একটি অপ্রকাশিত কথার ব্যাথা

ব্যথা (জানুয়ারী ২০১৫)

Mizanur Rahman
  • 0
কয়েক দিন হলো শরমীর সাথে রাজীবের কথা হয় না। রাজীব কল দিলেও শরমী জানায় সে খুব অসুস্থ তাই কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। প্রায় দু’বছর ধরে শরমী আর রাজীবের বন্ধু্ব। দুই বছরের মধ্যে আগে একবার হয়েছিল এমনটি এই নিয়ে দু’বার। রাজীবের চট্টগ্রাম ইউনিভাসিটিতে পড়ার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু ভতি পরীক্ষায় উত্তীণ হতে পারেনি বলে পড়া হয়নি। রাজীব সরকারী কলেজে মাষ্টাস করে এখন বাবার পারিবারিক ব্যবসা দেখাশুনা করে। শরমী চট্টগ্রাম ইউনিভাসিটিতে ইকোনিমিক্স ফাইনাল বষের ছাত্রী। রাজীবের বন্ধু ইশতিয়াকের মাধ্যমে শরমীর সাথে রাজীবের পরিচয়। একে তো সুন্দরী তাঁর উপর চট্টগ্রাম ইউনিভাসিটির ছাত্রী, একে একে দুই হয়ে যাওয়ায় রাজীব সাথে সাথে শরমীকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দেয়। শরমীও প্রস্তাব একসেপ্ট করে। সেই থেকে তাঁদের মধ্যে সখ্যতা দিনকে দিন বাঁড়তে থাকে। রাজীব ভিতরে ভিতরে শরমীকে ভালবাসলেও বলতে সাহস পায় না, পাছে শরমী যদি বন্ধুত্বও না রাখে। রাজীব শরমীকে সবসময় ক্ষেপাতো, আচ্ছা তোর বর কেমন হবে? কালো না ফসা, লম্বা না বেটে।
- কপালে যা আছে তাই হে। ফ্যামেলি যাকে ভাল মনে করে তাঁকে বিয়ে করব।
- কেন, আমাকে দেখিস না। আমাকে বিয়ে করে ফেল।
- তোকে বিয়ে করব আমি। না বাবা, আমি ফ্যামেলির বাইর যেতে পারব না।
- কি বলিস এসব, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মডান মেয়ে তুই, তোর একটা পছন্দ থাকতে পারে না ।
- হ্যা থাকতে পারে, কিন্তু বাবার উপর আমি কথা বলতে পারবো না। পরিবার আমার কাছে সব।
মাঝে মাঝে শরমীর জন্য বিয়ের প্রপোজাল আসে, কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ প্রফেসার। যখনই একটা বিয়ের প্রপোজাল আসে, সাথে সাথে শরমী রাজীবকে কল করে জানাই- জানিস আজ একটা বিয়ের প্রপোজাল এসেছে, ছেলে ডাক্তার দেখতে নাকি অনেক সুন্দর।
রাজীব রেগে গিয়ে বলে- তো! বিয়ে করে ফেল। তোর ডাক্তার বরের কাছে মাগনা মাগনা চিকিৎসা করাতে পারব। অসুখের বায়না ধরে তোর সাথে দেখাও হবে। মন্দ কি!
একবার সত্যি সত্যি একটা ছেলের সাথে শরমীর বিয়ে টিকটাক হয়ে গিয়েছিল প্রায়। শরমী রাজীবকে কল করে জানায়- দেখ, ফাজলামি না। সত্যি সত্যি আমার বিয়ে টিক হয়ে যাচ্ছে। রাজীব প্রথমে মনে করলো শরমী তাঁর সঙ্গে মজা নিচ্ছে। পরে যখন শরমীর ছোট বোন শসীর কাছ থেকে সত্যটা জানলো, রাজীবের বুকের ভিতর সব শূন্য হয়ে যেতে লাগলো। শরমী রাজীবের সাথে দেখাও করছে না, রাজীব কল দিলে রিসিভও করছে না। কয়েকদিন পর শরমী রাজীবকে কল দিয়ে বলল- তুই কই, এক্ষুনি ক্যাম্পাসে আসতে পারবি।
- কি প্রবলেম তোর, কথা বলতে ইচ্ছে না করলে সরাসরি বলে দিলেই পারিস। এত নাটক করার দরকার কি?
- তুই আসতে পারবি কিনা বল।
- দাঁড়া, আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি।
রাজীব শরমীর কল কাটার পরপর সোজা ইউনিভাসিটির ক্যাম্পাসে দিকে ছুটল।
ক্যাম্পাসে পৌছার পর শরমী রাজীবকে দেখার সাথে সাথে হেঁসে বলে উঠল- ক্যানসেল।
- কি ক্যানসেল?
- বিয়ে ক্যানসেল, হবে না।
রাজীবের বুকের ভিতর শূন্যতাগুলো ওই এক কথায় পূণতা পেল। রাজীব শরমীর দিকে তাঁকিয়ে হেঁসে বলল- ক্যানসেল বুঝলাম, তবে তুই এত খুশি কেন? কারো নিজের বিয়ে না হলে এত খুশি হতে তো জীবনে দেঁখেনি।
শরমী- জানি না কেন এত খুশি। তুইতো কারো নিজের বিয়ে ভেঙ্গে গেলে এত খুশি হতে দেখিস নাই, এখন আমাকে দেখ কত খুশি।
শরমী এখন টিক আগের মত রাজীবের সাথে ভালো করে কথা বলছে না দেখে রাজীবের মনে নানা প্রশ্ন আসে থাকে। শরমী কেন কথা বলছে না, ইউনিভাসটিও বন্ধ তাই দেখাও হচ্ছে না। শরমী কেন তাঁকে এড়িয়ে চলছে। তবে কি শরমীর বিয়ের কথা হচ্ছে বাসায়। রাজীব শরমীর ছোট বোন শসীকে একটা কল দিয়ে শরমীর কথা জেনে নিবে কিনা বুঝে উঠে পারছে না। কোন উপায় না দেখে শেষ পযন্ত রাজীব শসীকে কল দিল,
-হ্যালো! শসী কেমন আছ তুমি?
- রাজীব ভাইয়া! ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?
- ভালো, আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি, কিছু মনে করবে না তো?
- না ভাইয়া! কিছু মনে করবো কেন, বলেন।
- শরমীর কি হয়েছে? ও কয়েক দিন ধরে আমার কল রিসিভ করছে না।
- কেন, আপু কিছু বলেনি আপনাকে? আগামী সোমবারতো আপু বিয়ে।
রাজীবর মুখে কথা যেন আর বের হতে চাচ্ছে না। বুকে ভিতর কে যেন বরফ শীতল ঠান্ডা পানি দিয়ে সব অবশ করে দিতে লাগলো। শসী শরমীকে ডেকে মোবাইলটি দিয়ে বলল- ভাইয়া, আপুর সাথে কথা বলুন।
শরমী- কেমন আছিস তুই?
- ভালো, অনেক ভালো। তোর বিয়ে আর আমি জানি না।
- আমি অসুস্থ ছিলাম, তাই বলতে পারিনি।
রাজীব কি বলবে বুঝতে না পেরে শরমীকে বলল- তোর বর কি করে? দেখতে কেমন? তোর নিশ্চই অনেক পছন্দ হয়েছে।
- সরকারী কলেজের প্রফেসর। আমি সরাসরি দেখিনি তবে ফেইসবুকে ছবি দেখেছি।
- কি বলিস এইগুলো! ফেইসবুকে ছবি দেখে একটা ছেলেকে বিয়ে করবি তুই! তোকে দেখছে?
- হু দেখছে, ভাসিটিতে যাওয়ার সময় দেখেছে নাকি।
- তুই আর মানুষ হলি না। তুই না দেশের সবোচ্চ বিদ্যাপিঠে পড়িস।
- তোকে তো আমি আগেই বলেছি, আমি পরিবারের বাইরে যেতে পারবো না। পরিবারের সিদ্ধান্ত আমার শেষ সিদ্ধান্ত।
- তাই বলে...
শরমী ব্যস্ততা দেখিয়ে - দেখ আমি পরে তোর সাথে কথা বলব। আম্মু ডাকছে, এখন রাখি। আমার জন্য দোয়া করিস আর বিয়েতে আসিস বলে মোবাইলের লাইনটি কেটে দিল।
রাজীব লাইন কাটা মোবাইলটি কানের সাথে চেপে রেখে অশ্রুগড়ানো চোঁখে তাঁর অপ্রস্ফুটিত ভালবাসা সমাপ্তি দেখলো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সৃজন শারফিনুল আমার ভাল লেগেছে অনেক শুভ কামনা আর ভোট রইলো।
ভালো লাগেনি ২৯ জানুয়ারী, ২০১৫
ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৯ জানুয়ারী, ২০১৫
মিলন বনিক খুব সুন্দর...সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে লেখা...ভালো লাগলো...
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১৫
জাতিস্মর বেশ ভালো। আমারো একটা ছোট্ট গল্প আর একটা ছোট্ট কবিতা আছে। সময় পেলে পড়ে দেখবেন।

১৩ ডিসেম্বর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪