কবর পাড়ের মানুষ

ভয় (এপ্রিল ২০১৫)

এম আর সকাল
  • ৪১
জ্যান্ত লাশ..... মানুষের দেওয়া নাম। আসলে নাম নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই। সে মাত্র কয়েকজন কে তার প্রকৃত নাম বলেছে। বছির উদ্দিন..... জীবনের বেশি সময়টা প্রখর রোদ, বৃষ্টি, ঘন কুয়াশায় হাড়কাঁপানো শীতে কঠোর পরিশ্রম করে কত বছর কেটে গেছে, তার সঠিক হিসাব নিজেরও হয়ত জানা নেই। মাথয় সাদা জটওয়ালা চুল আর মুখের অল্প কিছু পাকা দাড়ি বলে দেবে তার বয়সের হিসাব। তাতেও না হলে, শরীরের কুচকানো চামড়ার কালচে খয়েরী রং বলে দেবে তার বয়স আশি বা তার চেয়ে বেশি।
ব্যাচারি বেশ কিছুদিন আগে সোজা হয়ে দাঁড়াতে অক্ষম হয়েছেন। ঘুনে ধরা জির্ণ শরীরে পুরাতন নোংড়া দু একটা কাপড়ে বেশ মানায়। ভালভাবে দেখলে বলা যায় তার আর্থিক অবস্থা। সে কত দিন পেট ভরে খেতে পারেনি তা সে কোন ভাবেই বলতে পারবে না। পানিই নাকি তার প্রিয় খাবার, কারন এক মাত্র পানিই যখন তখন খেতে পারা যায়। তার মতে পানি মানুষ পান করলেও সে খায়। পানির সাথে যদি সামান্য গুড় পায় তবে সেটা তার কাছে অমৃত মনে হয়। গত কয়েক দিন ধরে একবেলা হোটেলের ঝুট খেয়ে কাটাতে হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে শুক্র বারে একটু ভাল খাবার পায় এজন্য সে শুক্রবারের প্রতিক্ষায় থাকে।
পৃথিবীতে তার কেউ আছে কি না তা সে বলতে পারে না, নাকি সে অভিমান করে বলে না তাও বোঝা যায় না। আসলে কেউ হয়তো কোন দিন বোঝার চেষ্টাও করে না। কারণ সে কবর পাড়ের মানুষ। শহরের সবচেয়ে বড় কবরস্থানে তার বসবাস। কত দিন ধরে সে কবর এলাকায় থাকে তা খুব কম মানুষ স্পষ্ট করে বলতে পারবে। একটা কাজ সে খুব ভালোভাবে করতে পারে। ভাল ভাবে বললে হয়ত কম বলা হবে। অনেক নিখুঁত আর সুন্দর করে কবর খুড়তে পারে সে। অনেক মানুষ জীবিত অবস্থায় বলে, আমি মারা গেলে যেন আমার কবর জ্যামত্ম লাশকে দিয়ে খোড়ানো হয়। কবর খোঁড়া তার নেশা, এবং পেশা। এতো দিনে সে কতগুলো কবর খুঁড়েছে তা কোন ভাবেই বলতে পারবে না। কবর খোঁড়া থেকে লাশ দাফন করা পর্যন্ত তার দায়িত্ব পরায়নতা দেখে সাবাই মুগ্ধ হয় । কিন্তু খুব কম মানুষ মূল্যায়ন করে ।
অনেক বছর আগে একটা বেওয়ারিশ লাশ এ কবরস্থানে দাফন করা হয়, কিন্তু দু দিন পর প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে কয়েক জন মানুষ বছিরকে নতুন ঐ কবর থেকে কাফনের কাপড় জড়ানো অবস্থায় বেড় হতে দেখে। তারপর থেকেই সে কবর পাড়ের মানুষ। আর একারনেই এলাকার মানুষের মুখে তার নাম জ্যান্ত লাশ শোনা যায়। ঘটনাটা বছিরের কাছে থাকা এক কিশোরের মুখে শোনা যায়। চিংকু তার নাম। কয়েক বছর আগে বছির চিংকুকে আধমরা অবস্থায় কবরস্থান এলাকায় পরে থাকতে দেখলে নিজের কাছে রেখে দেয়। আজও তার কোন পরিচয় মেলেনি। চিংকু একটা টোকাই....... সারা দিন শহরের এমাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত যত ডাষ্টবিন আছে সেগুলোতে টুকিয়ে বেড়ায়। তা দিয়ে দুজনের খাবার হয়ে গেলেও বছির খাবার পায় না। মন চাইলে চিংকু বছিরকে টাকা বা খাবার দেয়, মনে না চাইলে দেয় না। চিংকু বলে তর খয়ন দরকার নাই তুইতো লাশ, লাশ আবার খায় নাকি। মাঝে মাঝে কবর খুড়ে কিছু টাকা পায়, তাও চিংকু কেড়ে নেয়। জীর্ন শরীর নিয়ে মানুষের কোন কাজও করতে পারে না। কোন মানুষই তাকে কাজ দেয় না। ভয়ে অথবা অন্য কোন কারনে। মানুষের সামনে হাত পাতলে তারা দূরে সরে যায়। এ কারনে সে এ কাজটাও করতে পারে না। কিছু ভাবুক টাইপের মানুষ তার কাছে আসে, বসে, কথা বলে, বিড়ি খায়, তামুক খায়। তারা মাঝে মাঝে কিছু খাবার দেয়।
বৃহস্পতিবার দিনের আলো যখন শেষ হয়ে আসছে তখন বছিরকে তার নিজের কবরের কাছে দেখা যায়। খুধা আর বার্ধক্যের কারনে চোখের আলোও কমে এসেছে। নিজের কবরটা চিনতে একটু কষ্ট হয়। তাই আলো থাকতেই যেতে হচ্ছে। প্রচন্ড খুধার কারণ জানতে চাওয়া হলে, তেঁতুলের বিচির মত দাঁত বের করে কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে... লাশের আবার খিদা। পরক্ষনেই ঝর ঝর করে চোখ থেকে পানি ঝরিয়ে বলে...... মানুষ মরে না, মানুষ মরলে আমার পেটে খাওন আসে, মানুষ না মরলে খিদা লাগে, তাই উপর আলাক কই, মরন দেও মানুষের মরন দেও। মানুষ মরার খবর না আসলে ভয় লাগে। খুধার ভয়, খাওয়ার ভয়...
চিংকু ডা বড় হছে, আমাক খাবার দেয় না, ওর নিজেরই হয় না, বিড়ি,গাঁজা,হেরোইন,আটা এল্লা খায়া ওর দিন ভালই যায়, আমার যায় না। আমার কববরের মাটি খায়া দেকবার চাই বাঁচা যায় নাকি.........
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, চারদিক থেকে ঝিঁঝি পোকার ডাক জোড়ালো হয়ে পরিবেশটাকে ছন্দময় করে তুলতে চেষ্টা করছে। একটা দুটা করে জ্বোনাকী তাদের দেহের প্রদীপ জ্বালাতে শুরু করেছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন এই পথিবীতে আলোকিত কিছু মানুষকে খুঁজে বের করাই যেন তাদের প্রত্যয়, যেমনটা আমরা মানুষ হয়েও পারি না.............
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম অসাধারণ শক্তিশালী লেখা । আমিও কবরখানায় এরকম জ্যান্ত লাশ দেখেছি । খুব মায়া হয় ওদের দেখে । কত অবহেলিত । কংকাল হয়ে গেছে অভাবের তাড়নায় । সত্যিই ওদের দিকে আসলে কেউ নজর দেয় না । এম, আর , সুমনই কি এম, আর সকাল ? আপনাকে আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন । বই বের করেছেন না কি ?
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ. বই বেড় করার মত শসাহস এখনও হয়নি......এম আর সুমনই এম আর সকাল
নাসরিন চৌধুরী গল্পটি ভাল লেগেছে কিন্তু মনটাও খারাপ হয়েছে। বুঝিনা ক্ষুধার কেন এত দানবের মত জোর!!! ভোট রইল
শামীম খান বেশ লিখেছেন । ক্ষুধার চেয়ে বড় শত্রু নেই , পাপ পুণ্য ভুলিয়ে দেয় । সেই ক্ষুধা যখন বসিরকে খারাপ পথে টেনে নিতে পারেনা , নিরীহ মানুষটির জন্য মন ভারী হয়ে ওঠে । শুভ কামনা আর ভোট রেখে গেলাম । ভাল থাকবেন ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে... শুভ কামনা রইলো...
দীপঙ্কর বেরা ভাল লাগল । আপনার মন্তব্য ও ভোটের অপেক্ষায়
রবিউল ই রুবেন ভাল লাগল গল্পটি পড়ে। শুভকামনা রইল।
ইসমাইল মজুমদার আপনার গল্পটি ভাল লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর গল্পটির জন্য
আখতারুজ্জামান সোহাগ ‘‘মানুষ মরে না, মানুষ মরলে আমার পেটে খাওন আসে, মানুষ না মরলে খিদা লাগে, তাই উপর আলাক কই, মরন দেও মানুষের মরন দেও। মানুষ মরার খবর না আসলে ভয় লাগে। খুধার ভয়, খাওয়ার ভয়...’’ ভীষণ কষ্ট হলো লাইনগুলো পড়ে। গল্প ভালো লেগেছে। শুভকামনা গল্পকারের জন্য।
ধন্যবাদ সোহাগ ভাই..
Salauddin গল্পটি ভাল লাগল। শুভকামনা রইল।
ফরহাদ সিকদার সুজন ভালো লাগলো ভাই চালিয়ে যান........ ভোট রইল। আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো ভাই।

১২ নভেম্বর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪