লুকানো শূন্যতা

শূন্যতা (অক্টোবর ২০২০)

Mir An-Nazmus Sakib
  • ২৯
প্রিয়াংকা চোখ বন্ধ করলো। কল্পনার ঘোরে কাউকে যেন দেখতে পেলো সে। সামনে ভাসছে এক সুদর্শন, সাদামাটা, গো-বেচারা যুবকের মুখ। চোখে যেন তার শত বছরের মায়াগুলো জমাট বেঁধে রয়েছে। শরীরের চারদিক দিয়ে যেন তার কয়েকশ ভালোবাসার মৌমাছি উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। অবচেতন মনেও প্রিয়াংকা মুখটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুকের মাঝখানে যেন এক গভীর শূন্যতাকে অনুভব করছে!

ভার্সিটি জীবনের প্রথম দিন। উচ্চ মাধ্যমিক পার হওয়া উচ্ছ্বল সদ্য তরুণীটি যেন প্রথমবারের জন্য ভোগ করতে চলেছিলো অপার স্বাধীনতাকে। স্কুল-কলেজের চৌহদ্দিতে কখনোই একা পা রাখতে পারেনি প্রিয়াংকা। রক্ষণশীল মা-বাবার কঠোর শাসন ও খবরদারিত্বের মাঝেই বড় হয়েছে সে। হয়তো এ কারণেই পারিবারিক মূল্যবোধের মূল্য প্রিয়াংকার কাছে অনেক বেশি, আর অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে। তাই এ শর্তেই সে একলা পথে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়েছিলো যে, সে কখনোই বাবা-মায়ের অবাধ্য হবে না, তাঁদেরকে হতাশ করবে না, তাঁদের বিশ্বাস ভাঙবে না।

প্রিয়াংকার স্বাধীনতার প্রথম দিনটা ছিলো হালকা বর্ষণমুখর। জানুয়ারি মাসে এমন বৃষ্টি সচরাচর লক্ষ্য করা যায় না আমাদের দেশে। এ বর্ষণমুখর দিনে বয়ে চলা বেমক্কা হিমেল হাওয়া যেন পাগল করেছিলো এক সুদর্শন, সাদামাটা গড়নের, গো-বেচারা, মোটা ফ্রেমের চশমাওয়ালা যুবককে। হাসিব, ফোর্থ ইয়ারের ফার্স্ট বয়। সহজ-সরল টাইপের ছেলেটা এমনিতে কারও সাথে কথা না বললেও প্রথম দেখাতেই প্রিয়াংকার হৃদয়কে চুরি করতে মনঃস্থির করে ফেললো। অপরূপা, মোহনীয় সদ্য তরুণীটির হৃদয়েও যেন দোলা দিয়ে গেলো এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা যুবকটির মায়াভরা চাহনি। এক পলকের জন্য প্রিয়াংকা ভুলে গেলো বাবা-মায়ের দেওয়া শর্তটার কথা। মনে হলো যেন- সকল বন্ধনকে ছিন্ন করে, সকল শর্তকে ভেঙে-চুরে দিয়ে সে হাসিবের বুকে মাথা রাখবে। হাসিবের আধা কুঁচকানো শার্টের খোলা বোতামটার মাঝে উঁকি দেওয়া ঘামের গন্ধযুক্ত বুকটাকে গোলাপের সুঘ্রাণে ভরিয়ে তুলবে। এভাবেই সেদিন থেকে শুরু হলো দুজনের এ চোখে চোখে আলাপ, হঠাৎ হঠাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে একজন একজনকে দেখা দেওয়া। কী আশ্চর্য! প্রিয়াংকা কোনোদিন কল্পনাতেও অনুভব করেনি, তার জীবনে বিশেষ কেউ আসতে পারে! অথচ আজ তার মনটা আরেকজনের দখলে চলে গিয়েছে।

পুরো একটি বছর জুড়ে চললো এই নীরব চোখাচোখি। কিন্তু… না হাসিব, না প্রিয়াংকা, কারও মুখ দিয়েই উচ্চারিত হলো না সেই তিন ম্যাজিক ওয়ার্ডস। যেগুলো শোনার জন্য দুজনের কানই অপেক্ষা করছিলো গভীর ব্যাকুলতায়। অবশেষে হাসিবের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো। আর দুদিন পরেই ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবে সে। স্বল্প সাহসী মেধাবী ছেলেটা যেন পলিনেশিয়ান নাবিকদের মতো সাহসী হয়ে উঠলো আজ। প্রিয়াংকার পথ আটকালো। তার চোখে চোখ রেখে, মায়াবী চাহনিতে ভেতরের পুরো ভালোবাসাটাকে নিংড়ে দিলো হাসিব। রূপসী প্রিয়াংকার সুন্দর কানগুলো দিয়ে ঝংকিত হলো সেই তিন জাদুকরি শব্দের উচ্চারণ- “আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

মুহূর্তের জন্য প্রিয়াংকা যেন হারিয়ে গেলো অন্য এক দুনিয়ায়! ইচ্ছে করলো চিৎকার করে একইভাবে ভালোবাসার কথা বলবে হাসিবকে। জড়িয়ে ধরবে ওকে নিজের নরম, কোমল বাহুজোড়া দিয়ে। কিন্তু… কিন্তু সে পারলো না। পারলো না বাবা-মাকে দেওয়া তার কথার বরখেলাপ করতে। ফিরিয়ে দিলো সে হাসিবকে। তার হৃদয়ের মাঝে পুষে রাখা স্বপ্নটিকে বাঁচতে দিলো না আর। রঙিন অনুভূতিগুলোকে অতিক্রম করতে দিলো না হৃদয়ের চৌকাঠ। ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে, চোখের কোণে বেদনার অশ্রুকে সঙ্গী করে, সেদিন ফিরে যেতে হলো হাসিবকে। আর বাবা-মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে সংসারী হলো একদা সদ্য স্বাধীন উচ্ছ্বল এক তরুণী, যে আজ অনেক পরিণত।

চোখ খুললো প্রিয়াংকা। আজও হৃদয়ের গহীনে এক জ্বলন্ত যন্ত্রণা অনুভব করে সে। অভিশপ্ত, পাপী মনে হয় নিজেকে। এ যেন বুকের মাঝে লুকানো এক শূন্যতা, যা প্রতিনিয়ত গ্রাস করে চলছে তাকে।

নিজের হাতের উলের কাঁটাগুলোর মাঝে সৃজন হতে চলা আধবোনা সোয়েটারটার দিকে তাকালো সে। কেউ আসছে... আসছে তার কোল জুড়ে। হয়তো সে-ই এসে দূর করবে অজানা এ যন্ত্রণাকে, লুকানো সে শূন্যতাকে!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Lata Rani Sarker অনবদ্ধ প্রকাশভঙ্গি।
ফয়জুল মহী ভীষণ ভালো লেগেছে । মুগ্ধ হলাম ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্পের মাঝে রক্ষণশীল পরিবার ব্যবস্থার মাঝে বেড়ে ওঠা এক তরুণীর সামাজিক কারণে ভালোবাসাকে বিসর্জন দেওয়ার ফলে সৃষ্ট শূন্যতাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

৩০ জুলাই - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪