আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো

দিগন্ত (মার্চ ২০১৫)

পবিত্র বিশ্বাস
  • 0
  • ১৭
প্রতিদিনের মতো সুনেরিকে কলেজ ফেরার পথে একবার গ্রামের প্রান্তে অবস্থিত ধর্মীয় পবিত্র কবরস্থানে আসা চাই-ই। কেননা, এখানেই তার হৃদয়ের একটি অংশ পরম নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাচ্ছে। সারাদিনে অন্তত একটি বার এখানে এসে সুনেরি জীবনের সুখ-দুঃখের হিসাব-নিকাশ খোলা মনে শেয়ার করতে পারে। এমনকি অন্তরের প্রিয়তমকে দু-বাহু প্রসারিত করে পরম আদরে আলিঙ্গন করে অপার আনন্দের স্বাদ পায় সে। দেখতে দেখতে দশটা বছর হল- সুনেরির জীবন থেকে চলে গেছে তার প্রাণপ্রিয় বাল্যবন্ধু কবীর। হাসি-খুশিতে ভরা যৌবনের খেলাঘরে যখন সুনেরি-কবীরের ভালোবাসার কুঁড়ি অল্পে অল্পে বিকশিত হচ্ছিল ঠিক সে সময়ই একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা তাদের জীবনকে একেবারে ওলট-পালট করে দেয়। তারপর থেকে আজও সুনেরি কবীরকে খুঁজে বেড়ায়, ছুটে চলে যায় কবীরের সমাধির পাশে কিন্তু বিধাতার নিষ্ঠুর পরিহাসে তার ভরাযৌবনের পেয়ালা শূন্যই থেকে যায়।
সুনেরি ও কবীরের জীবন-ইতিহাস একটু অন্যরকম। ইছামতীর তীরে ছোট্ট গ্রাম সমস্তিপুর। শ-দুয়েক লোকের বাস। একটু দূরে দিগন্তরেখা বরাবর ঘোড়াডাঙা সীমান্ত দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সংযোগকারী সীমান্ত দিয়ে দুদেশের পণ্য-দ্রব্যাদি থেকে শুরু করে দুপারের মানুষের যাতায়াত। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গের সময় অনেক মানুষ বাংলাদেশ ত্যাগ করে এপার বাংলায় উঠে আসে। এরকমই দুটি ছিন্নমূল পরিবার হল- সুনেরি ও কবীরের পরিবার। একই গ্রামের দুই প্রান্তে এই দুই পরিবারের বাস। উভয় পরিবার মোটামুটি স্বচ্ছল। চাষবাস করে সংসার চলে। ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবার। মূলত চাষবাসের সূত্র ধরেই উভয় পরিবারের মধ্যে সুসম্পর্ককে আর একটু এগিয়ে নিতেই তাদের দুই সন্তানের মধ্যে আগামী দিনের চারহাত এক করে দিতে চায়। এরপর সময়ের হাত ধরে চিরন্তর জীবনপ্রবাহ এগিয়ে চলে- দুই পরিবারের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আস্তে আস্তে বড় হয়ে ওঠে। একটা সময় তারা দুই পরিবারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জেনে যায়। এরপর যা হয় তাই- দুজনেই মুক্তমনে হেসে-খেলে জীবন কাটাতে থাকে।
নিয়তি হয়ত দুজনের আগাম ভালোবাসার সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। পবিত্র ঈদের পুণ্য তিথিতে বন্ধুরা মালে তারা বেড়াতে গেলে তাদের গাড়ির সাথে বাসের সংঘর্ষে উভয়ের আনন্দের পথে যবনিকা পড়ে। সৌভাগ্যক্রমে সুনেরি ও তার বন্ধুরা কবীরের এই অকাল মৃত্যুকে একেবারেই মেনে নিতে পারেনি। প্রিয় বন্ধুর আকস্মিক প্রয়াণে তারা শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে।
অবশ্য যাবার আগে কবীরের সাথে সুনেরির শেষ কথা হয়েছিল হাসপাতালের বেডে শুয়ে যা আজও সুনেরির হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। মৃত্যুর শেষ সীমায় পৌঁছে কবীর সুনেরিকে বলেছিল- 'সুনেরি, প্রিয়া আমার দুই পরিবারের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলাম না। ওনাদের আমাদের বন্ধুত্বের কথা বোলো। দুঃখ কোরো না-কারণ আমি সব সময়ই তোমার চারপাশে থাকবো। তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না- we are made for each other. মৃত্যুর পরে আমি ঐ আকাশের তারা হয়েই তোমার জীবনে আলো দিতে থাকবো। বিদায় বন্ধু...।' কবীর সুনেরির হাতটা বুকে রেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শূন্য হৃদয়ে দুই পরিবার চোখের জলে কবীরের সমাধি-সৌধ গড়ে দেয়। অসহায় সুনেরি ইচ্ছা করছিল সেও যদি কবীরের সাথে চলে যেতে পারত, তাহলে ভালো হত। কিন্তু পরিবারের কথা মাথায় রেখে আর মৃত্যুশয্যায় কবীরের কাছে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য জীবনটা সে দুই পরিবারের সাথে সুখে-দুঃখে কাটিয়ে দেয়।
স্কুলের গণ্ডী পেরিয়ে সুনেরি আজ কলেজে পড়াশুনা করছে। হয়তো কবীরের ভালোবাসার জোরেই তাকে এতদূর আসতে সাহায্য করেছে। তাই রোজকার নিয়মেই সুনেরি কবীরের সাথে কথা বলে আসে, পরিবারের সকলের আশ-আকাঙ্ক্ষার কথাও তাকে বলে আসে। আসলে কবীর যে আজও সুনেরির মধ্যে বেঁচে আছে এই নিষ্ঠুর সত্য কথাটা তার মনের মধ্যে গেঁথে গেছে বলেই সে এখনও কবীরকে এড়িয়ে যেতে পারে না। এমনকি প্রতি রাত্রে অন্ধকার আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে সুনেরি আজও খুঁজে বেড়ায় তার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে। মনে মনে অনেক না বলা কথা সে ভাবতে থাকে আর আকাশের দৃশ্যপটে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাকে লক্ষ্য করে সুনেরি সেই কথাগুলোকে নিবেদন করে। এভাবে প্রতিদিন প্রতিরাতে সুনেরির প্রেম-নিবেদন চলতে থাকে... আর যতদিন সে বেঁচে থাকবে হয়ত এভাবেই চলবে তার নীরব অতৃপ্ত হৃদয়ের আত্মকথন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
এমএআর শায়েল সুনেরী কি চিরকুমারী রয়ে গেছে আজো। জানতে ইচ্ছা করছে। আপনি (আমাকে ভালবাসা পাপ!) গল্পটি পড়বেন। আপনাকে অনুরোধ করা হইল।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ অল্প কথার মাঝে ভালবাসার গভীরতাকে সুন্দর করে তুলে ধরেছেন ! খুব ভাল লাগল ।
দীপঙ্কর বেরা বেশ গুছিয়ে লেখা । ভাল লাগল ।

০৪ ডিসেম্বর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪