চৌধুরী আংকেল আর আমি

ভয় (এপ্রিল ২০১৫)

Mizanur Rahman
  • ১০
  • ১৬
মসজিদের পুকুর ঘাটলায় বসে চৌধুরী আংকেল পুকুরে বড়শির ছিপ ফেললেন। হাতে এখন প্রচুর অবসর সময় থাকায় চৌধুরী আংকেল প্রায় বড়শি দিয়ে মাছ মারেন। চৌধুরী আংকেলের পাশে তিন বছরের সম বয়সি দুইটি বাচ্চা একে অপরের সাথে খেলায় মশগুল। পুকুরটি মসজিদের সাথে লাগোয়া হওয়ায় অনেকে পুকুরে নানান কাজ করতে আসে। তাঁদের মধ্যে কেউ চৌধুরী আংকেলকে জিজ্ঞেস করে- কেমন আছেন চাচা? মাছ-টাছ পাচছেন। আবার কেউ কেউ অতি উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করে- চাচা কেমন আছেন? নাতি-নাতনি নিয়ে তো ভালই মাছ মারেন।
চাচা খটমট হয়ে রেগে- বেয়াদব! মশকরা করস। এগুলো আমার ছেলে, নাতি না।
আচছা বলুনতো সত্তর বছর বয়সের কাছকাছি মানুষের সাথে তিন-চার বছরের বাচ্ছা দেখলে, নাতি-নাতনি না বলে ছেলে-মেয়ে বলবে কেউ? অবশ্য চাচা এর জন্য লজ্জিত নয়, তিনি সগৌরবে বলেন আমার ছেলে। চাচা বন্দরে চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছেন ছয়-সাত বছর হবে আগে পরিবার নিয়ে শহরে থাকতেন। চাচার প্রথম বৌ মারা গেছে আজ থেকে প্রায় আট-নয় বছর আগে। ঐ ঘরে তিন মেয়ে, কোন ছেলে সন্তান নেই। তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন আমেরিকা প্রবাসি ছেলের সাথে। সে বর নিয়ে আমেরিকায় সেটেল। মেঝ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ঢাকায়, সে বর নিয়ে ঢাকায় থাকে। ছোট মেয়ে জেবিন মেঝ মেয়ের সাথে থেকে ঢাকা ইউনিভাসিটিতে ইকোনিমিক্স দ্বিতীয় বষে পড়ছে। চাচীর মৃত্যু ও চাকুরীর অবসরকালীন সময়ের কারনে চৌধুরী আংকেল একেবারে একা হয় পড়ে তাই চৌধুরী আংকেলের তিন মেয়ে জোর করে আরেকটি বিয়ে করান চৌধুরী আংকেলকে দেখভাল করার জন্য। চৌধুরী আংকেল আর নতুন আন্টির বয়সের ব্যবধান তিন বাই এক এর কাছাকাছি। চৌধুরী আংকেল এখন নতুন আন্টিকে নিয়ে গ্রামে থাকেন। চাকুরী শেষের এককালীন টাকা দিয়ে দুটি সিএনজি কিনে ভাড়ায় চালানোর জন্য দিলেন আর মাস শেষে পেনশনের টাকা দিয়ে ভালই দিন কাটেন। বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নতুন আন্টি জোড়া সন্তান জন্ম দিলেন। চৌধুরী আংকেল তাঁর ভেসপার পিছনে নতুন আন্টি ও বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে যান, বাচ্চাদের নিয়ে দুপুরে মসজিদের পুকুরে মাছ মারেন। এক কথায় হ্যাপী ফ্যামেলী।
দুই
কয়েকদিন ধরে বাসায় আমার বিয়ের নিয়ে কথা হচ্ছে। আমার ছোট বোনও শশুর বাড়ী থেকে এসে এই মিছিলে শামিল হল। এরই মধ্যে কয়েকটি মেয়ের খোঁজ খবরও নেওয়া শেষ। রাতের খাবারে টেবিলে বিয়ের কথাটি উপস্থাপন হল। যেহেতু মা ঘরের সব তাই প্রথমে শুরু করলেন- সুজন ও সুহানার বর আসবে জানুয়ারীর দিকে। আমরা মেয়ে দেখতেছি। আমি জেনেও না জানার ভান করে জিজ্ঞেস করলাম- কার জন্য? মা ধমকের সুরে- কার জন্য আবার, তোর জন্য। আমি আর পারছি না। আমি তোদের ঘরনি নাকি? সাথে সাথে আমার ছোট বোন সুহানাও মায়ের কন্ঠের সাথে সুর মিলিয়ে- আমরা মেয়ে দেখতেছি! আমি সুহানার দিকে বড় চোঁখে তাঁকিয়ে- মেয়ে দেখতেছি, মানি! আমাকে না বলে মেয়ে দেখাও শুরু হয়ে গেছে? মা একটু হন্তদন্ত হয়ে বলল- দেখলে কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি! তোর যদি কোন পছন্দ থাকে বল। মা’কে আর এ’প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ভাত খাওয়া শেষ করে বিছনায় বালিশে মাথা দিয়ে মা’য়ের আধুনিকতা দেখে অনেক ভাল লাগলো। মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আমার কোন পছন্দ আছে কিনা! তাই মনে মনে মা’য়ের প্রশ্নের উত্তর দিলাম নিজকে নিজে- মা, আমাদের মত মধ্যবিত্ত ছেলেদের আবার পছন্দ। আমাদের মত ছেলেদের সাথে মেয়ারা প্রেম, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব পযন্ত যেতে পারে। বিয়ে, এটাতো অসম্ভব! বতমান মেয়েদের চাহিদার সাথে মধ্যবিত্ত ছেলেদের যোযন-যোযন ফারাক। যখন আমার তাঁকে পছন্দ ছিল তখন তাঁর চাহিদা পূরণ আমার অসম্ভব ছিল আর এখন তাঁর চাহিদা পূরণ আমার সম্ভব হলেও সে এখন অন্য কারো। আমাদের মত মধ্যবিত্তের স্বপ্নগুলো সাধারনত সময়মত বাস্তবায়ন হয় না। আপনি যদি যদি কারো বাবা হন, বড় ভাই হন এবং আপনি একমাত্র অভিবাক হন। তখন আপনার নিজের স্বপ্নগুলো আর আপনার চিন্তার জগতে ধরা দিবে না। তখন আপনি সুঁখ খুঁজে নিবেন যাদের অধিকারগুলো আপনি নিজ ইচ্ছায় নিয়েছেন সেগুলো বাস্তবায়নে। অবশ্যই এই সুখটা পৃথিবীর সবশ্রেষ্ট সুখ। সত্যি বলতে কি চৌধুরী আংকেলকে দেখে সবাই হাঁসাহাসি করে, আমিও করি। কিন্তু আজ যখন আমার বিয়ে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সে জন্য নিজকে খুব লজ্জিত মনে হচ্ছে। চৌধুরী আংকেল মৃত্যুর কাছাকাছি এসে আবার দ্বিতীয় বিয়ে করে নাতিসমেত বাচ্চা নিয়ে ঘর সংসার করছে আর আমি ত্রিশ এর কাছাকাছি এসেও বিয়ে নামক কথাটিকে খুব ভয় পাচছি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাসরিন চৌধুরী ভাল লিখেছেন।বিয়ে না করা পর্যন্ত এই ভয় কাটবেনা।শুভকামনা জানবেন
নাসরিন চৌধুরী ভাল লিখেছেন।বিয়ে না করা পর্যন্ত এই ভয় কাটবেনা।শুভকামনা জানবেন
এস আহমেদ লিটন আসলে দারুন। বেশ যৌক্তিক বটে। শুভেচ্ছা।
Fahmida Bari Bipu বানানের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। ভোট রইল।
আখতারুজ্জামান সোহাগ দু’টো দৃশ্যকে এক সুতোয় গাঁথতে পেরেছেন, এটাই গল্পকারের কৃতিত্ব। পড়ে ভালো লাগল। শুভকামনা গল্পকারের জন্য।
এমএআর শায়েল সুন্দর চিন্তা, সুন্দর ভাবনা। শুভ কামনা রইল। আমার পাতায় স্বাগতম।
রবিউল ই রুবেন সুন্দর লেখা, ভাল লাগল।
শামীম খান পরিচ্ছন্ন চিন্তা ভাবনা । সাবলীল ভাষা । ভাল লিখেছেন । শুভ কামনা আর ভোট রইল ।
Zosif Shohag চমতকার লিখেছেন। ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।
Tumpa Broken Angel হাহাহা এমনই হয়। বুড়োরা অনেক সময় বিয়ের ক্ষেত্রে যুবকদের থেকে এগিয়ে। সুন্দর লিখেছেন গল্পটা।

১৩ ডিসেম্বর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী