অনাকাঙ্খিত মুহুত

ভৌতিক (নভেম্বর ২০১৪)

শঙ্খনীল দেব
  • ২৭
অনেক আগেই শুরু হয়েছিলো এই স্বপ্নের ব্যাপারটা।আজকাল প্রায়ই দেখছি। অসম্ভব যন্ত্রনা আর ভীতিকর। জানিনা কবে আর কিভাবে মুক্তি পাব এই দুঃস্বপ্ন থেকে। জীবনের সবচাইতে ভয়ংকর সেই রাতটা আজও আমাকে তাড়া করে বেড়ায়।

এবার আসল ঘটনায় যাওয়া যাক। আজ থেকে এক বছর অাগের ঘটনা। আমাদের বাসাটা গ্রামের এক বিশাল মাঠের পাশেই। আমাদের সাথে থাকতো আমার এক কাকা আর তার পরিবার। মাঠটা অনেক বড় বিধায় আসে পাশে তেমন কোনও বাড়িঘর ছিল না। ওহ, মাঠের ঠিক মাঝখানটায় একটা বড় বট গাছ ছিল। মাঝে মাঝে বাইরে থেকে এসে কিছু ব্যাবসায়ী সেখানে অস্থায়ী দোকান গড়ত। তখন আমাদের জন্য খুব খারাপ হতো। কারণ আমরা তখন সেই গাছের নিচে খেলতে পারতাম না।
ওহ, বলা হয় নি। গাছটা ছিল আমাদের খেলাধুলার এক প্রধান জায়গা। স্কুল থেকে দৌড়ে এসেই সেই গাছের নিচে চলে যেতাম। বয়স তখন ১৪-১৫ হবে। মাঠের নিচ থেকে টিম বানানো হতো, এরপর মাঠে নেমে ক্রিকেট। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস লাগলে বসে জিরিয়ে নিতাম।
সেবার এক বৃদ্ধ বয়স্ক লোক শহর থেকে আশ্চর্য রঙের এক পানীয় নিয়ে আমাদের গ্রামে ব্যাবসা করতে আসলো। তার ব্যাবসার মন্ত্র ছিল এমন, “এই পানি পান করিলে শরীরে বল অটুট থাকিবে। সাথে আসিবে নতুন উদ্যম।”
সেই পানিতে কি ছিল তা আমি জানি না। তবে অল্প কয়েকদিনেই তার নামডাক ছড়িয়ে পড়লো। দূরের গ্রাম থেকে মানুষ এসে জড় হতে লাগলো পানির জন্য। এদিকে আমরা পড়লাম বিপাকে। মাঠের মধ্যে যেনও একটা মেলা বসে গিয়েছিলো। আমাদের খেলাধুলা চাঙ্গে উঠলো।
আমাদের গ্রুপের দলনেতা ছিলেন শিহাব ভাই। তিনি আমাদের ডেকে বললেন, এভাবে চলতে দেয়া যায় না। কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, কোনও এক রাতে গিয়ে উনার সব কিছু চুরি করে নিয়ে আসবো। বিশ্বাস করুন, সেই কাজ আমাদের টাকার লোভে ছিল না। ছিল নিজেদের স্বাধীনতা, আর খেলার মাঠটা ফিরে পাবার জন্য।
রাতে অনেকেই থাকতে পারবে না। তাই শুধুমাত্র যারা থাকতে পারবে তাদেরকেই ডাকা হল। সিদ্ধান্ত হল, সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর আমরা যাবো এবং যেহেতু লোকটি রাত্রিতে তার দোকানেই থাকে তাই দরকার হয় তাকে ভয় দেখিয়ে হলেও আজকেই কাজ সাধন করবো।
রাত ১০ টার কিছু সময় পড়ে আমরা বের হলাম। সবার বাড়ি মাঠ থেকে একটু দূরে হওয়ায় তারা আমার বাড়ির সামনেই অপেক্ষা করছিলো। চারপাশে এক অদ্ভুত নীরবতা। যারা গ্রামে কখনো থাকেন নি তাদের বলে রাখি, বেশিরভাগ গ্রামই রাত ৮টার পরে নিরব হয়ে যায়। সেখানে আমাদের গ্রামকে তো অজ পাড়াগাঁ বলা যায়। যাই হোক, আমরা সংখ্যায় ৫ জন ছিলাম। যথারীতি শিহাব ভাই আমাদের লিড দিচ্ছিলেন। আমরা অনেকদুর থেকেই দেখতে পেলাম, মাঠের মধ্যখানের সেই দোকানদারের ঘর থেকে মোমবাতির আলোর মতো কিছু জ্বলছে। ভাবলাম, একা মানুষ, ভয় পায় তাই হয়তো মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘুমায়।
লোকটি একটি তাবুর মধ্যে দোকান দিয়েছিলো। সেই তাবুতেই রাতের বেলা থাকতো। আমরা তাবুর কাছে পৌঁছাতেই একটা অদ্ভুত গুনগুন আওয়াজ পেলাম। আওয়াজটা অনেকটা সুর করে কোনও কিছু পড়ার মতো। আমাদের চমকে দিয়ে একটা বিড়াল হটাত করে ডেকে উঠলো। আমি আরেকটু হলে ভয়ে চিৎকার দিয়ে ফেলছিলাম। সময় মতো আমার বন্ধু নাফিস আমার মুখ চেপে ধরায় রক্ষা পাই।
আমাদের আরও ভয় পাইয়ে দিয়ে একটা কালো কুচকুচে বেরাল আড়াল ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। মিথ্যে বলবো না, কিন্তু আমার জীবনে আমি কোনও বিড়ালের চোখ এমন সাদা হতে দেখিনি। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। মণির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঠিক তখনই একটু বাতাসে সেই তাবুর দরজা হিসেবে ব্যাবহার করা কাপড়টা একটু নড়ে গেলো। সাথে সাথে আমাদের দৃষ্টি ঘুরে গেলো সেইদিকে।
পুরো ঘরে লোকটাকে ঘিরে অনেকগুলো মোমবাতি জ্বালানো ছিল। তারপর ভিতরে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। দেখলাম ঘরের মাঝে একটা চক্র কেটে একজন মাঝবয়সী লোক বসে আছে। লোকটার চোখ বন্ধ এবং একমনে বিড়বিড় করে কি যেনও পড়ছে। তার সামনে একটা কাঁচের বাতি, সেই বাটিতে রক্তের মতো কোনও তরল পদার্থ। ঠিক সামনেই মেঝেতে একটা শিয়াল, একটা কালো বিড়াল, এবং একটা ছোট বাচ্চার লাশ। লোকটা মনে হয় আমাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করে নি, তাই তখনো এক মনে বিড়বিড় করছিলো। শিহাব ভাই, আমাদের সকলকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে চুপ করে থাকতে বললেন। বলতে ভুলে গেছি, আমাদের গ্রামে আশা সেই লোকের সাথে লোকের চেহারার অসম্ভব মিল ছিল। যেনও যুবক বয়সের ঐ লোকটাই এখন আমাদের সামনে বসে আছে।
আমরা দম বন্ধ করে দেখছিলাম কি ঘটে। এমন সময় লোকটা আমাদের অবাক করে দিয়ে নড়ে উঠলো। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায়ই একটা হাত বাড়িয়ে বিড়ালের লাশটা নিলো। নিয়ে মুখের সামনে এনে কি যেনও আবারো বিড়বিড় করলো। তারপর দাঁত দিয়ে বড় করে কামড় বসাল। লোকটি যখন হা করলো, তখন মোমবাতির আলোয় দেখতে পেলাম সেই দাঁতে তাজা রক্ত লেগে আছে।
গলার মধ্য দিয়ে বমি ঠেলে বের হতে চাচ্ছিল। শিহাব ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনাকে দেখেও সুবিধার মনে হল না। কিছু বলতে যাবো তার আগেই লোকটি বিড়ালের বিচ্ছিন দেহটা পাশে নামিয়ে রেখে হাত বাড়িয়ে শিশুর লাশটা নিলো। এরপর আমাদের ভয়ের মাত্রা তুঙ্গে উঠিয়ে কামড় বশিয়ে দিলো সেই শিশুটার পায়ে।
আর সহ্য করতে পারলাম না। আমার পাশেই ছিল হাবিবুর। ও এই দৃশ্য দেখেই চিৎকার করে পিছনে দৌড় মারল। সাথে সাথে লোকটা চোখ মেলল। সেই চোখের বর্ণনা দেয়ার মতো কোনও ভাষা আমার জানা নেই। অনেকেই হয়তো রক্তচক্ষুর কথা শুনেছেন, কিন্তু আমি সেদিনই প্রথম চাক্ষুষ দেখলাম ব্যাপারটা। লোকটার চোখ দেখে মনে হচ্ছিল চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। আমি কিছুক্ষণের জন্য জমে গেলাম জায়গায়। এমন সময় শিহাব ভাই আমাকে হাতে ধরে, প্রায় টেনে নিয়ে দৌড় দিলেন। পেছন থেকে লোকটার তারা করার আওয়াজ শুনতে পেলাম। কি ভয়ানক সেই চিৎকার। এটা কোনও মানুয়ের চিৎকার না। আমার বাসা সেই জায়গাটা থেকে কাছেই ছিলো। আমি পানপনে দৌড়ে বাসার উঠান পর্যন্ত এলাম। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।
পরেরদিন সকালে হঠাৎ সবাই দেখে মাঠের মধ্য থেকে দোকানটি হাওয়া হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, যারা সেই লোকের দেয়া পানীয় খেয়েছিল তাদের প্রত্যেকে অসুস্থ হয়ে পরে। রক্তবমি করে মারা যায় কয়েকজন। আমরা যারা সেদিন গিয়েছিলাম রাতে, তাদের মাঝে ২ জন রক্তবমি করে মারা যায়। আর আমি? আমি এই স্বপ্নটা তখন থেকেই দেখি, যে লোকটা আমাকে তারা করছে। একপর্যায়ে লোকটা আমাকে ধরে ফেলে এবং আমার হাতে কামড় দিয়ে শিরা ছিঁড়ে ফেলে। ঐ সময়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সেই স্বপ্নটি আমি আজও দেখি। অসম্ভব যন্ত্রনার সেই ভয়াল মুহুর্তটি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শ্রীদ্যুতি বিনায়ক বেশ ভালই আপনার গল্পের হাত,ভালো থাকবেন আমার পাতায় নিমন্ত্রন।
শাহ্ আলম শেখ শান্ত অসাধারন আপনার গল্পের হাত ---ভালোই লিখেছেন । আমার লেখায় ভোট ও মন্তব্যের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ।
গোবিন্দ বীন বেশ ভাল চমৎকার।। "আমার চলতি সংখ্যায় কবিতা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আশা করি আমার পাতায় আসবেন
ruma hamid এক টার পর একটা চমকপ্রদ কাহিনী পড়ছি । ভাল লাগল ।
মাহমুদ হাসান পারভেজ ভালো হয়েছে।শুভ কামনা রইলো।
শঙ্খনীল দেব ধন্যবাদ জাহিদুল ভাই।
শঙ্খনীল দেব ধন্যবাদ রাকীব ভাই
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব বেশ সুন্দর।।। "ভৌতিক সংখ্যায় আমার লেখা গল্প কবিতা পড়ার আহ্বান জানিয়ে গেলাম। আমার পাতায় আসলে চির ধন্য হব হে প্রিয় কবিবন্ধু।"
একনিষ্ঠ অনুগত গল্পে ভয় পাইয়ে দেয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান আছে... তবে উত্তম পুরুষে গল্পটি বর্ণিত হলেও পাঠককে মধ্যম পুরুষে সম্বধন না করলে ভালো হতো...

২৪ অক্টোবর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪