীল শাড়ি পরেছিলো মেয়েটা। কানের দুল হাতের চুরি সব কিছুই নীল। এত সুন্দর মেয়ে আগে কখনো দেখিনি আকাশ। এর পর অনেক দিন ও খুঁজেছে মেয়েটাকে। তবে খুঁজে পায়নি। ১ দিন দুই দিন তিন দিন করে সপ্তাহ ঘুরে মাস এভাবে তিন মাস চলে যায় অবশেষে দুজনের দেখা মিলে। এক বসন্তের সকালে - আপনি কোথায় ছিলেন এতদিন? - কোথায় ছিলাম মানে? কে আপনি? - আমাকে আপনি চিনবেন না। কিন্তু আপনাকে সেদিন দেখার পর যে কত খুজেছি। অবশেষে আজ পেলাম। - আজব তো আপনি আমাকে চেনেন না জানেন না একদিন কোথায় দেখেই আমার পিছে লেগেছেন। মতলব কি বলেন তো? - মতলব আবার কি বুঝেন না আমি আপনার প্রেমে পরেছি আই লাভ ইউ। কথাটা শোনার সাথে সাথে চলে যায় চৈতি। আকাশ বুঝতে পারে ও পাগোল হয়ে গেছে। খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে ও আজ। প্রথম দেখায় কথাটা বলা ঠিক হয়নি। বাসায় এসেছে চৈতি। মন খারাপ করে বসে আছে। ওর ছোট বোন রুপসা, আপুর মন খারাপ দেখে ওকে জিঞ্জাস করল, কি হয়েছে আপি? চৈতি বলল, কিছু না। রুপসা বলল, কিছু না বললেই হবে তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্চে সাম থিং সাম থিং। বলো না পি প্লিজ। চৈতি রুপসাকে সব খুলে বলল। রুপসা বলল ওয়াও আপু বল কি? কেমন দেখতে ছেলেটা? লম্বা না বেটে? চোখে কি চশমা পরে? পরনে কি ছিলো?" রুপসার কথা শোনে রাগ আরো বেড়ে যায় চৈতির। ওখান থেকে উঠে ঘরে চলে যায়। কিছুতেই যখন মন ভালো হয়না তখন কবিতা পরে চৈতি। রবীন্দ্রনাথ নজরুল কিংবা নবিন কবি আরিফুল ইসলাম। আরিফের লেখা খুব ভালো লাগে ওর। তবে আরিফ কবিতার বই প্রকাশ করেনা। যা লেখে ফেসবুকে। আরিফ কে অনেক বার নক করেছে চৈতি কিন্তু আরিফ রিপলাই খুব কম ই করে। আজ ফেসবুকে ঢুকে আরিফের কবিতা পরলো চৈতি। নিমিষে মন ভালো হয়ে গেল। সেদিন চৈতির পেছন পেছন এসেছিলো আকাশ। ওদের বাসা টা চিনে গেছে। রোজ ১০ টায় ঘুম থেকে উঠলেও আজ উঠেছে সকাল ছটায়। ৭ টার মধ্যে চৈতির বাসায় সামনে চলে এসেছে। অপেক্ষায় আছে কখন চৈতি বের হবে। সারা রাত যাকে দেখার জন্য ছটফট করেছে ও। তাকে একবার দেখবে। ১০ টা বেজে গেলো এখনো চৈতির দেখা নেই। পাশের চায়ের দোকান থেকে ছয় কাপ চা খেয়ে ফেলেছে আকাশ। আর যে সময় কাটেনা। ১১ টার দিকে বেরহলো চৈতি। আকাশ ওর সামনে গেলোনা। আজ ওর ইচ্ছা চৈতির পিছু নেবে। পিছু নিয়ে চৈতির ভার্সিটির সামনে চলে এল আকাশ। এর পর ওর জন্য ওয়েট করতে লাগলো। চৈতি ভার্সিটি থেকে বের হয়ে দেখে দাড়িয়ে আছে আকাশ। - কেমন আছো তুমি? - আপনি আবার? আমাকে আবার তুমি বলে বলছেন? ওহ গড। - তুমি না চাইলে আর তুমি বলে ডাকবো না। তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো.. -না আমার সাথে আপনার কোন কথা নেই। আর দয়া করে তুমি বলবেন না। আজ ও চৈতি চলে গেলো। আকাশ কিছুতেই ওকে বোঝাতে পারলো না যে ও সত্যি সত্যি খুব ভালোবাসে চৈতিকে। চৈতিকে ছাড়া ও এক মূহুত্ব থাকতে পারছেনা। চৈতির মনটা আজ খুব ভালো। আজ আরিফ ওর ফ্রেন্ড রুকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে। কিন্তু বাসা থেকে বের হয়ে আর মেজাজটা ভালো থাকলো না। আকাশ হাজির। রিকশা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। - আপনি এখানে? -জি প্রথম যেদিন কথা হলো সেদিন ই আপনার পিছু নিয়েছিলাম। - স্টুপিড। মেয়েদের পিছে লাগা ছাড়া কি আর আপনার কোন কাজ নেই? আমার ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি যাই। -আপনার রোজ রিকশা খুজতে হয় দেখে আমি রিকশা নিয়ে এসেছি। - আপনি কি করে ভাবলেন আপনার ডাকা রিকশায় আমি যাবো??? চৈতি অন্য একটা রিকশা ডেকে চলে গেলো। আকাশ বূঝতে পারছেনা কিভাবে চৈতিকে বুঝাবে, ও বাজে ছেলে নয়। চৈতিকে ও খুব ভালোবাসে। আজ আরিফকে চ্যাটে পেলো চৈতি । - আরিফ সাহেব - জি বলুন - আপনি জানেননা আমি আপনার কত বড় ফ্যান। আপনার কবিতা পরে আমি ঘুমাতে যাই। ঘুম থেকে উঠে ও আপনার কবিতা। যখন কিছুতে মন ভালো না হয় আপনার কবিতা পরে মন ভালো হয়ে যায়। -তাই নাকি? এত ভালো লেখি জানতাম না তো। ধন্যবাদ আপনাকে। বাই আরেক দিন কথা হবে। আরিফ কে যত দেখছে ততো মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে চৈতি। ছেলেটা শুধু কবিতাই লিখেনা দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে যেমন ও ভাবে তেমন তাদের জন্য করেও। একটা বৃদ্ধাশ্রম চালায় ছেলেটা। চালায় একটা পথ স্কুল। দেশে প্রায় ১০ লাখ পথ শিশু আছে যারা অন্যান্য শিশুদের চেয়ে আলাদা। ছোট বেলা থেকে পেটের দায়ে কাজ করতে হয় ওদের। যার ফলে লেখাপড়া করা হয়ে উঠে না। পরিবেশের চাপে নষ্ট হয়ে যায়। আরিফ এমন কিছু পথশিশুর দায়িত্ব নিয়েছে। ওদের সাধারন শিশুর মত বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছে। ওর ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছে আরো কিছু লোক। দেশের সব তরুনরা যদি ওর মত এই শিশুগুলোর পাশে দাঁড়াতো একদিন দেশ থেকে মুছে যেতে সুবিধা বঞ্চিতদের দল। চৈতি একটা বিপদে পরেছে। বাসা থেকে টাকা না নিয়ে বের হয়েছে আজ ও। রিকশা থেকে নেমে ও ব্যপারটা প্রথম খেয়াল করে। কি করবে ভাবতে না ভাবতে আকাশ হাজির। রিকশার ভাড়া দিয়ে চৈতিকে বিপদটা থেকে ঊদ্ধার করে ও। চৈতি ধন্যবাদ না দিয়ে বলল "আজ ও আপনি? আমার পিছ কি ছাড়বেন না আপনি?? আকাশ বলল "আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। আমার কথা মন দিয়ে শুনুন বুঝতে পারবেন। চৈতি বলল "আপনার মত ফালতু লোকের কথা শোনার টাইম আমার হাতে নাই। কাল এসে আপনার টাকা টা নিয়ে যাবেন আর কখন আমাকে ডিসটার্ব করবেন না। আপনার জন্য আমার লাইফটা অসহ্য হয়ে গেছে।" আকাশের উপর আকাশ ভেঙ্গে পরলো। দুচোখ জলে ভরে গেলো ওর। কিছু না বলে ওখান থেকে চলে গেলো আকাশ। ৭ দিন হয়ে গেছে চৈতি কে আর কেউ বিরক্ত করেনা। চৈতির খুশি হবার কথা। তবে ও কেন জানি খুশি হতে পারছেনা। কেন জানি আকাশকে ও খুব মিস করছে। ও ছেলেটাকে অনেক বেশি বলে ফেলেছে। ছেলেটার তো ওর কোন ক্ষতি করেনি। রুপসা এসে একটা চিঠি দিয়ে গেল চৈতিকে। চায়ের দোকানদার মতি চাচা দিয়ে গেছে চিঠিটা। চৈতি চিঠিটা খুললো। প্রিয় নীলপরি, তোমাকে প্রথম যেদিন দেখি তোমার প্রেমে পরে যাই। নীল শাড়ি পরেছিলে সেদিন। এত সুন্দর লাগছিলো মনে হচ্ছিলো আকাশ থেকে নীল পরি নেমে এসেছে। হুট করে তুমি কোথায় জানি চলে গেলে। আর খুজে পেলাম না। ঘুমতে পারিনি অনেক গুলো রাত। খাওয়া নাওয়া সব হারাম করে দিয়েছিলে। অবশেষে আবার দেখা পেলাম। এতটা অস্থির ছিলাম যে প্রথম দেখায় আই লাভ ইউ বলে ফেলছিলাম। যাতে তুমি আমাকে ভুল বুঝলে। তোমাকে দেখার জন্য খুব সকালে তোমার বাসার সামনে বসে থাকতাম। তোমার পিছে জোকের মত লেগে থাকতাম। তবে তোমাকে বুঝাতে পারলাম না কতটা ভালোবাসি। যখন শুনলাম আমাকে তোমার অসহ্য লাগে। তখন ই বুঝতে পারলাম ভালোবাসা এক তরফা হয়না। ৬ টা দিন খুব কষ্ট হয়েছে তোমাকে ছাড়া থাকতে। আর পারছিনা তাই শেষবারের মতো লিখলাম। ভালো থেকো তুমি। আমাকে ক্ষমা করে দিও। ইতি আকাশ চৈতি নিজের ভুল বুঝতে পারলো। ভুলের এত বড় মাশুল দিতে হবে তা চৈতি বুঝতে পারেনি। এখন ও আকাশ কে কই খুঁজবে। ও যে জানেনা আকাশের ঠিকানা। ফেসবুকে সার্চ দিয়ে দেখবে নাকি ভাবলো। সাথে সাথে ফেসবুকে বসল চৈতি। অনেক আকাশ পেলো তবে না ওর আকাশেকে আর খুজে পেলোনা। ফেসবুক থেকে বের হবে এমন সময় একটা পোষ্ট দেখে থমকে দাড়ালো। নবিন প্রতিভাবান কবি আরিফুল ইসলাম মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। সবাই তার জন্য দুয়া করবেন। চমকে উঠার কারন শুধু এটা নয়। চমকে উঠার কারন টা হলো আরিফুল ইসলামের ছবির জায়গায় আকাশের ছবি। তার মানে আরিফুল ইসলামই আকাশ? -আন্টি আমি চৈতি আমার জন্য আজ আপনার ছেলের এই অবস্থা। আমাকে মেরে ফেলুন। - ছি মা কি বলছো এই সব। তোমার কেন দোষ হবে? শান্ত হও মা। -আন্টি আপনি ও তো খুব সিক হয়ে গেছেন ঘুরে আসুন বাড়ি থেকে। -না মা, আমি কোথাও যাবোনা আমি এখানেই থাকবো ( কাঁদতে কাঁদতে) - আন্টি জানি ছেলের এ অবস্থায় কোন মা শান্ত থাকতে পারেনা। তবুও বলছি আন্টি শান্ত হোন। আর বাড়ি যান। আমার উপর ভরসা রাখেন আন্টি। -মাগো ছেলেটা ছাড়া আমার কেউ নেই। ও বাঁচবে তো? - নিশ্চয় বাঁচবে আন্টি আর আমি আছি। আমি আপনাকে ছাড়া কোথাও যাবো না। ওনাকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে বাড়িতে পাঠালো চৈতি। শুধু চৈতি না ওর পুরো পরিবার এসেছে এখানে। ওকে খুব বকেছে ওনারা। ডাক্তাররা সব আসা ছেড়ে দিয়েছে। বলছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে ওকে আর বাচানো যাবেনা। এখনো জ্ঞান ফিরেনি আকাশের। এখন সব উপর আলার কাছে। চৈতি বসে আছে ওর পাশে। ঘরে ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। চৈতি নীল শাড়ি পরেছে নীলাভ কানের দুল হাত নীল চুরি। এক মনে ও আকাশের সাথে কথা বলছে আর চোখের জল ফেলছে। আকাশ নিঃচুপ। চৈতি বলছে আকাশ আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলছি। ফেসবুকে তোমার কবিতার প্রেমে এতটাই বিভোর ছিলাম যে অন্য সব ব্যাপারের প্রতি অনেকটা সার্থপর হয়ে যাই। তুমি যদি ফেসবুকে তোমার ছবি দিতে এই ভুলটা কখনো হত না। অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায়। একবার বুঝার চেষ্টা করিনি। তোমার এই আজকের অবস্থার জন্য আমি দায়ি। তবে দুনিয়ায় যে ভুলটা করেছি ঐ ভুলটা আর করবনা আমি। বিষ নিয়ে এসেছি। বিষ খেয়ে তোমার বুকে শুয়ে পরব। আই লাম ইউ বলেছিলে তুমি আমি কিন্তু উত্তর দেই নি। এখন দিচ্ছি আই লাভ ইউ ট্যু আকাশ। আই লাভ ইউ সো মাচ। " বিশেষ শিশির মুখ খুললো চৈতি। আকাশ কে শেষবার মত আই লাভ ইউ বলল। চোখের পানি মুছে বিষটা মুখে নিতেই ওর হাত ধরে ফেললো আকাশ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রবিউল ই রুবেন
চমৎকার লেখা। ভালোবাসা ও ভোট রেখে গেলাম। আমার গল্প ও কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।