প্যু ঝিকি ঝিক ঝিকি ঝিক...
আগেও বলেছি বেড়ানো আমার ভীষন সখ। তবে আমার ট্রেন জার্নি খুব একটা ভাল লাগে না- পারতপক্ষে আমি ট্রেন জার্নি এড়িয়ে চলি। এর কারন তেমন বড় কিছু নয়। ট্রেনের শিডিউল। ভীষন হেকটিক!
তাছাড়া যেখানে বাসে যেতে মাত্র ঘন্টা পাঁচের মত লাগে সেখানে ট্রেন জার্নি করে যাওয়ার কোন মানে হয় না। কপাল খারাপ! না হলে কি আর ট্রেন জার্নি করে যাচ্ছি!
এই যে ভাই, টিকিট দেখি! (কালো বেটে মতন এক লোক, পড়নের পোশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছে টিকিট চেকার)
পাঞ্জাবীর ডান পকেটে রাখা ছোট্ট কুপনের মত টিকিট তুলে দিলাম লোকটির হাতে, এই নিন।
লোকটি হাতের টিকিট আর সিটের নম্বর মিলিয়ে নিল, এরপর আমার হাতে টিকিট ধরিয়ে দিল।
বললাম, কতক্ষনে পৌছব?
৯ ঘন্টা লাগবে, আরও বেশীও লাগতে পারে। (পাশে বসে থাকা বয়স্ক লোকটি আমাকে বললেন)
চেকার লোকটি, সেই লোকটির কথায় সায় দিল। হ্যা... ওই রকমই লাগব;
মুখে হাসি এনে বললাম। বড্ড, বেশী সময় হয়ে গেল না?
বেশী! কি বলছেন এটা? আরে এতেই তো সবাই খুশী! কেন আপনি কি বাসেই...
হ্যা। ঠিকই ধরেছেন, বাসেই চলি তবে এবারের ছুটিতে টিকিট করতে পারিনি।
আমি স্বরূপ সাহা। আপনি? (হাতের পত্রিকা এবার ভাজ করে আমার দিকে মুখ তুলে চাইলেন তিনি)
আমি বিভূতি।
আচ্ছা। ঢাকা থেকে আসছেন বুঝি?
জ্বী? হ্যা। আসলে রংপুরে আমার এক মাসতুতো ভাই থাকে। সেখানেই যাচ্ছি।
আচ্ছা, আচ্ছা... (এই বলে লোকটি চুপ করে পেপারে মন দিলেন, আমিও হাতের লেখাটা ব্যাগের পকেটে থেকে বের করে তাতে চোখ দিলাম)
প্যু...... ৯ ঘন্টার বদলে আরেক ঘন্টা বেশীই লাগল।
হাতের ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে কয়েক ঢোক গিললাম। প্রচন্ড গরম। ভাদ্র মাস আসবার আগেই এবার গরম তার তেজ দেখাচ্ছে।
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছছি, মাসতুতো ভাই এসে হাজির। আরে দাদা! আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো?
না না... তোরা সবাই ভালো আছিস?
হ্যা হ্যা... দাও আমাকে তোমার ব্যাগটা দাও।
আরে রাখ তো আমিই নিচ্ছি!(আমরা একটা ভ্যানে উঠে পড়লাম, মাইল তিনেক যেতে হবে আমাদের)
আরে এসো এসো... দেখো কে এসছে!
আমার ভাইয়ের বউ ছুটে এসে গড় প্রণাম দিল।
আরে থাক... থাক... ভাল আছো তোমরা?
হ্যা দাদা। আসুন ভেতরে আসুন।
এসো দাদা।
(ভেতরের ঘরে এসে দেখলাম একটা ছেলে বসে আছে বিছানায়, কিন্তু ছেলেটির ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো কিছু গড়বড় আছে। আমি একবার ওর দিকে তাকিয়ে কপালের ভ্রু নাচালাম। ছেলেটি একবার আমার দিকে তাকিয়ে ফের টেলিভিশনে চোখ দিল)
দাদা?
হ্যা?
এদিকে এসো।
(ছেলেটির কাছ থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে নিতে চাচ্ছে আমার ভাই, এটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি। আমাকে পাশের বাংলা ঘরে নিয়ে এলো সে। বাংলা ঘর বলতে গ্রামে পড়ার ঘরই বোঝায়)
চেয়ার টেনে বলল, এখানে বসো দাদা, আমি তোমার জন্য জলখাবারের ব্যবস্থা করছি। তুমি আগে হাত-মুখ ধুয়ে নাও। এই তোমার গামছা।
এই যা, জানিস এজন্যই তোর বাড়িতে আসতে ইচ্ছে করে না। এলেই এই করিস সেই করিস, আরে বাবা- আমি কি পর কেউ? তোরই তো দাদা- মানে বাড়িরই একজন। শুধু শুধু এসব করার কোন মানে হয়?
কি যে বল দাদা, এতদিন পর এলে- তোমার সেবা না করে পারি!
নে নে হয়েছে, আবার ইমোশোনাল করে দিচ্ছিস? নে যা আসছি।
দ্রুত পা ফেলে চলে গেল শেখর।
শেখরই আমার মাসতুতো ভাই। রংপুরে বেশ জায়গা জমি আছে ওর। এটা অবশ্য ওর নিজের নয়-ওর বাবার। ওর বাবা পেয়েছেন তার বাবার কাছ থেকে, পড়ালেখা খুব একটা করতে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই চোখের সমস্যা। কাছের জিনিস দেখতে বড্ড সমস্যা হত ওর, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছিলেন ওর বাবা। কাজে দেয়নি। বড়লোকের ছেলে পড়াশোনার ইচ্ছেও ছিল কম তাই আর সেটা হয়ে উঠেনি। আমার সাথে অনেক মারামারি হত ওর। সেও অনেক ছোটবেলায়।
অনেকদিনপর আজ ঘরের আসবাবপত্র দেখে মনে হচ্ছে, ঘরে দারিদ্রর ছায়া পড়েছে। বাড়িতে আসবার সময় বাড়ির চালের দৈন্য দশা চোখে পড়েছে। ঘরে এসেও তেমনটা লাগছে।
একি দাদা! তুমি এখনো হাত মুখ ধোঁয়া হয়নি?
এইত আসছি।
দাড়াও তোমাকে কলপাড় দেখিয়ে দিচ্ছি...
ভাত খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম, তোর ছেলে কোথায়?
আমার প্রশ্ন শুনে ভাই এবং বউ পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে বলল, ও পরে খাবে। খেলতে গেছে মাঠে।
ওর জন্য একটা বই এনেছি। আমার ব্যাগে আছে। কোন ক্লাসে পড়ে ও? এই যা, ওর নাম তো বললি না।
অভ্র, অভ্র শেখর। এবার ক্লাস ফাইভে উঠেছে।
বাহ, ভাল নাম রেখেছিস তো।
দাদা, মাছ নেন!
আর পারব না। যথেষ্ট!
আমাকে বাংলা ঘরেই রাখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। ঘরে তেমন আসবাব নেই, একটা টেবিল, সাথে লাগানো কাঠের চেয়ার। টেবিলে ছ’পাঁচেক বই।
ঘরটা ছোট, টিনের বেড়া সেইসাথে টিনের চাল। দুটোই পুরোনো।ঘরে খাট দেখে বোঝা যাচ্ছে কেউ শোয় না এখানে। আমি এসেছি বলেই হয়ত, আমাকে এখানে রাখতে সুবিধে হয়েছে।
বিকেল গড়িয়ে রাত হল খুব দ্রুত। গ্রামে রাত খুব সহজেই নামে। দু’ব্যাটারির টর্চ নিয়ে একটু বাইরে যাব ভাবছি, ভাই বউ এসে হাজির।
দাদা, বাইরে যাচ্ছেন?
হ্যা, একটু ঘুরে আসি। আমার সিগারেট নেই। ওটাও আনতে হবে।
শেখর আসুক, ওর সাথে যাবেন।
কেন?
না, তেমন কিছু নয়। আপনি একা এলেন যদি কোন বিপদে পড়েন!
হা হা... দেখ তোমাদের এই আদর-সমাদর কিন্তু এবার বেশীই হয়ে যাচ্ছে। আমি এই যাব আর এই আসব। শেখর এলে বলবে, আমি দোকানে গেছি।
আচ্ছা।
ঘর থেকে বের হতে গিয়েই চোখ পড়ল, অভ্রের দিকে। বারান্দায় বসে আছে আসে। আমি মাথায় হাত রেখে আদর করে বেড়িয়ে পড়লাম।
গ্রামের আকা-বাকা রাস্তায় টর্চের আলো ফেলে যাচ্ছি, ঝি- ঝি পোকার ডাক শুনতে পাচ্ছি খুব জোরে। গ্রামে রাত্রিবেলায় একটা অদ্ভুত ভালো মুহুর্ত এটি। কিছুদুর যেতেই যে ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম আমার পেছনে কেউ আসছে, আমি আমি হাটার শব্দ পাচ্ছি বটে কিন্তু টর্চের আলো ফেলার পর কাউকেই দেখতে পেলাম না। গা বেয়ে একটা শিহরন খেলে গেল। পায়ের গতি দ্রুত থেকে দ্রুততর করলাম।
মিনিট তিনেক পরেই গ্রামের একটা দোকানের আলো দেখতে পেলাম, গান বাজছে সেখানে । হিন্দি গান।
কিরে ওই গানডা বাজা হেব্বি হিট! কোনডা রে? (কথা হচ্ছে দোকানে বসা লোকজনের মধ্যে)
কেটলিতে চা জ্বলছে, চা দেখে এক কাপ অর্ডার করলাম। নাহ, এবার একা বাড়ি যাচ্ছি না, কি না কি পেছনে লেগেছে, কে জানে?
এই নেন চা, আপনেরে নতুন লাগতাছে ভাই?
হ্যা, আমি শেখরের দাদা। ঢাকা থেকে এসেছি বেড়াতে।
দোকানি বয়সে ছোট তাই ওকে তুমি করেই বললাম, ‘তোমার দোকানে সিগারেট হবে?’
হবে ভাই, এই নেন। বেন্সন!
আমি বেন্সন খাই না। অন্যকোন ব্রান্ড আছে?
ক্যাপ্টেন আছে, চলব?
চলবে।
হাতের ঘড়িতে দেখি রাত আটটা বাজে।আরেক কাপ চা অর্ডার করলাম। ছোকরা বলল, এখন আর চা হবে না, ও এখন বাড়ী যাবে। টিভিতে নাকি নাটক আছে। তাই আগে আগে চলে যাবে। কিন্তু ফেরার কথা মনে হতেই একটা ভয় কাজ করতে শুরু করল। পেছনে পেছনে যেটা আসছিল সেটা কি আবার আসবে? ভুতের ভয় কার নেই কারও সামনে ভুত এসে হো হো হাসি দিলে সে যত সাহসী হোক না কেন, আত্মারাম খাচাছাড়া হতে সময় নেয় না।
কি যাইবেন না?
হ্যা যাব। তুমি কোনদিক দিয়ে যাবে?
ও যা বলল, তাতে আর সুখকর কিছু পেলাম না। আমার যাবার রাস্তা ধরে ও যাবে না। ওর বাড়ি পাশের গ্রামে।
আমার কাঁচুমাচু মুখ দেখে বলল, দাদা আপনারে কি আগাই দিমু একটু?
না থাক, তোমার আবার কষ্ট দিব কেন! আমি একাই যাব।
আইচ্ছা বলে ছেলেটি দোকান বন্ধ করে হাতে হ্যারিকেন আর টর্চ নিয়ে চলে গেল।
আমি লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরালাম, হাতের টর্চ চেক করে দেখলাম সব ঠিক আছে কিনা, কারন শুনেছি ভয়ের সময় হাতে টর্চ থাকলে নাকি সেটা কাজ করে না। আমি লেখক মানুষ। ভয়ের গল্প লিখি না তা নয়। তবে গ্রাম্য ভুতুরে গল্প অবিশ্বাস করি না তা নয়।
অনেল সাহস করে এবার দ্রুত পা ফেলে ফেলে যাচ্ছি। অলিম্পিকে হাটার কোন প্রতিযোগীতা থাকলে নির্ঘাত ফার্স্ট হতাম। কিছুদুর এগুতেই বুঝলাম পেছনে কেউ নেই, সামনেও কেউ নেই। আসবার সময় হাটার শব্দ এখন আর পাচ্ছি না।
বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছি হঠাত রাস্তার পাশে ঝোপে কিছু নড়তে দেখলাম। দু চোখ জ্বলজ্বলে একটা প্রাণী আমার দিকে ফিরে খ্যাশ ... জাতীয় একটা শব্দ করল।
ভয়ে এবার আর থাকতে না পেরে ঝাঁকিয়ে দৌড় দিলাম যা আছে কপালে!
বাড়ির উঠোনে এসেই হাসফাস করে দম ছাড়তে থাকলাম...
শেখর উঠানেই ছিল, ছুটে এল, কি হয়েছে দাদা?
না কিছুনা রে ভাই, এমনি দৌড়ে আসছিলাম।
দৌড়! এই বয়সে?
মুখে কিছু না বললেও কথাটা গায়ে লাগল, জুলফিতে পাঁক এসেছে বটে কিন্তু নিতান্ত বুড়িয়ে যাইনি আমি।
রাতের খাবার শেষ করে ঘরে সিগারেট জ্বালিয়ে কাগজ কলম নিয়ে বসলাম।
ব্যাপারটা কি হল আসলে?
কুকুর কিংবা বিড়াল কিছু নয় দু’ পায়ে দাঁড়ানো কিছু একটা ছিল এটা- তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে।
অভ্রের সাথে আজ কথাও হল না। ছেলেটাকে দেখে আমার মোটেও স্বভাবিক মনে হল না।
পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙল। গায়ে জামা জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়লাম সেই দোকানের পথে রাতে যেখানে গিয়েছিলাম।
আরে আপনে, এত সকালে?
চা খাব, তোমার হাতের চা কিন্তু অসম্ভব ভাল লেগেছে আমার!
কন কি দাদা! আপনে একটু বসেন আমি টিউবয়েল থেইকা চায়ের পানি নিয়া আসি।
দোকানি ছেলেটি চলে যেতেই দোকানে চোখ পড়ল, হরেক জিনিস আছে সেখানে।
চা হাতে দিয়ে ছেলেটা প্রশ্ন করল, দাদা- একটা কথা বলি?
বলো, (চায়ে চুমুক দিতে দিতে)
আপনে কি রাইতে ভয় পাইছিলেন কাইল?
কই, নাতো!
কন কি? রাইতে যেই ওইদিকে যায় হেই ভয় পায়। কি জানি কি একটা আছে ওইহানে।
নাক কুঁচকে বললাম, কি?
কি জানি দাদা, রাইত্রে কেউ ওই রাস্তায় তো যায়ই না!দিনে যেমন-তেমন রাইত্রে, ওরে ভাই নাহ
আমি মৃদু হেঁসে বললাম, এইসব ভুলকথা! আমি কালকে রাতে গেলাম না। কিছুই তো দেখলাম না!
আমি আজ রাতে আবার চা খেতে আসব, এই বলে উঠে পড়লাম।
অভ্রের সাথে দিনে দেখা হলো, চেয়ারে বসে আছে। খুব চুপচাপ। শরীর ভীষন শুকনো, কলার বোন স্পষ্ট। খালি গায়ে পাজরের হাড় চোখে পড়ছে। আমি ডক্টর নই তবুও বুঝতে পারছি ছেলেটা অসুস্থ আর এরা আমার কাছ থেকে কিছু লুকিয়ে রাখছে।
অভ্রের কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসলাম। কি খোকা কেমন আছো?
কিছু বলছে না ও।
দাদা, এত সকালে কই গেছিলেন?
কোথাও না, এমনি ঘুরতে।
আসেন দাদা, খাবার দেয়া হইছে।
শেখর?
দাদা, বলেন
অভ্র স্কুলে যায় না?
না মানে, ওর স্কুল ছুটি তো তাই, আপনে আসেন না, আসেন। খাইতে আসেন।
রাতে আবার বেড়িয়েছি আমি। কিছু প্রশ্নের সমাধান লাগবে আমার!
হ্যা কিছু অশরিরী হয়ত পিছু পিছু আসছে আমার, সেটা কি জানতেই হবে আজ।
রাস্তা ছেড়ে দ্রুত হাটছি আমি, পেছনে কিছু একটা আসছে আমার। হাতের লাইট কাপাকাপা হাতে সেদিকে ধরতেই কিছু পেলাম না।মুখে মুচকি হাসি এসেছে আমার। দিনে দিনে পাকা গোয়েন্দা হয়ে যাচ্ছি নাকি!
গরুর খাটি দুধের এককাপ চা গলায় ধাললাম অনেকক্ষন ধরে, বেশ বানায় ছেলেটি। এক, কথায় অসাধারন!
আমি সিগারেট জ্বালিয়ে ফিরছি হঠাত ছেলেটি বলল, আপনারে কি আগাই দিমু দাদা!
না না লাগবে না। মৃদু হেঁসে দিলাম। গ্রামের লোকগুলো অন্যরকম।
কিছুদূর এসেই বুঝলাম ঝোপ থেকে উকি দিচ্ছে কিছু একটা যেটার চোখ জ্বলজ্বল করছে,
আমি বললাম, শেখর বেড়িয়ে আয়, আমি ভয় পাই না।
কিন্তু অন্ধকারে সেটা ‘হুমহুম’ শব্দ করতে লাগল।
আমি আবার বললাম, শেখর বেড়িয়ে আয়, আমাকে ফাকি দিয়ে লাভ নেই, তুই ধরা পড়ে গেছিস।
মৃদু কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। দ’পায়ে ঝোপ থেকে বেড়িয়ে এল শেখর, “আমাকে মাফ কর দাদা”
আয় আমার সাথে,
শেখর খুব হতদরিদ্র জীবন-যাপন করছিল। বলা চলে দিন আনে দিন চলে। ছেলে প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি ছেড়ে হাইস্কুলে যাবে। বাড়তি খরচপাতি। নিজের কাজে যা আয় তাতে চলে না। মাঝে অভ্র হয়ে পড়েছে অসুস্থ। জমিজমা যা ছিল সব বেচা-বিক্রি শেষ। কিভাবে কি হবে কিছুই ভাবতে না পেরে এই পথ বেছে নেয় শেখর। লোকজনকে ভয় দেখিয়ে তাদের টাকা পয়সা কেড়ে নেয়। গ্রামের লোক অলৌকিক বিষয়ে পুলিশকে জানায় না। ভুতুরে ব্যাপারে পুলিশ কি আর করবে। গ্রামে আসার একমাত্র পথ, তাই দিনেই সবাই চলে রাতে যারা আসে তারা গ্রামের বাইরে কিংবা অপরিচিত কোন লোক। তাদের ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা রেখে দিত শেখর।
আমাকে মাফ কইরা দেন দাদা, আমি ভুল করছি, আমি আর করুম না। আমার আর কিছু করার ছিল না।
আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম, ছেলের চিকিৎসা কর। আমি টাকা দিচ্ছি এজন্য।
ঢাকগামী ট্রেনে উঠেছি একটু আগে। সিগারেট ধরিয়ে জানালার বাইরে একবার তাকালাম। এক কাপ চা খেতে ইচ্ছে করছে ভীষন।