সবুজ পরী,
মাগরিব নামাজের একটু পর, হটাত আমার মোবাইলে একটা ফোন আসল, পকেট থেকে মোবাইলটা বের করেই দেখি তোমার বাবার নাম্বারটা ভেসে উঠছে। আমার বুঝতে বাকি রইল না যে তুমি ফোন দিয়েছ। কারন আজ তোমার জন্মদিন, আর তাই গতকাল রাতে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তোমার বাবার নাম্বারে একটি ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলাম। আর সেটা দেখেই তুমি আমায় ফোন দিয়েছ, আমার নাম্বারটা তোমার অচেনা, তাই ফোনটা ধরিনি। আসলে ধরার সাহস পাচ্ছিলাম না, তুমি কি বলবে আর আমিই-বা কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। ভাবতে ভাবতে ফোনটা কেটেই গেল। তোমার কি মনে আছে সে দিনটার কথা? হয়ত নেই, কারন সেদিনের পরে তুমি আরও দুটি জন্মদিন পার করেছ। তার একটু পরেই কিন্তু আমরা কয়েকজন বন্ধুরা মিলে তোমার জন্মদিনের কেক কেটেছিলাম। তুমি তো আর তা জানতেনা, মুরুব্বিদের কথায় ”যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়া পড়শির ঘুম নাই” অনেকটা সেইরকমই হয়েছিল সেদিন।
আমার আজকের এই লেখাটা তোমার কাছে পৌঁছাবে কিনা আমি জানিনা, আর যদিও পৌছায় সেদিন আমি থাকব কিনা তাও জানিনা। এটা কোন চিঠি নয়, আমার আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য হল তোমায় সবকিছু আরেকবার মনে করিয়ে দেয়া।
সেদিনের পরে কিন্তু আমি অপেক্ষায় ছিলাম তোমার যদি আরেকবার ফোন আসে, এসেছিলও বটে, আমিও ফোন ধরেছিলাম, কিন্তু এটা আমার নাম্বার সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্যেই তুমি ফোন দিয়েছিলে পরে বুঝতে পারলাম। কারন তুমি কোন কথা বলোনি সেদিন, আমি একাই কিছুক্ষণ কথা বলার পরেই ফোনটা কেটে গিয়েছিল, আমি কিন্তু ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম এটা তোমার কল ছিল। তাই তোমার সাথে কথা বলতে চেয়ে একটা ম্যাসেজও করেছিলাম, কিন্তু তুমি কোন উত্তর দাওনি। আমিও ক্ষান্ত হয়নি, প্রত্যেকটা স্পেশাল দিনে তোমায় শুভেচ্ছা জানিয়ে তোমার বাবার নাম্বারে ম্যাসেজ দিয়েছি, কারন তোমার তখন ফোন ছিলনা, আর তোমার বাবাও মোবাইলের এত কিছু বুঝেনা। অবশেষে ঈদ-উল-ফিতর এ আমার ম্যাসেজ এর রিপ্লাই পেলাম। তুমিও শুভেচ্ছা জানালে আমায়। বিশ্বাস কর, সেদিন এক মুহূর্তের জন্য আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হয়ে গিয়েছিলাম। পাগলের মত বন্ধু বান্ধব সবাইকে বলতে শুরু করেছি, আমার ফারজানা আমাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে, আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। সেবারের ঈদটা ছিল আমার সবচেয়ে আনন্দের ঈদ। পরদিনই তুমি আবার একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলে আমি কে জানতে চেয়ে, কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছিলাম-না, তবে কি বলেই দিব আমি তোমার চাচাতো ভাই, যদিও তোমাদের সাথে আমাদের রক্তের কোন সর্ম্পক নেই, তারপরেও তোমাদের পরিবার আর আমাদের পরিবার এর মধ্যে সর্ম্পকটা খারাপ ছিলনা। কিন্তু সেদিন আর পরিচয়টা বলা হয়নি, বলেছিলাম আমাকে অপরিচিত বন্ধু ভেবে নিতে পারো, যে সর্বদা তোমার মঙ্গল কামনা করে।
এভাবেই এনেক দিন কেটে গেল, আমি ম্যাসেজ করলে তুমিও রিপ্লাই দিতে, কিন্তু প্রতিবারই আমার পরিচয় জানতে চাইতে। আমিও বলব বলব করেও বলছিলাম না, কারন কিছুদিন পরেই তোমার পরীক্ষা, আর এখন সবকিছু বললে হয়ত তোমার পরীক্ষায় কিছুটা হলেও প্রভাব পরবে, তাই ইচ্ছে করেই বলিনি। তোমার পরীক্ষার কিছুদিন আগে তোমাদের বাসায় তোমার মামাতো বোন এর বিয়ের আয়োজন হয়েছিল, তোমার কি মনে আছে সে দিনটার কথা? পুরো বিয়েতেই তোমাদের বাসায় ছিলাম, অনেক কথা হয়েছে তোমার সাথে, কিন্তু অপরিচিত সেই মানুষটি হিসেবে নয়, তোমার চাচাতো ভাই হিসেবে। কালো জামায় তোমাকে সেদিন দারুণ লাগছিল, এক মুহূর্তের জন্যও তোমার থেকে নজর ফেরাতে পারছিলাম না। রাত গভীর হয়ে এলো, বিয়ের অনুষ্ঠানও শেষ, সবাই যার যার মত করে চলে যাচ্ছে, আমাকেও যেতে হবে, কিন্তু মন কিছুতেই চাইছিলনা, না চাইলেও যেতে হয়েছে। সেদিন থেকে টানা কয়েকটি দিন এক মুহূর্তের জন্যেও ঘুমাতে পারিনি। বাধ্য হয়েই তিন দিন পর ঘুমের ট্যাবলেট খেতে হয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তুমিও তখন জানতে আমি কে, কিন্তু বলোনি, তোমার চাচাতো ভাই এর স্ত্রীর কাছে সব বলতে তুমি, আমিও বলতাম, তিনি সবই জানতেন। উনার সাথে আমার যতবার কথা হয়েছে প্রতিবারই তোমার কথা জানতে চেয়েছি।
তোমার পরীক্ষাও শুরু হয়ে গেল, পরীক্ষা চলাকালীন তোমায় আর এসএমএস করিনি, শুধু শুভ কামনা জানিয়েছিলাম। পরীক্ষার পরে একদিন তুমি জেদ ধরলে, আমার পরিচয় বলতেই হবে, যতদিন না বলি ততদিন যেন এসএমএস না করি। আমিও মেনে নিয়েছি, ভাল একটা সুযোগ খুঁজছিলাম তোমার সাথে সরাসরি কথা বলার। এসএমএস এ তো আর সবকিছু বলা যায়না। এরমাঝেই পহেলা বৈশাখ চলে এলো, খুব খারাপ লাগছিল তোমায় একবার শুভেচ্ছা জানাতে পারলাম না। রাত তখন ৯:২৩ মিনিট, আমার মোবাইলে ম্যাসেজ এর শব্দ, খুলে দেখি তুমি আমায় বৈশাখ এর শুভেচ্ছা জানিয়েছ। আনন্দে তখন আমার চোখ গুলো ভিজে গিয়েছিল, কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম-না। তখন আমিও তোমায় শুভেচ্ছা জানালাম, এবং সব বন্ধুদেরকেও, কারন সেদিন কাউকেই আমি শুভেচ্ছা জানাইনি। পরক্ষণে তুমিও আবার আমার পরিচয় বলার অনুরোধ করলে, আমিও বলব বলে তোমার সাথে কথা বলতে চাইলাম। তুমি পরদিন সন্ধ্যায় ফোন দিবে বলে সেদিনের মত বিদায় নিলে।
১৫ই এপ্রিল সন্ধ্যা ৭:০০, মাঠে নির্জন একটা জায়গায় গিয়ে বসলাম, তোমার ফোনের অপেক্ষায়। সন্ধ্যা ৭:৩৭ মিনিটে আমার ফোন বেজে উঠল, দেখি তোমার নাম্বার , হৃদয় স্পন্দন যেন হটাত করেই বেড়ে গেল। খোঁজ খবর নেয়ার এক পর্যায়ে বললাম আমি ’রাজু’। তুমি কিন্তু একটুও চমকাওনি সেদিন। মনের যত জমানো কথা ছিল সব বললাম তোমাকে, বললাম আমার ভালবাসার কথা, তুমিও শুনলে, ৫১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড কথা বললাম সেদিন, নার্ভাসে আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। তুমি কয়েকদিন সময় চাইলে, আমিও মেনে নিলাম। দুদিন পর হটাত রাতে আমার মোবাইলে ম্যাসেজ এর শব্দ, পরদিন সন্ধ্যায় কথা বলবে জানালে তুমি। আগের মত আবারো সেই মাঠে অপেক্ষায় আমি, ৭:৩০ এর কিছু পরেই তোমার ফোন। কিন্তু সেদিন অনেকটা হতাশ করেছিলে আমায়, জানালে তোমার অনেক সমস্যার কথা, তোমাকে কিছুতেই মানাতে পারছিলাম না। হাত-পা যেন আমার অবশ হয়ে আসছে, কথা শেষ হওয়ার পর বাড়ী ফিরতে পারব কিনা সেটা নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। অবশেষে এক চাচাতো ভাইকে সাথে নিয়ে বাড়ী ফিরলাম। সেদিন আর খাওয়া ঘুম হয়নি। পরদিন তোমার সাথে কথা বলতে চেয়ে আমি ম্যাসেজ করলাম, তুমি বললে পরদিন সন্ধ্যায় কথা বলবে। আবারো সেই অপেক্ষা, কারন তোমার কাছে তো আর মোবাইল নেই তখন, তোমার আম্মু বাইরে গেলে উনার মোবাইলে সুযোগ বুঝে কথা বলতে হয়। সেদিন কিছু শর্ত মেনে নিয়ে তোমার সাথে নতুন সর্ম্পকের শুরুটা হয়েছিল। এই সর্ম্পকের দ্বার বেয়ে মাসের পর মাস কেটে-গিয়েছিল, ভালই তো চলছিল সবকিছু, এর চেয়ে বেশী তো এখন কিছু চাইনি আমি। কারন দুজনের হাতেই যথেষ্ট সময় রয়েছে। আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়গুলো কেটেছে তখন। তোমার আব্বুও তোমাকে একটা মোবাইল কিনে দিয়েছে, তাই তখন কথা বলতে আর তেমন কোন সমস্যা হচ্ছিল-না, সুযোগ বুঝেই ফোন আর এসএমএস করা হতো। এভাবে প্রায় সাত মাস কেটে গেল।
রাত তখন প্রায় আড়াইটার উপরে বাজে, সেদিনের মত কথা শেষ। বলেছিলে মোবাইলে চার্জ নেই, এখন চার্জ দেওয়াও সম্ভবনা, তাই আগামীকাল কলেজে মোবাইল নেবে না, এই বলে সেদিনের মত বিদায় নিয়েছিলে। আর বলেছিলে কলেজ থেকে এসে কথা বলবে। আমিও সেই অপেক্ষায়, কিন্তু সেই অপেক্ষা যে আর শেষ হচ্ছেনা। একদিন দুইদিন তিনদিন পার হয়ে গেল, তোমার কোন খোঁজ পাচ্ছিনা, তোমার মোবাইলটাও বন্ধ। তোমার বাবার এবং মায়ের নাম্বারে ম্যাসেজ করেছি কিন্তু কোন উত্তর পাচ্ছিনা। পাগলপ্রায় আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম-না। চিন্তায় অস্থির ছিলাম কয়েকটা দিন। অবশেষে চতুর্থ-দিনে বিকেল বেলায় হটাত আমার ফোন বেজে উঠল, হ্যাঁ তুমি ফোন দিয়েছিলে, কিছুক্ষণের জন্য দুশ্চিন্তা যেন দুর হয়ে গিয়েছিল। জানতে চেয়েছিলাম কি হয়েছে তোমার, তার উত্তর না দিয়ে তুমি জানিয়ে দিলে, আর কথা বলবেনা আমার সাথে, সর্ম্পকের ইতি টানতে চাইলে তুমি, আকাশ ভেঙ্গে পড়ল আমার মাথায়। কিছু বলার সুযোগও পেলাম না সেদিন, বলব-ই বা কি করে, তোমার এই কথা শুনার পর কিছুতেই যে কান্না থামাতে পারছিলামনা। কি অপরাধ আমার, কেনইবা আমার থেকে দুরে সরে যাচ্ছ, তার কিছুই বললে না তুমি। তোমার কি মনে পরে? আগে যত কথা হয়েছে, কথা শেষ হলেই তুমি বলতে- তুমি লাইন কাটতে পারবেনা, যেন আমি লাইন কাটি, আমিও বলতাম- না তুমি কাটো, কিন্তু তোমার জেদের কাছে প্রতিবারই আমি ইচ্ছে করেই হেরে যেতাম, আমিই ফোন লাইন কাটতাম, আর একা একাই হাসতাম। কিন্তু সেদিন, কত সহজেই লাইনটা কেটে দিলে। তবে এতদিন কি শুধু অভিনয় করেছিলে? প্রশ্ন থেকে যায় মনে। সেই থেকে আজ অবধি তোমার কোন খোঁজ আমার কাছে নেই, অনেক চেষ্টা করেছি, তোমার সাথে একবার কথা বলার, সব চেষ্টাই আমার বৃথা হয়েছে। সেই থেকে তোমার ফোন এখন পর্যন্ত বন্ধ, তোমার বাবা মায়ের নাম্বারে অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। কয়েকমাস হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত আমি জানলাম না আমার অপরাধ, কেন তুমি এমন করলে। তুমি কি ভুলে গেছ? তোমার সাথে একদিন কথা না হলে আমি সেদিন সারারাত ঘুমোতে পারতাম না। একবারও কি জানতে ইচ্ছে করেনা এখন পর্যন্ত আমি কিভাবে বেচে আছি?
প্রতিদিন আমায় কতটা এসএমএস করতে কখনো কি হিসেব করেছিলে? ৫০ টার কম হবার কথা নয়, আমিও করতাম। আচ্ছা, এখনো কি কাউকে এত এসএমএস করো? তুমি কি ভুলে গেছো? কলেজে ক্লাস এর ফাকে আমায় কত এসএমএস করতে।
এখন মোবাইলের ম্যাসেজ এর শব্দটা কানে আসলেই বুকটা কেপে উঠে, দৌরে ছোটে যাই, ভাবি হয়ত আজ এসএমএস করেছ। কিন্তু, অপারেটর কোম্পানি থেকে আসা ম্যাসেজ গুলো হয়ত তখন আমায় নিয়ে হাসাহাসি করে।
অভ্যাসটা যে এখনো পাল্টায়-নি, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলেই যে তোমার পাঠানো ’শুভ সকাল’ লেখা এসএমএস পড়ে আমার দিন শুরু হতো। তোমার কি মনে পরে? আমার রিপ্লাই দিতে দেরী হলে তুমি একটু পর পর এসএমএস করতে, আর লিখতে- ’কি এখনো ঘুম ভাঙ্গে নাই?’, ’ঘুম থেকে উঠছো তো?’, ’কয়টা বাজে খেয়াল আছে? এখনো ঘুমাও?’ ইত্যাদি। এখন ঘুমের ঔষধ খেয়ে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমালেও আর ম্যাসেজ আসেনা। তবু যেন ঘুমের ঘোরে ম্যাসেজ এর শব্দ শুনতে পাই।
তোমার কি মনে পরে? তোমায় আমি কি নামে ডাকতাম, এখন কি কেউ তোমায় ’সবুজ পরী’ বলে ডাকে? কেউ কি সবুজ পরীর জন্য কবিতা লিখে?
তোমার কি মনে পরে? আমার লেখা নতুন নতুন কবিতা গুলো যখন তোমায় শুনাতাম, ভাল হোক আর না হোক তুমি অনেক প্রশংসা করতে, আর আমায় কবি বলে ডাকতে, তোমায় একটু আনন্দ দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করতাম। আমার সব প্রচেষ্টাই যে ছিল তোমার জন্য।
এখন কি কেউ বার বার জানতে চায় তুমি কেমন আছ? বিশ্বাস করো, যতবার তুমি বলতে- তুমি ভাল আছ, শুনে আমার বুকটা ভরে যেত। এখনও খুব জানতে ইচ্ছে করে তুমি কেমন আছ। তুমি যেদিন বলতে তোমার শরীরটা ভালো নেই, আমার খুব চিন্তা হতো, তুমি ঔষধ খেয়েছো কিনা বার বার জানতে চাইতাম। তুমি ঔষধ খেতে চাইতেনা, ভুলে যেতে, আমি মনে করিয়ে দিতাম। তোমার মাথা ব্যথাটা কি এখনো হয়? হলে কি ডিস্প্রিন খাও? তুমি কিন্তু আমার সাথে কথা দিয়েছিলে আর ডিস্প্রিন খাবে না। এতসব কি তোমার মনে আছে? নাকি ভুলে গেছ সবকিছু? বুঝে উঠতে পারিনা আমি।
কত রাত শেষ হয়ে ভোর হয়ে গিয়েছিল তোমার সাথে কথা বলতে বলতে তোমার কি মনে পরে? সারারাত তোমায় হাসাতাম, গান শুনাতাম, কবিতা শুনাতাম আরও কতো কথা, এসব কিছুই কি মনে পড়েনা তোমার?
একবার মনে করে দেখ তো, প্রতিদিন কতবার তোমায় ভালবাসি বলতাম, তখন তুমি আমায় পাগল বলতে, আমি বলতাম- হ্যাঁ আমি তো পাগলই, তোমার জন্য পাগল।
আমার ভালো ঘুম হতোনা বলে প্রতিদিন রাতে কথা শেষ হলে মোবাইলেই একটা ফু দিতে আর বলতে- ’মাথায় ফু দিয়ে দিলাম, এখন ঘুম আসবে’। সেই মুহূর্ত গুলো কি তোমার মনে পড়েনা? আমি যে এখনো ঘুমাতে পারিনা, কেউ যে আমায় আর ‘ফু’ দেয়না। কেউ এখন আর বলেনা, ’অনেক রাত হয়ছে এখন ঘুমাতে চেষ্টা করো’। তবু যেন প্রতি রাতে তোমার মিষ্টি কন্ঠ আমার কানের কাছে বাজে, কিছুই যে ভুলতে পারিনা আমি। ভুলব ই বা কি করে, আমার মনে ভালবাসার জন্মলগ্ন থেকে যে আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি, তোমার হাতে হাত রেখে চলার স্বপ্ন দেখেছি।
কিন্তু আমার স্বপ্নটা এভাবে এত সহজে ভেঙ্গে যাবে ভাবিনি কখনো।
কাউকে শাস্তি দেয়া হলে সে যদি জানতেই না পারে কি অপরাধে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে, এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে।
আমার বেলায়ও তাই ঘটেছে, আজও আমি জানলাম না কেন তুমি এমন করলে। আমিতো তোমার কোন শর্তও ভাঙ্গিনি। আমায় একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলে আমার এই সর্ম্পক ক্ষণিকের কিনা? জবাবে বলেছিলাম- ’লাইফ যতদিন লাভ ততোদিন’। তবে কি তোমার সর্ম্পক ক্ষণিকের হবে সেটা জেনেই আমায় জিজ্ঞাসা করেছিলে?
তুমি এভাবে চলে যাওয়ার পরে আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে, কোন কিছুতেই মন বসাতে পারিনা। চোখের সামনে যেন তোমার ছবি ভেসে উঠে। একটা চাকরি পেয়েছিলাম সেটাও করা হয়নি। অনেক কেঁদেছি, এখনো কাঁদি, তবে এখন আর চোখের জল আসেনা, চোখ দিয়ে যেন রক্তের কুণ্ডলী বের হয়।
আজও তবু অপেক্ষায় আছি, হয়ত তুমি ফিরবে আমার ভাঙ্গা কুটিরে, তোমায় স্বাগত জানাতে একগুচ্ছ ফুল হাতে দাড়িয়ে থাকব আমি। এক সময় হয়ত এভাবেই থেমে যাবে আমার পথচলা।