আজো সেদিন

ভালোবাসা / ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারী ২০১৫)

রবিন রহমান
  • ৪১
আজো সেদিন
এখন কেমন লাগছে আপনার।
ভালো, কিন্তু এখানে আমি কতদিন যাবত আছি ডাক্তার সাহেব, বলুন তো।
এই বছর দুয়েক হবে। যখন এসেছিলেন তখন কি এভাবে আপনার সাথে কথা বলা যেতো। যে কথা বলতে যেতো, তারি চুল ছেড়া, কাপড় ছেড়া অথবা থু থু দিয়ে গোসল করিয়ে দিতেন। এখন আপনাকে দেখে কে বলবে এ সেই যে কিনা নিজের আঙ্গুল কামড়ে কেটে ফেলত। চলুন আপনাকে একটা রুমে রেখে আসি। রুমটাতে আপনার মতোই একজন রুগী আছে। দীর্ঘ কয়েক যুগ পর এখন সুস্থ সে। আপনারই মতো উচ্চশিক্ষিতও। ব্রিটিশ আমলে ডিগ্রি পাশ। কিন্তু ডিগ্রি কোন কাজেই লাগেনি। কাজে যোগ দেবার আগেই রুগী হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত পরিবারের লোকে এখানে রেখে গেছে। এই পাবনার পাগলাগারদের সবচেয়ে পুরনো রোগী সে। তার পরিবারের কেউ আর এখন দেখতে আসে না তাকে। শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় তার আত্মীয় পরিজন এদেশ ছেরে চলে গেছে। আপনি অনেক ভাগ্যবান, এতোটা তাড়াতাড়ি শোক কাটিয়ে ভালো হয়ে উঠেছেন। সময় পালটে গেছেতো। শোকের ছায়াও এখন বেশীদিন থাকেনা কারো ভেতর।
পিয়ালকে হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে ডাক্তার। কিছু সময়ের মধ্যে একটা রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় দুজন।রুমের দরজাটা বাহির থেকে লাগানো। ডাক্তার সাহেব পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুলতে পিয়াল দেখতে পেলো একজন বৃদ্ধ লোক। অনেক দিন চুল দাড়ি না কাটানোর জন্যে কেমন সন্যাসিদের মতো দেখাচ্ছে তাকে। দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে কি বিরবির করছে সে।
কেমন আছেন নিমাই কাকা।
লোকটা চোখ না খুলেই উত্তর দিলো: ভালো, ডাক্তার আজ কতো তারিখ বলতে পারো। জানালা দিয়ে ভালোই হাওয়া আসছে। গুমোট গড়মের তীব্রতা বিদ্ধিও সাথে সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি মনে হয় হচ্ছে মাঝে মাঝে। দেয়ালের ওপাশটার আমগাছ থেকে মুকুলের গন্ধ আর মৌমাছির গুঞ্জন শুনতে পাই।
হ্যাঁ, ফাল্গুন, প্রথম দিন।
হ্যাঁ, তাইতো বলি আমার আত্তাটা এতোটা অস্থির কেনো হচ্ছে। এতো সেই দিন।
কি বললেন কাকা, সেই দিন। অস্থির লাগছে। আপনার মাথায় কোন ব্যথাতো অনুভূতো হচ্ছে না।
ভয় পেয়োনা , আর আগের মতো হবেনা আশা করি।
কাকা, একটা ছেলেকে আপনার রুমে রেখে গেলাম। দেখে রাখবেন, মনে করবেন আপনার ছেলে সে ।
এবার লোকটা চোখখুলে তাকালো।
আয় বাবা, আয়। বস এখানে, দুজনে চুটিয়ে গল্প করা যাবে খন। তা কতোদিন হলো সুস্থ হয়েছে ডাক্তার। শেষে আমার বারোটা তো বাজিয়ে দেবে না।
আশা করি আর সমস্যা হবেনা। তা ছেলেটাকে দেখে রাখবেন।
কেস কি, কি কারনে এমন রুগি হয়েছিলো, নাম কি।
ছেলেটার মুখ থেকেই শুনবেন ।
কথা শেষ করেই ডাক্তার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। পিয়াল এরি মধ্যে খাটের উপর গিয়ে বসেছে। ছোট একটা ঘর, একটা খাট, তার পাশে একটা টেবিল, টেবিলে কিছু খাবার রাখার পাত্র। ভেতরে এটাস্ট বাথরুমের দরজা দেখা যাচ্ছে। একটা পুরোনো আমলের ফেন ঘুরছে মাথার উপর। পিয়াল এবার লোকটার দিকে তাকালো। এরি মধ্যে সে আবার চোখ বন্ধকরে গম্ভির হয়ে গেছে।
কি, কিছু জানতে চাচ্ছো। আমাকে দেখে কৌতূহল জাগছে। কারো প্রতি কৌতূহল থাকাটা কোন ক্ষ্যাপা রুগির থাকা উচিৎ না । তাতে যেকোন সময় আবার মাত্রা বেরে যেতে পারে ।কিন্তু তুমিতো এখন রুগিনা। না টাকি তোমার।
পিয়াল।
বাহ খুব ভালো নাম। শোনো তাহলে আজকের তারিখের কাহিনীটা শোনো, তোমার কৌতূহল দূর করা প্রয়োজন। সে আজ থেকে সত্তোর আশি বছর আগের কাহিনী। আমরা ছিলাম পাশের এলাকার এক ধনী গৃরস্থ হিন্দু। পরিবারের দু ভাই আর তিন বনের মধ্যে আমি ছিলাম ছোট। তখন ইংরেজরা শাসন করতো আমাদের দেশে। তাদের ভাগ দেবার পর যতটুকু সম্ভব লোকে নিজেদের অর্থশালী করতো। আমার বাবাও তাইছিলো। চালের আরোত ছিলো। বাবা আর বড়ো ভাই দেখাশোনা করতো ব্যাবসা। আমাকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলো সাহেব দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে । আমাকে সাহেব বানাবে বলে। আমি ঠিক পড়াশোনা করে সাহেব হয়ে গিয়েছিলাম। ডিগ্রি শেষ করে এম এ ক্লাশে ভর্তি হয়েছিলাম। বাড়ির পাশে কানাই নাপিতের নাপিত খানা ছিলো। হঠাৎ একদিন চুল কাটানোর জন্য গিয়েছিলাম নাপিতের দোকানে। বাড়ির সামনে একটা চারপায়ের টুল নিয়ে নাপিত মশায় চুল কাটান। দু পায়ের মধ্যে মাথা নিয়ে নিপুন হাতে চুল কাটেন। আমাকেউ নিজের দু পায়ের ভাজে আটকে নিপুন ভাবে চুল কাটছিলো। হঠাৎ আমার কানে ভেসে এলো:
বাপে, খায়া নেউ। সেই সকাল থে চুল কাটছো। খুদা লাগেনা তোমার।
কি মধুর কন্ঠো, যেনো কোন কোকিলের শুর ভেসে এলো আমার কানে। মেয়েটাকে একবার দেখার জন্য মন কেমন করতে থাকে। কিন্তু দু পায়ের চিপা থেকে কিছুতেই মাথা বের করতে পারছিনা। কি জানি, কি কারনে যেনো নাপিত নিজেই পা ছারিয়ে দিলো। মাথা তুলে তাকাতে যা দেখলাম তাতে আমার মাথা ঘুরে গেলো। অপূর্ব একটা মেয়ে, যেনো আমাদের দেবী এই ঘরে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
জল কই, এনেছিস । কি দিয়ে ভাত এনেছিস রে মা শবরি।
ঐতো, পুই ডাটা আর মশুরের ডাল দিয়ে ঝোল। আর আলুর দম।
রেখে যা।
কথা বলতে বলতে নাপিত মেয়ের হাত থেকে খাবার নামিয়ে নিতে থাকে । শবরীর দিকে আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। বয়স খুব বেশি হলে সতেরো কি আঠারো । কৈশোরের সবটুকু উচ্ছলতা ওর মধ্যে কাজ করছিলো। বড়ির দিকে ফিরে যেতে যেতে আমার গায়ে উড়নার ঘ্রাণ ছড়িয়ে দিয়ে গেলো। আমার মনে হলো কোন জমিদার কন্যা জোড়করে আমার হৃদয়ের জায়গা দখল করে নিলো। এরপর আমার পড়াশোনার ছেদ ঘটলো। নাপিত বাড়ির আশেপাশে যেনো আমার বাড়ি, শিক্ষালয়। শবরি বিকেলে যখন বাহিরে ছেলে মেয়েেেদর সাথে খেলতে আসে আমি বসে বসে দেখি। দুপুরে যখন ঘাটে গোসল করেতে যেতো তখন পিছে পিছে ঘাটে গিয়ে বসে থাকতাম। লোক চক্ষুর তোয়াক্কা করতাম না। কিন্তু তখন আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা ছিলো কঠোর। তখনো উচু নিচু জাতি ভেদ, শতীদাহ প্রথা প্রচোলিতো ছিলো। তবু কেনো জানি শবরি আমার ভয়কে জয়করে নিয়েছলো, আর সাহেবদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তাম যে আমি । সেখনে তো এতো ভেদাভেদ পড়ানো হতো না। সময়ে অসময়ে চুলকাটাতে ওর বাবার কাছে যেতাম। সেই দুপুরে যখন ও খাবার নিয়ে বাবার কাছে আসতো, আমি অবাক হয়ে দেখতাম ওকে। মাঝে মাঝে কানাই কাকা রেগে উঠতো। চুল কাটার মতো চুল বড় হয়নি কি চুল কাটবেন। আমিও কি বলবো তখন, বলতাম ন্যারা করে দেন। দেখতে দেখতে সত্যি ওর আর আমার মাঝে গাড়ো সম্পর্ক হয়ে যায়। মাঝে মাঝে লুকিয়ে সন্ধায় বা রাতে এমনকি দুপুরে ঘাটেও বসে কথা বলতাম। হঠাৎ একদিন ঠাকুর পিনাই এর হাতে দুজনে ধরা খেয়ে যাই। সাথে সাথে সে রটিয়ে দেয় সারা গ্রাম। গৃরস্থের সাথে নাপিতের মেয়ের সম্পর্ক। ছ্যা ছ্যা, বিচার বসে, তারপর আবার অবৈধ সম্পর্ক। বিচারে রায় হয় জীবন্ত পুরিয়ে দেয়া হবে শবরি কে, আমার চোখের সামনে । তাহলে এমন পাপ করতে আর সাহস করবেনা কেউ। সত্যি আমাকে একটা গাছের সাথে বেধে শবরিকে ধরে রাখলো কিছু লোক। তারপর পোরানোর জন্য তৈরি করাহলো খরিদিয়ে মাচা। অবশেষে শবরিকে মাচার উপর বেধে আরোকিছু খরি তুলে দেয়া হলো। শবরি কেপে কেপে উঠছে আমি দেখতে পেলাম। অসহায়ের মতো দেখতে থাকলাম। এরি মধ্যে অগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি দু পা মাটির সাথে আঘাত করতে থাকি। মাথা গাছের সাথে ঠোকরাতে থাকি। আবঝা হয়ে আসে পৃথিবী আমার কাছে, হঠাৎ আবঝা চোখে দেখতে পাই ইংরেজ পেয়াদা এসে আগুন নিভিয়ে শবরি কে নিয়ে যাচ্ছে প্রায় অর্ধ্বো পোড়া অবস্থায়। তারপর আর মনে নেই । ডাক্তারের কাছে শুনেছি মাথায় অতিরিক্ত আঘাত আর মানুসিক চাপে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তারপরতো এই কত মাস হলো সকলকে চিনতে পারছি। এখনো বাহিরের কিছুই দেখতে পায়নি । শুনেছি অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েগেছে। ইংরেজরা দেশ ছেড়ে গেছে। ভারত ভাগ হয়েছে, এরমধ্যে আবার আমাদের ভূখন্ড নাকি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে একটা দেশ হয়েছে। কিন্তু নিজে চোখে কিছুই এখনো দেখা হয়নি। তা বাবা তোমাকে তো দেখে মনে হচ্ছে ভালো ঘরের ছেলে। তোমার এ অবস্থা হলো কি করে। ডাক্তারের কাছে শুনেছি এখন পৃথিবীটা অনেক বদলে গেছে। সেদিনের সে দিন আজকের এ দিন নাকি সমান নয়। এখন একটা পূর্নবয়সে কোন মেয়ে বা ছেলে তাদের ¯^াধীন মত প্রকাশ করতে পারে, এমনকি এক ধর্মের মানুষো নাকি অন্যধর্মের কারো সাথে বিয়ে করে ঘর বাধতে পারে।
পিয়াল এবার নিজের নিরাবতা ভেঙে বলতে শুরু করে : ভুল কাকা, আজো আছে আপনার সেদিনের সেই দিন। আজ থেকে দু বছর আগেই ঘটে গেছে আমার একটা দিন যা আপনার সেদিনের ঘটনার মতোই কোন ঘটনা। আজো অন্তোরালে চলে অনেক কিছু।
শুনবেন আমার কাহিনী। শুনুন তাহলে:
এইতো বছর পাঁচেক আগে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলাম। মাঝে মাঝে চাকুরির খোঁজে জেলাশহর থেকে রাজধানী শহর ঢাকাতে যেতে হতো । গিয়ে উঠতাম চাচার বাসায়। চাচার একটা মেয়ে আমার চেয়ে বছর তিনেকের ছোট। ওর সাথে ঘুরতে বের হয়ে ছি ওদের কলেজে। ওর এক বান্ধবি কে দেখে ভালো লেগে যায়। ফোন নাম্বারটা নিয়ে নিই আমি। বাসায় ফিরি, ফোনদেই মেয়েটিকে মাঝে মাঝে। কথা বলি, একদিন মুখ ফুটে বলেই ফেলি ভালোলাগে তোমায়। ভালোবাসতে চাই। জীবন সঙ্গি করতে চাই । মেয়েটিও রাজি হয়ে যায়। আস্তে আস্তে সম্পর্ক অনেক গভির হয়ে যায় আমাদের। মাঝে মাঝে ঢাকাতে আসি ওকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেরাই। বিষয়টা আর লুকিয়ে রাখতে চাইনা আমি। চাচাতো বোনকে সব খুলে বলি। চাচাতো বোন অবাক হয়ে বলে ওঠে: ভায় তুই এটা কি বলছিস, ওরা কিন্তু নাপিত। জানিস তো কাকু, বাবা কিভাবে জাত মেনে চলে। তাছারা আত্মীয় ¯^জন শুনলে কি বলবে ।
বলে বলুক, মানি নাকি আমি। সে যুগকি আরো আছে।
যা করিস কর। আমি কিন্তু কিছু জানি না। যা করবি বুঝে করবি।
ও কিছু ভাবিস না তুই। আমি সব ম্যানেজ করে নেবো।
এরি মধ্যে চাচাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান। ঝড়না,যাকে আমি ভালোবাসি চাচাতো বোনের সেই বান্ধবি। দাওয়াত খেতে আসে চাচার বাড়িতে। বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান, লোকে গিজগিজ করছে। যে যার মতো কাজে ব্যাস্ত। আমি সুযোগ বুঝে ঝড়নাকে নিয়ে ছাদে উঠি। জোছনা রাত, পাঠি পাতা ঝড়নার পায়ে মাথা রেখে আমি গল্প করছিলাম। দুজনে যেনো নিজেদের ভূবনে হারিয়ে গিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি চাচি পাশে দাঁড়িয়ে বলছে : পিয়াল, ভেতরে সকলে কাজে ব্যাস্ত আর তুমি কিনা এখানে বসে।
লাফদিয়ে উঠে বসি আমি। ঝড়না লজ্জা পেয়ে দ্রুতো নেমে যায়। অপরাধির মতো আমি নিচে নেমে আসি।
চাচাতো বোনের কাছে শুনেছি পরে, কনা আমার চাচাতো বোন যার বিয়ে তাকে গিয়ে বলে :
জানিস নাকি কিছু। পিয়ালের সাথে তোর বান্ধবি ঝড়না নাকি মেয়েটা ওর নাকি সম্পর্ক। ছাদে একসাথে দেখলাম দুজনকে। মেয়েটার বাবা কি করে। ওদের জাত কি জানিষ নাকি।
হ্যাঁ, জানিমা । ওর বাবা এখন ব্যাবসা করে । জাতে নাপিত, ওর দাদার চুলকাটার ব্যাবসা ছিলো। এখন আর করেনা।
কি, নাপিত । তোর বাবাকে বলতে হবে। তোর চাচা টাতো গেড়ো । লেখা পড়াকিছু করেনি। নিজের সম্মান তো নষ্ট করেছেই এখন এই ছেলেটা আমাদেরো সম্মান নষ্ট করবে। মাস্টার্স পাশকরা একটা ছেলে না জানি ভালো উপহার নিয়ে একটা ভালো ঘরে বিয়ে দেবো, তানা , কিজে করছে।
সত্যি চাচি চাচাকে সব খুলে বলে। চাচা আমাকে ডেকে ধমকায়। কি করি আমি, অবশেষে বাড়িতে ফিরে আসি। এদিকে ঝড়না ফোনের পর ফোন দিতে থাকে। বাড়িতে বাবা মা সকলেই ব্যাপার টা জেনে যায়। মায়ের মন বুঝতে পারে। মা তেমন কিছু বলেনা। কিন্তু বাবা কিছুতেই মেনে নেয়না ব্যাপারটা । আমিও ফোনে তেমন যোগাযোগ করতে পারি না। যতটুকু পারি তাতে ও সন্তুষ্ট নয়। যেটুকু সময় ফোন দেয় শুধু চোখের পানির শব্দ শোনা যায়। চাচি নাকি গিয়ে আমাদের সম্পর্কের কথা বলে অপমান করে ওর বাবা মাকে। তারা রেগে বিয়ে ঠিক করে ওকে বিয়ে দেবার জন্য। একদিন হঠাৎ ফোনদিয়ে বলে : আমি কিছুতেই এ ছেলে কে বিয়ে করতে পারবো না। যেভাবে হোক তুমি আমাকে এসে নিয়ে যাও। বাবা মা আমাকে তেমন বাহিরে যেতে দেয়না। তোমার চাচি এসে সব বলে গেছে । আমার বাবা মাকে অপমান করেছে। ঝড়নার মা যা করেছে তাতে কিছুতেই বাবা মা তোমার সাথে বিয়ে দেবে না। তবে দেরি করলে আমাকেও আর পাবেনা। দ্রুতো চলে আসো। বিয়ের লগ্ন কিন্তু আর মাত্র ছয়দিন বাঁকি। তুমি না আসলে কিন্তু ঐ লগ্নতে আমার লাশ শশ্মানে যাবে।
আমার আর কিছু ভাববার থাকে না । ব্যাগ গুছিয়ে বাড়িথেকে বেরিয়ে পরি। প্রাইভেট পরানো জমানো টাকা যা ছিলো নিয়ে নেই। ঢাকাতে এক বন্ধুকে সব খুলে বলে প্রস্তূত থাকতে বলি। সত্যি সত্যি পরদিন পৌঁছে যাই ঢাকাতে। কিন্তু আর চারদিন পরে গায়ে হলুদ ওর । এদিকে আমি সব প্রস্তূত করতে সময় লাগে দু দিন। প্রিয়াংকাকে বলে ওদের বাড়িতে নিয়ে আসি। গায়ে হলুদের আগের রাতেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই পালাবো । প্রিয়াংকা ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে সাহায্য করবে। গেটে পাহাড়া বসিয়েছে ওর বাবা । শেষ পর্যন্ত ছাদে গিয়ে প্রিয়াংকা তিনটি শাড়ি একসাথে বেধে বাড়ির পেছন দিয়ে নামিয়ে দেয়। অনেক টা ঝোপঝাড় ওদিকটা তে । আমি দাঁড়িয়ে, ও কখন নামবে। ঝোপঝাড় আর জঙ্গলের মশার কামড় সহ্য করে বসে ছিলাম শুধু প্রেমকে আপন ভেবেছিলাম বলে। একটা সময় পাঁচতলা থেকে ও সত্যি টেলিফোন টাওয়ারের সাথে বাঁধা শাড়িতে ঝুলে নামতে থাকে । হঠাৎ আমার কানে আসে , কে নিচে কেরে। ঝড়না মা উপরে উঠে আয়। কে আছিসরে ঝড়না পালাচ্ছে, তোরা বাড়ির পেছনে যা। দ্রুতো নামতে গিয়ে ঝড়নার হাত ফসকে যায় শাড়ি থেকে। দেখতে দেখতে গাছের সাথে বাড়ি খেয়ে একটা পুরনো কাটা গাছের গুড়ির উপর এসে পড়ে ঝড়না ।আমি হাতদিয়ে ধরতে গিয়ে আমিও ওর সাথে গুড়ির উপর থুবরে পরি। রক্তাতো দেহ, কোন সাড়া নেই ওর। আমি কোন মতে উঠে মাথার চুল ছিড়তে ছিড়তে বসে পরি। হাত ভরে যায় ঝড়নার তাজা রক্তে। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসে। তারপর এইতো আজ দুদিন হলো নিজেকে চিনতে পারছি আমি। আজো কাল বৈশাখি ঝড়টা থামেনি আমার ভেতর।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পবিত্র বিশ্বাস ভাল লাগলো... অনেক শুভ কামনা।।
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
রায়হান পাটোয়ারী অনেক সুন্দর !
ভালো লাগেনি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
রবিন রহমান ভালো লাগলো কমেন্ট পেয়ে ...
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ পৃথিবী যতদিন থাকবে প্রেমও ততদিন থাকবে, কেননা প্রেম তো বিধাতার ই অন্যতম গুন ! এবং বিয়োগান্তক ঘটনাও হয়তো বা থাকবে ! এই নিয়েই আমাদের জীবন ! গল্পটা খুব ভাল লাগল ।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
সবুজ আহমেদ কক্স ভোট দিলাম ...........................................ভালো
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
সৃজন শারফিনুল ভাল লাগলো... অনেক শুভ কামনা।।
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
Majharul ভালো লাগল। অনেক শুভকামনা রইল আমার।
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
রবিউল ই রুবেন রোমান্টিক গল্প। ভালো লেগেছে। শুভতামনার সাথে ভোট রইল। আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইল।
ভালো লাগেনি ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
Arif Billah প্রেমের বাস্তব বিয়োগান্ত কাহিনী । গল্পে প্রেম আর আবেগ দুটোই আছে। ভাল লাগা রেখে গেলাম।
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

১৩ আগষ্ট - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪