অফিসে হঠাৎ কাজের চাপ বেড়ে গেলো। সকাল বুঝতে পারলো আজ লাঞ্চ করতে একটু দেড়ি হবে । ঠিক তাই হলো। বিকালে কাজে মন বসাতে পাছিলো না। প্রিয় মোবাইলটা হাতে নিয়ে কাকে কল করবে ভেবে পাচ্ছে না। এমন সময় জয়ার ফোন। রিসিভ করতেই ... • নিশ্চই অফিসে, আর কাজ না করে পত্রিকা পড়ছেন ? • কাজ করছি না এটা সত্য, কিন্তু পত্রিকা পড়ছি না। • তাহলে আমার কথা ভাবছেন ? • না, কারো কথাই ভাবছি না। • আমি কি বলি মন দিয়ে শোনেন। আজ ঠিক ছয়টা সময় পদ্মার পাড়ে আপনার প্রিয় জায়গায় আসবেন। কোন কথা নয়। আসতেই হবে। • এতো বছরে এক শহরে থেকেও যার সাথে দেখা করতে চাননি আজ হঠাৎ কি মনে করে ? • বললাম তো কোন কথা নয়। আসতে বলছি আসবেন। আপনাকে দেখার খুব ইচ্ছা করছে। • আমি তো বলেছি আমাকে দেখার পর আর আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না। এর আগে এমনটা অনেকেই করেছে। • এ ভুলটা ভাঙ্গার জন্যই তো আজ ডাকছি। আর অফিস থেকে রুমে যাওয়ার দরকার নাই। যেভাবে আছেন ঠিক ওভাবেই আসবেন। • আমি বুঝতে পারছি আগের মত আমাকে আবার কষ্ট পেতে হবে। • প্লিজ বাহানা করবে না আসেন, ঠিক ছ-টায় আসবেন, রাখছি। লেখা লেখির মাধ্যমে মোবাইলে তার সাথে পরিচয়। অনেক অনেক কথা হয়েছে তার সাথে। সুখ-দুখ শেয়ারও করেছে দুজন। সকাল কখনোই দেখা করতে চাইতো না। কারন এর আগে এমন কিছু পাঠিকা দেখা করার জন্য অনেক অনুরোধ করেছে। তারা এমন করে আরো বলেছে..... আপনার লেখা আমার অনেক ভালো লাগে। আমি আপনার একজন নিয়মিত পাঠক। আপনি অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। আপনার সাথে বন্ধুত্ব করবো। কিন্তু আপনি করতে চাননা। আজ-কালকার ছেলেরা মেয়েদের ফোন নাম্বার পেলেই দেখা করতে চায়, বন্ধুত্ব করতে চায়, প্রেম করতে পায়।কিন্তু আপনি সবার চেয়ে আলাদা আর একারনেই আপনাকে এতো ভালো লাগে। তাদের এমন কথা শুনে দেখা করতে গেলে ঘটে দুখের এক নাটক। আপনি সকাল! আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আর যা হোক, দেখার ইচ্ছা ছিলো দেখা হয়ে গেলো, এখন আসি। কখনও আবার দুর থেকেই চলে যায়। কেউবা আবার সামনে এসেই বলে এই মাত্র আমার একটা জোরুরী ফোন আসলো আমাকে এক্ষনি বাসায় যেতে হবে। এরা কেউই পরে আর যোগাযোগ করে না। সকাল করতে চাইলেও তারা এড়িয়ে যায়। এর সঠিক কোন কারন সকাল খুজে পায় না। কিন্তু বান্তবতাটা অনেক কঠিন ভাবে বুঝিয়ে দেয়, সৃষ্টিকর্তা তাকে সুন্দর চেহারা দেয়নি বা শারীরিক কাঠামো দেয়নি। ভাগ্যকে মেনে নিয়েই সে জীবনযাপন করছে। মাস্টার্স পাশ করে সরকারী একটা ভালো চাকরীতে যোগদান করেছে মাত্র এক বছর। বিয়ে-সাদি করার তেমন ইচ্ছা তেমন নেই এখন। একটু গুছিয়ে নিয়ে ভাবা যাবে। কিন্তু এখন একটা প্রেম করা যায় । প্রেমিকাকে জেনে বুঝে বিয়ে করে সংসার সাজানো যায়। কিন্তু সকালের কপালে কোন মেয়ে আছে কি না কে জানে। বিকাল ৪:৪৫ মিনিট জয়ার ফোন.... • কি অফিস থেকে বেড়িয়েছেন ? • না, এখনও বেড় হইনি, তবে রেডি হচ্ছি। • ওকে, ভালো ছেলের মত টাইমলি চলে আসবেন, রাখছি। শুনেন আমি কিন্তু সাজু-গুজু করে আসবো। • ঠিক আছে আপনার যা মনে হয়। বিকাল ৫:৫০ মিনিট। পদ্মা গার্ডেনে ঠিক নদীর পাড়ে বসে বাদাম খাচ্ছে সকাল। বিকালের হলুদ সূর্যের আলোতে নদীর পানি বেশ সুন্দর লাগছে। কেমন যেন ভেবসা গড়ম পড়েছে। মাঝে মাঝে ঝাপটা বাতাসে শরীর মন ফুরফুরে করে তুলছে। জয়ার আসার ব্যপারে সকালের কোন চিন্তা নেই। এমন ঘটনা এর আগে অনেকবার ঘটেছে তাই সে এতদমই সাভাবিক। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে জয়া মেয়েটা অনেক ভালো। জয়া অন্যদের মত কখনোই করতে পারে না। সে কি আমার ভালো বন্ধু ? নাকি সুধুই পাঠিকা ? নাহ্ সে আমার পরিচিতা। আচ্ছা আমারা কি প্রেমে পড়েছি ? নাহ ! প্রশ্নই ওঠে না। তবে আমি তার প্রতি একটু দুর্বল। এটা হতেই পারে। তিন বছর ফোনে কথা বলেছি। অনেক কিছু শেয়ারও করেছি। এজন্যই হয়তো এমন লাগছে। বিকাল ৬:২০ মিনিট। জয়ার আসার কথা ভুলেই গেছে সকাল। মোবাইলের রিংটোনে মনে হলো। • হ্যা, আপনি কোথায় ? • এই তো আমার পছন্দের জায়গাতে বসে নদী দেখছি আর বাদাম খাচ্ছি। • আপনি কি নেভিব্লু কালারের একটা সার্ট পরে আছেন ? • হ্যা ঠিক তাই। • তাহলে পেছনে তাকান .... • হায়! আমি এম.আর. সকাল। • আমি জয়া, আর ও আমার বান্ধবী তমা। • হায়। • ভাইয়া আসলে আমি সরি, তমার জন্যই দেড়ি হয়ে গেল। • না না ইটস একে। • আর ভাইয়া তমার এক আাত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি আছে।ওকে এখনই ওখানে যাওয়ার জন্য ফোন করেছে। আর আমিও ওর আত্মীয়টাকে দেখতে যাবো। ওর সাথে গেলে আমার একটু ভালো হবে। • ঠিক আছে জয়া কোন সমস্যা নেই। আপনি যেতে পারেন। আর আমি কি রিক্সা পর্যন্ত এগিয়ে দেবো ? • না ভাইয়া আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমরা যেতে পারবো। আর সরি অন্য দিন সময় করে এসে অনেকক্ষণ গল্প করবো। • আচ্ছা ঠিক আছে। • আসি তাহলে ভাইয়া।
জয়া মেয়েটা অনেক সুন্দরী। কিন্তু মনটা ...? পাসেই একটা দোকান থেকে একপ্যাকেট গোল্ড লিফ সিগারেট কিনে একটা জ্বালিয়ে আগের জায়গায় বসে আপন মনে টানছে সকাল। ঠোটে সিগারেট, নাকে ধোয়া, হাতে মোবাইল। সামনের নদীটা বিশ্রী এক নালা মনে হচ্ছে। প্রিয় মোবাইলটা যন্ত্রনাদায়ক এক জ্বলন্ত লোহা পিন্ড মনে হচ্ছে। একটা দুইটা তিনটা চারটা পাঁচটা সিগারেট শেষ। চোখের কোনে বেশ পানি জমেছে। মোবাইলটার জন্যই এই কষ্ট একে আর রাখার কোন প্রয়োজন নেই। ছুড়ে ফেলে দেয় মাঝ নদীতে। এতোক্ষনে চারপাশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। মাথাটা আর ধরে রাখতে পারছে না। আকাশের দিকে তাকিয়ে নুইয়ে পরে মাটিতে । যতদূর চোখ যাচ্ছে সবই যেন ঝাপসা আর কষ্টের বিন্দু বিন্দু কনা হয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে........ বিকাল ৬:৫৭ মিনিট। সকাল যেখানে বসে ছিলো তার কয়েক গজ দূরে আড়াল থেকে জয়া আর তমা সকালকে ফলো করছিলো। আসলে জয়া দূর থেকে দেখতে চেয়েছিল সকালের কষ্ট । মনের অজান্তেই জয়া কয়েক ফোটা চোখের পানি ঝড়িয়েছে..... এখন সকালের কাছে যাবে কি যাবে না এই চিন্তায় মগ্ন জয়া...............
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।