“পুনর্মুষিক ভব” :-: নিজ দোষে অসহায় মানবজাতি
এই শিরোনাম এর প্রাসঙ্গিকতা হিসাবে আমরা নজর ঘোরাই হিতোপদেশের একটি গল্পে। এই গল্পগুলি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে প্রচলিত। মূল গল্পটি এই রকম।
প্রাচীনকালে এক যোগী ছিলেন । তিনি এক গভীর বনে আশ্রম বানিয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করতেন। সেই যোগী যখন ভগবানের মহিমা কীর্তন করতেন সে সময় একটি ইঁদুর চুপটি করে বসে অত্যন্ত ভক্তিসহকারে সেই কথা শুনত। সেই যোগী ইঁদুরটির উপর অত্যন্ত প্রসন্ন ছিলেন ও নিজের আনা ফলমূল, ছোলা ইত্যাদি ইঁদুরটিকে দিতেন। একদিন তিনি দেখলেন ইঁদুরটি ভীত ও মনমরা হয়ে বসে আছে। সেই ফেরেস্তা তাকে সাংকেতিক ভাষায় এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইঁদুরটি বলল বনের বিড়ালগুলি তাকে সমানে ভয় দেখায় ও খাদ্য কেড়ে নেয়।
সেই শুনে যোগীপুরুষের করুণা হলো ও তিনি ইঁদুরটিকে মন্ত্রবলে বিড়ালে পরিণত করে দিলেন।
মহাপুরষটি তাকে বললেন তুই এবার বনে থাকবি, নিজখাদ্য নিজেই সংগ্রহ করে নিবি, তবে কখনো অধর্মপথে যাবি না। নতুন এই বেড়ালটি খুব খুশী হলো এবং এই মহাপুরুষের প্রতি তার নমস্কার জ্ঞাপন করে বনে চলে গেল। মাঝে মাঝে এসে সে যোগীবরকে প্রণাম করে যেত। এরকম কিছুদিন পরে সে এলো খুব অবসন্ন ও বিষন্ন অবস্থায়। মহান মানুষটি জানতে চাইলেন তার এমন অবস্থা কেন। বেড়ালটি জানালো পথে একদল কুকুর তাকে তাড়া করেছিল, সে প্রাণভয়ে ভীত। সেই পুণ্যবান মানুষটি তাকে বলশালী কুকুরে পরিণত করে দিলেন। কুকুর তো মহা আনন্দিত, সে এবার মাথা উঁচু করে বনে ফিরল। বনের অন্য সব প্রাণী নতুন এই তাগড়া কুকুর দেখে ভয়ে থাকত। কুকুরটিও সময়ে সময়ে যোগীর কুটীর এ গিয়ে ধর্মকথা শুনে আসত। একবার এই কুকুর সিংহের সামনে বিপদে পড়ল, একই ভাবে এবারেও সেই সাধুমানুষটি তাকে করুণা করে সিংহে পরিণত করে দিলেন ও তাকে বনের রাজা হিসাবে ধর্মপথে থাকতে বললেন।
সেই সিংহ ধীরে ধীরে ক্ষমতায় মদমত্ত হয়ে উঠলো, একদিন সেই যোগীকেই থাদ্য হিসাবে শিকার করবে বলে মনস্থ করল। তার কুটীরের সামনে আসা মাত্রই যোগী নিজ আধ্যাত্মবলে সিংহর কুমতলব বুঝে গেলেন বলে উঠলেন “পুনর্মুষিক ভব”। তৎক্ষণাৎ সেই সিংহ পুনরায় সামান্য ইঁদুরে পরিণত হল। ধার্মিক ফেরেস্তা মৃদু হেসে বললেন যাও “নিজ গুহায় ফিরে যাও, যত বড়ই হওনা কেন নিজের আসল অবস্থান ভুলো না”।
ঠিক সেরকম, যে প্রকৃতির কোলে মানুষ-এর জন্ম, যে প্রকৃতি মায়ের স্তন্যে আমরা লালিতপালিত, সেই প্রকৃতির বরদান নিয়ে ও ঈশ্বরপ্রদত্ত মেধা প্রয়োগ করে আমরা দিনের পর দিন খোদার উপর খোদাগিরি করে আসছি। নির্বচারে ধ্বংস করেছি অরণ্য, বিলুপ্ত হয়ে গেছে কত প্রাণী কত প্রজাতির লতা গুল্ম। খনিজ পদার্থের লোভে পাহাড় ফাটিয়ে ফেলেছি, বিদ্যুত পাবার আশায় নদীর গতিপথ করেছি রুদ্ধ, কৃত্রিম ভাবে ফলন বাড়াতে গিয়ে ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে সংকর ঘটিয়েছি। আজ প্রকৃতি তার সহ্যের সেষ সীমায় এসে তার প্রিয়পাত্র মানুষকেই বললেন যাও নিজ গুহায় ফিরে যাও।
যদি আমরা ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে লড়াই করতে পারি তবে নিশ্চই এই করোনা ভাইরাস উপদ্রবের হাত থেকে আমরা রক্ষা পাব, কিন্তু সাথে এই শিক্ষাও নিতে হবে যে প্রকৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে প্রকৃতি বাঁচলে তবেই আমরা বাঁচব।
করোনা ভাইরাস এর সামনে অসহায় মানবজাতি তার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালাচ্ছে। কিন্তু এই বিপর্যয়ের জন্য মানব নিজেই বহুলাংশে দায়ী।