পৃথিবীতে ভয় পাবার মতো অনেক কিছু রয়েছে। জন্মলগ্ন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিক্ষণ প্রতি মুহূর্ত মানুষ ভয়ের মধ্যে জীবন কাটায়। কেউ ভয় পায় প্রেতাত্মাদের, আর কেউ ভয় পায় হিংস্র ও বিষাক্ত প্রাণীদের। আবার কেউ কেউ হিংস্র প্রাণীদের চেয়ে বেশি ভয় পায় পাগলদের। গ্রামে-গঞ্জে চোর-ডাকাত ভয়ে অনেকে নির্ঘুম রাত কাটায়। ব্যবসায়ী কিংবা ধনী ব্যক্তিরা সন্ত্রাসের ভয়ে জিম্মি থাকে। নেতারা ভয় পায় বিরোধীদের। আবার পুরুষরা ভয় পায় ঝগড়াটে মহিলাদের। আমি শৈশব থেকেই একটু সাহসী ছিলাম। আমার মধ্যে কোন ভয়-ভীতি কাজ করতো না। শুধু স্যারের হাতের লাঠিকে একটু ভয় পেতাম। কারণ স্যারের হাতে লাঠি দেখলে ভয়ে আমার গলা শুকানোর সাথে সাথে হাত-পাও যেন শুকিয়ে যেত। সেই ভয়ে হয়তো আজও আমার হাতে পায়ে তেমন স্বাস্থ্য হয়ে উঠেনি। প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার তেমন কোন ভয় ছিল না। কারণ আমার রেজাল্ট সব সময়ই ভাল ছিল। নবম শ্রেণীতে পা রাখার পর বেতের ভয়ও অনেকটা কমে গেছে। তখন স্যারদের বেতের ব্যবহার তেমন একটা নজরে পড়েনি। এক এক করে সব ধরনের ভয় যখন মন থেকে উড়াল দিচ্ছিল ঠিক সেই সময়ই সবচেয়ে বড় ধরণের ভয়টা এসে মনের কোণে বাসা বাধল। উহঃ কি সেই ভয়ানক মুহূর্ত। সেই কথা মনে হলে আজও শরীরের পশমগুলোতে শিহরণ জাগে। সজারুর কাঁটার মতো দাড়ায় মাথার চুলগুলো। এতো ভয় পেতাম সেই মুহূর্তটিকে যে মনে হলেই মুখের থু থু বুকে মেশাই। সুপ্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো ভাবছেন, কি এমন ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে। একটু ধৈর্য ধরুন বলছি। তার আগে আপনাদের জানিয়ে নেই আমার সাহসিকতার কিছু কথা। আমি অমানিশার অন্ধকারে হেটে হেটে কবরস্থান ও শ্মশান পাড়ি দিয়েছি। বৃষ্টি ভেজা গভীর রাতে একাকী জঙ্গল পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরেছি। প্রেতাত্মাদের সহিত বলেন আর জ্বিন ভূত-ই বলেন তাদের সাথেও নির্ভয়ে কথা বলতে বলতে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরেছি। এদের চেয়ে ভয়ানক কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু ঐ ভয়ানক কাজটি করতে গিয়ে আমার মাথার অর্ধেক চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল। যা পরবর্তী সময় দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজও আয়নার সামনে দাঁড়ালে মাথায় সাদা চুল দেখলে সেই মুহূর্তের কথা মনে পড়ে। আমার বউ বিয়ের প্রথম রাত্রেই মাথার সাদা চুল দেখে কান্না জুড়ে দিয়েছিল। বিয়ের প্রথম রাত সবার নাকি মধুময় হয়। কেউ নাকি সে রাতে ঘুমাতে পারে না। আমিও ঘুমাইনি তবে সারারাত বউয়ের সাথে মাথার চুল নিয়েই কথা হয়েছিল অন্য কোন বিষয় নয়। শেষ পর্যন্ত শিক্ষকতার সার্টিফিকেট দেখিয়ে তাকে একটু ঠান্ডা করেছিলাম। পাঠক বন্ধুরা আপনারা কিন্তু আবার আমার বউকে সেসব কথা বলবেন না। বললে কিন্তু আমার সর্বনাশ হবে। আমার প্রাণ-প্রিয় বউটা সোনার সংসার ফেলে মঙ্গল গ্রহে পাড়ি দেবে। আমি এমনিতেই ভয় নিয়ে গল্প লিখতে বসে বউকে ভীষণ ভয় পাচ্ছি। কারণ গল্পটা যদি সে পড়ে ফেলে তাহলে আমার কপালে ----- আর বললাম না। গল্প লেখার পূর্বে আমি আমার বউকে আদর করে একটি ম্যাংগো জুস খাইয়েছিলাম। যাতে করে সে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। না-না ম্যাংগো জুস খেলে তাড়াতাড়ি ঘুম পায় সে রকম কিছু নয়। আসলে ম্যাগো জুসের সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছিলাম আর কি। যাক আপনারা তো আর আমার বউকে কিছু বলবেন না। তাই ঘটনাটা আপনাদের জন্য লিখতে বসলাম আর কি। আমার গল্পটা বউ জানলে কেন অসুবিধা হবে সে কথা বলছি, আমার ভয়ের কারণটা হলো একটা মেয়েকে আমি। ছিঃ ছিঃ যেমন ভাবছেন তেমন কিছু নয়। আমি আসলে এতোটা খারাপ নই। আমার মতো মানুষ কি নোংরামী কোন কাজ করতে পারে? যা করেছি তা ঐ মেয়েটিকে বাঁচাতে করেছি। তাহলে কি কাউকে খুন করেছি ভাবতেছেন? সেটা অন্তত আমার পক্ষে অসম্ভব। কারণ আমি সাইকেল চালাতে গিয়ে রাস্তায় একটি পিঁপড়ের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে নিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে গিয়েছিলাম। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ছোট খাটো কাজ আমি স্বপ্নেও করেছি বলে মনে হয় না। একদিন নিজের বাড়ি থেকে এক টুকরো গোস্তা সবার অগোচরে খেতে গিয়ে ধরা পড়েছিলাম বাড়িতে থাকা কুকুরের কাছে। সে এমন ভাবে আমার দিতে তাকাচ্ছিল যে, তাকে এক টুকরো না দিলে সে সাবাইকে বলে দিবে। যাক সেসব কথা বাদ দিয়ে আসল কথায় আসি। আমি সাহসিকতার দরুন গ্রামে বেশ কয়েকবার কিংবদন্তীর পুরুষকারও পেয়েছিলাম। আমার মতো বীর পুরুষের আবার কিসের ভয় থাকতে পারে সেটাইতো জানতে চাচ্ছেন তাই না। তাহলে শুনুন, আপনি একটু সাহস সঞ্চয় করে শক্ত হয়ে বসুন। আশে-পাশে কেউ আছে কিনা দেখে নিন। যাদের হার্ট দুর্বল তারা আমার গল্পের শেষ কথা না শুনেই ঘুমিয়ে যান। কারণ আমার কথা শুনলে রাত্রে বাহিরে যাওয়া দূরের কথা ঘরের টয়লেট ব্যবহার করতেও ভয় পাবেন। সবাই যদি প্রস্তুত থাকেন তাহলে বলি, কি বলেন, বলব? ভয় পেলে কিন্তু পরে আমাকে দোষারোপ করতে পারবেন না। ঐ যে বলার পূর্বেই একজন ভয়ে নিজের কাপড় ভিজিয়ে ফেলেছে। যাক ভয় পেলেও কিচ্ছু করার নেই আমাকে ভয়ের কথা অবশ্যই বলতে হবে। আমার বউ এখনো গভীর ঘুমে। তাই দেরী না করে বলেই ফেলি, বিয়ের পূর্বে আমি একটি মেয়েকে ভালবাসতাম। সেও আমাকে খুব ভালোবাসতো ও বিশ্বাস করতো। একদিন সে আমাকে সন্দেহ বলে বসলো। আমি নাকি অন্য কোন মেয়ের সাথে মেলামেশা করি। তাকে কিছুতেই বুঝাতে পারলাম না যে, আমি অন্য কোন মেয়েকে পছন্দ করি না। সে তখন বলল আমি যদি তাকে আজই ইয়ে করি। তাহলে সে বুঝবে যে, আমি শুধু তাকে ভালোবাসি। কথাটি শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। আমি থতমত খেয়ে বললাম, কি বলছ তুমি পাগলের মতো, আমার ধারা এখন সেটা সম্ভব নয়। সে বলল, যদি তুমি আজ আমাকে ইয়ে না করো তাহলে বুঝব তুমি অন্য কোন মেয়েকে ভালোবাসো আর আমিও আত্মহত্যা করব। সেদিন সত্যি আমি তাকে বাঁচাতে গিয়ে ইয়ে করেছিলাম। সুপ্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো আমাকে ভাবছেন সেই ইয়েটা আসলে কি? আর তার সাথে ইয়ে করে কেন অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছি। আসলে সেদিনের সেই ইয়েটাই আমার সবচেয়ে বেশি ভয়ের কারণ ছিল। সেদিন পৃথিবীর কোন মানুষের কথা না ভেবে শুধু সেই মেয়েটির কথা ভেবে তাকে ইয়ে করেছিলাম। আর সেই ইয়ের অর্থ হলো সেই মেয়েটিকে সেদিনই আমি বিয়ে করেছিলাম। সেদিন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক কাজটি আমি করেছিলাম। যা মনে হলে আজও অবিশ্বাস্য মনে হয়। আর সেই ইয়ে করা মেয়েটি এখন আমার বউ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।