ডিসেম্বর মাস । হেমন্তের শেষে শীতের আলতো ছোঁয়ায় প্রকৃতি যেন ঝিমিয়ে পড়েছে । ভোরের অস্পষ্ট কুয়াশায় দূরের দৃশ্যমানতা প্রায় নেই বললেই চলে । উদ্ভিদকুল সাধ্যমতো নিজের নিজের পাতা ঝরিয়ে রুক্ষ প্রকৃতির বার্তা দিচ্ছে । আর এসবেরই মাঝে ছোট্ট সোনামণি অপু গায়ে সোয়েটার চাপিয়ে জুতো-মোজা পায়ে দাদুর সাথে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েছে । চারিদিকের কৌতূহলী দৃষ্টির মধ্যে সবকিছুই তাকে আকৃষ্ট করে । আরো বেশি করে জানতে চায় সে—কেননা, আগামী বছরে এগুলোই তো তার পড়াশুনার উপাদান হয়ে উঠবে । “দাদু ! চলো না, আর একটু ঘুরে আসি ।”—অপুর সকাতর অনুনয় । “না, দাদুভাই । এখন আর নয় । অন্য কোনো একদিনে হবে । এখন চলো দিকি বাড়িতে- সকালের জলখাবার খেতে হবে তো”—এই বলে দাদু অপুকে একরকম জোরপূর্বক সাথে নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় । পথে দেখা হয়ে গেল তাতাই-এর সঙ্গে । অল্প কুশল বিনিময় করে আবার দুজনে এগিয়ে চলে । বাড়ি ঢোকার ঠিক আগেই দেখা হয়ে গেল গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিশীথরঞ্জন উপাধ্যায়ের সঙ্গে । “অপু কেমন আছো ? সকালে ঘোরা হয়ে গেল বুঝি ?”—মাস্টারমশাইয়ের এমন প্রশ্নে বালক অপু প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেও নিজেকে সামলে নিয়ে সম্মতি জানিয়ে দিল । অগত্যা দুজনে বাড়িতে ঢুকল । “মা, আমি কবে স্কুলে যাবো ? মাস্টারমশাইয়ের সাথে আমি কথা বলেছি”—একেবারে এতগুলি কথা শুনে অপুর মা ছেলেকে কি বলবে ভাবতেই পারল না । অতঃপর কিছু সময় পরে ছেলেকে বলে—“তুমি স্কুলে যাবে, বেশ তো, সামনের বছরেই তোমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেবো । এখন থেকেই সবকিছু দাদুর কাছ থেকে শিখে নাও ।” মায়ের কথা শুনে বালক অপুর অন্তঃকরণে পুলকের সঞ্চার হল । এক অভুতপূর্ব আনন্দের শিহরণে তার সর্বশরীর রোমাঞ্চকর হয়ে উঠল । নতুন স্কুলে যাওয়ার আনন্দ, বন্ধুদের সাথে ছুটোছুটি-হৈহুল্লোড়, খেলাধুলা ইত্যাদি কল্পনায় তার শিশু অন্তরাত্মা টগবগ করে ফুটতে লাগল । দেখতে দেখতে ডিসেম্বর মাস শেষ হয়ে এল । এই কদিনে অপু নিজেকে নানা ভাবে প্রস্তুত করে তুলেছে কিভাবে নতুন পরিবেশে অন্যদের সাথে মানিয়ে নিতে হবে । বাবার কাছ থেকে স্কুলের নতুন বই কিনে নিয়েছে । এখন কখন সেই কাঙ্খিত সময় আসবে তার জীবনে তার অপেক্ষায় সে সময় গুণতে থাকে । বাড়ির সকলেই তার এই অস্থিরতাকে লক্ষ্য করল । বড়দিনের আনন্দে সকলেই কয়েকটা দিন একসাথে কাটাল পিকনিক, কেক কাটা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি করে । অবশেষ এল সেই সন্ধিক্ষণ—সকাল থেকেই সাজো সাজো রব বিশ্বাস বাড়ির আসেপাশে । এ বাড়ির একমাত্র ছেলে অপূর্ব বিশ্বাস আজ প্রথম স্কুল জীবনে পা রাখবে । পঞ্চম বর্ষ অতিক্রম করে আজকের দিনেই সে ষষ্ঠ বর্ষে পদার্পণ করেছে । নতুন স্কুল ড্রেস বাবা-মায়ের হাত ধরে ছোট্ট অপু স্কুলের পথে পা বাড়ায় । “বাবা ! স্কুল আর কতদূর ?”—ছেলের এত উৎসাহ দেখে বাবা বলে ওঠে “অপু সোনা এই তো এসে গেছি, আর একটু এগোলেই আমরা স্কুলে পৌঁছে যাবো । তোমার ভয় করছে না তো ?” মা এওতক্ষণ চুপচাপ ছিল । এবার সে নীরবতা ভেঙে ছেলেকে নানাভাবে বোঝাতে লাগল-কোনো দুষ্টুমি করবে না, সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, শিক্ষকদের কথা শুনবে ইত্যাদি ইত্যাদি । কথা বলতে বলতে সবাই স্কুলে প্রবেশ করল । বালক অপু এক দৃষ্টিতে স্কুলটাকে দেখে নিল । তারপর বন্ধুদের সাথে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করল । শুরু হল অপুর নতুন জীবনের পথ চলা নতুন বছরের হাত ধরে........................।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।