শ্রম সৃষ্টির অলংকার ! শ্রমের উপর ভর করেই সৃষ্টি এগিয়ে যায়, নতুন রূপে সাজে আর সাজায় ! শ্রম সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের হাতিয়ার । এই শ্রমকে কাজে লাগিয়েই মানুষ সৃষ্টির গভীর থেকে আনন্দ আর সুখের নির্যাস বের করে এনে অমৃতের মত শুষে নেয় ! শ্রম দেয় না কে ? আবালবৃদ্ধবনিতার কেউ কী বাকী আছে ? মানুষ শ্রম দেয় তাই সোনালী ফসল দোলে দিগন্ত জুড়ে, সময়ের সাথে সাথে জীবনও হাতছানি দেয় আগামীর জীবনকে । শ্রমের কাছেই হেরে যায় হাহাকার দূর্ভিক্ষ ! রোদ-বৃষ্টি-ঝরে মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেয় আপন হাতের ছোঁয়ায় গড়ে তোলা ছাউনির তলে । উজানে দাঁড় টানে সুখের ঘ্রাণে ! অপরূপ সাজে নিজে সাজে অপরকে সাজায় । রোগ ব্যধি নিবারণে চিকিৎসা চলে, ঔষধের যোগান আসে মানব সমাজে । শিক্ষা- দীক্ষায় জ্ঞানের পরিধি বাড়ে । সৃষ্টি হয় দর্শন মানব কল্যাণে । কোমল মতি শিশুর আন্তরে গ্রোথিত হয় মূল্যবোধ । যে মূল্যবোধ ব্যতিত মানব সমাজ হয় অরণ্যসম, যেখানে শৃঙ্খলা বিবর্জিত এক জনগোষ্ঠী আবির্ভূত হয় উন্মত্ত্ব পশুর মত উলঙ্গ বেশে । যদিও সব কিছুর পিছনেই ক্রিয়াশীল স্রষ্টার মহান উদ্দেশ্য, নিপুন কারিগড়ি জ্ঞান, অবশ্য যদি স্বীকার করি ! আর স্বীকার না করলে আমরা কেবলই শ্রম নির্ভর জনপদ বাসী ।
আশিকুর রহমান ! বাবা ছিলেন ইসলাম পন্থী মুসলমান ! তিনি চেয়েছিলেন তার পুত্র হবে স্রষ্টার প্রেমিক, তাই নাম রেখেছিলেন আশিকুর রহমান । সত্তরের প্রলযঙ্করী জলোচ্ছাসে তিনি নিখোঁজ হযে যান ! আশিক তখন মাত্র সরকারী কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছে, তাই তার মা আর বোন তার সঙ্গে ঢাকা এসেছিলেন একটু গোছগাছ করে দেবার জন্য । কিন্তু কে জানত, সন্তানের শুরু দেখতে এসে স্বামীর নিঃশ্বেষ হয়ে যাওয়ার দূঃসংবাদ হজম করতে হবে ! এমন একটি দূর্ঘটনাকে নিয়তির বিধান বলে মেনে নেয়া ছাড়া আর কীই বা করার ছিল । পেছনে যা ছিল তাতো আর ফিরে পাবার কোন সুযোগই ছিল না, তাই সামনে কী আছে সেটাই দেখার আগ্রহ সৃষ্টি হতে থাকে সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে । কিন্তু সেই অবস্থাও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে !
ঢাকা শহরে ছোট্র একটা ভাড়া বাসায় আশিক সবেমাত্র মা আর বোনকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেছে । ইতোমধ্যে দেশে নির্বাচনোত্তর রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরোত্তর উত্তপ্ত হতে হতে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে । নানান রকম গুজব তখন ডালপালা ছড়িয়ে ঢাকার আকাশের এলোমেলো বাতাশে উড়ে বেড়াচ্ছিল । আশিকও তখন সন্ধ্যায় প্রায়ই বেশ রাত পর্যন্ত সময় কাটাতে শুরু করেছে সহকর্মীদের সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসে । কী হয়, হচ্ছে, হবে এসব নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে আর শুনতে । সে দিনও তার ব্যত্যয় ঘটেনি, যদিও সন্ধ্যা থেকেই একটা গুমোট অবস্থা বিরাজ করছিল । সে রাতেই বঙ্গবন্ধু তাঁর বত্রিশ নম্বর বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন । চারিদিকে হৈ চৈ হাহাকার ! হায় ! হায় ! এখন কী হবে ? এইসব নিয়ে জল্পনা কল্পনায় কান দিতে গিয়ে বাড়ি ফিরতে একটু বেশীই বিলম্ব হয়েছিল আশিকের । ততক্ষণে ঢাকার আকাশ বাতাশ বিষাদময় হয়ে গেছে মানুষের কান্না আর চীৎকারে ! সম্বিৎ ফিরে পেয়ে আশিক ছুটতে শুরু করে নিজ বাসার দিকে । কিন্তু যখন সে বাসায় পৌঁছাল ততক্ষণে সব শেষ ! ঘরের দরজা ভেঙ্গেচুরে একাকার । অজানা আশংকায় চমকে ওঠে আশিকের অন্তরাত্মা ! তখনও ঘরের লাইট জ্বলছিল, চলছিল ফ্যান । ঘরের ভেতর ঢুকেই মেঝেতে আশিক তার মাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে কাছে গিয়ে মায়ের দেহকে ছুঁয়েই বুঝতে পারে, মা তাদের ছেড়ে চলে গেছেন ! সেদিন আশিকের দু’চোখ বেয়ে বৃষ্টির মত অশ্রু ঝরেছিল । সে জীবনে কোনদিন এত কাঁদেনি । অনেকটা সময় লেগেছিল তার এ ধাক্কা সামাল দিতে । তারপর খেয়াল হয় বোনের কথা । সমস্ত বাসাটা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও যখন তাকে আর পাওয়া গেলনা তখন তার কলিজার ভেতরটা হু হু করে উঠল । কী করে কী হ’লো, কেন এমন হ’লো ? এখন সে কোথায় যাবে, কী করবে ? অথচ এত সব প্রশ্নের কোনটার উত্তরই তার জানা নেই । তাই সে ভেবে ভেবে হারিয়ে গেল হতাশার অতল গহবব্রে !
আশিক এখন বাঁধন হারা ! তার সামনে পেছনে আর কোন দেয়াল নেই ! মাতৃ মমতার পিছুটান নেই, ভালবাসার আবেগ নেই, নেই স্নেহময়ী বোনের আদর মাখানো আবদার ! আশিক এখন পাগলপাড়া ছন্নছাড়া এক অন্য মানুষ, যার সামনেও অন্ধকার ! পেছনেও অন্ধকার ! সে এখন ভয় শুন্য এক অন্য প্রাণী, যার রাগ আছে অনুরাগ নেই, আত্মা আছে হৃদয় নেই, আশাও নেই স্বপ্নও নেই ! মনের ভেতরে দাউ দাউ করে জ্বলছে শুধু প্রতিশোধের অগ্নিশিখা ! এই দুর্বিষহ জীবন থেকে সে মুক্তি চায় । আশিক ভুলে গেছে সে একজন শিক্ষক, তার মাঝে জন্ম নিয়েছে অন্য এক মানুষ, যার নাম “মুক্তিযোদ্ধা” !
স্বাধীনতার পর অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছে আশিক । কিন্তু মা বোনের আত্মত্যাগের সুফল এখনও দেশের মানুষ পায়নি ! তার জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ জয়ের বিণিময়ে শান্তির সুবাতাস এখনও শীতল পরশ বুলিয়ে যায় না । সেই আক্ষেপ আশিককে রহমানের আশিক না বানিয়ে ক্রমেই দেশের আশিকে পরিণত করেছে, যদিও তার বাবা চেয়েছিলেন, আশিক রহমানেরই আশিক হবে । কিন্তু দেশের চলমান হালচাল আশিককে ব্যথিত করে, সেকারণেই রাজনীতির প্রতি তার যার পর নাই বিতৃষ্ণা ! তাই সে গল্প-কবিতা আর প্রবন্ধের মাধ্রমে তার হৃদয়ের আকুতি প্রকাশ করতে থাকে ! রাগে, দুঃখে, অভিমানে এত সব করতে গিয়ে কখন যে মেঘে মেঘে বেলা দ্বিপ্রহর পেরুবার যোগার হয়েছে সে দিকে তার কোন খেয়ালই নেই ! সহকর্মীদের সন্তানদের জন্মদিন আর খাৎনার সময় বুঝতে পারে তার যৌবনে চির ধরার সময় সমাগত ! শেষ পর্যন্ত সহকর্মীদের জোড়াজুড়িতেই সে বিয়ের কাজটা সেরে নেয় শুধু ভবিষ্যতের কথা ভেবে ।
শুরু হয় নতুন জীবন । ফেলে আসা জীবনের দুঃখময় স্মৃতির পাতায় জমতে থাকে ধুলিকণার আস্তরন ! স্তী-সংসারের প্রতি বাড়তে থাকে ভালবাসার টান । তাই বলে দেশপ্রমে তার মোটেও ভাটা পড়ে না । বিরতি আসে না লেখালেখিতেও । এরই মাঝে ফাগুন মাসে ফাল্গুনীর জন্মের মাধ্যমে সে বুঝতে পারে জীবনের নতুন অর্থ ! মেয়ে তো নয় যেন পূর্ণ শশী ! আবেগে-আহলাদে আশিকের মাঝে যেন পৌরুষের পূর্ণতা আসে ! উষ্ণ আবেগে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দেয় নব জাতকের তুলতুলে দেহাবয়ব ! এ জীবন বড় তৃপ্তির, বড় আনন্দের ! এ ভাবেই ক্রমান্বয়ে আসে শ্রাবণী আর চৈতী । আশিকের স্তীর আক্ষেপ থাকলেও আশিকের মাঝে ছিল না কোন ভাবান্তর ! পরম স্নেহে, আদর যত্নে তিন সন্তান কে সে লালন-পালন করতে থাকে লালিত স্বপ্ন, দেশপ্রেম আর আদর্শ দিয়ে ! যেখানে মূল্যবোধের কোন ঘাটতি রাখেনি আশিক !
আশিক ওদের মেয়ে না ভেবে সন্তান হিসেবেই বড় করে তুলেছে । আর সে জন্যেই ওরা মায়ের চাইতে বাবাকেই বেশী প্রিয় ভাবে । কারণ তাদের মা সব সময়ই তাদের স্মরণ করিয়ে দেবার চেষ্টা করত যে, তারা তিনজনই তাদের মেয়ে হয়েই জন্ম নিয়েছে । সেটাই এখন হারে হারে টের পাচ্ছে ফাল্গুনী, শ্রাবণী আর চৈতী । বাবা শিক্ষকতা থেকে অবসর নেবার পর মায়ের অবস্থাও তথৈবচ ! মা ও বয়সের ভারে এখন আর সংসারের ভার বইতে অপারগ । বিলম্বে বাবার বিয়ের কারণে ওদের কেউই এখনও পড়ালেখার পর্বই শেষ করতে পারেনি, তাই বলে তারা শৈশবে বা কৈশরে এখন আর আবদ্ধ ও নেই । ওরা তিন বোনই কৈশর পেরিয়ে তারুণ্যে আর ফাল্গুনী তো ফাগুনের ডালা সাজিয়ে একেবারে আহামরি যৌবনা ! অথচ সংসারে চলছে দিনমান টানাটানি !
টানাটানি হবে না কেন ! বাবার তো সঞ্চয় বলে কিছু নেই ! যা উপার্জন করেছেন, খরচের পর বাড়তি টাকা গুলো দিয়ে একের পর এক বই ছাপিয়ে মানুষকে পড়িয়েছেন । তার বিশ্বাস ছিল, দেশের মানুষকে বই পড়িয়ে তিনি সভ্যতার আলোয় আলোকিত করবেন ! তাদেরকে সত্যের কাছাকাছি নিয়ে যাবেন ! অথচ কখনও বিশ্বাস করেননি যে, বই বিক্রি করে তিনি সন্তানদের ভবিষতের জন্য সঞ্চয় করবেন ! আর বই কী কেউ কিনে পড়ে নাকি, হাতে গোনা দু’চার জন ছাড়া ! এমন কী তিনি তাদের মায়ের গহনা পর্যন্ত বিক্রী করে দিয়ে তার সর্ব শেষ বইটি ছাপিয়েছেন ! এ জন্যই হয়তো কারো কারো ভাষায় কবি-লেখক-সাহিত্যিকগণ পাগলও বটে !
এতসব আক্ষেপ বুকে পুষে ফাল্গুনী আজ বড় অভিমানী ! পড়া লেখার পাশাপাশি তাকে আর শ্রাবণীকে মহল্লার ছেলে-মেয়েদের পড়াতে হয় ! আর সে কাজটি করতে গিয়ে মহল্লার বেড়ে ওঠা মুক্ত(!) আর ডিজিটাল প্রজন্মের কত যে উন্মাদনা তাদের সহ্য করতে হয় তার ইয়ত্বা নেই ! মাঝে মধ্যে কেউ কেউ আবার তাদের বাবাকে সম্মানিত করার বাহানায় নিজেরাই বাহবা কুড়াতে তাকে মঞ্চে নিয়ে যেতে ব্যস্ত হয়ে যায়, যার আড়ালে থাকে তাদের রসালো বাসনা ! একটু কাছে ঘেঁসার সে কী আকুতি ! এমন ও কখনও কখনও হয়েছে যে, তাদের দারিদ্র দূরিকরণে প্রকল্প তৈরী করে উপর মহলে পেশ করেছে তাদেরকেই আবার উপর মহলের কারো কারো কাছে উপঢৌকন বানিয়ে সপে দিয়ে নিজেদের আখের গোছাবার প্রত্যাশায় !
ফাল্গুনী যদিও বা নিজেকে সামলে নেবার শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম কিন্তু এমনতর পরিস্থিতিতে শ্রাবণী কতবার যে দু’চোখে শ্রাবণের ঢল নামিয়েছে ভয়ার্ত আগামীর আশংকায় তার হিসেবই নেই । কিন্তু চৈতী ! চৈতী মেনে নেবার পাত্রী নয় ! সে ফুঁসে ওঠে কাল বৈশাখীর রুদ্র মেজাজে ! সে সব কিছু পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিতে চায় তার উত্তপ্ত, কাঠ ফাটা রোদেলা ঝাঁঝ দিয়ে । সে ফিরে পেতে চায় সত্তরের জলচ্ছাসে বে-দখল হয়ে যাওয়া তাদের উপকূলীয় জায়গা জমি সম্পদ ! সে তার নিখোঁজ দাদার হদিস চায় ! স্বাধীন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনে তার দাদীর জীবন, আর ফুফুর সম্ভ্রম সহ জীবন উৎসর্গের মাধ্যমে অবদান রখার বিণিময় চায় ! সে তার বাবার জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার হিস্যা চায় ! কারণ তার ধারণা, সবাই এখন স্বাধীনতা সংগ্রাম কে স্রেফ পণ্যই মনে করে, আর বিজয়কে মনে করে লুটপাটের বেপরোয়া ছাড়পত্র !
কৃষকের শ্রমে তার গোলায় ধান ওঠে, শ্রমিকের শ্রমে তার সন্তানের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়, ডাক্তার প্রকৌশলীর শ্রমে তাদের ষ্ট্যাটাস উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়, রাজনীতিবিদদের শ্রমে বিদেশে তাদের সেকেন্ড হোম তৈরী হয়, ব্যবসায়ীদের শ্রমে ব্যাংক-বীমা, রেডিও-টেলিভিশন, কল-কারখানার মালিকানা সত্বের সাথে সাথে তাদের অনেকেরই বাড়ি-গাড়ীরও ব্যবস্থা হয়ে যায় ! অথচ কবি-সাহিত্যিকদের চিন্তা, চেতনা সম্বলিত শ্রমই অবদান রাখে সমাজ বিনির্মাণে, মূ্ল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় ! যার অভাবে সমাজীরা হয়ে যায় সভ্যতার আলো বিবর্জিত অসভ্য, আরণ্যক !
অথচ এই শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিকদের শ্রম উপেক্ষিত হয়, অস্বীকৃত হয় শ্রম বলে ! কবি সাহিত্যিকদের শ্রম যদি শ্রম না হয় তবে তার ব্যখ্যা কী ? তাদের স্বার্থই বা কী ? এভাবে শুধু শুধু মেধা আর সম্মানের বাহারী স্তুতি বাক্যের আড়ালে তাদের স্বার্থকে অরক্ষিত করার পরিণাম আশিকুর রহমানদের মতই অবিরাম মর্মান্তিক পরিণতির করুণ দৃশাই বার বার দৃষ্টিকটু ভাবেই দৃশ্যমান হতে থাকবে ! আশিকুর রহমানদের মত দেশ ও জাতি বান্ধব সমাজ হিতৈষীদের উত্তরসূরীরা কেন আগামীর অনিরাপদ জীবনের দুর্ভাবনায় আতঙ্কগ্রস্ত হতে থাকবে ? দারিদ্রের কষাঘাতে তাদের সংসার কেন ভেঙ্গে যাবে ? তাদের সন্তানদের কেন ভোগবাদীদের উপঢৌকন বানাবার চক্রান্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে ? কবি-সাহিত্যিকদের কে কেন শুধু শুধু মঞ্চের শোভা বর্ধণকারী হয়ে উদ্যোক্তাদের করুণার পাত্র-পাত্রীতে পরিণত হতে হবে ? ফাল্গুনীরা কেন আজ সুখের স্বপ্ন দেখবে না ? শ্রাবণীরা কেন শুধু অশ্রুর প্লাবণ ঘটিয়ে বিষাদ সিন্ধ সৃষ্টি করবে ? চৈতীরা কেন রুদ্র মূর্তি ধারণ করে রাষ্ট্রের কাছে কৈফিয়ৎ চাইবে ?
জীবন সায়াহ্নে কবি আশিকুর রহমান আজ বাকরুদ্ধ ! সন্তানের অনিরাপদ ভবিষ্যৎ আর জীবন সঙ্গীর হাহাকার তাকে শুধু ধিক্কারই দিচ্ছে না বরং চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে তার নির্বুদ্ধিতার পরিণাম ! ক্রমেই অন্থকার হয়ে আসছে তার আলোকজ্জল চোখ দু’টি ! যে দু’টি চোখে সারাবেলাই সে দেখতে পেত আলোকময় ভুবন । হঠাৎ ঠোঁট দু’টো ঈষৎ কেঁপে ওঠে ! হয়তো বা সে বলতে চায়, হে জগদ্বাসী, তোমরা আমার মত কেউ সৎ চিন্তার শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক কিংবা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে উত্তরসূরীদের বিপদের মধ্যে ঠেলে দিও না ! যাদের ত্যাগ, মেধা আর শ্রমকে রাষ্ট্র স্বীকারই করে না, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে লাভ কী ? ততক্ষণে আশিকের দু’চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দু’ফোটা অশ্রু ! নিথর হয়ে যায় তার নির্লোভ, নিঃস্বার্থ দেহ খানি ! পতন হয়ে যায় আরও একটি নক্ষত্রের !