বাজারের তেলেভাজার দোকানটাতে গিয়ে একেবারে তাজ্জব বনে গেল রিমন। আকাশে কালোমেঘের ছিটেফোটা দেখে আজ আগেভাগেই দোকানের ঝাঁপি বন্ধ করে দিয়েছে।
মেজাজটা একেবারে তিতা হয়ে গেল রিমনের। তেলেভাজা না নিয়ে যেতে পারলে বড়ভাই আজ ওকে ধমকে ধামকে শেষ করে দেবে। শুধু বড়ভাই কেন, অন্যরাও যে যার মতো চড়াও হবে। এই ঝড় বৃষ্টির দিনে তেলেভাজা ছাড়া কিছুতেই আড্ডা জমবে না। আর আজকেই দোকানটা বন্ধ করে দিতে হলো? মনমরা হয়ে জোরে পা চালালো রিমন। আকাশের হাবভাব ভালো মনে হচ্ছে না। সময়মত আড্ডাস্থলে...তাদের কথায়... ‘গল্পের ডেরা’য় পৌঁছানো দরকার। তেলেভাজা মিস হলেও আড্ডাটা কিছুতেই মিস করা যাবে না। আজ যে জম্পেশ বৃষ্টিটা নামবে! বড়ভাই আজ নিশ্চয়ই সেরা গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসে আছে!
ডেরার কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নেমে গেল। দৌঁড় দিয়েও শেষরক্ষাটা হলো না। ভিজে একেবারে চুপচুপে হয়ে গেল রিমন। যথারীতি দরজায় ঢোকার মুখেই বাধা পেল। কবির উৎসুক মুখে ওর সামনে পেছনে উঁকিঝুঁকি মেরে বললো,
‘কী ভায়া! তেলেভাজা কই? উহু! ওটি হবে না! তেলেভাজা ছাড়া আজ এখানে তোমার প্রবেশ নিষেধ!’
অন্যরাও নিরাশমুখে রিমনের দিকে তাকালো। মজনু মুখ কালো করে বললো,
‘ইস! আজকে তেলেভাজা না হলে চলে? দূর! কেন যে মেস থেকে মুড়ি মেখে নিয়ে এলাম না! বুড়ো বাবুর্চিটা যা দুর্দান্ত মুড়ি মাখে! খাওয়ার পরেও তিনমিনিট ধরে হাত চাটতে হয়।’
রিমন প্রমাদ গুনলো। আজ মনে হচ্ছে, এই ভেজা শরীরেই ওকে আবার ফিরে যেতে হবে। মেসে গিয়ে মুড়ি চানাচুর যাহোক কিছু একটা নিয়ে না এলে আজ এদের কারো মন ভরবে না। শেষমেষ বড়ভাইই ত্রানকর্তা হয়ে এলেন। এক ধমকে সবাইকে জায়গামত বসিয়ে দিয়ে রিমনকে টেনে ভেতরে ঢুকালেন। বললেন,
‘আঃ! দেখছিস তোরা...বেচারা ভিজতে ভিজতে কষ্ট করে এসেছে। কোথায় ভেতরে ঢুকায়ে শুকনো কিছু একটা এগিয়ে দিবি...তা না...তেলেভাজার পেছনে লেগেছিস! এখানে ঝড়বৃষ্টি হলেই বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। ও বেচারা আর কী করবে? আজ যে জবরদস্ত আবহাওয়া...এমনিতেই গল্প জমে যাবে, দেখ না তোরা!’
প্রতিদিন পালা করে এই তেলেভাজা কেনার দায়িত্বটা পালন করে ওরা। ওরা মানে ওরা এগারোজন। অজ মফস্বলে চাকরি করতে আসা ওরা এগারোজন তরুণ সরকারী কর্মকর্তা। একেকজন একেক অফিসের। একই কম্পাউন্ডের ভেতর ওদের সবার অফিস। দিনশেষে যার যার ডেরায় অর্থাৎ মেসে ফেরার পথে নিজেদের মধ্যে আলাপের সূত্রপাত। দিনে দিনে সেই আলাপ ডালপালা ছড়িয়েছে। অফিসের কাজের ফাঁকফোকড়েও গল্পেরা এসে ভিড় করেছে। প্রত্যেকেই কাছাকাছি বয়সের হওয়ার সুবাদে নিজেদের মধ্যে ঠাট্টা তামাশাটাও জমে ভালো। আত্মীয় পরিজন ছেড়ে এই দূর অঞ্চলে এসে জুটেছে সবাই। এই গল্পটুকুই তো বেঁচে থাকার অনুপ্ররণা। শেষমেষ সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিজেদের জন্য একটা ক্লাবঘর জাতীয় কোনকিছুর ব্যবস্থা করতে হবে।
আড্ডার মধ্যমণি বজলুর রশিদ ভাই। অন্যদের কাছে তিনি বড়ভাই হিসেবে পরিচিত। যদিও এমন বেশিকিছু বয়স নয় তার। চুয়াল্লিশ পঁয়তাল্লিশের মতো হবে। অন্যদের তুলনাতে অবশ্য সেটা অনেক বয়স। চাকরিতে বাদবাকিরা একেবারেই নভিশ। সবে নতুন চাকরিতে ঢুকেছে সবাই। তিনি সেখানে বেশ অনেকখানি পরিপক্ব। তাই বয়স আর অভিজ্ঞতার সুযোগটা বড়ভাই ভালোভাবেই নেন। অন্যরা সবাই তাকে মান্যগন্যি করে। তিনিও সবাইকে স্নেহের বশেই তুইতোকারি করেন। কেউ কিচ্ছুটি মনে করে না।
ক্লাবঘরের জন্য জায়গার সন্ধ্যান বড়ভাইই এনে দিয়েছিল। এই উপজেলাতে তার চাকরির বয়স প্রায় পাঁচ বছর হতে চললো। কাজেই জায়গাটি সম্পর্কেও তার জানাশোনার পরিধি অন্যদের চেয়ে অনেকখানি বেশি। এই অঞ্চলে নাকি আগে এক অত্যাচারী জমিদার বাস করতো। লোকবসতি থেকে বেশ কিছুটা দূরে জমিদারের বিশাল দোতলা বাড়ি। সেই জমিদারবাড়ি এখন পোড়োবাড়ি হিসেবে পরিচিত। রাতের বেলাতে তো দূর, দিনেও কেউ সেদিকটাতে যাওয়ার সাহস করে না। এই অঞ্চলে নানারকম গল্পগাঁথা চালু আছে সেই বাড়িকে ঘিরে। জমিদারের পত্নি উপপত্নী ছিল অনেক। বিশাল বাড়ির একেকটি ঘর নির্ধারিত ছিল তাদের একেকজনের জন্য। এছাড়াও সাধারণ গৃহস্থ বাড়ির কোন মেয়েকে পছন্দ হলেই জমিদার তুলে নিয়ে আসতো। বন্দি করে রাখতো এই বিশাল বাড়ির খালি পরে থাকা কোন একটা ঘরে। নিজের লালসা মিটে যাওয়ার পরে আবার হয়ত তাকে ফেলে রেখে আসা হতো। নিজের বাড়িতে কিংবা পথেঘাটে কোথাও। লজ্জায় অপমানে কেউ কেউ আত্মহত্যা করতো। কেউ প্রতিশোধ নিতে চাওয়ার দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে বেঘোরে নিজের প্রাণটাই হারিয়ে বসতো, জমিদারের পোষা কুকুরদের কাছে। এলাকায় গল্প চালু আছে, সেই অতৃপ্ত আত্মাগুলোই নাকি রাত বিরেতে ঘুরঘুর করে এখানে।
বড়ভাই জায়গাটার কথা জানাতেই সবাই সাগ্রহে রাজি হয়ে গেল। এই কাঁচা বয়সে বাঘের চোখ তুলে আনার সাহস করা যায়। আর ঘুরে বেড়ানো ভূতপ্রতের আত্মা তাদের ঠেকিয়ে রাখবে... এটা কি কখনো সম্ভব হতে পারে? সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। ক্লাবঘর বানানোর জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত জায়গা আর কিছু হতেই পারে না! বড়ভাই তবু সবার মন বুঝে নেওয়ার জন্য বললেন,
‘ভালোকরে ভেবেচিন্তে দেখ সবাই। দিনের পর দিন আড্ডার আসর বসবে। তাও আবার সন্ধ্যার পরে। তেনারা যদি আমাদের এই কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে একটু গুঁতা মেরে বসে! তখন কিন্তু আমাকে অভিযোগ জানাতে পারবি না কেউ। বলতে পারবি না যে, আমি আগে সাবধান করিনি!’
সবাই একবাক্যে ঘোষণা দিল,
‘আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না বড়ভাই। আমাদের এতজনকে দেখে অবলা পেত্নী কাছেপিঠে ভিড়ারও সাহস পাবে না! আর যদিও বা ধারেকাছে আসেও, মজনুকে দেখেই দশ পা পিছিয়ে যাবে। কাজেই খামাখা টেনশন নিয়েন না!’
মজনু এই এগারোজনের দলে সবচেয়ে গাড্ডাগোড্ডা পালোয়ান গোছের। ছোটবেলা থেকেই তার বডিবিল্ডিং এর নেশা। ভার্সিটি জীবনে জিমটিম করারও বাতিক ছিল। দিনে চার পাঁচটা ডিম দিব্যি হেসেখেলে সাবাড় করে দেয়। তার মেসের বুড়ো বাবুর্চির সাথে একটা চুক্তি করে নিয়েছে মজনু। চুক্তিটা যে কী তা সে কাউকে ভেঙ্গে বলে না। বুড়ো বাবুর্চি মজনুর খাবারটা সবার আগে বেড়ে রাখে। সেই খাবারে মাছ মাংসের পরিমাণ যে অন্য সবার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি থাকে তা বলাইবাহুল্য। এই নিয়ে মেসে ইতিমধ্যেই চাপা ফিসফাস শুরু হয়ে গেছে। মজনু সেসবে গা করে না। কেউ বাড়াবাড়ি করতে এলে এক ঘুষি দিয়েই কুপোকাৎ করে দেবে। বেচারা বুড়ো বাবুর্চিকে এই ঘুষির ভয় দেখিয়েই হাত করেছে কী না, তা কে বলতে পারবে!
মজনু ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টে আছে। ওদের সবার মতে, মজনুর এই বডি বিল্ডারদের মতো শরীরটা ভুল জায়গায় লুটোপুটি খাচ্ছে। এই স্বাস্থ্য নিয়ে পুলিশ ছাড়া আর অন্য কোন ক্যাডারেই ওর ঢোকা উচিত হয়নি।
কাজেই নিজেদের যুবশক্তির বড়াই দেখিয়ে আর মজনুর শক্তিসামর্থ্যের জোরে ওরা জমিদার বাড়িটাকেই নিজেদের ক্লাবঘর অর্থাৎ গল্পের ডেরা বানিয়ে নিলো।
কিন্তু শুধু বানাতে চাইলেই তো আর হবে না। এতদিনের পড়ে থাকা বাড়ি। চারপাশে গজিয়ে ওঠা ঝোপঝাড় বড্ড বেয়ারা। আর সাপখোপ তো আছেই! ঝোপঝাড়ে তাদের বংশবিস্তারও নিয়মিতই হচ্ছে। এখন এই ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে এটাকে ভদ্রস্থ করাটাই তো আসল কাজ! সবাই মিলে এই কাজটাও বড়ভাইয়ের কাঁধেই চাপিয়ে দিলো। জায়গার সন্ধ্যান যিনি দিয়েছেন, পরিষ্কারের ভারটাও তাকেই নিতে হবে। বড়ভাই চোখ কটমট করলেন। কিন্তু নিজেই আবার পরিষ্কার করার জন্য লোকের সন্ধ্যান করতে কোমড় বেঁধে নেমেও পড়লেন।
এই দুর্গম জায়গায় রাত বিরেতে আড্ডা দেওয়ার কথা শুনে পরিচিত অপরিচিত সবাই চোখ উল্টালো। অফিসের কর্মচারীরা গুজুরগুজুর শুরু করে দিলো। সিনিয়র অফিসাররা পর্যন্ত তাদের ডেকে নিরস্ত করতে চাইলেন।
‘আপনারা নাকি ঐ ভুতুড়ে জমিদারবাড়িতে আড্ডার আসর বসাবেন? মাথাটাথা ঠিক আছে তো! প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবেন মনে করেছেন? জায়গাটা সম্পর্কে কেউ কিছু বলেনি আপনাদের?’
তারাও বিষয়টাকে হাস্যচ্ছলেই পাশ কাটিয়ে দিয়েছেন।
‘দেখি... ভূত পেত্নিগুলোকে বশ করা যায় কী না।’
এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ভূতপ্রেতের প্রতি কী অগাধ বিশ্বাস! সব ভূতের ভোগে ছেড়ে দিয়েছে! এত বড় একটা শানদার জমিদারবাড়ী! ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে কী সুন্দর কাজে লাগানো যেত! তা না...ভূতপ্রেতের ভয়ে কেউ কাছেপিঠেই ভেড়ে না! এমন অভয়ারণ্য পেলে কার না গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করে! ভূতেদের আর দোষ কী?
জায়গাটা সাফসুতরো করে নেওয়াটা খুব একটা সহজ কাজ হলো না। কেউই এই ভুতুড়ে আস্তানায় ভিড়তে চাইলো না। ‘উনা’দের বিরক্ত করা হলে নাকি ফল ভালো হয় না।
বড়ভাই তার অফিসের পিওনকে কাজে লাগালেন। পিওন চানমিয়ার বাড়ি জমিদারবাড়ীর কাছেপিঠেই। কাজেই এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য সেই সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। চানমিয়ার মুখচোখ গম্ভীর হয়ে গেল। গল্পপটু বড়ভাই বজলুর রশিদকে অফিসের সবাই ভালোবাসে। কাজেই তার কথা ফেলে দেওয়া চানমিয়ার পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু খুব বেশি সন্তুষ্ট যে সে হলো না, সেটা তার মুখচোখ দেখেই বোঝা গেল। অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতেও ছাড়লো না।
‘এত জায়গা থাকতে আপনাগো এই ভুতের বাড়িই ভালা মুনে হইলো! স্যার, আপনার বন্ধুরা ত এনে নতুন আইছে। কিছু জানে না। আপনে ত ম্যালাদিন ধইরাই আছেন! জানেন না কিছু? ঐ পেত্নিগুলান ছাড়বো আপনাগোরে? ওগো জায়গায় ওরা আরাম কইরা থাহে...গপসপ করে। আপনারা ওগো জায়গা কাইড়া নিলে ওরা আপনাগো শান্তিমত গল্প করবার দিব?’
বড়ভাই মুখচোখ পাকিয়ে চানমিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘আচ্ছা... ওরা তাহলে ঐখানে গল্পগুজব করে? তুমি জানলা কী করে চানমিয়া? শুনছো নাকি ওদের গল্প?’
কাজেই এদেরকে যে কিছুতেই আটকানো যাবে না, এটা চানমিয়াও বুঝে গেল। মুখ চুন করে নিজের কাজে লেগে গেল সে। এমনিতে অবশ্য ‘উনা’রা দিনের বেলাতে আসেন না। আর কাজটির বিনিময়ে ভালো টাকারও লোভ আছে। তবু কীসের যে খচখচানি!
আড্ডার আসর বসানোর আগেই সবাই মিলে একবার সদলবলে জায়গাটা দেখে আসা হলো।
লোকবসতি থেকে দূরে। তবে খুব দূরে নয়। অফিস শেষে মেসে গিয়ে একটু গড়িয়ে জিরিয়ে নিয়ে সন্ধ্যে সাতটার মধ্যেই সবাই পৌঁছে যেতে পারবে। জায়গাটা সবারই খুব পছন্দ হলো। দীর্ঘদিনের অব্যবহারের কারণে কিছুটা ঝোপঝাড় জন্মেছে ঠিকই, কিন্তু নিচতলার ঘরগুলো খুব বেশি নোংরা না। বরং এই ঘরগুলোতে মানুষের পায়ের চিহ্ন নিয়মিত ভাবে পড়েছে বলেই মনে হলো। বড়ভাই পিওন চানমিয়াকে তলব করলেন।
‘তুমি যে বলছিলে এখানে ‘উনা’রা গল্পগুজব করে। তা ‘উনা’রাই কি জায়গাগুলো পরিষ্কার করে দিয়ে যান নাকি?’
চানমিয়া এ’কথা মানতে নারাজ। জায়গা আগে থেকেই পরিষ্কার আছে, এটা বললে তো তার পারিশ্রমিক কমে যেতে পারে। কাজেই সে গলা উঁচিয়ে তর্ক জুড়ে দিলো,
‘ইটাকে আপনাদের কাছে পরিষ্কার মনে হইতেছে স্যার? এক্কেরে গুয়ের আখরা হইয়া আছিল! মানুষজন রাতবিরাতে আইসা এইখানে হাগামুতার কাজ কইরে যায়। ঐ খানিক দূরেই একটা বস্তি আছে না? ঐ জায়গার ব্যাটারাই আসে এই কাজ করতে!’
বড়ভাই রসিক মানুষ। তিনি মজা করতে ছাড়লেন না।
‘বলিস কী রে? ভূত পেত্নির আখরাতে হাগামুতা করে যায়? পেত্নিরা ঘাড় মটকায় না?’
চানমিয়া তর্কে হেরে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে। বেজার মুখে বলে,
‘আপনাগোরে আর কিছু বলবার যামু না। নিজেরাই যাচাই বাছাই কইরা নিয়েন। সাতদিনও যদি ঐ জায়গায় টিকবার পারছেন, তয় আমি কী কইছি!’
সাতদিন কেন, তারা তরতরিয়ে দুই সপ্তাহ পার করে দিলেন। এখন পর্যন্ত ভূতপেত্নির সাক্ষাত মেলেনি। জায়গাটা সন্ধ্যের পরে খুব বেশি নির্জন মনে হয়। দু’পাশের খোলা প্রান্তর থেকে হু হু করে বাতাস বইতে থাকে। জমিদারবাড়ির পেছনেই একটা ছোটখাট নদী বয়ে গেছে। বাতাসটা সেই নদীর পানিতে দ্রবীভূত হয়ে আশ্চর্যরকম ঠান্ডা হয়ে যায়। জৈষ্ঠ্যের তালপাকা গরমে সুশীতল হিমেল হাওয়ায় প্রাণটা রীতিমত জুড়িয়ে যায়। বড়ভাইকে প্রত্যেকেরই অসংখ্য বার ধন্যবাদ দেওয়া হয়ে গেছে। দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য মুহিতের উচ্ছ্বাসটা সবচেয়ে বেশি।
‘উফ! কী একটা জোশ জায়গা খুঁজে বের করছেন বড়ভাই! ইচ্ছে করে বাকি রাতটাও গল্প করেই পার করে দিই। ঐ ঘোড়ার ডিমের চিপা মেসে আর ঢুকতে ইচ্ছা করে না!’
মেসে ফিরতে ওদের কারোরই মন চায় না। তবু ফিরতে হয়। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে হবে। পরেরদিন অফিস যেতে হবে। সারারাত তো আর আড্ডা পিটিয়ে কাটানো যাবে না! জমিদারবাড়ির নীচতলার দুটো ঘর চানমিয়া সাফসুতরো করে দিয়েছে তাদের জন্য। একটি ঘরে তারা আড্ডা মারে। অন্য ঘরটিতে সাথে করে আনা এটা ওটা জিনিস রাখার দরকার পড়লে রাখে। সেখানে অফিস থেকে ভাঙ্গাচোরা একটা টেবিল জোগাড় করে এনে রেখে দিয়েছে চানমিয়া। স্যারদের চা নাশতা রাখার দরকার পড়লে এটা কাজে লাগাবে। যদিও সে মোটামুটি নিশ্চিত, একমাসের বেশি কিছুতেই ‘উনা’রা তাদেরকে বরদাস্ত করবে না।
সমস্যা যে একেবারেই কিছু হয়নি সেটা তারা জোর দিয়ে বলতে পারে না। প্রথম প্রথম আড্ডা জমে ওঠার এক দুই ঘন্টা পর থেকেই ঝামেলা শুরু হয়ে গেল। কোথা থেকে যেন টুপটাপ ইট পাটকেল উড়ে আসতো। কিছু কিছু ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়তো। তারা শুরুতে চমকে উঠলেও ব্যাপারটিকে ভূতের কান্ড বলে মানতে রাজি হলেন না। কে জানে...ছেলেছোকরারা তাদের ভয় দেখাতেই এসব করছে কী না কে বলতে পারে! দলের সবাই মিলে মজনুকে ঠেলে পাঠালো, একটু কড়কে দেওয়ার জন্য। মজনু বাইরে বের হয়ে বাঘের হুঙ্কার ছাড়লো,
‘কে ঢিল মারে রে? সাহস থাকে তো সামনে আয়। চুলের মুঠি ধরে শূণ্যে পাক খাওয়াবো!’
এই হুঙ্কারে দারুণ কাজ হলো। দুইদিনেই ঢিল ছোড়াছুড়ি বন্ধ হয়ে গেল। ভয়টা তারা কাকে দেখালো, সেটা নিয়ে আর ঘাঁটতে গেল না। তাদেরকে ডিসটার্ব না করলে তারাও অহেতুক কাউকে ডিসটার্ব করতে যাবে না।
কাজেই জোরেসোরে আড্ডার আসর চলতে লাগলো। বাজার থেকে কেনা মুচমুচে তেলেভাজা দিয়ে ধুন্দুমার আড্ডা মারে সবাই। তাদের এগারোজন সদস্যের প্রত্যেকের ওপরেই ঘুরে ঘুরে দায়িত্ব পড়ে এই তেলেভাজা কেনার। মোড়ের দোকানের মন্টুমিয়ার সাথে মাসকাবারী একটা চুক্তি করা আছে। প্রতিদিনের চা সাপ্লাইয়ের দায়িত্বটা তার ওপর। মাসশেষে সবাই মিলে চাঁদা তুলে মন্টুমিয়ার টাকাটা দিয়ে দেবে।
বেশ চলছে এভাবে। গরম গরম তেলেভাজা আর পরমপ্রিয় খাঁটি দুধের চা। সেই সাথে জমে যায় বড়ভাই বজলুর রশিদের গরম গরম মজাদার গল্প। ছোট শহরে চাকরি করতে এসে এই বিলাসিতাটুকুই জ্যন্ত আছে ওদের জীবনে। বজলুর ভাই একেকদিন একেক গল্প ফাঁদেন। তার গল্পের ঝুড়ি অতলস্পর্শী। বেশিরভাগই তার চাকরিজীবনের বিভিন্ন জায়গার গল্প, সেখানে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা, দুঃখ-হাসি-বেদনার গল্প। ছোটখাট ঘটনা গুলোকে এত যে সুন্দর ভাষায় তিনি ফুটিয়ে তোলেন! সাধারণত্বেও সবাই খুঁজে পায় অসাধারণ আনন্দ। তেলেভাজা চিবুতে চিবুতে মজাদার গল্পগুলো কেমন ঝাঁ চকচকে লোভনীয় হয়ে ওঠে। কখনো কখনো গল্পের আমেজে চোখের পলক ফেলতেও ভুলে যায় ওরা। শুকনো ম্যাড়ম্যাড়ে ছাপোষা জীবনে একটু একটু করে ফুটে উঠতে থাকে বর্ণচ্ছটা। একসময় মনে হয়... ‘আহ্! বেঁচে থাকাটা তো মন্দ নয়!’
আজ এই ঝঞ্ঝাময় রাতে গল্পের আসরটা ধুন্দুমার জমবে। বড়ভাই আসন পেড়ে বসতেই চারপাশ থেকে নানারকম অনুরোধ আর আবদার উড়ে আসতে লাগলো। ‘বড়ভাই আজ ভূতের গল্প ছাড়া জমবেই না!’ ‘আজ চাই কিছু সাসপেন্স...জীবনধর্মী দিয়ে আজ পোষাবে না বড়ভাই!’ বড়ভাই কারো আবদার অনুরোধে কান না দিয়ে গভীরভাবে অন্যকিছু ভাবতে থাকেন। আজ অফিস থেকে বের হওয়ার মুখে পিওন চানমিয়া খুব অনুনয় বিনয় করছিল।
‘স্যার, আপনারা ত আমার কথারে কানেই তুললেন না। তয় আমি কিন্তু আপনাগোর ভালাই চাই। আইজ কিন্তু আমাবস্যার রাইত। এই রাইতে হেই বাড়িতে কী হইছিল আপনে জানেন না? আপনাগোর দোহাই লাগে, আইজ ঐখানে যাইয়েন না। এক্কেরে জানে মারা পরবেন! আর যদি আমার কথা কিছুতেই না মানেন, তাইলে একটা অনুরোধ, ঐ বটগাছটার দিকে পিছ ফিইরা বইসেন। মুখামুখি বইসেন না! ঐ জিনিস চক্ষে দ্যাখবার পারবেন না।’
ঘটনাটা বজলুর রশিদ জানেন। প্রায় দশ-বারো বছর আগের ঘটনা। তার এখানে চাকরি করতে আসারও বেশ কয়েকবছর আগে ঘটনাটা ঘটেছিল। জমিদারবাড়ীর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। জমিদারবাড়ী একটা অছিলা ছিল মাত্র। এই বাড়িতে কারা যেন মদ, তাড়ি আর জুয়ার আসর বসিয়েছিল। খারাপ মেয়েমানুষ নিয়ে এসে ফূর্তিবাজিও চলছিল সমান তালে। একবার এমনই এক ঝড়বৃষ্টির রাতের ঘটনা। সেদিন খারাপ মেয়েছেলে নিয়ে আসতে পারেনি কেউ। বৃষ্টির কারণে কেউ সেদিন এই জমিদারবাড়ী অব্দি আসতে রাজি হয়নি। এদিকে রাত আর নেশা যত বাড়ছিল, তাদেরও সেই তাড়না ততই বেড়ে চলছিল। ঘটনাচক্রে এই বাড়িতে সেদিন এসে আশ্রয় নিয়েছিল বাইশ তেইশ বছরের এক যুবতী মেয়ে। সাথে ছিল তার আড়াই বছরের শিশুপুত্র। বৃষ্টির মধ্যে অন্য কোথাও আশ্রয় না পেয়েই এই নির্জন জমিদারবাড়ীতে এসে উঠেছিল মেয়েটি। তার জানা ছিল না, এখানে কিছু হায়েনা আগে থেকেই তার জন্য অপেক্ষা করছে। যখন জানতে পেরেছিল, তখন দেরি হয়ে গেছে। পালানোর আর উপায় ছিল না। শয়তানগুলো মেয়েটাকে ইচ্ছামত শারীরিক নির্যাতন করে ফেলে রাখে। বাচ্চাটা চিৎকার করে কাঁদছিল দেখে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় বাইরে।
সন্তান শোকে পাগলপ্রায় হয়ে আর সম্ভ্রম হারানোর লজ্জায় মেয়েটা এই জমিদারবাড়ীরই উঠানের বিশাল বটগাছটার সাথে ফাঁস লাগায়। নিজের পরনের শাড়ি খুলে নিচু একটা ডালের সাথে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ে মেয়েটি। এলাকায় রটে যায়, মেয়েটাকে নাকি প্রায়ই এই জমিদারবাড়ীর আশেপাশে ঘুরতে দেখা যায়। আর ছোটবাচ্চাটাকেও নাকি মাঝে মাঝে তার কোলে দেখা যায়। এরপর থেকে কেউই আর এই জমিদারবাড়ীর ত্রিসীমানায় ভেড়ে না। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে জমিদারবাড়ী পরিণত হয়েছে পোড়োবাড়ীতে।
বড়ভাই ঠিক করলেন আজকের এই ঝড়বৃষ্টির রাতে সেদিনের সেই ঝড়বৃষ্টির রাতের গল্পটাই করা যাক। এই অঞ্চলের প্রায় সবাই গল্পটি জানে। সাদাশাড়ি পরিহিতা মেয়েটিকেও নাকি দেখেছে কেউ কেউ। সেদিনও ছিল অমাবস্যা তিথি আর এমনই ঝড়ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ রাত। কিভাবে কিভাবে যেন সবকিছুই ঠিকঠাক মিলে গেছে। চানমিয়ার অনুরোধ উপেক্ষা করেই আজ এসেছেন ঠিকই। কিন্তু অন্যদিনের চেয়ে বসার আয়োজনটা একটু পালটে নিয়েছেন, অবচেতন মনেই। আজ বটগাছটার দিক থেকে পেছন ফিরে বসেছেন বড়ভাই। অন্যরা অবাক হলেও কোন প্রশ্ন না করেই তার চারপাশে ঘিরে বসেছে। বটগাছের ঠিক মুখোমুখি বসেছে মজনু। কিছু একটা বলতে গিয়েও সামলে নিলেন বড়ভাই। থাক... শুধু শুধু এসব বুজরুকিতে বিশ্বাস করানো উচিত হবে না। গল্প শুরু করলেন তিনি।
‘জমিদারবাড়ী আজ থেকে দশ বারো বছর আগেও এমন পোড়োবাড়ী ছিল না। এই বাড়ীটাকে নিয়ে স্থানীয় সরকার কিছু চিন্তাভাবনাও শুরু করেছিল। সরকারী অফিসের জন্য বাড়ীটাকে লিজ দেওয়ার কাজ অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিল। এখানে এলাকার বখাটে ছেলেপুলেরা অসামাজিক কাজকর্ম করতো। আশেপাশের অনেকেই বিষয়টা জানতো। কিন্তু এদের দৌরাত্মে কেউই মুখ খোলার সাহস পায়নি। দিনের বেলা চাঁদাবাজি আর রাত হলেই মদ, জুয়া আর মেয়েমানুষ। এভাবেই চলছিল। একদিন ঘটলো একটি ঘটনা...’
গল্পে তখন ডুবে গিয়েছে সবাই। বাইরে তুমুল বৃষ্টি কিছুটা থিতিয়ে এসেছে। দূর থেকে একটা দুটো শেয়ালের গর্জন ভেসে আসতে লাগলো। ঠান্ডা বাতাস একেবারে ভেতর পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কাঁপা কাঁপা গলাতে মজনু বললো,
‘ও...ও...ঐটা কী?’
মজনুর দৃষ্টি লক্ষ্য করে সামনে তাকালো সবাই। আর তারপরেই ভয়ংকর ধাক্কা খেয়ে কেমন যেন জমে গেল ওরা। সাদাশাড়ি পরিহিতা একটা মেয়ে। বাড়িটা থেকে বেশ কিছুটা দূরে ঠিক বটগাছটার নীচে দাঁড়িয়ে আছে। কোলে একটা কিছু ধরে আছে মেয়েটি। মাথার এলোমেলো চুল সামনে এসে হুটোপুটি খাচ্ছে। মজনু এই দৃশ্য বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারলো না। একটা চিৎকার দিয়েই বিশাল শরীরটা মাটিতে এলিয়ে দিলো। অন্যদের অবস্থাও তেমন সুবিধার নয়। চোখের সামনে আজ হঠাৎ যেন বিভীষিকা উপস্থিত। সবার অবস্থা দেখে বড়ভাই নিজেই অনেকখানি সাহস যুগিয়ে নিয়ে সামনে এগুলেন। পেছন থেকে সবাই তাকে আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু তিনি স্থিরপ্রতিজ্ঞ। আজ এই রহস্যের ভেদ তাকে করতেই হবে। জমিদারবাড়ীতে কীসের ভূত ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা তাকে জানতেই হবে।
হাতের কাছে যুতসই মতো একটা কাঠের টুকরা পেয়ে সেটাকে নিয়েই সামনে এগুলেন বড়ভাই। কিছুদূর যেতেই মনে হলো, সামনে দাঁড়ানো সাদা কাপড় পরা নারীমূর্তিটি যেন পিছে হটছে। আর কোন সন্দেহ রইলো না বড়ভাইয়ের। এসব ভূতপেত্নি সব এখানকার লোকদের বুজরুকি। এভাবে মানুষজনকে ভয় দেখিয়ে নিজেদের রাস্তা থেকে সরিয়ে রাখে সবাইকে। আরেকটু সামনে এগিয়ে পেছন দিকে তাকিয়ে নির্ভিক মনে দলের অন্যদের ডাকলেন বড়ভাই।
‘এই তোরা সব এদিকে আয়। আজ পেত্নির মুখোশ উন্মোচন করবো সবাই!’
ততক্ষণে সবাই বুঝে গেছে ভয়ের কিছু নাই। বড়ভাইয়ের দেখাদেখি তারা সবাই এগুতে লাগলো সামনে। হঠাৎ কী যেন একটা হলো। বড়ভাই আচমকা সামনে তাকিয়ে কেমন যেন একটু থতমত খেয়ে গেলেন। তারপর হঠাৎ দু’পা পিছিয়ে ‘ওরে বাবারে’ বলে ঠাস করে পড়ে গেলেন মাটিতে। সবাই অবাক হয়ে দেখলো, শুধু বড়ভাই একা না... তাদেরকে ভূতের ভয় দেখানো ‘নারীমূর্তিটিও মাটিতে চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে। মাথায় লাগানো পরচুলার আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে তার পুরুষালী মুখ। কোলে ধরা আছে একটা বড়সড় কাপড়ের পুতুল!
সেদিন সবাই মিলে ধরাধরি করে বড়ভাইকে তার মেসে পৌঁছিয়ে দেওয়া হলো। জমিদারবাড়িতে এই ভূত বানিয়ে মানুষকে ভয় দেখানোর বিষয়টা পুলিশের গোচরে আনা হলো। ব্যাপার খুব বেশি জটিল কিছু নয়। আগের সেই সংগবদ্ধ দলটিই আবার নতুন উদ্যমে নিজেদের অপকর্ম চালানোর কাজে লেগেছে। তবে এবারে তাদের দলে আরো কিছু নতুন সদস্য এসে জুটেছে। বড়ভাইয়ের অফিসের চানমিয়াও এদের দলেরই একজন। সেদিন এত করে বটগাছটার কথা বলে দেওয়ার পেছনেও উদ্দেশ্য একটাই। ভূতের ভয়টাকে পাকাপোক্তভাবে মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া। চানমিয়ার অতিরিক্ত বাধা দেওয়া আর আগে থেকেই পরিষ্কার জায়গা দেখে বড়ভাইয়ের প্রথম থেকেই এমন কিছু একটা সন্দেহ হয়েছিল। সেজন্যই আসল ঘটনা জানার তাগিদ বোধ করছিলেন তিনি। সঠিক সময়ের অপেক্ষাতে দলের অন্যদের আগেভাগে কিছু জানাননি। চানমিয়া হাতে পায়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করেছে। তার কান্নাতে অবশ্য কারোরই মন গলেনি।
পুলিশ খুঁজে খুঁজে সবাইকে বের করছে। সেদিন ‘পেত্নি’ সেজে আসা ছেলেটার কাছ থেকে ইতিমধ্যেই অনেকের নাম বেরিয়ে এসেছে। সবাই মিলে মাদক চোরাচালানের ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল জমিদারবাড়ীতে। কাজটি তারা এখান থেকেই পরিচালনা করতো। এগারোজনের এই দলের আড্ডাবাজির কারণে তাদের ব্যবসায় দারুণ ক্ষতি হচ্ছিলো। উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছিল তারা। বৃষ্টিমুখর অমাবস্যা রাতটাকেই তাই সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হয়েছিল... এই এগারোজন আড্ডাবাজকে খেদানোর জন্য।
পুলিশী ঝামেলা মিটে যাওয়ার পরে সবাই মিলে বড়ভাইকে নিয়ে পড়লো।
‘আচ্ছা বড়ভাই, ঘটনা তো কিছুই বুঝলাম না! ঐ ব্যাটা বুঝলাম আপনাকে দেখে টাসকি খেয়ে পড়ে গেছে। আপনি কেন টেশে গেলেন? দাঁত কেলায়ে পড়ে থাকলেন একেবারে উপুড় হয়ে!’
বড়ভাই তখনো ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ়। প্রশ্ন শোনামাত্রই চোখেমুখে ফুটে উঠলো অজানা আতঙ্ক। যেন কিছু একটা বিভীষিকা তখনো চোখের সামনে নেচে বেড়াচ্ছে। ধাতস্থ হয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
‘আয় রে...সবাই মিলে আড্ডার আরেকটা নতুন জায়গা খুঁজে বের করি। ঐ জমিদারবাড়ী নিয়ে সরকার যা পারে করুকগা। আমরা আর এর মধ্যে না ঢুকি। বাপ রে বাপ...তোরা দেখিসনি কেউ? আমি তো এক্কেবারে পরিষ্কার দেখলাম! ছায়া ছায়া একটা মুখ। পরনে একটা পেটিকোট আর ব্লাউজ। আউলাঝাউলা বেশবাস। গলার কাছ থেকে ফাঁসের মতো হয়ে আস্ত একটা শাড়ি ঝুলছে। মাগো! কী ভয়ংকর দেখাচ্ছিল! মেয়েটার হাতে মোটা একটা লাঠি। ঐ লাঠিটা দিয়ে সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার মাথায়...মানে ঐ যে...যেটা পেত্নি সেজে ভয় দেখাতে এসেছিল...ঐ ছেলের মাথায় জোরসে একটা বাড়ি দিল। পরিষ্কার দেখতে পেলাম আমি। ঐ বাড়ি খেয়েই তো পড়ে গেল ছেলেটা।
আর আমিও...। আর কিচ্ছু মনে নাই রে! কী যে হয়ে গেল!’
আমরা অবশেষে বুঝলাম। সাজানো পেত্নি দেখে নয়, বড়ভাই তাহলে ভয় পেয়েছে অন্য কাউকে দেখে!
আমরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। আচ্ছা...এই ‘অন্য কেউ’ টা সত্যিকারের পেত্নি ছিল তো! নাকি এখানেও কোন বুজরুকি?
কী কেলো রে বাবা!
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
বৃষ্টিভেজা রাতে ঘটে যাওয়া রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতাকে ঘিরেই গল্পের সূচনা।
০১ ডিসেম্বর - ২০১৪
গল্প/কবিতা:
৬৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪